Best Homeo Doctor

দুগ্ধ জ্বর কি,কারন,লক্ষন,প্রতিকার

দুগ্ধ জ্বর (Milk Fever) মূলত গরু বা অন্যান্য দুধ উৎপাদনকারী পশুদের মধ্যে একটি সাধারণ রোগ, তবে এটি মানুষের জন্য সাধারণ নয়। এটি বিশেষ করে গাভী এবং অন্যান্য দুগ্ধজাত প্রাণীতে দেখা যায়, যখন তাদের দুধ উৎপাদন হঠাৎ বৃদ্ধি পায় বা ল্যাকটেশন শুরু হয়।

দুগ্ধ জ্বরের কারণ:

দুগ্ধ জ্বর বা হিপোক্যালসেমিয়া মূলত ক্যালসিয়ামের ঘাটতির কারণে ঘটে, যা গাভীর দুধ উৎপাদনের জন্য প্রয়োজনীয় ক্যালসিয়াম সরবরাহে ব্যাঘাত ঘটায়। এই রোগটি সাধারণত জন্মের পরবর্তী সময়, বিশেষ করে যখন গাভী প্রচুর দুধ উৎপাদন করতে শুরু করে, তখন দেখা দেয়। ক্যালসিয়ামের মাত্রা দ্রুত কমে গেলে, তা গাভীর শরীরে বিভিন্ন সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে, যার ফলে জ্বর এবং অন্যান্য শারীরিক সমস্যা দেখা দেয়।

দুগ্ধ জ্বরের কারণের মধ্যে:

  • ক্যালসিয়ামের ঘাটতি: যখন গাভী দুধ উৎপাদন শুরু করে, তার শরীরে ক্যালসিয়ামের ঘাটতি হতে পারে।
  • অতিরিক্ত দুধ উৎপাদন: গাভীর অতিরিক্ত দুধ উৎপাদন করলে ক্যালসিয়াম দ্রুত শোষিত হতে থাকে।
  • খাদ্যাভ্যাসের সমস্যা: গাভীর খাবারে পর্যাপ্ত ক্যালসিয়াম বা অন্যান্য প্রয়োজনীয় উপাদান না থাকলে এই সমস্যা বাড়তে পারে।
  • অপর্যাপ্ত প্রস্তুতি: গাভীর গর্ভাবস্থার শেষ পর্যায়ে ক্যালসিয়ামের প্রাচুর্য না হলে এটি জ্বরের কারণ হতে পারে।

দুগ্ধ জ্বরের লক্ষণ:

  1. উচ্চ তাপমাত্রা (জ্বর): গাভীর শরীরে তাপমাত্রা বৃদ্ধি পায়।
  2. অতিমাত্রায় দুর্বলতা: গাভী অত্যন্ত দুর্বল হয়ে পড়ে এবং চলাফেরা করতে কষ্ট অনুভব করে।
  3. দুলতে থাকা বা অস্বাভাবিক আচরণ: গাভী পা দুলাতে বা অস্বাভাবিকভাবে আচরণ করতে পারে।
  4. খাওয়াদাওয়া কমে যাওয়া: গাভী খাবার খেতে অস্বীকার করতে পারে।
  5. পেশী অবশ হয়ে যাওয়া: পেশীতে শক্তি না থাকা এবং কাঁপুনি অনুভূত হতে পারে।
  6. এফেক্টেড স্ট্যান্ডিং পজিশন: গাভী এক জায়গায় দাঁড়িয়ে থাকতে পারে বা মাটিতে শুয়ে থাকতে পারে, পা ধরে দাঁড়িয়ে থাকতে পারে।

দুগ্ধ জ্বরের প্রতিকার:

  1. ক্যালসিয়াম সাপ্লিমেন্ট: গাভীর শরীরে ক্যালসিয়ামের ঘাটতি পূরণ করতে ক্যালসিয়াম গ্লুকোনেট ইনজেকশন বা খনিজ সাপ্লিমেন্ট প্রদান করা হয়। এটি দ্রুত শোষিত হয় এবং গাভীকে দ্রুত আরোগ্য দান করে।
  2. ভিটামিন ডি এবং ম্যাগনেসিয়ামের সাপ্লিমেন্ট: ক্যালসিয়াম শোষণের জন্য ভিটামিন ডি এবং ম্যাগনেসিয়াম সহায়ক হতে পারে।
  3. যত্ন সহকারে খাবার প্রদান: গাভীর জন্য প্রোটিন, ভিটামিন এবং খনিজ উপাদান সমৃদ্ধ খাদ্য প্রদান করা জরুরি।
  4. বিশ্রাম এবং পর্যাপ্ত পানি: গাভীকে বিশ্রাম দিতে হবে এবং পর্যাপ্ত পরিমাণে পরিষ্কার পানি পান করাতে হবে, যাতে শরীরে তাজাতা ফিরে আসে।
  5. চিকিৎসক পরামর্শ: যদি জ্বর আরও বাড়ে বা গাভীর অবস্থার অবনতি ঘটে, তবে দ্রুত পশু চিকিৎসকের কাছে পরামর্শ নেওয়া উচিত।

প্রতিরোধ:

  • প্রস্তুতি: গাভীকে গর্ভাবস্থার শেষে পর্যাপ্ত ক্যালসিয়াম এবং অন্যান্য খনিজ উপাদান দেওয়া উচিত, যাতে ল্যাকটেশনের সময় ক্যালসিয়ামের ঘাটতি না হয়।
  • বিশেষ খাবারের পরিকল্পনা: গাভীকে এমন খাবার দেওয়া যা দুধ উৎপাদনে সহায়ক এবং ক্যালসিয়াম সমৃদ্ধ।
  • নির্ভুল সময়ে সাপ্লিমেন্ট দেওয়া: যেই সময়ে দুধ উৎপাদন শুরু হয়, সেই সময়ে সঠিক সাপ্লিমেন্ট প্রদান করা।

দুগ্ধ জ্বর যদি সঠিকভাবে চিকিৎসা না করা হয়, তবে গাভী গুরুতর শারীরিক সমস্যার সম্মুখীন হতে পারে, এমনকি মৃত্যুও হতে পারে। তাই গাভীর যত্নে খেয়াল রাখা এবং পুষ্টি সংক্রান্ত সমস্যা এড়ানো গুরুত্বপূর্ণ।

 

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *