জ্বর সাধারণত শরীরে কোনো সংক্রমণ বা রোগের কারণে তাপমাত্রা বেড়ে যাওয়ার প্রতিক্রিয়া। এটি সাধারণত শরীরের প্রতিরোধ ক্ষমতা কাজ করছে এমন একটি চিহ্ন। তবে, যদি জ্বর খুব বেশি হয় বা দীর্ঘস্থায়ী হয়ে থাকে, তাহলে কিছু সতর্কতা নেওয়া প্রয়োজন।
জ্বর বেশি হলে করণীয়:
- বিশ্রাম নিন: শরীরের শক্তি সঞ্চয় করার জন্য পর্যাপ্ত বিশ্রাম নিন। শরীরকে বিশ্রাম দিতে সাহায্য করে জ্বর কমতে।
- প্রচুর পানি পান করুন: জ্বরের সময় শরীরের পানির পরিমাণ কমে যেতে পারে, তাই ডিহাইড্রেশন এড়াতে প্রচুর পানি, ডাবের পানি, লেবুর পানি বা স্যালাইন পান করুন।
- শরীর ঠান্ডা রাখুন: তাপমাত্রা অনেক বেশি হলে ঠান্ডা পানি দিয়ে শরীর আলতো করে মুছতে পারেন বা ঠান্ডা সেঁক (cold compress) করতে পারেন।
- জ্বরের ওষুধ: প্যারাসিটামল বা ইবুপ্রোফেন জাতীয় ওষুধ ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী নিতে পারেন।
- লবণ ও চিনি মিশ্রিত পানি পান করুন: শরীরে পানি ও লবণের ভারসাম্য বজায় রাখতে স্যালাইন বা লবণ-চিনি মিশ্রিত পানি খেতে পারেন।
- অতিরিক্ত গরমের জামাকাপড় পরবেন না: অতিরিক্ত গরম কাপড় বা কম্বল ব্যবহার না করে, হালকা পোশাক পরুন।
- ডাক্তারের পরামর্শ নিন: যদি জ্বর ৩ দিন বা তার বেশি সময় ধরে থাকে, খুব বেশি থাকে, বা অন্য কোনো গুরুতর লক্ষণ দেখা দেয় (যেমন: শ্বাসকষ্ট, ব্যথা, র্যাশ), তখন তৎক্ষণাৎ চিকিৎসকের কাছে যান।
জ্বরের কারণ:
জ্বরের কারণ অনেক ধরনের হতে পারে, যেমন:
- ব্যাকটেরিয়া বা ভাইরাসের সংক্রমণ: যেমন, ফ্লু, সর্দি, সাইনাস সংক্রমণ, টায়ফয়েড, ডেঙ্গু, চিকুন গুনিয়া, ম্যালেরিয়া।
- ইনফেকশন: যেমন, কিডনি ইনফেকশন, শ্বাসযন্ত্রের সংক্রমণ।
- অটোইমিউন রোগ: যেমন, লুপাস বা রিউম্যাটয়েড আর্থ্রাইটিস।
- ড্রাগ বা ভ্যাকসিনের প্রতিক্রিয়া: কিছু ওষুধ বা টিকা গ্রহন করার পর জ্বর হতে পারে।
- এখনকার পরিবেশের পরিবর্তন: গরম বা ঠান্ডা পরিবেশের কারণে শরীরের তাপমাত্রা বৃদ্ধি পেতে পারে।
জ্বরের লক্ষণ:
জ্বরের কিছু সাধারণ লক্ষণ হলো:
- শরীরের তাপমাত্রা বৃদ্ধি (৩৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস বা তার বেশি)
- কম্পন বা ঠান্ডা লাগা
- মাথাব্যথা
- পেশী বা শরীরে ব্যথা
- ক্লান্তি বা অবসাদ
- শরীরের লালচে বা ফ্যাকাসে হওয়া
- শরীরে র্যাশ (যদি ভাইরাল সংক্রমণ হয়)
জ্বরের প্রতিকার:
- প্যারাসিটামল বা ইবুপ্রোফেন: জ্বর কমানোর জন্য চিকিৎসকের পরামর্শে প্যারাসিটামল বা ইবুপ্রোফেন নেওয়া যেতে পারে।
- প্রাকৃতিক উপায়: কিছু প্রাকৃতিক উপায় যেমন আদা, মধু, লেবু, তুলসি পাতা ব্যবহার করা যায়, যা শরীরের তাপমাত্রা কমাতে সহায়ক হতে পারে।
- পানি ও তরল খাবার: জ্বরের সময়ে শরীরের পানি ভারসাম্য বজায় রাখার জন্য পর্যাপ্ত পানি এবং স্যালাইন পান করা প্রয়োজন।
- সুগন্ধি তেল ব্যবহার: যেমন, ইউক্যালিপটাস তেল বা নারিকেল তেল শরীরের ঠান্ডা রাখতে সহায়ক হতে পারে।
যদি জ্বরের সাথে অন্য গুরুতর লক্ষণ দেখা দেয়, যেমন শ্বাসকষ্ট, তীব্র মাথাব্যথা, বমি বা কনফিউশন, তবে চিকিৎসকের পরামর্শ নিন এবং তাড়াতাড়ি হাসপাতালে ভর্তি হওয়া উচিত।