Best Homeo Doctor

ধনুষ্টঙ্কার কি,কারন,লক্ষন,প্রতিকার

ধনুষ্টঙ্কার (Tetanus) একটি গুরুতর ব্যাকটেরিয়াল সংক্রমণ যা Clostridium tetani নামে একটি ব্যাকটেরিয়া দ্বারা সৃষ্ট হয়। এটি সাধারণত শরীরে কোথাও ক্ষত, কাটা বা পুঁতে থাকা একটি সংক্রমণের মাধ্যমে প্রবেশ করে। ধনুষ্টঙ্কারের ফলে শরীরের পেশি অত্যন্ত শক্ত হয়ে যেতে থাকে এবং শ্বাসনালীসহ অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ পেশি আক্রান্ত হয়ে জীবনঝুঁকি তৈরি করতে পারে।

ধনুষ্টঙ্কারের কারণ:

ধনুষ্টঙ্কার মূলত Clostridium tetani নামক ব্যাকটেরিয়ার কারণে হয়। এই ব্যাকটেরিয়া সাধারণত মাটিতে, পশুপাখির মল, বা অন্যান্য অমেধ্য পরিবেশে থাকে। যখন শরীরে কোন ক্ষত বা কাটা লাগে, তখন এই ব্যাকটেরিয়া সেখানে প্রবেশ করতে পারে এবং বিষাক্ত টক্সিন উৎপন্ন করতে শুরু করে। এই টক্সিন মস্তিষ্কে স্নায়ুতন্ত্রকে প্রভাবিত করে এবং পেশির টান (muscle contraction) সৃষ্টি করে।

ধনুষ্টঙ্কারের প্রধান কারণ:

  1. ক্ষত বা কাটার মাধ্যমে ব্যাকটেরিয়ার প্রবেশ: সাধারণত কোনো কাটা, ছুরি বা গাছের কাঁটার মাধ্যমে এই ব্যাকটেরিয়া শরীরে প্রবেশ করে।
  2. অপরিষ্কার পরিবেশে আঘাত: মাটির মধ্যে পড়ে থাকা কোনো ক্ষত বা অপরিষ্কার স্থানে আঘাত হলে ধনুষ্টঙ্কারের ঝুঁকি বাড়ে।
  3. পুনরায় ব্যবহৃত সূঁচ বা যন্ত্রপাতি: অপরিষ্কার সূঁচ বা যন্ত্রপাতির মাধ্যমে সংক্রমণ হতে পারে।
  4. অপরিষ্কার যন্ত্রপাতি দ্বারা গর্ভপাত বা অস্ত্রোপচার: অনেক সময় অপরিষ্কার যন্ত্রপাতির মাধ্যমে গর্ভপাত বা অস্ত্রোপচার করলে এই রোগ হতে পারে।

ধনুষ্টঙ্কারের লক্ষণ:

ধনুষ্টঙ্কারের লক্ষণ সাধারণত সংক্রমণ হওয়ার কয়েক দিন বা সপ্তাহের মধ্যে দেখা দিতে শুরু করে (সাধারণত ৩ থেকে ২১ দিন)। এর লক্ষণগুলি বিভিন্ন হতে পারে, তবে কিছু সাধারণ লক্ষণ হলো:

  1. পেশির শক্ত হয়ে যাওয়া (Muscle rigidity): ধনুষ্টঙ্কারের প্রথম লক্ষণ হলো পেশির শক্ত হয়ে যাওয়া এবং এটি সাধারণত মুখের পেশি থেকে শুরু হয়, যেখানে রোগী মুখ বন্ধ করে ফেলতে পারে (ট্রাইসাসমাস বা lockjaw)।
  2. জিভ ফাঁকানো: মুখের পেশি শক্ত হয়ে যাওয়ার কারণে জিভ ফাঁকা বা আংশিকভাবে বের হয়ে যেতে পারে।
  3. ঘাড় এবং পিঠে শক্তি (Stiff neck and back): ঘাড় এবং পিঠের পেশি শক্ত হয়ে যাওয়ার কারণে রোগী ঠিকভাবে মাথা ঘুরাতে পারে না।
  4. সামান্য স্পর্শে চমকানো (Muscle spasms): শরীরের অন্যান্য পেশিতে অস্বাভাবিক টান বা খিঁচুনি হতে পারে। আক্রান্ত ব্যক্তির পুরো শরীর সঙ্কুচিত হতে পারে।
  5. উচ্চ তাপমাত্রা (Fever): শরীরের তাপমাত্রা বেড়ে গিয়ে জ্বর সৃষ্টি হতে পারে।
  6. শ্বাসকষ্ট (Breathing difficulties): পেশির শক্ত হয়ে যাওয়ার কারণে শ্বাসনালীতে সমস্যা সৃষ্টি হতে পারে, যা শ্বাসপ্রশ্বাসের সমস্যা বা হালকা শ্বাসকষ্ট সৃষ্টি করতে পারে।
  7. বিভ্রান্তি বা অজ্ঞান অবস্থা: মস্তিষ্কে স্নায়ুতন্ত্রের টক্সিনের প্রভাব পড়লে, ব্যক্তি বিভ্রান্তি বা অজ্ঞান অবস্থায় চলে যেতে পারে।

ধনুষ্টঙ্কারের প্রতিকার:

ধনুষ্টঙ্কারের জন্য চিকিৎসা অত্যন্ত জরুরি এবং এটি নির্ভর করে রোগীর অবস্থা এবং প্রাথমিক চিকিৎসার কতটা দ্রুততা ও সঠিকতা। ধনুষ্টঙ্কারের চিকিৎসার প্রধান লক্ষ্য হলো ব্যাকটেরিয়ার টক্সিনের প্রভাব কমানো এবং পেশির শক্তি খিঁচুনি দূর করা।

. প্রাথমিক চিকিৎসা (First Aid):

  • ক্ষতস্থানে পরিষ্কার করা: প্রথমেই যদি কোনো ক্ষত বা কাটা হয়ে থাকে, তবে এটি পরিষ্কার ও জীবাণুমুক্ত করতে হবে। জল এবং সাবান দিয়ে ভালোভাবে ধুয়ে ফেলা উচিত।
  • এন্টিসেপ্টিক ব্যবহার: ক্ষতস্থানে এন্টিসেপ্টিক দিয়ে জীবাণু মেরে ফেলা উচিত।
  • টেটানাস ইমিউনোগ্লোবুলিন (Tetanus Immunoglobulin): যদি ক্ষত খুব গভীর বা পঁচানো হয় এবং রোগী আগে টেটানাস ভ্যাকসিন নেননি, তবে দ্রুত টেটানাস ইমিউনোগ্লোবুলিন (TIG) প্রয়োগ করা উচিত।

. চিকিৎসা (Medical treatment):

ধনুষ্টঙ্কারের জন্য বিশেষ চিকিৎসা নিতে হবে, যেটি ডাক্তার বা চিকিৎসক দ্বারা নির্ধারিত হবে:

  1. টেটানাস ভ্যাকসিন (Tetanus Vaccine): টেটানাস ভাইরাস থেকে রক্ষা পেতে টেটানাস ভ্যাকসিন নেওয়া অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এটি শরীরে টেটানাস অ্যান্টিবডি তৈরি করতে সহায়তা করে। সাধারণত পাঁচ বছর পর পর টেটানাস ভ্যাকসিন গ্রহণ করা উচিত।
  2. টেটানাস ইমিউনোগ্লোবুলিন (TIG): যদি আগে টেটানাস ভ্যাকসিন নেওয়া না হয়ে থাকে, তবে দ্রুত টেটানাস ইমিউনোগ্লোবুলিন দিতে হবে। এটি ভাইরাসের টক্সিনের প্রভাবকে নিষ্ক্রিয় করতে সহায়তা করে।
  3. অ্যান্টিবায়োটিক (Antibiotics): যদি ব্যাকটেরিয়া সংক্রমণের কারণে ধনুষ্টঙ্কার হয়ে থাকে, তবে এন্টিবায়োটিক প্রয়োগ করা হতে পারে।
  4. পেশির শক্তি কমানোর জন্য চিকিৎসা (Muscle relaxants): ধনুষ্টঙ্কারের কারণে শরীরের পেশি শক্ত হয়ে যাওয়ার কারণে চিকিৎসক সাধারণত পেশি শিথিলকারী ওষুধ ব্যবহার করেন।
  5. শ্বাসনালী সাহায্য (Respiratory support): যদি শ্বাসপ্রশ্বাসে সমস্যা হয়, তবে অক্সিজেন বা বায়ুপথের সাহায্য নেওয়া হতে পারে।
  6. সুগন্ধি বা মেদীষণ চিকিৎসা: পেশির শিথিলতা এবং খিঁচুনি কমানোর জন্য পেশি শিথিলকারী ওষুধের প্রয়োগ হতে পারে।

. প্রতিরোধ (Prevention):

  • টেটানাস ভ্যাকসিন: সর্বোচ্চ প্রতিরোধ হল নিয়মিত টেটানাস ভ্যাকসিন গ্রহণ। সাধারণত একবার বাচ্চাদেরকে টেটানাসের ভ্যাকসিন দেওয়া হয় এবং পরে ৫ বছর পর পর পুনরায় এটি নেওয়া উচিত।
  • পুনরায় ভ্যাকসিনেশন: যদি কোনো ব্যক্তিকে গভীর বা ময়লা ক্ষত হয়, তবে তাকে জরুরি ভিত্তিতে টেটানাস ভ্যাকসিন দেওয়ার প্রয়োজন হতে পারে। যদি তার শেষ ভ্যাকসিনেশন অনেক দিন আগে হয়ে থাকে, তবে তাকে আবারও ভ্যাকসিন দেওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়।
  • পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতা বজায় রাখা: ক্ষত হওয়া এলাকা পরিষ্কার রাখা এবং যত তাড়াতাড়ি সম্ভব চিকিৎসকের সাহায্য নেওয়া অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

সারাংশ:

ধনুষ্টঙ্কার একটি মারাত্মক ব্যাকটেরিয়াল সংক্রমণ যা Clostridium tetani ব্যাকটেরিয়া দ্বারা সৃষ্টি হয়। এটি শরীরের পেশিতে খিঁচুনি এবং শক্ত হয়ে যাওয়ার কারণ হয়ে দাঁড়ায়। ধনুষ্টঙ্কার প্রতিরোধযোগ্য একটি রোগ এবং ভ্যাকসিনের মাধ্যমে এটি প্রতিরোধ করা সম্ভব। তবে, একবার সংক্রমণ হয়ে গেলে তা দ্রুত চিকিৎসা না দিলে এটি মৃত্যুর কারণ হতে পারে। প্রাথমিক চিকিৎসা এবং টেটানাস ভ্যাকসিন গ্রহণ এর প্রধান প্রতিরোধ ব্যবস্থা।

 

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *