Best Homeo Doctor

ডিপথেরিয়া কি,কারন,লক্ষন,প্রতিকার

ডিপথেরিয়া (Diphtheria) একটি গুরুতর ব্যাকটেরিয়াল সংক্রমণ, যা প্রধানত শ্বাসযন্ত্র (গলা, নাক) বা ত্বকে প্রভাব ফেলে। এটি করিনেব্যাকটেরিয়াম ডিপথেরিয়ি (Corynebacterium diphtheriae) নামক ব্যাকটেরিয়ার দ্বারা সৃষ্টি হয়। এই রোগটি জীবনের জন্য বিপজ্জনক হতে পারে, কারণ এটি শ্বাসনালীতে একটি আবরণ সৃষ্টি করে, যা শ্বাসযন্ত্রের কার্যকারিতা ব্যাহত করতে পারে। ডিপথেরিয়া অত্যন্ত সংক্রামক, এবং এটি অল্প সময়ের মধ্যে এক ব্যক্তির কাছ থেকে অন্য ব্যক্তির মধ্যে ছড়িয়ে পড়তে পারে।

ডিপথেরিয়ার কারণ:

ডিপথেরিয়া করিনেব্যাকটেরিয়াম ডিপথেরিয়ি নামক ব্যাকটেরিয়া দ্বারা সৃষ্ট। এই ব্যাকটেরিয়া আক্রান্ত ব্যক্তির শরীর থেকে বের হওয়া শ্লেষ্মা, কাশি, বা থুতু দ্বারা অন্য ব্যক্তির শরীরে প্রবেশ করতে পারে। সাধারণত এটি পরবর্তী উপায়ে ছড়ায়:

  1. শ্বাসযন্ত্রের মাধ্যমে:
    ডিপথেরিয়া আক্রান্ত ব্যক্তি কাশি, হাঁচি বা কথা বলার মাধ্যমে সংক্রমণ ছড়ায়। এটি শ্বাসনালী এবং গলাতে বিষাক্ত আবরণ সৃষ্টি করতে পারে, যা শ্বাসকষ্ট সৃষ্টি করে।
  2. স্পর্শের মাধ্যমে:
    আক্রান্ত ব্যক্তির ত্বক বা তার ব্যবহার করা জিনিসপত্রে সংক্রমণ থাকতে পারে, যা অন্য ব্যক্তির ত্বকে ছড়িয়ে পড়ে।
  3. অসংক্রামিত খাবার বা পানি:
    সংক্রামিত পানি বা খাবার খাওয়ার মাধ্যমেও এটি ছড়িয়ে পড়তে পারে, যদিও এটি তুলনামূলকভাবে কম সাধারণ।

ডিপথেরিয়ার লক্ষণ:

ডিপথেরিয়া আক্রান্ত হওয়ার পর সাধারণত কয়েক দিন (২-৫ দিন) ইনকিউবেশন পিরিয়ডের মধ্যে থাকে। রোগের লক্ষণগুলি অন্তত কয়েক ঘণ্টার মধ্যে স্পষ্ট হতে পারে এবং তাতে অন্তর্ভুক্ত থাকে:

  1. গলার ব্যথা:
    ডিপথেরিয়া আক্রান্ত ব্যক্তির গলাতে ব্যথা অনুভূত হতে পারে।
  2. উচ্চ তাপমাত্রা (জ্বর):
    সাধারণত ডিপথেরিয়ার সাথে উঁচু জ্বর দেখা দেয়।
  3. শ্বাসকষ্ট গলা বন্ধ হওয়া:
    ডিপথেরিয়া আক্রান্ত হলে শ্বাসনালীতে একটি সাদা বা ধূসর আবরণ তৈরি হয়, যা শ্বাসকষ্ট সৃষ্টি করে। কখনও কখনও গলা প্রায় বন্ধ হয়ে যেতে পারে, ফলে শ্বাসপ্রশ্বাসে অসুবিধা হয়।
  4. বমি বা পেটের সমস্যা:
    কিছু ক্ষেত্রে বমি বা পেটের অস্বস্তি দেখা যেতে পারে।
  5. থুতু বা শ্লেষ্মা:
    গলা থেকে সাদা বা ধূসর শ্লেষ্মা বের হতে পারে, যা শ্বাস নেবার সময় কঠিন করে তোলে।
  6. হৃৎস্পন্দন দ্রুত হওয়া:
    রোগী অসুস্থ থাকলে, হৃদস্পন্দন দ্রুত হতে পারে এবং এক্ষেত্রে হার্টের সমস্যা হতে পারে।
  7. শক্ত পেট বা পেশির ব্যথা:
    কিছু ক্ষেত্রে শরীরের পেশিতে ব্যথা বা অস্বস্তি অনুভূত হতে পারে।
  8. থেকে বর্ণহীনতা বা সাধারণ দুর্বলতা:
    ডিপথেরিয়া শরীরের শক্তি কমিয়ে দেয়, ফলে সাধারণ দুর্বলতা, ক্লান্তি বা বর্ণহীনতা অনুভূত হতে পারে।

ডিপথেরিয়ার প্রতিকার:

ডিপথেরিয়ার চিকিৎসা অত্যন্ত জরুরি, এবং দ্রুত পদক্ষেপ নিলে রোগের ফলস্বরূপ মৃত্যু প্রতিরোধ করা সম্ভব। কিছু গুরুত্বপূর্ণ প্রতিকার এবং চিকিৎসা পদ্ধতি হলো:

  1. অ্যান্টিবায়োটিক চিকিৎসা:
    ডিপথেরিয়ার মূল চিকিৎসা হলো অ্যান্টিবায়োটিক। ডাক্তার সাধারণত পেনিসিলিন বা ইরিথ্রোমাইসিনের মতো অ্যান্টিবায়োটিক দেয়, যা ব্যাকটেরিয়ার বিস্তার রোধ করতে সাহায্য করে।
  2. ডিপথেরিয়া টক্সইন অ্যন্টিভেনাম:
    ডিপথেরিয়া টক্সইন (বিশেষ ধরনের বিষাক্ত পদার্থ) দূর করতে অ্যান্টিটক্সিন দেওয়া হয়। এটি রোগের লক্ষণ ও গুরুতরতা কমাতে সহায়তা করে এবং দ্রুত সুস্থ হতে সাহায্য করে।
  3. অক্সিজেন থেরাপি:
    শ্বাসকষ্ট বা শ্বাসনালী বন্ধ হয়ে গেলে, রোগীকে অক্সিজেন থেরাপি প্রদান করা হতে পারে যাতে শ্বাস নেওয়ার প্রক্রিয়া সহজ হয়।
  4. ভ্যাকসিনেশন:
    ডিপথেরিয়া ভ্যাকসিন শিশুদের জন্য একটি নিয়মিত ভ্যাকসিন, যা সাধারণত ডিপথেরিয়া, টেটানাস, এবং পারটাসিস (DTP) কম্বিনেশন ভ্যাকসিন হিসাবে দেওয়া হয়। এই ভ্যাকসিন ডিপথেরিয়া প্রতিরোধে অত্যন্ত কার্যকর এবং এটি শিশুর বয়স ২, ৪, ৬, ১৫ মাস এবং ৪-৬ বছর বয়সে দেওয়া হয়। এছাড়াও, প্রাপ্তবয়স্কদের জন্য একটি টিটানাস/ডিপথেরিয়া বুস্টার ডোজ (৫-১০ বছর পরপর) নেওয়া উচিত।
  5. পুষ্টি এবং বিশ্রাম:
    রোগীকে সঠিক পুষ্টি দেওয়া এবং পর্যাপ্ত বিশ্রাম নেওয়া খুব গুরুত্বপূর্ণ। এটি শরীরের রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা শক্তিশালী করতে সহায়তা করে।
  6. হাসপাতালে ভর্তি:
    গুরুতর ক্ষেত্রে, যেখানে শ্বাসকষ্ট বা হৃদরোগের সমস্যা হতে পারে, রোগীকে হাসপাতালে ভর্তি করা হতে পারে এবং প্রয়োজনীয় মেডিকেল সহায়তা প্রদান করা হয়।

সারাংশ:

ডিপথেরিয়া একটি অত্যন্ত সংক্রামক ব্যাকটেরিয়াল সংক্রমণ, যা সাধারণত গলা বা শ্বাসনালীতে প্রভাব ফেলে। এটি করিনেব্যাকটেরিয়াম ডিপথেরিয়ি ব্যাকটেরিয়ার কারণে ঘটে এবং শ্বাসকষ্ট, গলা ব্যথা, উচ্চ তাপমাত্রা, ও শ্বাসনালীতে আবরণ সৃষ্টি হতে পারে। চিকিৎসায় অ্যান্টিবায়োটিক এবং অ্যান্টিটক্সিনের ব্যবহার গুরুত্বপূর্ণ, এবং ভ্যাকসিনেশন প্রাথমিক প্রতিরোধের জন্য অত্যন্ত কার্যকর। দ্রুত চিকিৎসা গ্রহণ এবং শ্বাসকষ্ট বা অন্যান্য গুরুতর লক্ষণ দেখা দিলে বিশেষ চিকিৎসা নেওয়া জরুরি।

 

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *