Best Homeo Doctor

জিহ্বায় ক্যান্সার কি,কারন,লক্ষন,প্রতিকার

জিহ্বায় ক্যান্সার (Tongue Cancer) হল মুখগহ্বরের একটি ক্যান্সার, যা সাধারণত জিহ্বার কোষে ঘটে। এটি মুখগহ্বরের ক্যান্সার বা হেড অ্যান্ড নেক ক্যান্সার বিভাগের অন্তর্গত। জিহ্বায় ক্যান্সার দুটি প্রধানভাবে দেখা যায়:

  1. স্কোয়ামাস সেল ক্যান্সার: এটি জিহ্বার শীর্ষ বা পৃষ্ঠস্থ কোষে হয়। এটি সবচেয়ে সাধারণ ধরনের ক্যান্সার যা মুখগহ্বরে হয়।
  2. এডিনোকারসিনোমা: এই ধরনের ক্যান্সার জিহ্বার লালা গ্রন্থি বা অন্য যেকোনো গ্ল্যান্ডে হতে পারে।

কারণ:

জিহ্বায় ক্যান্সারের সঠিক কারণ জানা না গেলেও কিছু ঝুঁকি ফ্যাক্টর রয়েছে যা ক্যান্সার হওয়ার সম্ভাবনা বাড়াতে পারে:

  1. ধূমপান: তামাক বা সিগারেটের ধূমপান জিহ্বার ক্যান্সারের প্রধান কারণগুলোর একটি। এটি বিশেষ করে স্কোয়ামাস সেল ক্যান্সার সৃষ্টি করতে পারে।
  2. অতিরিক্ত অ্যালকোহল সেবন: অ্যালকোহল সেবনও ক্যান্সারের ঝুঁকি বৃদ্ধি করে, বিশেষত যখন এটি ধূমপানের সাথে থাকে।
  3. এইচপিভি (HPV) ভাইরাস: এইচপিভি (হিউম্যান প্যাপিলোমা ভাইরাস) ভাইরাসের কারণে জিহ্বার ক্যান্সার হতে পারে, বিশেষ করে যে লোকেরা মৌখিক যৌনসম্পর্কে জড়িত তাদের মধ্যে।
  4. অস্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস: প্রক্রিয়াজাত বা অতিরিক্ত তৈলাক্ত খাবার খাওয়ার কারণে শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা দুর্বল হয়ে যেতে পারে, যার ফলে ক্যান্সার হওয়ার ঝুঁকি বাড়ে।
  5. শরীরের দুর্বল প্রতিরোধ ক্ষমতা: ইমিউন সিস্টেম দুর্বল হলে ক্যান্সার হওয়ার ঝুঁকি বেড়ে যায়, যেমন এইচআইভি রোগী বা অন্যান্য রোগের চিকিৎসা গ্রহীতা।
  6. ব্যক্তিগত ইতিহাস বা পরিবারিক ইতিহাস: যদি পরিবারের কারও জিহ্বার ক্যান্সার থাকে, তবে তারও এই রোগ হওয়ার সম্ভাবনা থাকে।
  7. ব্যক্তিগত আঘাত বা ক্ষত: জিহ্বার দীর্ঘস্থায়ী আঘাত বা ক্ষতও ক্যান্সারের ঝুঁকি বৃদ্ধি করতে পারে।

লক্ষণ:

জিহ্বায় ক্যান্সারের লক্ষণ সাধারণত জিহ্বার বিভিন্ন স্থানে দেখা যায় এবং সময়ের সাথে সাথে তা খারাপ হতে পারে। কিছু সাধারণ লক্ষণ হলো:

  1. জিহ্বায় ফোলা বা গুটি: জিহ্বার উপর বা তার আশপাশে কোনও গুটি বা ফোলা অংশ দেখা দিতে পারে।
  2. রক্তপাত বা ক্ষত: জিহ্বায় বা মুখের মধ্যে কোনো ক্ষত সৃষ্টি হতে পারে যা সেরে না ওঠে বা দীর্ঘস্থায়ী হয়।
  3. ব্যথা বা অস্বস্তি: জিহ্বা বা মুখের ভিতরে ব্যথা বা অস্বস্তি অনুভূত হতে পারে, বিশেষত খাওয়ার সময়।
  4. খাবার খেতে সমস্যা: জিহ্বায় ক্যান্সার হলে খাবার খেতে বা গিলতে সমস্যা হতে পারে।
  5. থুতু বা মুখের মধ্যে অস্বাভাবিক গন্ধ: কখনও কখনও থুতু বা মুখে অস্বাভাবিক গন্ধও হতে পারে, যা ক্যান্সারের লক্ষণ হতে পারে।
  6. ব্যথা বা ফুলে থাকা গলা: জিহ্বার ক্যান্সার গলায় বা থাইরয়েডে ব্যথা বা ফুলে যাওয়া সৃষ্টি করতে পারে।
  7. বড়ো বা লাল দাগ: জিহ্বার উপর অথবা মুখের ভিতরে লাল বা সাদা দাগ বা দাগের মত কিছু দেখা দিতে পারে।

প্রতিকার:

জিহ্বায় ক্যান্সারের চিকিৎসা নির্ভর করে ক্যান্সারের ধরণ, স্তর এবং রোগীর শারীরিক অবস্থা অনুসারে। কিছু সাধারণ চিকিৎসা পদ্ধতি হলো:

  1. সার্জারি (অস্ত্রোপচার): ক্যান্সার আক্রান্ত জিহ্বার অংশ অপসারণ করা হয়, কখনও কখনও পুরো জিহ্বা অপসারণেরও প্রয়োজন হতে পারে।
  2. কেমোথেরাপি: ক্যান্সারের কোষ ধ্বংস করার জন্য কেমোথেরাপি ব্যবহার করা হয়, বিশেষত যদি ক্যান্সার অন্যান্য অংশে ছড়িয়ে পড়ে।
  3. রেডিয়েশন থেরাপি: রেডিয়েশন থেরাপি ক্যান্সারের কোষ ধ্বংস করতে সাহায্য করে, বিশেষ করে ক্যান্সার যদি সঠিকভাবে সার্জারি করা না যায়।
  4. টার্গেটেড থেরাপি: এটি ক্যান্সারের কোষের নির্দিষ্ট উপাদান লক্ষ্য করে কাজ করে, যা অন্যান্য সুস্থ কোষকে আঘাত না করে ক্যান্সার কোষগুলোকে ধ্বংস করতে সাহায্য করে।
  5. ইমিউনোথেরাপি: এটি শরীরের প্রতিরোধ ক্ষমতাকে সক্রিয় করে, যাতে শরীর নিজে থেকেই ক্যান্সারের কোষের বিরুদ্ধে লড়াই করতে পারে।
  6. পালিয়েটিভ কেয়ার: কিছু ক্ষেত্রে ক্যান্সার অগ্রগতি পর্যায়ে পৌঁছানোর পর, পেইন ম্যানেজমেন্ট এবং রোগীকে শারীরিক ও মানসিকভাবে সমর্থন দেওয়ার জন্য পালিয়েটিভ কেয়ার প্রয়োজন হতে পারে।

প্রতিরোধ:

জিহ্বায় ক্যান্সার প্রতিরোধের কিছু গুরুত্বপূর্ণ উপায় হলো:

  1. ধূমপান এবং অ্যালকোহল পরিহার: তামাক বা সিগারেট এবং অ্যালকোহল সেবন পরিহার করতে হবে, কারণ এগুলি ক্যান্সারের ঝুঁকি বাড়ায়।
  2. স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস: ফল, সবজি, এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্টসমৃদ্ধ খাবার খাওয়ার অভ্যাস গড়ে তোলা।
  3. মৌখিক স্বাস্থ্য যত্ন: নিয়মিত মুখের স্বাস্থ্য পরীক্ষা করা এবং দাঁত বা জিহ্বার কোনও সমস্যা থাকলে দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া।
  4. এইচপিভি ভ্যাক্সিন: এইচপিভি (HPV) ভাইরাস থেকে সুরক্ষার জন্য ভ্যাক্সিন গ্রহণ করা, বিশেষত যৌনজীবন শুরু করার আগে।
  5. বিভিন্ন পরীক্ষা: নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষা করা, বিশেষত যাদের পরিবারে জিহ্বার ক্যান্সারের ইতিহাস রয়েছে।

উপসংহার:

জিহ্বায় ক্যান্সার শনাক্ত করা হলে এবং সঠিক সময়ে চিকিৎসা গ্রহণ করা হলে সুস্থ হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। তবে, প্রাথমিক লক্ষণগুলো শনাক্ত করা এবং চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া খুবই গুরুত্বপূর্ণ। ক্যান্সারের ঝুঁকি কমাতে স্বাস্থ্যকর জীবনযাপন এবং সঠিক খাদ্যাভ্যাসের পাশাপাশি নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষা করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

 

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *