Best Homeo Doctor

ডিম্বকোষের টিউমারের কারণ,লক্ষন,প্রতিকার

ডিম্বকোষ (Ovary) টিউমার হলো ডিম্বাশয়ের (ovary) মধ্যে অস্বাভাবিক কোষ বৃদ্ধির ফলে সৃষ্ট এক ধরনের টিউমার। এটি সাধারণত বিনাইন (benign) হতে পারে, তবে কিছু ক্ষেত্রে এটি ম্যালিগন্যান্ট (malignant) বা ক্যান্সারে রূপান্তরিত হতে পারে। ডিম্বকোষের টিউমার সাধারণত ডিম্বাশয়ের সিস্ট বা ফাইব্রয়েড রূপে হয়ে থাকে, তবে কিছু বিশেষ ক্ষেত্রে এটি ক্যান্সারও হতে পারে।

ডিম্বকোষের টিউমারের কারণ:

ডিম্বাশয়ের টিউমারের সঠিক কারণ এখনও পুরোপুরি জানা না গেলেও কিছু কারণ রয়েছে যা এর সৃষ্টি করতে পারে:

  1. হরমোনাল পরিবর্তন:
    • গর্ভাবস্থার সময় বা প্রজনন বয়সে হরমোনের পরিবর্তন ডিম্বাশয়ের টিউমার সৃষ্টি করতে পারে। বিশেষ করে, এস্ট্রোজেন এবং প্রজেস্টেরনের মাত্রার ওঠানামা ডিম্বাশয়ের কোষের অস্বাভাবিক বৃদ্ধি করতে পারে।
  2. ওভারিয়ান সিস্ট (Ovarian Cysts):
    • ডিম্বাশয়ের সিস্ট (যেমন ফোলিকুলার সিস্ট, করপাস লুটিয়াম সিস্ট) সাধারণত গর্ভধারণের জন্য তৈরি হয় এবং তা কোনো কারণে বৃদ্ধি পেলে সিস্টের আকারে টিউমারের মতো হয়ে যেতে পারে।
  3. বিকৃত কোষ (Cell Mutations):
    • ডিম্বাশয়ের কোষে মিউটেশন বা অস্বাভাবিক কোষ বৃদ্ধি ঘটলে, তা টিউমারের সৃষ্টি করতে পারে। এটি বিশেষত ম্যালিগন্যান্ট (ক্যান্সার) টিউমারের জন্য দায়ী।
  4. জেনেটিক কারণে:
    • কিছু ক্ষেত্রে, পরিবারের ইতিহাস বা বংশগত কারণে ডিম্বাশয়ে টিউমার হতে পারে। যেমন, ব্রেস্ট ক্যান্সার বা ওভারি ক্যান্সার-এর ইতিহাস থাকলে তা ডিম্বাশয়ের টিউমারের ঝুঁকি বাড়াতে পারে।
  5. অতিরিক্ত শরীরের ওজন (Obesity):
    • অতিরিক্ত ওজন বা মধুমেহ (Diabetes) থাকলে ডিম্বাশয়ের টিউমারের ঝুঁকি কিছুটা বেড়ে যেতে পারে।
  6. প্রজনন বয়সে সমস্যা:
    • নিয়মিত গর্ভধারণ না হওয়া বা প্রজনন সংক্রান্ত সমস্যা থাকলে তা ডিম্বাশয়ের টিউমারের ঝুঁকি বাড়াতে পারে।

ডিম্বকোষের টিউমারের লক্ষণ:

ডিম্বাশয়ের টিউমারের লক্ষণ অনেকসময় ধীরগতিতে প্রকাশিত হতে পারে এবং সেগুলি সাধারণত রোগী শুরুর দিকে বুঝতে পারে না। তবে কিছু সাধারণ লক্ষণ রয়েছে, যেমন:

  1. পেট বা তলপেটে ব্যথা:
    • ডিম্বাশয়ের টিউমার সাধারণত পেটের নীচের দিকে ব্যথা বা অস্বস্তি সৃষ্টি করতে পারে।
  2. অস্বাভাবিক মেনস্ট্রুয়াল চক্র (Irregular Menstrual Cycle):
    • টিউমার বা সিস্টের কারণে মাসিক চক্রে পরিবর্তন আসতে পারে, যেমন অতিরিক্ত রক্তপাত, মাসিকের সময় অনিয়ম ইত্যাদি।
  3. পেট ফুলে যাওয়া (Bloating):
    • টিউমারের কারণে পেট ফুলে যেতে পারে এবং প্রচণ্ড অস্বস্তি বা চাপ অনুভূত হতে পারে।
  4. মুত্রত্যাগ বা মলত্যাগে সমস্যা:
    • টিউমার বড় হলে এটি মূত্রথলি বা মলদ্বারে চাপ সৃষ্টি করতে পারে, যার ফলে মুত্র বা মলত্যাগে সমস্যা হতে পারে।
  5. ওজন হ্রাস বা ক্ষুধামান্দ্য:
    • কিছু ক্ষেত্রে, টিউমারের কারণে শরীরের মেটাবলিজম পরিবর্তিত হতে পারে, যা অতিরিক্ত ওজন হ্রাস বা ক্ষুধামান্দ্য সৃষ্টি করতে পারে।
  6. শরীরের অন্যান্য লক্ষণ:
    • কিছু গুরুতর ক্ষেত্রে, টিউমারের কারণে ক্লান্তি, অবসন্নতা, ত্বকের প্যালোর (বর্ণহীনতা) দেখা দিতে পারে, বিশেষত যদি এটি ম্যালিগন্যান্ট (ক্যান্সার) হয়।

ডিম্বকোষের টিউমারের প্রতিকার:

ডিম্বাশয়ের টিউমারের চিকিৎসা তার প্রকৃতি (বিনাইন বা ম্যালিগন্যান্ট) এবং আকারের উপর নির্ভর করে। এখানে কিছু সাধারণ প্রতিকার:

  1. বিনাইন টিউমার (Benign Tumors):
  • নিরীক্ষণ: যদি টিউমারটি ছোট এবং কোনও গুরুতর লক্ষণ সৃষ্টি না করে, তবে চিকিৎসক কেবল এটি পর্যবেক্ষণ করতে পারেন। নিয়মিত পরীক্ষা দিয়ে টিউমারের আকারের পরিবর্তন বা অন্য কোনও সমস্যা দেখা দিলে চিকিৎসা শুরু করা হয়।
  • সিস্ট অপসারণ: যদি টিউমার সিস্ট (যেমন ফোলিকুলার সিস্ট) হয়, তবে এটি সাধারণত সার্জারি বা ড্রেনেজের মাধ্যমে অপসারণ করা যেতে পারে।
  • ওষুধ: কিছু ক্ষেত্রে, টিউমারের কারণে হরমোনাল পরিবর্তন বা সিস্টের কারণে ওষুধ দেওয়া হতে পারে।
  1. ম্যালিগন্যান্ট টিউমার (Malignant Tumors):
  • সার্জারি: যদি টিউমারটি ক্যান্সার জাতীয় হয়, তবে এটি অপসারণের জন্য সার্জারি করা হয়। ডিম্বাশয় বা প্রাসঙ্গিক অংশ অপসারণ করা হতে পারে।
  • কেমোথেরাপি: ক্যান্সার থেকে সৃষ্ট টিউমারের জন্য কেমোথেরাপি ব্যবহার করা হতে পারে, যা টিউমারের কোষ ধ্বংস করে।
  • রেডিওথেরাপি: রেডিওথেরাপি ক্যান্সার কোষকে ধ্বংস করতে ব্যবহৃত হতে পারে।
  • হরমোন থেরাপি: কিছু ক্যান্সারের ক্ষেত্রে হরমোন থেরাপি প্রয়োগ করা হয়, যা টিউমারের বৃদ্ধি থামাতে সহায়ক।
  1. পুনঃপরীক্ষা পর্যবেক্ষণ:
  • টিউমারটি ছোট হলে বা বিনাইন হলে, চিকিৎসক সাধারণত পর্যবেক্ষণ বা নিয়মিত পরীক্ষা করানোর পরামর্শ দেন। তবে যদি এটি দ্রুত বড় হয় বা লক্ষণ বাড়তে থাকে, তবে দ্রুত চিকিৎসা প্রয়োজন।

প্রতিরোধ:

ডিম্বাশয়ের টিউমারের কিছু নির্দিষ্ট প্রতিরোধ ব্যবস্থা নেওয়া যেতে পারে:

  1. সুষম খাদ্য গ্রহণ:
    • স্বাস্থ্যকর জীবনযাপন, সুষম খাদ্য এবং নিয়মানুবর্তী ব্যায়াম ডিম্বাশয়ের স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী হতে পারে।
  2. প্রজনন স্বাস্থ্য সুরক্ষা:
    • নিয়মিত গর্ভধারণ এবং প্রজনন সংক্রান্ত বিষয়গুলোর উপর সচেতনতা বাড়ানো।
  3. অতিরিক্ত ওজন কমানো:
    • অতিরিক্ত ওজন বা মধুমেহ থাকার কারণে ডিম্বাশয়ের টিউমারের ঝুঁকি বাড়তে পারে, তাই স্বাস্থ্যের যত্ন নেওয়া উচিত।
  4. নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষা:
    • গাইনোকোলজিস্টের কাছে নিয়মিত পরীক্ষা ও পরামর্শ নেওয়া এবং প্রয়োজনীয় স্ক্যান বা আলট্রাসোনোগ্রাফি করানো, বিশেষ করে যদি পরিবারের ইতিহাস থাকে।

শেষ কথা:

ডিম্বকোষের টিউমার সাধারণত বিনাইন হয়ে থাকে এবং সঠিক সময়ে চিকিৎসা নিলে এটি খুব কম ক্ষতি করতে পারে। তবে কিছু টিউমার ম্যালিগন্যান্ট হতে পারে, যা গুরুতর হতে পারে এবং দ্রুত চিকিৎসা প্রয়োজন। ডিম্বাশয়ের টিউমারের কোনও লক্ষণ দেখা দিলে তৎকালীন চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত, যাতে পরিস্থিতি দ্রুত সমাধান করা যায়।

 

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *