Best Homeo Doctor

দাঁতের মাড়ির টিউমার কি,কারন,লক্ষন,প্রতিকার

দাঁতের মাড়িতে টিউমার (Tumor in the Gums) হল দাঁতের মাড়ির মধ্যে অস্বাভাবিক কোষের বৃদ্ধি বা গুটি, যা সাধারণত বিনাইন (benign) হয়ে থাকে, তবে কিছু ক্ষেত্রে এটি ম্যালিগন্যান্ট (malignant) বা ক্যান্সারের কারণে হতে পারে। দাঁতের মাড়িতে টিউমার সৃষ্টি হলে এটি গুরুতর সমস্যার সৃষ্টি করতে পারে, যার ফলে দাঁতের স্বাস্থ্যের উপর নেতিবাচক প্রভাব পড়ে।

দাঁতের মাড়িতে টিউমারের কারণ:

দাঁতের মাড়ির টিউমারের কিছু সাধারণ কারণ হলো:

  1. গ্যাংলিয়ন সিস্ট (Ganglion Cyst):
    • দাঁতের মাড়িতে গ্যাংলিয়ন সিস্ট হতে পারে, যা মাড়ির নিচে তরলভর্তি সিস্ট হিসেবে তৈরি হয়। এটি সাধারণত ব্যথাহীন থাকে, তবে মাড়ির ওপর চাপ সৃষ্টি করতে পারে।
  2. পেরিওডোন্টাল সিস্ট (Periapical Cyst):
    • এটি দাঁতের মাড়ির নিচে ঘটে, যেখানে দাঁতের মূলের কাছে সিস্ট তৈরি হয়। এটি সাধারণত দাঁতের সংক্রমণের কারণে হতে পারে এবং ব্যথা ও প্রদাহ সৃষ্টি করতে পারে।
  3. ফাইব্রোমা (Fibroma):
    • ফাইব্রোমা হলো মাড়ির ত্বকে বা মাংসপেশিতে সৃষ্ট একটি বিনাইন টিউমার। এটি মাড়ির উপর ছোট গুটি আকারে দেখতে পারে, সাধারণত ব্যথাহীন।
  4. গিংগিভাল হাইপারপ্লাসিয়া (Gingival Hyperplasia):
    • এটি মাড়ির কোষের অস্বাভাবিক বৃদ্ধি, যার ফলে মাড়ি ফুলে ওঠে এবং টিউমারের মতো দেখতে হতে পারে। এটি সাধারণত দীর্ঘ সময় ধরে অস্বাস্থ্যকর দাঁতের পরিচর্যা, বা দন্ত চিকিৎসার জন্য প্রয়োজনীয় ওষুধের কারণে হতে পারে।
  5. অস্থি টিউমার (Bone Tumor):
    • কখনও কখনও দাঁতের মাড়ির মধ্যে অস্থি টিউমার সৃষ্টি হতে পারে, যা দাঁতের মূল বা মাড়ির হাড়ে অস্বাভাবিক বৃদ্ধি ঘটায়।
  6. ম্যালিগন্যান্ট টিউমার (Malignant Tumor):
    • দাঁতের মাড়ির মধ্যে ম্যালিগন্যান্ট টিউমারও হতে পারে, যেমন অরাল ক্যান্সার (Oral Cancer) বা প্ল্যানামা টিউমার (Plasmacytoma), যা মাড়ির কোষে ক্যান্সার সৃষ্টি করে।

দাঁতের মাড়িতে টিউমারের লক্ষণ:

দাঁতের মাড়ির টিউমারের লক্ষণগুলো তার আকার, ধরন এবং অবস্থান অনুসারে ভিন্ন হতে পারে। কিছু সাধারণ লক্ষণ:

  1. মাড়িতে ফুলে ওঠা বা গুটি:
    • দাঁতের মাড়িতে একটি গুটি বা ফুলে ওঠা দেখতে পাওয়া যেতে পারে, যা টিউমারের সূচনা হতে পারে।
  2. মাড়ির লাল হওয়া বা প্রদাহ:
    • টিউমারের কারণে মাড়ি লাল হতে পারে এবং এটি উত্তপ্ত হয়ে উঠতে পারে, বিশেষত যদি এটি সংক্রমণজনিত বা প্রদাহজনিত হয়।
  3. ব্যথা বা অস্বস্তি:
    • টিউমারটি যদি মাড়ির কোন অংশে চাপ সৃষ্টি করে, তবে দাঁতের মাড়িতে ব্যথা বা অস্বস্তি হতে পারে।
  4. রক্তপাত বা মাড়ি থেকে পুঁজ পড়া:
    • যদি টিউমারটি সংক্রমিত হয়, তবে মাড়ি থেকে রক্তপাত বা পুঁজ বের হতে পারে, বিশেষ করে দাঁত ব্রাশ করার সময় বা খাওয়ার সময়।
  5. দাঁত আলগা হওয়া:
    • মাড়ির মধ্যে টিউমার থাকলে, মাড়ি নরম হতে পারে, যার ফলে দাঁত আলগা হয়ে পড়তে পারে বা পড়া শুরু করতে পারে।
  6. মুখে দুর্গন্ধ:
    • টিউমারজনিত সংক্রমণ বা রোগের কারণে মুখে দুর্গন্ধ হতে পারে।

দাঁতের মাড়িতে টিউমারের প্রতিকার:

দাঁতের মাড়ির টিউমারের চিকিৎসা তার ধরন, আকার এবং অবস্থানের উপর নির্ভর করে। সাধারণ চিকিৎসার পদ্ধতি:

  1. ওষুধ (Medications):
    • প্রদাহ বা সংক্রমণের কারণে টিউমার তৈরি হলে, চিকিৎসক অ্যান্টিবায়োটিক বা অ্যান্টি-ইনফ্ল্যামেটরি (NSAIDs) ওষুধ দিতে পারেন। এটি ব্যথা এবং প্রদাহ কমাতে সাহায্য করে।
  2. দাঁতের সার্জারি (Dental Surgery):
    • টিউমারের আকার বড় হলে বা তা মাড়ির উপর আঘাত করলে সার্জারি মাধ্যমে অপসারণ করা হতে পারে। এটি দাঁতের মাড়ি থেকে টিউমারটি পুরোপুরি সরিয়ে ফেলতে সাহায্য করবে।
  3. রুট ক্যানাল (Root Canal):
    • যদি টিউমারটি দাঁতের মুলে সংক্রমণ বা সিস্ট সৃষ্টি করে থাকে, তবে রুট ক্যানাল থেরাপি প্রযোজ্য হতে পারে, যা দাঁতের মুল থেকে সংক্রমণ পরিষ্কার করে।
  4. কেমোথেরাপি বা রেডিওথেরাপি (Chemotherapy or Radiation Therapy):
    • যদি টিউমারটি ম্যালিগন্যান্ট (ক্যান্সার) হয়, তবে রেডিওথেরাপি বা কেমোথেরাপি প্রয়োজন হতে পারে।
  5. হরমোনাল বা স্টেরয়েড ইনজেকশন (Hormonal or Steroid Injections):
    • যদি মাড়ির টিউমার হরমোনের কারণে বা প্রদাহের কারণে হয়, তবে স্টেরয়েড ইনজেকশন দেওয়া হতে পারে।
  6. মাড়ির যত্ন (Gum Care):
    • যদি টিউমারটি সাধারণ গিংগিভাল হাইপারপ্লাসিয়ার কারণে হয়, তবে সঠিকভাবে দাঁতের মাড়ির যত্ন নেওয়া প্রয়োজন। নিয়মিত দাঁত ব্রাশ, ফ্লসিং এবং মাড়ি পরিষ্কার রাখা জরুরি।

দাঁতের মাড়িতে টিউমার প্রতিরোধ:

দাঁতের মাড়ির টিউমার প্রতিরোধে কিছু পদক্ষেপ নেয়া যেতে পারে:

  1. নিয়মিত দাঁত ব্রাশ করা (Regular Brushing):
    • দিনে অন্তত দুটি বার দাঁত ব্রাশ করা এবং মাড়ির পরিচর্যা করা, যাতে কোন ধরনের সংক্রমণ বা মাড়ির রোগ সৃষ্টি না হয়।
  2. ফ্লসিং (Flossing):
    • দাঁতের ফাঁকে জমে থাকা খাদ্যকণা এবং প্লাক পরিষ্কার করার জন্য নিয়মিত ফ্লসিং করা।
  3. দাঁতের স্বাস্থ্য পরীক্ষা (Regular Dental Check-up):
    • বছরে অন্তত একবার ডেন্টিস্টের কাছে গিয়ে দাঁতের স্বাস্থ্য পরীক্ষা করা, যাতে কোন ধরনের অস্বাভাবিকতা বা টিউমার চিহ্নিত করা যায়।
  4. স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস (Healthy Diet):
    • সুষম খাদ্যাভ্যাস এবং পরিমাণমতো ভিটামিন সি গ্রহণ, যা মাড়ির স্বাস্থ্য উন্নত করতে সহায়তা করে।
  5. তামাক এবং অ্যালকোহল এড়িয়ে চলা (Avoiding Tobacco and Alcohol):
    • তামাক এবং অতিরিক্ত অ্যালকোহল মাড়ির রোগ এবং ক্যান্সারের ঝুঁকি বাড়িয়ে দেয়, তাই এগুলি পরিহার করা উচিত।

শেষ কথা:

দাঁতের মাড়ির টিউমার সাধারণত বিনাইন (benign) হয়, তবে কিছু ক্ষেত্রে এটি ক্যান্সার বা ম্যালিগন্যান্ট টিউমারে পরিণত হতে পারে। যদি দাঁতের মাড়িতে কোন অস্বাভাবিক গুটি বা ফুলে ওঠা দেখা যায়, তবে দ্রুত ডেন্টিস্টের কাছে পরীক্ষা করানো উচিত। সঠিক সময়ে চিকিৎসা নিতে পারলে এই ধরনের সমস্যা সমাধান করা সম্ভব।

 

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *