দ্রুত বীর্যপাত (Premature Ejaculation) হলো এমন একটি যৌন সমস্যার অবস্থা, যেখানে পুরুষরা যৌন মিলনের শুরুতেই বা খুব অল্প সময়ের মধ্যে বীর্যপাত করে ফেলেন, যা তাদের বা তাদের সঙ্গীনের জন্য সন্তোষজনক না হতে পারে। এটি একটি সাধারণ সমস্যা এবং প্রায় ২০-৩০% পুরুষ জীবনে এক বা একাধিকবার এই সমস্যার সম্মুখীন হন।
কারণ:
দ্রুত বীর্যপাতের বিভিন্ন শারীরিক এবং মানসিক কারণ থাকতে পারে, যা সাধারণত দুটি প্রধান ক্যাটাগরিতে ভাগ করা যায়:
- শারীরিক কারণ:
- হরমোনের সমস্যা: টেস্টোস্টেরন বা অন্যান্য হরমোনের অস্বাভাবিকতা।
- নিউরোলজিক্যাল সমস্যা: মস্তিষ্ক, স্নায়ু বা মেরুদণ্ডের সমস্যা।
- মুক্তিযুদ্ধ, স্নায়ুতন্ত্রের ক্ষতি বা সংবেদনশীলতা: অতিরিক্ত বা অল্প সংবেদনশীলতা যা দ্রুত বীর্যপাতের কারণ হতে পারে।
- থাইরয়েড সমস্যা: অতিরিক্ত থাইরয়েড হরমোনের কারণে এই সমস্যা হতে পারে।
- যৌন অবস্থা বা শারীরিক অসুস্থতা: যেমন ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ বা প্রোস্টেটের সমস্যা।
- মানসিক বা মানসিক চাপের কারণে:
- অতিরিক্ত উদ্বেগ বা চাপ: অনেক সময় পুরুষেরা নিজের যৌনক্ষমতা নিয়ে উদ্বিগ্ন বা চাপ অনুভব করেন, যা দ্রুত বীর্যপাতের কারণ হতে পারে।
- বিষণ্নতা বা মানসিক অবস্থা: মানসিক চাপ, বিষণ্নতা বা স্ট্রেসের কারণে দ্রুত বীর্যপাত হতে পারে।
- অতিরিক্ত যৌন উত্তেজনা: খুব বেশি যৌন উত্তেজনা বা দীর্ঘ সময় ধরে যৌন সম্পর্ক স্থাপন না করা, এতে দ্রুত বীর্যপাত ঘটে।
- অস্বাভাবিক সম্পর্ক: নতুন সম্পর্ক বা যৌন সম্পর্কের মাঝে সঠিক যোগাযোগ বা আত্মবিশ্বাসের অভাব।
লক্ষণ:
দ্রুত বীর্যপাতের প্রধান লক্ষণ হলো:
- খুব অল্প সময়ের মধ্যে বীর্যপাত হয়ে যাওয়া: সাধারণত, পুরুষরা যৌন মিলনের মাত্র ১-২ মিনিটের মধ্যে বীর্যপাত করে ফেলেন, যা তাদের জন্য অস্বস্তিকর হতে পারে।
- যৌন সম্পর্কের মধ্যে আনন্দের অভাব: দ্রুত বীর্যপাতের কারণে বেশিরভাগ পুরুষই যৌন সম্পর্ক থেকে পূর্ণ সুখ লাভ করতে পারেন না।
- পারস্পরিক সন্তুষ্টির অভাব: সঙ্গীও সন্তুষ্ট হতে পারেন না, যার কারণে সম্পর্কের মানসিক সমস্যাও সৃষ্টি হতে পারে।
প্রতিকার:
দ্রুত বীর্যপাতের প্রতিকার বেশ কিছু পদ্ধতি বা চিকিৎসার মাধ্যমে করা যেতে পারে। চিকিৎসা শুরু করার আগে অবশ্যই একজন বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নেয়া উচিত। কিছু সাধারণ প্রতিকার হলো:
- শরীরিক ব্যায়াম ও শিথিলকরণ পদ্ধতি:
- পেলভিক ফ্লোর ব্যায়াম: পেশী শক্ত করার মাধ্যমে শারীরিক নিয়ন্ত্রণ বৃদ্ধি করা সম্ভব।
- ধ्यान বা শিথিলকরণ: মানসিক চাপ ও উদ্বেগ কমাতে ধ্যান বা শিথিলকরণ পদ্ধতি প্রয়োগ করা যেতে পারে।
- সাইকোথেরাপি:
- কাউন্সেলিং: মানসিক চাপ বা উদ্বেগের কারণে যদি দ্রুত বীর্যপাত হয়, তবে একজন থেরাপিস্ট বা কাউন্সেলরের সহায়তা নেয়া যেতে পারে।
- কগনিটিভ বিহেভিওরাল থেরাপি (CBT): মানসিক দৃষ্টিভঙ্গি পরিবর্তন করতে এবং উদ্বেগ কমাতে সাহায্য করে।
- দ্বৈত প্রক্রিয়া:
- স্টপ–স্টার্ট পদ্ধতি: যৌন সম্পর্কের সময় কিছুক্ষণ থামিয়ে আবার শুরু করা (যার মাধ্যমে পুরুষ বীর্যপাতের আগেই নির্দিষ্ট সময় ধরে সংযম রাখে)।
- প্রেসার টেকনিক: বীর্যপাতের আগেই পেনিসের শীর্ষে চাপ দিলে বীর্যপাত দেরি হতে পারে।
- ওষুধ:
- ডিপ্রেসেন্টস: কিছু প্রান্তিক সেরোটোনিন-রিইপটেক ইনহিবিটর (SSRI) যেমন ফ্লুক্সেটিন, সেরট্রালিন বা পারক্সেটিন দ্রুত বীর্যপাতের প্রতিকার হিসেবে ব্যবহৃত হয়।
- লিডোকেইন বা অন্যান্য স্থানীয় অ্যানেসথেটিক ক্রিম: এই ক্রিমগুলো পেনিসের সংবেদনশীলতা কমিয়ে দেয়, যাতে বীর্যপাত দেরিতে ঘটে।
- নিরাপদ যৌন অভ্যাস:
- সুরক্ষিত যৌন সম্পর্ক: সঠিক যৌন আচরণ ও সঙ্গীর সঙ্গে খোলামেলা আলোচনা সঠিক সমাধান আনার জন্য সাহায্য করতে পারে।
যত্ন ও মনোযোগ:
যদি এই সমস্যা দীর্ঘ সময় ধরে থাকে বা মানসিক চাপ সৃষ্টি করে, তবে একজন বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নেয়া উচিত। চিকিৎসক বা সাইকোথেরাপিস্টের সাহায্যে সমস্যা সমাধান করা যেতে পারে এবং সম্পর্কের মধ্যে ভালোবাসা ও আনন্দ ফিরে আসতে সাহায্য করতে পারে।