Best Homeo Doctor

ডিম্বাশয় সিস্ট কি,কারন,লক্ষন,প্রতিকার

ডিম্বাশয় সিস্ট (Ovarian Cyst) হল একটি তরল বা সলিড পূর্ণ গুটি যা ডিম্বাশয়ে (ovary) গঠন হয়। এটি সাধারণত এক বা একাধিক ডিম্বাশয়ের মধ্যে তৈরি হতে পারে এবং বেশিরভাগ ক্ষেত্রে এটি benign (অকর্মী) বা ক্ষতিকর নয়। তবে কিছু সিস্ট ক্ষতিকারক হতে পারে এবং চিকিৎসা প্রয়োজন হতে পারে।

ডিম্বাশয় সিস্টের কারণ:

ডিম্বাশয় সিস্ট হওয়ার বিভিন্ন কারণ থাকতে পারে। তবে অধিকাংশ ক্ষেত্রে সিস্ট কোনো নির্দিষ্ট কারণ ছাড়া গঠন হয়। কিছু সাধারণ কারণ:

  1. ফোলিকুলার সিস্ট (Follicular Cyst):
    • প্রাকৃতিক পর্যায়ে, ডিম্বাশয়ে প্রতি মাসে একটি ডিম্বাণু (egg) তৈরি হয়। কখনও কখনও, ডিম্বাশয়ে থাকা ফোলিকল (যেটি ডিম্বাণু ধারণ করে) পরিপক্ক হয়ে বের হতে পারে না এবং তরল ধারণ করে সিস্ট তৈরি হতে পারে। এটি সাধারণত ক্ষতিকারক নয় এবং বেশিরভাগ সময় নিজেই নিরাময় হয়।
  2. করপাস লুটিয়াম সিস্ট (Corpus Luteum Cyst):
    • এটি সেই সিস্ট যা ডিম্বাশয়ে ডিম্বাণু বের হওয়ার পর করপাস লুটিয়াম তৈরি হলে তৈরি হয়। যদি এই করপাস লুটিয়াম সিস্টে তরল জমে যায় তবে এটি সিস্টে পরিণত হয়। সাধারণত এটি কোনো বড় সমস্যা সৃষ্টি করে না এবং সিস্টটি সময়ের সাথে সাথে নিজে থেকেই সেরে যায়।
  3. পলিসিস্টিক ওভারি সিনড্রোম (PCOS):
    • পিসিওএস হলো একটি হরমোনাল ব্যাধি যার কারণে ডিম্বাশয়ে ছোট ছোট সিস্ট তৈরি হয়। এটি মহিলাদের মধ্যে সাধারণ এবং এটি মাসিকের অনিয়ম, অতিরিক্ত লোম, এবং শুকনো ত্বকের সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে।
  4. এন্ডোমেট্রিওসিস (Endometriosis):
    • এন্ডোমেট্রিওসিস একটি অবস্থা যেখানে গর্ভাশয়ের বাইরের টিস্যু গর্ভাশয়ের মধ্যে গঠন হয় এবং সিস্ট সৃষ্টি করতে পারে। এটি সাধারণত বেদনাদায়ক হয়ে থাকে এবং ঋতুস্রাবের সময় তীব্র ব্যথা সৃষ্টি করতে পারে।
  5. অতিরিক্ত শারীরিক চাপ বা হরমোনাল সমস্যা:
    • শরীরের হরমোনের ভারসাম্যহীনতা বা অতিরিক্ত শারীরিক চাপের কারণে ডিম্বাশয়ের সিস্ট তৈরি হতে পারে।
  6. গর্ভধারণের কারণে:
    • গর্ভধারণের সময় কিছু মহিলার ডিম্বাশয়ে সিস্ট তৈরি হতে পারে, বিশেষত গর্ভধারণের প্রথম দিকে।

ডিম্বাশয় সিস্টের লক্ষণ:

অনেক সময় ডিম্বাশয়ের সিস্ট কোনো লক্ষণ ছাড়াই থাকে এবং নিজে থেকেই সেরে যায়। তবে কিছু ক্ষেত্রে সিস্টটি বড় বা জটিল হলে এর লক্ষণ দেখা দিতে পারে:

  1. পেটের নীচে ব্যথা বা অস্বস্তি:
    • ডিম্বাশয়ের সিস্টের কারণে পেটের নীচে, বিশেষত ডান বা বাম পাশে, তীব্র বা মাঝারি ব্যথা অনুভূত হতে পারে। এটি সাধারণত ঋতুস্রাবের সময় তীব্র হয়, তবে অন্য সময়েও হতে পারে।
  2. ঋতুস্রাবের সমস্যা:
    • অনেক মহিলার ক্ষেত্রে সিস্টের কারণে ঋতুস্রাবের সময় অস্বাভাবিক ব্যথা, অস্বাভাবিক রক্তপাত বা মাসিকের অনিয়ম দেখা দিতে পারে।
  3. পেট ফুলে যাওয়া বা চাপ অনুভূতি:
    • ডিম্বাশয়ের সিস্ট বড় হলে পেটের নিচের অংশে ফুলে যাওয়া বা চাপ অনুভূতি হতে পারে।
  4. পেটে বা নিতম্বে ব্যথা:
    • সিস্ট কখনও কখনও পেটে বা নিতম্বে ব্যথার কারণ হতে পারে, বিশেষত যখন এটি বৃদ্ধি পায়।
  5. মাথাব্যথা, বমি বা তলপেটের দুর্বলতা:
    • যদি সিস্টে অতিরিক্ত চাপ বা রক্তপাত হয়, তবে বমি, মাথাব্যথা বা দুর্বলতা অনুভূত হতে পারে।
  6. হরমোনাল অস্বাভাবিকতা:
    • পিসিওএসের কারণে অতিরিক্ত লোম ওঠা, মুখে ব্রণ, এবং চুল পাতলা হয়ে যাওয়া হতে পারে।

ডিম্বাশয় সিস্টের প্রতিকার:

ডিম্বাশয় সিস্টের চিকিৎসা সাধারণত এর আকার, অবস্থান এবং লক্ষণগুলোর ওপর নির্ভর করে। বেশিরভাগ সিস্টের জন্য চিকিৎসা প্রয়োজন হয় না, তবে যদি সিস্ট বড় হয় বা ব্যথা সৃষ্টি করে, তবে কিছু প্রতিকার হতে পারে:

  1. ওষুধের মাধ্যমে চিকিৎসা:
    • সাধারণত সিস্টের আকার ছোট হলে চিকিৎসকেরা গর্ভনিরোধক পিল বা হরমোনাল চিকিৎসা দিয়ে সিস্টের আকার নিয়ন্ত্রণে আনতে পারেন। এটি সিস্টটি ছোট করতে সাহায্য করতে পারে এবং ডিম্বাশয়ের কার্যকলাপ নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারে।
  2. অস্ত্রোপচার (Surgery):
    • যদি সিস্টটি বড়, ব্যথাদায়ক বা দীর্ঘস্থায়ী হয়, তবে অস্ত্রোপচার প্রয়োজন হতে পারে। ছোট সিস্টগুলি ল্যাপারোস্কোপিক সার্জারি (ল্যাপaroscopy) দিয়ে অপসারণ করা যেতে পারে, যা কম আক্রমণাত্মক এবং দ্রুত পুনরুদ্ধারযোগ্য। তবে কিছু বড় সিস্ট বা জটিল ক্ষেত্রে সাধারণ অস্ত্রোপচার প্রয়োজন হতে পারে।
  3. প্রাকৃতিক উপায় বা পরিবর্তন:
    • যদি সিস্টটি ছোট বা স্বাভাবিক হয়, তবে কিছু প্রাকৃতিক উপায় যেমন পুষ্টিকর খাদ্য, শরীরের ওজন নিয়ন্ত্রণ, এবং নিয়মিত ব্যায়াম সিস্টের আকার নিয়ন্ত্রণে রাখতে সহায়ক হতে পারে।
  4. অ্যান্টিইনফ্লেমেটরি ওষুধ:
    • সিস্টের কারণে যন্ত্রণা বা প্রদাহ থাকলে চিকিৎসক অ্যান্টি-ইনফ্লেমেটরি (anti-inflammatory) ওষুধ দিতে পারেন।
  5. পিসিওএসের জন্য চিকিৎসা:
    • পিসিওএস থাকলে, হরমোনাল চিকিৎসা (যেমন গর্ভনিরোধক পিল) বা ইনসুলিন প্রতিক্রিয়া সুষম রাখার জন্য ওষুধ দেয়া হতে পারে।
  6. নিয়মিত মেডিক্যাল পরিদর্শন:
    • চিকিৎসকের সাথে নিয়মিত যোগাযোগ এবং সিস্টের আকার ও অবস্থা পর্যবেক্ষণ করতে হতে পারে, বিশেষত সিস্টের কোনো লক্ষণ বা সমস্যা সৃষ্টি হলে।

মনে রাখবেন:

ডিম্বাশয়ের সিস্টের বেশিরভাগ ক্ষেত্রে কোনো গুরুতর সমস্যা সৃষ্টি হয় না এবং সময়ের সাথে এটি নিজে থেকেই সেরে যায়। তবে যদি আপনি কোনো অস্বাভাবিক লক্ষণ অনুভব করেন, যেমন ব্যথা, অস্বাভাবিক রক্তপাত, বা পেট ফুলে যাওয়া, তবে দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।

 

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *