ডিপথেরিয়া (Diphtheria) একটি গুরুতর সংক্রামক ব্যাকটেরিয়াল রোগ যা Corynebacterium diphtheriae ব্যাকটেরিয়ার কারণে হয়। এই ব্যাকটেরিয়া সাধারণত গলা, নাক, ত্বক, বা চোখের মধ্যে সংক্রমণ সৃষ্টি করে, এবং এটি শরীরে বিষাক্ত টক্সিন উৎপন্ন করতে পারে, যা প্রাণঘাতী হতে পারে। ডিপথেরিয়া প্রধানত শিশুদের মধ্যে হয়ে থাকে, তবে প্রাপ্তবয়স্কদের মধ্যেও হতে পারে।
ডিপথেরিয়ার কারণ:
ডিপথেরিয়া মূলত Corynebacterium diphtheriae নামক ব্যাকটেরিয়ার কারণে হয়। এটি সাধারণত বাতাসে থাকা ড্রপলেট (যেমন: কাশি বা হাঁচি) অথবা আক্রান্ত ব্যক্তির সংস্পর্শে আসার মাধ্যমে ছড়ায়। ডিপথেরিয়া ভাইরাসের মতো কোনো সংক্রমণ নয়, এটি একটি ব্যাকটেরিয়াল সংক্রমণ যা শরীরের বিভিন্ন অংশে সংক্রমণ ঘটাতে পারে, যেমন গলা, নাক, ত্বক বা চোখে।
ডিপথেরিয়ার লক্ষণ:
ডিপথেরিয়া সংক্রমণের লক্ষণগুলো সাধারণত ব্যাকটেরিয়ার শরীরে প্রবেশের ২-৫ দিন পর দেখা যায়। এই লক্ষণগুলি হতে পারে:
- গলা ও নাকের প্রদাহ: গলায় ব্যথা, গলা চুলকানো বা গলা বন্ধ হয়ে আসা।
- ফাঁপা বা সাদা আবরণ: গলার ভিতর একটি সাদা বা ধূসর আবরণ তৈরি হতে পারে যা শ্বাস নেওয়ার জন্য বাধা সৃষ্টি করতে পারে।
- জ্বর: হালকা বা মাঝারি জ্বর হতে পারে।
- শ্বাসকষ্ট: গলা বা নাকে প্রদাহের কারণে শ্বাসপ্রশ্বাসে সমস্যা হতে পারে।
- বমি বা বমিভাব: বমি বা বমিভাবও দেখা দিতে পারে।
- কাঁপুনি এবং ক্লান্তি: শরীর দুর্বল, ক্লান্ত অনুভূতি এবং কাঁপুনি হতে পারে।
- হৃৎস্পন্দন ও স্নায়ুজনিত সমস্যা: টক্সিন শরীরে প্রবেশ করলে হৃদপিণ্ড ও স্নায়ু সংক্রান্ত সমস্যাও দেখা দিতে পারে, যেমন হার্টবিট কমে যাওয়া, অচেতন হয়ে যাওয়া ইত্যাদি।
ডিপথেরিয়ার প্রতিকার:
ডিপথেরিয়ার চিকিৎসা দ্রুত করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, কারণ এটি জটিলতা সৃষ্টি করতে পারে এবং প্রাণঘাতী হতে পারে। এর প্রতিকার বা চিকিৎসার প্রধান পদ্ধতি গুলি হলো:
- ডিপথেরিয়া টিকা (Diphtheria vaccine): ডিপথেরিয়া প্রতিরোধে সবচেয়ে কার্যকর উপায় হলো টিকাদান। সাধারণত শিশুদের জন্য DTP (Diphtheria, Tetanus, Pertussis) টিকা দেওয়া হয়, যা ডিপথেরিয়ার বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলে। এই টিকাটি ৫টি ডোজে দেওয়া হয় এবং প্রতি ১০ বছরে পুনঃটিকা নেওয়া হয়।
- অ্যান্টিবায়োটিক: ডিপথেরিয়া আক্রান্ত হলে অ্যান্টিবায়োটিক যেমন পেনিসিলিন বা এরিথ্রোমাইসিন দিয়ে ব্যাকটেরিয়া নির্মূল করা হয়।
- টক্সিন নিরোধক (Diphtheria antitoxin): যদি রোগীকে ডিপথেরিয়ার টক্সিন দ্বারা ক্ষতিগ্রস্ত করা হয়, তবে বিশেষ টক্সিন নিরোধক (Diphtheria Antitoxin) দেওয়া হয়, যা শরীর থেকে টক্সিন সরিয়ে নিতে সহায়তা করে।
- অক্সিজেন থেরাপি: শ্বাসকষ্টের কারণে অক্সিজেন থেরাপি প্রয়োজন হতে পারে।
- সহায়ক চিকিৎসা: প্রয়োজনে রোগীকে হাসপাতালে রেখে পর্যবেক্ষণ করা হয় এবং চিকিৎসক পরামর্শ অনুযায়ী চিকিৎসা চালানো হয়।
ডিপথেরিয়া প্রতিরোধে সতর্কতা:
- টিকা নেওয়া: ডিপথেরিয়ার বিরুদ্ধে টিকা নেওয়া সবচেয়ে কার্যকর প্রতিরোধ ব্যবস্থা। শিশুদের নিয়মিত টিকা দেওয়া এবং প্রাপ্তবয়স্কদের জন্য প্রতি ১০ বছর পরপর টিকা নেওয়া উচিত।
- স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলা: আক্রান্ত ব্যক্তির সংস্পর্শে এলে সতর্ক থাকা এবং সাবান দিয়ে হাত ধোয়ার অভ্যাস রাখা।
- স্বাস্থ্য পরামর্শ: ডিপথেরিয়া লক্ষণ দেখা দিলে দ্রুত চিকিৎসকের কাছে যাওয়া এবং প্রয়োজনীয় চিকিৎসা নেওয়া।
বি.দ্র. ডিপথেরিয়া একটি জীবনের জন্য বিপজ্জনক রোগ হতে পারে, তাই যেকোনো লক্ষণ দেখা দিলে দ্রুত চিকিৎসা গ্রহণ করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।