Best Homeo Doctor

ডায়াবেটিস কি,কারন,লক্ষন,প্রতিকার

ডায়াবেটিস (Diabetes) কী?

ডায়াবেটিস হলো একটি দীর্ঘস্থায়ী (ক্রনিক) রোগ, যেখানে শরীর রক্তে শর্করার (গ্লুকোজ) পরিমাণ নিয়ন্ত্রণ করতে অক্ষম হয়ে পড়ে। শরীরের সঠিক পরিমাণে ইনসুলিন (Insulin) তৈরি না হলে বা ইনসুলিনের কার্যকারিতা ঠিক মতো না থাকলে এই অবস্থা সৃষ্টি হয়। ইনসুলিন হলো একটি হরমোন যা প্যানক্রিয়াস (পেটের নিচে অবস্থিত অঙ্গ) থেকে নিঃসৃত হয় এবং শরীরের কোষে শর্করা প্রবেশ করতে সাহায্য করে। যখন শরীরের কোষে শর্করা প্রবাহিত হতে পারে না, তখন রক্তে শর্করার পরিমাণ বাড়তে থাকে, যা ডায়াবেটিসের মূল লক্ষণ।

ডায়াবেটিসের প্রকারভেদ:

ডায়াবেটিস সাধারণত তিনটি প্রকারে বিভক্ত হয়:

  1. টাইপ ডায়াবেটিস (Type 1 Diabetes):
    • এটি একটি স্বয়ংক্রিয় রোগ, যেখানে শরীর ইনসুলিন তৈরি করতে পারে না। সাধারণত এই ধরনের ডায়াবেটিস ছোট বয়সে (বাচ্চা বা তরুণ বয়সে) দেখা যায়।
  2. টাইপ ডায়াবেটিস (Type 2 Diabetes):
    • এটি সবচে সাধারণ প্রকার, যেখানে শরীর যথেষ্ট ইনসুলিন তৈরি করে, তবে কোষগুলো ইনসুলিনের প্রতিক্রিয়া কমে যায় (ইনসুলিন প্রতিরোধীতা)। টাইপ ২ ডায়াবেটিস সাধারণত বয়স্কদের মধ্যে বেশি দেখা যায়, তবে বর্তমানে এটি শিশুদের মধ্যেও দেখা যাচ্ছে।
  3. গর্ভাবস্থায় ডায়াবেটিস (Gestational Diabetes):
    • এটি গর্ভবতী মহিলাদের মধ্যে ঘটে এবং সাধারণত গর্ভধারণের সময় হয়। এটি অন্ততঃ সময়ের জন্য থাকে, তবে কিছু ক্ষেত্রে গর্ভধারণের পরও এটি থাকতে পারে।

ডায়াবেটিসের কারণ:

ডায়াবেটিসের কিছু সাধারণ কারণ হতে পারে:

  1. জেনেটিক কারণ:
    • পরিবারে যদি কারও ডায়াবেটিস থাকে, তবে অন্যদেরও ডায়াবেটিস হওয়ার সম্ভাবনা বেশি থাকে।
  2. অতিরিক্ত ওজন (ওবেসিটি):
    • স্থূলতা বা অতিরিক্ত ওজন টাইপ ২ ডায়াবেটিসের প্রধান কারণ হতে পারে, কারণ এটি ইনসুলিন প্রতিরোধ সৃষ্টি করতে পারে।
  3. অপর্যাপ্ত শারীরিক কার্যকলাপ:
    • শারীরিক পরিশ্রম কম হলে শরীরের কোষে ইনসুলিনের কার্যকারিতা কমে যেতে পারে, যা ডায়াবেটিসের ঝুঁকি বাড়ায়।
  4. অস্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস:
    • অতিরিক্ত চিনি ও মিষ্টি খাদ্য গ্রহণ, অপর্যাপ্ত ফল ও শাকসবজি খাওয়া, অথবা অস্বাস্থ্যকর ফ্যাটের কারণে ডায়াবেটিসের ঝুঁকি বাড়ে।
  5. বয়স:
    • বয়স ৪০ বা তার বেশি হলে টাইপ ২ ডায়াবেটিস হওয়ার ঝুঁকি বাড়ে।
  6. অ্যাপনি বা অন্যান্য স্বাস্থ্য সমস্যা:
    • পলিসিস্টিক ওভারির রোগ (PCOS), উচ্চ রক্তচাপ, উচ্চ কোলেস্টেরল বা হৃদরোগের ইতিহাসও ডায়াবেটিসের ঝুঁকি বাড়াতে পারে।

ডায়াবেটিসের লক্ষণ:

ডায়াবেটিসের সাধারণ লক্ষণগুলো হলো:

  1. অতিরিক্ত পিপাসা (Polydipsia):
    • রক্তে শর্করার পরিমাণ বৃদ্ধি পাওয়ায় শরীর অতিরিক্ত পানি শোষণ করে, যার ফলে পিপাসা অনুভূত হয়।
  2. অতিরিক্ত প্রস্রাব (Polyuria):
    • অতিরিক্ত পিপাসা ও পানি পান করার কারণে অতিরিক্ত প্রস্রাব হয়।
  3. অতিরিক্ত ক্ষুধা (Polyphagia):
    • শরীর যথাযথভাবে শর্করা ব্যবহার করতে না পারায় ক্ষুধা অনুভব হয়, যদিও খাবার খাওয়ার পরও ক্ষুধা অনুভূত হয়।
  4. শক্তির অভাব:
    • শরীর কোষে পর্যাপ্ত শক্তি (গ্লুকোজ) গ্রহণ করতে না পারায় দুর্বলতা ও ক্লান্তি অনুভূত হয়।
  5. অবস্থা দ্রুত খারাপ হওয়া:
    • ইনফেকশন বা ক্ষত সুস্থ হওয়ার জন্য বেশি সময় লাগে। শরীরের স্বাভাবিক রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যায়।
  6. অদৃশ্য দৃষ্টি বা দৃষ্টিশক্তির সমস্যা:
    • রক্তে শর্করার পরিমাণ বেশি থাকলে চোখের রেটিনায় সমস্যা সৃষ্টি হতে পারে, যার ফলে দৃষ্টি অস্পষ্ট হয়ে যেতে পারে।
  7. ত্বকের সমস্যা:
    • ত্বকে ঘা, সংক্রমণ বা ক্ষত দীর্ঘ সময় ধরে স্থায়ী হতে পারে এবং সেগুলি দ্রুত সেরে উঠতে পারে না।

ডায়াবেটিসের প্রতিকার:

ডায়াবেটিসের চিকিৎসা, নিয়ন্ত্রণ এবং প্রতিকার করা সম্ভব, তবে তা দীর্ঘমেয়াদী এবং ধৈর্যশীল চিকিৎসা প্রক্রিয়া। কিছু সাধারণ প্রতিকার পদ্ধতি হলো:

  1. খাদ্যাভ্যাস পরিবর্তন:
    • সুস্থ ও সুষম খাবার খাওয়া। কম শর্করা চর্বি জাতীয় খাবার খাওয়া উচিত।
    • শাকসবজি, ফলমূল, এবং উচ্চ ফাইবার সমৃদ্ধ খাবার খাওয়া উচিত। ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য গ্লাইসেমিক ইনডেক্স (GI) কম এমন খাবার বেছে নেওয়া উচিত।
  2. নিয়মিত ব্যায়াম:
    • শারীরিক পরিশ্রম যেমন হাঁটা, দৌড়ানো বা সাঁতার কাটা নিয়মিত করা উচিত, যাতে শরীরে ইনসুলিন প্রতিরোধ কমে এবং রক্তে শর্করার পরিমাণ নিয়ন্ত্রণে থাকে।
  3. ওজন নিয়ন্ত্রণ:
    • অতিরিক্ত ওজন কমানো গুরুত্বপূর্ণ। স্বাস্থ্যকর ডায়েট এবং ব্যায়াম দ্বারা শরীরের অতিরিক্ত মেদ কমানো উচিত।
  4. ওষুধ ব্যবহার:
    • টাইপ ১ ডায়াবেটিসের জন্য ইনসুলিন থেরাপি ব্যবহার করতে হয়।
    • টাইপ ২ ডায়াবেটিসের জন্য নানা ধরনের অ্যান্টি-ডায়াবেটিক ওষুধ ব্যবহার করা হয় যেমন মেটফরমিন, সুলফোনাইল ইউরিয়া, এমপ্যাগলিফ্লোজিন ইত্যাদি।
  5. রক্তে শর্করা মনিটর করা:
    • রক্তে শর্করার পরিমাণ নিয়মিত পরীক্ষা করা এবং প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া।
  6. স্ট্রেস নিয়ন্ত্রণ:
    • মানসিক চাপ কমাতে ও শিথিল করতে মেডিটেশন, যোগব্যায়াম বা গভীর শ্বাস প্রশ্বাস নেওয়া গুরুত্বপূর্ণ।
  7. দ্রুত চিকিৎসা পরামর্শ:
    • ডায়াবেটিসের যেকোনো সমস্যা বা লক্ষণ দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নেয়া উচিত, কারণ এটি কিডনি, হৃদরোগ, চোখের সমস্যা বা নিউরোপ্যাথির মতো জটিলতা সৃষ্টি করতে পারে।

পরিশেষ:

ডায়াবেটিস একটি দীর্ঘস্থায়ী রোগ, তবে সঠিক চিকিৎসা, খাদ্যাভ্যাস এবং জীবনযাত্রার পরিবর্তনের মাধ্যমে এর নিয়ন্ত্রণ সম্ভব। রোগীদেরকে নিয়মিত চিকিৎসকের পরামর্শ এবং স্বাস্থ্যকর জীবনধারা মেনে চলা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

 

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *