জিহ্বায় অর্বুদ (জিহ্বার ক্যান্সার) একটি ধরনের মুখের ক্যান্সার, যা জিহ্বার কোষগুলিতে অস্বাভাবিক বৃদ্ধি বা পরিবর্তনের কারণে ঘটে। এটি একটি গুরুতর রোগ এবং প্রাথমিক অবস্থায় শনাক্ত না করলে এটি আরও বিস্তার লাভ করতে পারে।
জিহ্বায় অর্বুদ (জিহ্বার ক্যান্সার) এর কারণ:
জিহ্বার ক্যান্সারের নির্দিষ্ট কারণ সঠিকভাবে জানা না গেলেও কিছু ঝুঁকি ফ্যাক্টর রয়েছে, যা এর সৃষ্টি করতে পারে:
- ধূমপান: ধূমপান, বিশেষ করে তামাকের সিগারেট বা অন্যান্য তামাকজাত পণ্য ব্যবহারের ফলে জিহ্বার ক্যান্সারের ঝুঁকি বৃদ্ধি পায়।
- অ্যালকোহল সেবন: অতিরিক্ত অ্যালকোহল সেবন জিহ্বার ক্যান্সারসহ অন্যান্য মুখের ক্যান্সারের ঝুঁকি বাড়াতে পারে।
- বিশেষ ধরনের ভাইরাস: হিউম্যান প্যাপিলোমাভাইরাস (HPV) কিছু ক্ষেত্রে মুখ এবং জিহ্বার ক্যান্সারের কারণ হতে পারে।
- অস্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস: অতিরিক্ত ফ্যাটি, প্রসেসড খাবার, কম ফলমূল বা শাকসবজি খাওয়ার কারণে শরীরের প্রতিরোধক্ষমতা কমে যেতে পারে, যা ক্যান্সারের ঝুঁকি বাড়ায়।
- দীর্ঘসময় ধরে মুখের পরিষ্কার–পরিচ্ছন্নতার অভাব: দীর্ঘসময় ধরে অস্বাস্থ্যকর মৌখিক অভ্যাস বা দাঁতের রোগ (যেমন গাম ডিজিজ) জিহ্বার ক্যান্সারের ঝুঁকি বাড়াতে পারে।
- সেনির বয়স এবং জেনেটিক কারণ: বয়স্ক মানুষের মধ্যে মুখের ক্যান্সারের ঝুঁকি বাড়ে এবং কিছু ক্ষেত্রে পারিবারিক ইতিহাসও এর কারণ হতে পারে।
জিহ্বায় অর্বুদ (জিহ্বার ক্যান্সার) এর লক্ষণ:
জিহ্বায় অর্বুদ বা ক্যান্সারের কিছু সাধারণ লক্ষণ নিম্নলিখিত হতে পারে:
- জিহ্বায় গাঁট বা স্ফীতি: জিহ্বার উপর বা পাশে একটি গুটি বা স্ফীতি দেখা দিতে পারে যা সময়ের সাথে বড় হতে থাকে।
- জিহ্বায় বা মুখে ব্যথা: জিহ্বার উপর অথবা মুখের অন্য অংশে দীর্ঘস্থায়ী ব্যথা বা অস্বস্তি অনুভূত হতে পারে।
- রক্তপাত: জিহ্বার মধ্যে কোন ক্ষত বা টিউমারের কারণে রক্তপাত হতে পারে।
- স্বাদ পরিবর্তন: খাবারের স্বাদ বদলে যেতে পারে বা খাদ্য গ্রহণে অস্বস্তি হতে পারে।
- মুখের মধ্যে উঁচু বা ক্ষত: মুখের ভিতরে কোনও ক্ষত বা আলসার দীর্ঘকাল ধরে ঠিক না হয়ে যাওয়া।
- জিহ্বায় বা মুখের উপর কোনও শ্বেত অংশ: সাদা বা লাল দাগ দেখা দিতে পারে, যা ক্যান্সারের প্রাথমিক লক্ষণ হতে পারে।
- শ্বাসপ্রশ্বাসে সমস্যা: ক্যান্সার প্রচুর বৃদ্ধি পেলে শ্বাসকষ্ট বা গলার সংকোচন অনুভূতি হতে পারে।
- ওজন কমে যাওয়া: অস্বাভাবিক ওজন হ্রাস বা ক্ষুধামন্দা হতে পারে।
জিহ্বায় অর্বুদ (জিহ্বার ক্যান্সার) এর প্রতিকার:
জিহ্বার ক্যান্সার চিকিৎসা করার জন্য নানা ধরনের পদ্ধতি রয়েছে, তবে এটি রোগের ধরণ, স্তর এবং অবস্থার ওপর নির্ভর করে। কিছু সাধারণ চিকিৎসার পদ্ধতি:
- সার্জারি (অপারেশন): ক্যান্সার আক্রান্ত জিহ্বার অংশ বা টিউমার অপসারণ করা হয়। তবে, যদি টিউমারের আকার বড় হয় বা এটি আরও বিস্তার লাভ করে, তাহলে অস্ত্রোপচার কঠিন হতে পারে।
- কেমোথেরাপি: কেমোথেরাপি ক্যান্সার কোষ ধ্বংস করতে ব্যবহৃত হয়। এটি এককভাবে বা সার্জারির পরেও দেওয়া হতে পারে।
- রেডিওথেরাপি: রেডিওথেরাপি বা এক্স-রে রশ্মি ক্যান্সার কোষের ওপর প্রয়োগ করা হয় যাতে কোষগুলো ধ্বংস হয়ে যায়।
- ইমিউনোথেরাপি: এটি শরীরের প্রতিরোধ ক্ষমতাকে ক্যান্সারের বিরুদ্ধে সক্রিয় করতে সাহায্য করতে পারে।
- হরমোন থেরাপি: কিছু ক্ষেত্রে হরমোন থেরাপি ব্যবহার করা হয় ক্যান্সারের বৃদ্ধির গতি ধীর করার জন্য।
- প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা:
- ধূমপান ও অ্যালকোহল পরিহার করা।
- স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস: শাকসবজি, ফলমূল এবং আঁশযুক্ত খাবার বেশি খাওয়া।
- মুখের স্বাস্থ্য পরিচ্ছন্ন রাখা: নিয়মিত দাঁত ব্রাশ করা এবং মুখ পরিষ্কার রাখা ক্যান্সারের ঝুঁকি কমাতে সাহায্য করতে পারে।
চিকিৎসা এবং প্রাথমিক পর্যায়ে শনাক্তকরণ:
জিহ্বার ক্যান্সার দ্রুত শনাক্ত করলে চিকিৎসা সহজতর হয় এবং সুস্থ হওয়ার সম্ভাবনা বেশি থাকে। সুতরাং, যদি আপনি উপরের কোনো লক্ষণ লক্ষ্য করেন, তবে দ্রুত চিকিৎসকের সঙ্গে পরামর্শ করা গুরুত্বপূর্ণ।