Best Homeo Doctor

দাঁদ কি,কারন,লক্ষন,প্রতিকার

দাঁদ (Tooth Abscess) হলো দাঁতের এক ধরনের সংক্রমণ, যা সাধারণত দাঁতের মূলে বা তার আশপাশে ঘটে। এটি সাধারণত ব্যাকটেরিয়া দ্বারা সৃষ্ট হয় এবং এটি দাঁতের মূলে বা গামের নিচে একটি পুঁজভরা থলি বা ফুসকুড়ি সৃষ্টি করে। দাঁদ খুবই যন্ত্রণাদায়ক হতে পারে এবং যদি না চিকিৎসা করা হয়, তবে এটি আরও গুরুতর স্বাস্থ্য সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে।

কারণ:

দাঁদ হওয়ার প্রধান কারণ হলো দাঁতের কোনো ক্ষত বা গর্তের কারণে ব্যাকটেরিয়ার সংক্রমণ। তবে কিছু কারণও থাকতে পারে, যেমন:

  1. দাঁতের গর্ত বা ক্ষত:
    • দাঁতের গর্ত বা ক্ষত হওয়ার মাধ্যমে ব্যাকটেরিয়া মূলে প্রবেশ করে। এটি সাধারণত দাঁতের মধ্যস্থলে বা গামে সংক্রমণ সৃষ্টি করে।
  2. দাঁতের মূলে ইনফেকশন:
    • দাঁতের মূলে কোনো ক্ষতি বা আঘাতের কারণে ব্যাকটেরিয়া প্রবেশ করে, যা দাঁতের ভিতর পুঁজ জমার কারণ হতে পারে।
  3. দাঁতের ফাঁক বা শিকড়ে সংক্রমণ:
    • দাঁত বা মাড়ির ফাঁক বা শিকড়ে খাবারের টুকরো আটকে গিয়ে সংক্রমণ সৃষ্টি করতে পারে। এতে দাঁতে পুঁজ জমে এবং দাঁদ হয়।
  4. দাঁতের অপর্যাপ্ত যত্ন:
    • দাঁত ঠিকভাবে ব্রাশ না করা বা মাড়ি পরিষ্কার না রাখার কারণে দাঁতে ব্যাকটেরিয়ার সংক্রমণ হতে পারে, যা দাঁদ সৃষ্টি করে।
  5. গাম ডিজিজ (Gum Disease):
    • মাড়ির সংক্রমণ (যেমন, গিংগিভাইটিস বা পিরিওডন্টাইটিস) দাঁতের নিচে ব্যাকটেরিয়া প্রবেশের কারণ হতে পারে, যা দাঁদ সৃষ্টি করে।
  6. দাঁতের আঘাত:
    • দাঁতে আঘাত বা কাঁটা-ছেঁড়া হওয়ায় দাঁতে সংক্রমণ হতে পারে এবং দাঁদ সৃষ্টি হতে পারে।

লক্ষণ:

দাঁদ হওয়ার কিছু সাধারণ লক্ষণ হলো:

  1. তীব্র দাঁতে বা মাড়িতে ব্যথা:
    • দাঁদ সাধারণত খুব যন্ত্রণাদায়ক হয়। এটি দাঁতের মূলে বা তার আশপাশে তীব্র ব্যথা সৃষ্টি করতে পারে, বিশেষত যখন কিছু খাওয়া বা ঠান্ডা/গরম কিছু খাবার খাওয়া হয়।
  2. দাঁতে ফোলা বা লাল হওয়া:
    • আক্রান্ত স্থানে দাঁত বা গাম ফুলে যেতে পারে এবং লাল হয়ে যায়।
  3. পুঁজ বা মাড়ি থেকে তরল বের হওয়া:
    • দাঁতের মূলে পুঁজ জমে গিয়ে মাড়ি থেকে তরল বা পুঁজ বের হতে পারে। এতে গন্ধও হতে পারে।
  4. গলা ব্যথা বা শ্বাসকষ্ট:
    • কখনও কখনও দাঁদ গলা বা মুখের মধ্যে ছড়িয়ে পড়তে পারে, যার ফলে গলা ব্যথা বা শ্বাসকষ্ট হতে পারে।
  5. উচ্চ জ্বর:
    • দাঁদ হলে শরীরের তাপমাত্রা বেড়ে যেতে পারে, যা সাধারণত শরীরের সংক্রমণের লক্ষণ।
  6. দাঁত বা মুখে অস্বস্তি:
    • দাঁদ হওয়া জায়গায় তীব্র অস্বস্তি অনুভব হতে পারে, এবং দাঁত পরিষ্কার করতে সমস্যা হতে পারে।

প্রতিকার:

দাঁদ হওয়া শরীরের জন্য খুবই যন্ত্রণাদায়ক এবং গুরুতর সমস্যা হতে পারে। তাই দ্রুত চিকিৎসা করা প্রয়োজন। দাঁদ থেকে মুক্তি পেতে কিছু কার্যকর প্রতিকার হলো:

  1. ডেন্টিস্টের কাছে যাওয়া:
    • দাঁদ হওয়ার প্রথম এবং সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ হলো ডেন্টিস্টের কাছে যাওয়া। ডেন্টিস্ট ব্যথা কমানোর জন্য অ্যান্টিবায়োটিক বা পেইনকিলার প্রেসক্রাইব করতে পারেন এবং ইনফেকশন সারানোর জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে পারেন।
  2. অ্যান্টিবায়োটিক:
    • দাঁতের সংক্রমণ থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্য ডেন্টিস্ট অ্যান্টিবায়োটিক প্রেসক্রাইব করতে পারেন। এটি ব্যাকটেরিয়াকে ধ্বংস করতে সাহায্য করে।
  3. রুট ক্যানাল থেরাপি (Root Canal Therapy):
    • যদি দাঁতের মূলে বড় ইনফেকশন থাকে, তাহলে রুট ক্যানাল থেরাপি প্রয়োজন হতে পারে, যার মাধ্যমে মূলে জমে থাকা পুঁজ পরিষ্কার করা হয় এবং দাঁত সংরক্ষণ করা হয়।
  4. ড্রেনিং:
    • যদি পুঁজ জমে থাকে, ডেন্টিস্ট তার মাধ্যমে পুঁজ বের করতে পারেন এবং সংক্রমণ কমানোর জন্য সঠিক চিকিৎসা দিতে পারেন।
  5. গরম পানি দিয়ে কুলকুচি:
    • গরম পানি এবং লবণ দিয়ে কুলকুচি করলে অস্থায়ীভাবে ব্যথা কমাতে সাহায্য করতে পারে। এটি সংক্রমণ প্রতিরোধে সহায়ক হতে পারে।
  6. পেইন কিলার ব্যবহার:
    • তীব্র ব্যথা হলে পেইন কিলার (যেমন, প্যারাসিটামল বা আইবুপ্রোফেন) ব্যবহার করা যেতে পারে, তবে ডেন্টিস্টের পরামর্শ অনুযায়ী।
  7. দাঁতের সঠিক যত্ন:
    • দাঁত প্রতিদিন নিয়মিত ব্রাশ এবং ফ্লস করা উচিত। এমনকি খাবারের মাঝেও যদি কিছু আটকে যায়, তবে তা পরিষ্কার করা জরুরি।
  8. বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক দ্বারা দাঁতের চিকিৎসা:
    • যদি দাঁতের কোনও গুরুতর সমস্যা হয়, তবে দাঁতের সার্জারিও প্রয়োজন হতে পারে, যেমন দাঁত ফেলে দেওয়া বা দাঁতের অবস্থা দেখে অপারেশন করা।

প্রতিরোধ:

  • দাঁতের নিয়মিত ব্রাশ করা: দাঁত প্রতিদিন সকালে এবং রাতে ব্রাশ করতে হবে।
  • ফ্লস ব্যবহার করা: দাঁতের মাঝে আটকে থাকা খাবারের টুকরো বের করতে ফ্লস ব্যবহার করুন।
  • ডেন্টিস্টের কাছে নিয়মিত চেকআপ: প্রতিদিনের দাঁত পরিষ্কার রাখার পাশাপাশি বছরে অন্তত একবার ডেন্টিস্টের কাছে গিয়ে চেক-আপ করানো উচিত।

দাঁদ খুবই যন্ত্রণাদায়ক হতে পারে এবং এর কারণে অন্যান্য গুরুতর স্বাস্থ্য সমস্যা হতে পারে, তাই সঠিক সময়ে চিকিৎসা নেওয়া খুবই গুরুত্বপূর্ণ।

 

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *