Best Homeo Doctor

টেকিকার্ডিয়া কি,কারন,লক্ষন,প্রতিকার

টেকিকার্ডিয়া (Tachycardia) হলো এক ধরনের হৃদরোগ যার মধ্যে হৃদস্পন্দন খুব দ্রুত হয়। স্বাভাবিকভাবে একজন সুস্থ ব্যক্তির হৃদস্পন্দন প্রতি মিনিটে ৬০ থেকে ১০০ বিটের মধ্যে থাকে, তবে টেকিকার্ডিয়ায় হৃদস্পন্দন প্রতি মিনিটে ১০০ বিট বা তার বেশি হয়ে যায়। এটি হৃদপিণ্ডের অস্বাভাবিক দ্রুত স্পন্দন সৃষ্টি করতে পারে, যা কখনও কখনও বিপজ্জনক হতে পারে।

কারণ:

  1. অতিরিক্ত শারীরিক চাপ: অতিরিক্ত পরিশ্রম বা শারীরিক চাপের কারণে হৃদস্পন্দন দ্রুত হতে পারে।
  2. মানসিক চাপ: উদ্বেগ, দুশ্চিন্তা বা স্ট্রেসের কারণে হৃদস্পন্দন দ্রুত হতে পারে।
  3. হরমোনাল সমস্যা: থাইরয়েড গ্রন্থির অতিরিক্ত কার্যক্রম (হাইপারথাইরয়েডিজম) টেকিকার্ডিয়া সৃষ্টি করতে পারে।
  4. অ্যালকোহল বা ক্যাফেইন: অতিরিক্ত মদ্যপান বা ক্যাফেইন (যেমন চা, কফি) টেকিকার্ডিয়া সৃষ্টি করতে পারে।
  5. অতিরিক্ত তামাক ব্যবহার: ধূমপানও হৃদস্পন্দন দ্রুত করতে পারে।
  6. হৃদরোগ: হার্ট অ্যাটাক, হার্ট ফেইলিওর বা অন্যান্য হৃদরোগের কারণে টেকিকার্ডিয়া হতে পারে।
  7. রক্তাল্পতা (Anemia): রক্তে হিমোগ্লোবিনের পরিমাণ কম হলে হৃদস্পন্দন বাড়ে।
  8. দীর্ঘস্থায়ী গরম পরিবেশ: অতিরিক্ত গরমেও শরীরের তাপমাত্রা বেড়ে গিয়ে হৃদস্পন্দন দ্রুত হতে পারে।
  9. অ্যালার্জি বা ইনফেকশন: কিছু ধরনের ইনফেকশন বা অ্যালার্জির প্রতিক্রিয়া হিসেবেও এটি হতে পারে।

লক্ষণ:

  • দ্রুত বা অস্বাভাবিক হৃদস্পন্দন: হৃদস্পন্দন খুব দ্রুত অনুভূত হতে পারে, যা পেটের বা বুকের মধ্যে চাপ বা অস্বস্তি সৃষ্টি করতে পারে।
  • শ্বাসকষ্ট: দ্রুত হৃদস্পন্দনের কারণে শ্বাস নিতে সমস্যা হতে পারে।
  • অতিরিক্ত ক্লান্তি বা দুর্বলতা: হৃদস্পন্দন দ্রুত হওয়া শরীরের শক্তি কমিয়ে দেয়, ফলে ক্লান্তি অনুভূত হতে পারে।
  • মাথা ঘোরা বা বোধহীনতা: দ্রুত হৃদস্পন্দন মাথা ঘোরা বা বোধহীনতা সৃষ্টি করতে পারে।
  • বুকের ব্যথা বা চাপ: কিছু ক্ষেত্রে বুকের মধ্যে ব্যথা বা চাপ অনুভূত হতে পারে।
  • বমি বা বমি বমি ভাব: অতিরিক্ত দ্রুত হৃদস্পন্দনের কারণে বমি বা বমি বমি ভাব হতে পারে।
  • চোখের সামনের অন্ধকার দেখা: হঠাৎ দ্রুত হৃদস্পন্দন চোখের সামনে অন্ধকার বা ঝাপসা দেখা সৃষ্টি করতে পারে।

প্রতিকার:

  1. অ্যান্টিঅ্যারিথমিক ওষুধ: টেকিকার্ডিয়া নিয়ন্ত্রণের জন্য চিকিৎসক প্রেস্ক্রাইব করতে পারেন অ্যারিথমিয়া প্রতিরোধক ওষুধ।
  2. বেটাব্লকারস: এই ওষুধগুলি হৃদস্পন্দন কমাতে সাহায্য করে এবং হৃদরোগের ঝুঁকি কমাতে পারে।
  3. লাইফস্টাইল পরিবর্তন:
    • মানসিক চাপ কমানো: স্ট্রেস কমানোর জন্য যোগব্যায়াম, মেডিটেশন বা শখের কাজ করতে পারেন।
    • নিয়মিত শারীরিক কার্যকলাপ: নিয়মিত ব্যায়াম হৃদরোগের ঝুঁকি কমাতে সহায়তা করে।
    • সুষম খাদ্য গ্রহণ: সুষম খাদ্য যেমন ফল, শাকসবজি, এবং কম চর্বিযুক্ত খাবার গ্রহণ করা।
    • ধূমপান এবং অ্যালকোহল ত্যাগ: এই দুটি অভ্যাস টেকিকার্ডিয়া বৃদ্ধি করতে পারে, তাই এগুলো পরিহার করা উচিত।
  4. হৃদরোগের চিকিৎসা:
    • অ্যাবলেশন (Ablation): এই পদ্ধতিতে হৃদযন্ত্রের অস্বাভাবিক অংশে তাপ বা ফ্রিজের মাধ্যমে ক্ষতি করে, যাতে অস্বাভাবিক হৃদস্পন্দন নিয়ন্ত্রণে আনা যায়।
    • হার্ট পেসমেকার বা ইমপ্লান্টেবল কার্ডিওভার্টারডিফিব্রিলেটর (ICD): কিছু ক্ষেত্রে পেসমেকার বা ICD ব্যবহার করা হতে পারে, যা অস্বাভাবিক হৃদস্পন্দন নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে।
  5. রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ: উচ্চ রক্তচাপ বা অন্যান্য হৃদরোগের সমস্যার চিকিৎসা নিয়ন্ত্রণে রাখা গুরুত্বপূর্ণ।

যদি টেকিকার্ডিয়া দীর্ঘস্থায়ী বা তীব্র হয়, তাহলে একজন হৃদরোগ বিশেষজ্ঞের কাছে যাওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়। এর দ্রুত চিকিৎসা না হলে গুরুতর হৃদরোগ বা অন্যান্য জটিলতা তৈরি হতে পারে।

 

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *