জ্বর হাম (Fever with Measles) বা হাম (Measles) একটি ভাইরাল রোগ, যা সাধারণত শিশুদের মধ্যে দেখা যায়। এটি মিসেলস ভাইরাস (Measles virus) দ্বারা সৃষ্ট হয় এবং এক ধরনের বিশ্ববিদ্যালয়ের বা শ্বাসযন্ত্রের সংক্রমণ। হাম একটি highly contagious (অত্যন্ত সংক্রামক) রোগ, এবং এটি রেসপিরেটরি ড্রপলেটের মাধ্যমে ছড়ায়, যেমন কাশি বা হাঁচির মাধ্যমে।
কারণ:
হাম সাধারণত মিসেলস ভাইরাস দ্বারা ঘটে। এই ভাইরাসটি শ্বাসনালী, নাক বা গলার মাধ্যম দিয়ে শরীরে প্রবেশ করে এবং সেখান থেকে তা শরীরের অন্যান্য অংশে ছড়িয়ে পড়ে। এই ভাইরাসটি সাধারণত শ্বাস-প্রশ্বাসের মাধ্যমে একজন ব্যক্তি থেকে অন্য ব্যক্তিতে ছড়ায়।
এটি একটি ভাইরাল ইনফেকশন, যার মাধ্যমে শরীরের রেসপিরেটরি ট্র্যাক্টে সংক্রমণ সৃষ্টি হয়। আক্রান্ত ব্যক্তি কাশি বা হাঁচি দিলে ভাইরাসটি বাতাসে ছড়িয়ে পড়ে এবং অন্যদের মধ্যে সংক্রমণ ঘটাতে পারে।
প্রধান কারণ:
- মিসেলস ভাইরাস (Measles virus)।
লক্ষণ:
হামের লক্ষণগুলি সাধারণত ৭-১৪ দিন পর দেখা দেয় এবং এই রোগের বিভিন্ন পর্যায়ে কিছু গুরুত্বপূর্ণ লক্ষণ থাকে। হাম রোগের লক্ষণগুলি হলো:
- জ্বর:
- হাম এর একটি প্রধান লক্ষণ হলো জ্বর, যা সাধারণত প্রথম ৩-৪ দিন বৃদ্ধি পায় এবং প্রায় ১০০°F-১০৪°F পর্যন্ত পৌঁছাতে পারে। জ্বর একে অপরের সঙ্গে থাকে এবং দিন দিন বাড়তে পারে।
- খাসখাস কাশি (Cough):
- প্রথমে শুকনো কাশি শুরু হয় এবং পরবর্তীতে এর তীব্রতা বৃদ্ধি পায়।
- নাক ঝরা বা সর্দি (Runny nose):
- রোগীর নাকে সর্দি বা জলীয় নিঃসরণ থাকতে পারে।
- চোখে লালচে ভাব (Conjunctivitis):
- চোখে লালচে বা অস্বস্তি থাকতে পারে এবং চোখে জল আসতে পারে।
- বাড়তি পরিমাণ জ্বালা বা অস্বস্তি (Photophobia):
- আলোতে চোখে অস্বস্তি অনুভূত হতে পারে, যা বেশ সাধারণ।
- মুখের ভিতরে ছোট ছোট দানার মতো লাল র্যাশ (Koplik spots):
- কপলিক স্পট হলো মুখের ভিতরের গাল এবং মাড়িতে ছোট ছোট সাদা বা নীল রঙের দানা (spots), যা হাম রোগের বিশেষ লক্ষণ।
- র্যাশ (Skin Rash):
- আক্রান্ত ব্যক্তির গায়ে লাল র্যাশ দেখা দেয়, যা সাধারণত মাথা, গলা, কাঁধ ও শরীরের অন্যান্য অংশে ছড়িয়ে পড়ে। র্যাশ প্রথমে ছোট ছোট হয়ে আসে এবং পরে এটি বড় হয়ে একে অপরের সাথে মিশে যেতে পারে।
- শরীরে আছাড়, দুর্বলতা বা ক্লান্তি:
- রোগী দুর্বল অনুভব করতে পারে এবং সারা শরীরেই আছাড় বা ক্লান্তি অনুভূত হয়।
প্রতিকার:
হাম একটি ভাইরাল রোগ হওয়ায় এর নির্দিষ্ট চিকিৎসা (যেমন: অ্যান্টিবায়োটিক) নেই। তবে, কিছু প্রতিকার এবং রোগের গুরুতরতা কমানোর জন্য কিছু পদক্ষেপ নেওয়া যেতে পারে।
- টিকা (Vaccination):
- হামের প্রতিরোধের জন্য এমএমআর টিকা (MMR Vaccine) অত্যন্ত কার্যকরী। এই টিকা Measles, Mumps, and Rubella (MMR) ভাইরাসের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ তৈরি করে এবং এটি সাধারণত ১ বছর বয়সের পর দেওয়া হয়।
- পানি এবং তরল জাতীয় খাবার:
- রোগীর শরীরে পানির অভাব হওয়ার আশঙ্কা থাকে, তাই পর্যাপ্ত পানি পান করতে হবে।
- তরল জাতীয় খাবার, যেমন: স্যুপ, ফলের রস, দুধ ইত্যাদি দেওয়া যেতে পারে।
- জ্বর কমানোর জন্য ওষুধ:
- জ্বর কমানোর জন্য প্যারাসিটামল বা আইবুপ্রোফেন দেওয়া যেতে পারে, তবে এগুলো অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শে নেওয়া উচিত।
- বিশ্রাম:
- রোগীর সঠিক বিশ্রাম নিতে হবে, যাতে শরীর দ্রুত সুস্থ হয়ে ওঠে। শারীরিক পরিশ্রম বা অত্যধিক চলাফেরা থেকে বিরত থাকতে হবে।
- মুখের ঘা বা ক্ষত চিকিৎসা:
- কপলিক স্পট বা মুখের ক্ষত (যদি থাকে) ত্বকের চিকিৎসা করতে পারে, যাতে রোগীকে কিছুটা আরাম দেওয়া যায়।
- ভিটামিন এ (Vitamin A) সম্পূরক:
- ভিটামিন এ রোগীর রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে সাহায্য করে এবং এটি হাম রোগের ক্ষেত্রে শরীরের সুস্থতা ফিরে পাওয়ার জন্য সহায়ক হতে পারে।
- হালকা খাবার গ্রহণ:
- রোগীকে হালকা, সহজপাচ্য খাবার দেওয়ার মাধ্যমে শরীরের শক্তি বৃদ্ধি করতে হবে।
- চোখের যত্ন:
- চোখে অস্বস্তি হলে কোল্ড প্যাক ব্যবহার করা যেতে পারে বা চোখের লালচে ভাব কমানোর জন্য চিকিৎসকের পরামর্শ নেয়া উচিত।
- শ্বাসকষ্টের ক্ষেত্রে চিকিৎসককে পরামর্শ দেওয়া:
- যদি রোগী শ্বাসকষ্ট বা শ্বাস-প্রশ্বাসের সমস্যা অনুভব করে, তবে তৎক্ষণাৎ চিকিৎসকের কাছে যেতে হবে।
কখন চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে:
- যদি জ্বরের সাথে শ্বাসকষ্ট, তীব্র কাশি বা শ্বাসরুদ্ধকর পরিস্থিতি দেখা দেয়।
- যদি র্যাশ আরও মারাত্মক আকার ধারণ করে বা ত্বকে সংক্রমণ হয়ে থাকে।
- যদি রোগী অতিরিক্ত দুর্বল বা বিভ্রান্ত হয়ে থাকে।
- যদি বয়সে বৃদ্ধ বা গর্ভবতী মহিলা আক্রান্ত হন।
- যদি রোগী দ্রুত অবস্থার অবনতি ঘটাতে থাকে।
উপসংহার:
হাম একটি গুরুতর ভাইরাল রোগ, তবে এমএমআর টিকার মাধ্যমে এটি প্রতিরোধ করা সম্ভব। যদি কেউ হাম আক্রান্ত হয়, তবে দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত এবং জ্বর ও অন্যান্য লক্ষণগুলির জন্য সঠিক চিকিৎসা প্রদান করা প্রয়োজন।