Best Homeo Doctor

দুর্গন্ধময় ঘাম কি,কারন,লক্ষন,প্রতিকার

দুর্গন্ধময় ঘাম (Body Odor or Bromhidrosis) হলো শরীরের ঘাম থেকে একটি অবাঞ্ছিত বা неприятি গন্ধ বের হওয়া। এটি সাধারণত তখন ঘটে যখন ঘামের সঙ্গে ব্যাকটেরিয়া মিশে গন্ধ তৈরি করে। ঘাম নিজে গন্ধহীন হলেও যখন এটি ত্বকের সাথে মিশে ব্যাকটেরিয়ার মাধ্যমে পচন শুরু হয়, তখন গন্ধ সৃষ্টি হয়। দুর্গন্ধময় ঘাম এক ধরনের সমস্যা হতে পারে এবং এটি ব্যক্তিগত অস্বস্তি সৃষ্টি করতে পারে, বিশেষ করে পাবলিক প্লেসে।

কারণ:

দুর্গন্ধময় ঘামের বিভিন্ন কারণ থাকতে পারে, এর মধ্যে কিছু সাধারণ কারণ হলো:

  1. ব্যাকটেরিয়া সংক্রমণ:
    • ত্বকের উপর থাকা ব্যাকটেরিয়া ঘামের সঙ্গে মিশে গন্ধ সৃষ্টি করতে পারে। এই ব্যাকটেরিয়া বিশেষত আন্ডারআর্ম, পা, এবং শরীরের অন্যান্য ভিজা অংশে বেশি থাকে।
  2. হরমোনাল পরিবর্তন:
    • হরমোনের তারতম্য যেমন পিউবের্টি, গর্ভাবস্থা, স্ট্রেস, এবং মেনোপজ সময়কালে শরীরে দুর্গন্ধময় ঘাম হতে পারে, কারণ হরমোনের পরিবর্তনের কারণে ঘামের গন্ধ বদলে যেতে পারে।
  3. অতিরিক্ত ঘাম (Hyperhidrosis):
    • কিছু মানুষ অতিরিক্ত ঘাম উৎপন্ন করে, যার ফলে ঘামের পরিমাণ বেশি হয়ে গন্ধ সৃষ্টি হতে পারে। এটা বিশেষ করে শারীরিক বা মানসিক চাপের সময়ে হতে পারে।
  4. খাবারের অভ্যাস:
    • কিছু খাবার যেমন রসুন, পেঁয়াজ, মসলাযুক্ত খাবার, মাংস এবং বিশেষ ধরনের স্পাইস খেলে শরীরের ঘামের গন্ধ আরও প্রবল হতে পারে, কারণ এগুলি রক্তে শোষিত হয়ে শরীরের ঘামের মাধ্যমে বের হয়ে আসে।
  5. শরীরের স্বাস্থ্য সমস্যা:
    • কিছু স্বাস্থ্য সমস্যা যেমন ডায়াবেটিস, থাইরয়েড সমস্যা, লিভার বা কিডনি সমস্যা, এবং মেটাবলিক ডিসঅর্ডার (যেমন ফেনিলকেটোনুরিয়া) দুর্গন্ধময় ঘাম সৃষ্টি করতে পারে।
  6. নির্দিষ্ট মেডিকেশন:
    • কিছু ঔষধ যেমন অ্যান্টিডিপ্রেসেন্টস বা অ্যান্টিবায়োটিক গ্রহণের ফলে শরীরে দুর্গন্ধময় ঘাম হতে পারে।
  7. অপর্যাপ্ত পরিষ্কারপরিচ্ছন্নতা:
    • দৈনন্দিন পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা না থাকার কারণে ত্বকে ময়লা জমে যায় এবং ব্যাকটেরিয়ার বৃদ্ধি ঘটে, যা দুর্গন্ধ সৃষ্টি করে।

লক্ষণ:

দুর্গন্ধময় ঘামের সাধারণ লক্ষণগুলি হলো:

  1. তীব্র গন্ধ:
    • শরীরের নির্দিষ্ট জায়গা যেমন আন্ডারআর্ম, পা, বা পশ্চাৎদেশে তীব্র বা অস্বস্তিকর গন্ধ তৈরি হওয়া।
  2. অস্বস্তি বা আত্মবিশ্বাসের অভাব:
    • গন্ধের কারণে ব্যক্তি নিজের অস্বস্তি অনুভব করতে পারে এবং আত্মবিশ্বাস কমে যেতে পারে।
  3. ঘামের পরিমাণ বাড়া:
    • কিছু লোকের শরীরে অতিরিক্ত ঘাম হয়, যা গন্ধ সৃষ্টি করার পাশাপাশি অসুবিধা তৈরি করতে পারে।
  4. বিশেষ জায়গায় গন্ধের উপস্থিতি:
    • সাধারণত আন্ডারআর্ম, পা, মুখের চারপাশ, এবং শরীরের অন্যান্য ভেজা জায়গাগুলোতে গন্ধ বেশি হয়।

প্রতিকার:

দুর্গন্ধময় ঘাম দূর করার কিছু কার্যকরী প্রতিকার রয়েছে:

  1. নিয়মিত গোসল পরিষ্কারপরিচ্ছন্নতা:
    • দৈনিক অন্তত একবার গোসল করা উচিত, বিশেষ করে ঘামের পর। শরীরের বিশেষ জায়গাগুলো (যেমন আন্ডারআর্ম, পা) ভালোভাবে পরিষ্কার করতে হবে।
  2. অ্যান্টিপার্সপিরেন্ট ডিওডোরেন্ট ব্যবহার:
    • অ্যান্টিপার্সপিরেন্ট ঘাম কমাতে সাহায্য করে, এবং ডিওডোরেন্ট শরীরে গন্ধ দূর করতে সহায়তা করে। তবে, কিছু মানুষ সঠিকভাবে অ্যান্টিপার্সপিরেন্ট ব্যবহার করে না, যার কারণে গন্ধ কমে না। উপযুক্ত ডিওডোরেন্ট বা অ্যান্টিপার্সপিরেন্ট ব্যবহার করা প্রয়োজন।
  3. ময়শ্চারাইজার ব্যবহার:
    • ত্বক শুষ্ক রাখলে ব্যাকটেরিয়ার বৃদ্ধি কম হতে পারে, তাই ময়শ্চারাইজার ব্যবহার করা উচিত।
  4. সুস্থ খাদ্যাভ্যাস:
    • তেলতেলে, মসলাযুক্ত, রসুন বা পেঁয়াজযুক্ত খাবার কম খাওয়া উচিত, কারণ এগুলি ঘামের গন্ধ বাড়াতে পারে। ফলমূল, সবজি এবং পানি বেশি করে খাওয়া উচিত।
  5. ভেজা কাপড় পরা থেকে বিরত থাকুন:
    • ভেজা কাপড়, বিশেষ করে ঘামে স্যাঁতসেঁতে হয়ে গেলে ত্বকে ব্যাকটেরিয়া বৃদ্ধি পায়। তাই দ্রুত শুকনো কাপড় পরিধান করুন এবং সঠিক কাপড় পরিধান করুন যা ঘাম শোষণ করতে সাহায্য করবে।
  6. বিশেষভাবে তৈরি কাপড় পরা:
    • এমন কাপড় পরুন যা ঘাম শোষণ করতে সাহায্য করে, যেমন কটন বা অন্যান্য শ্বাস-প্রশ্বাসযোগ্য কাপড়। সিন্থেটিক কাপড় যেমন নাইলন, পলিয়েস্টার বেশি ঘাম সৃষ্টি করে।
  7. স্বাস্থ্য পরীক্ষা:
    • যদি দুর্গন্ধময় ঘামের সমস্যা দীর্ঘকাল ধরে চলে এবং অন্যান্য শারীরিক সমস্যা দেখা দেয় (যেমন, ক্লান্তি, অস্বস্তি, ত্বকে পরিবর্তন), তবে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত। এটি কোনো রোগের লক্ষণ হতে পারে।
  8. যত্ন নেওয়া:
    • কিছু লোকের জন্য, বিশেষ যত্ন নিতে হবে যেমন বিশেষ স্কিন কেয়ার প্রোডাক্ট ব্যবহার বা ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী চিকিৎসা নেওয়া।

সতর্কতা:

  • যদি এই সমস্যা দীর্ঘকালীন হয় এবং অন্য কোনো শারীরিক সমস্যা তৈরি হয়, তবে দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।
  • মানসিক চাপ বা হরমোনাল সমস্যা ঘটলে তাদের চিকিৎসা গ্রহণ করুন।

দুর্গন্ধময় ঘাম সাধারণত জীবনের ক্ষতি করে না, তবে এটি ব্যক্তিগত অস্বস্তির কারণ হতে পারে, তাই সমস্যা থাকলে যথাযথ যত্ন নিতে হবে।

 

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *