Best Homeo Doctor

জলাতংক কি,কারন,লক্ষন,প্রতিকার

জলাতংক (Rabies) একটি মারাত্মক ভাইরাল সংক্রমণ যা মস্তিষ্ক এবং স্নায়ুতন্ত্রকে প্রভাবিত করে। এটি সাধারণত আক্রান্ত প্রাণীর খোঁচা বা কামড়ের মাধ্যমে ছড়ায়। জলাতংক যদি যথাযথভাবে চিকিৎসা না করা হয়, তবে এটি মৃত্যুর কারণ হতে পারে। পৃথিবীজুড়ে প্রায় প্রতিটি দেশের মধ্যে জলাতংক একটি উল্লেখযোগ্য স্বাস্থ্য সমস্যা, বিশেষ করে যেখানে উপযুক্ত স্বাস্থ্যসেবা নেই।

জলাতংকের কারণ:

জলাতংক ভাইরাস (Rabies virus) দ্বারা সৃষ্ট একটি সংক্রামক রোগ। এই ভাইরাস সাধারণত রেবিস ভাইরাস পরিবারের সদস্য। এটি প্রধানত প্রাণীদের দ্বারা ছড়ায়, বিশেষত কুকুর, বিড়াল, শিয়াল, শুয়োর, বাদুড় এবং অন্যান্য প্রাণী থেকে। ভাইরাসটি আক্রান্ত প্রাণীর খোঁচা বা কামড়ের মাধ্যমে মানুষের শরীরে প্রবেশ করে।

জলাতংক সংক্রমণ ঘটানোর প্রধান কারণগুলির মধ্যে রয়েছে:

  1. কুকুরের কামড়: কুকুর জলাতংক ভাইরাসের প্রধান বাহক। সাধারণত রেবিস আক্রান্ত কুকুর অন্যদের কামড় দিয়ে ভাইরাস ছড়ায়।
  2. বিড়াল বা অন্যান্য প্রাণীর কামড়: বিড়াল, বাদুড়, শিয়াল, মাংসাশী স্তন্যপায়ী প্রাণীদের কাছ থেকে ভাইরাস ছড়াতে পারে।
  3. প্রাণীর লালা (Saliva): জলাতংক ভাইরাস সাধারণত আক্রান্ত প্রাণীর লালার মাধ্যমে ছড়ায়। তাই কোনো প্রাণী কামড় দিলে তার লালা বা শরীরের রস শরীরে প্রবেশ করতে পারে।

জলাতংকের লক্ষণ:

জলাতংকের লক্ষণগুলি ধীরে ধীরে শুরু হয় এবং সাধারণত ভাইরাস শরীরে প্রবেশ করার পরে ১-৩ মাসের মধ্যে দেখা দিতে শুরু করে। তবে কখনও কখনও এটি কয়েক দিনের মধ্যে হতে পারে। প্রধান কিছু লক্ষণ:

  1. জ্বর: প্রথমদিকে হালকা জ্বর হতে পারে, যা পরবর্তী সময়ে বৃদ্ধি পায়।
  2. শরীরের ব্যথা এবং অস্বস্তি: শরীরের বিভিন্ন অংশে ব্যথা এবং অস্বস্তি অনুভূত হতে পারে।
  3. গলাব্যথা এবং মুখ শুকিয়ে যাওয়া: রোগী গলাব্যথা অনুভব করতে পারে এবং তার গলা শুকিয়ে যেতে পারে, যার কারণে খেতে বা পান করতে অসুবিধা হয়।
  4. আক্রমণাত্মক আচরণ বা বিভ্রান্তি: কখনও কখনও রোগী আক্রমণাত্মক বা উত্তেজিত হয়ে উঠতে পারে, বা মস্তিষ্কে বিভ্রান্তি সৃষ্টি হতে পারে।
  5. পেশির খিঁচুনি: বিশেষত মুখ, গলা এবং পায়ের পেশি খিঁচুনি হতে পারে।
  6. অজ্ঞান হওয়া (Paralysis): এক পর্যায়ে রোগী মাংসপেশির পক্ষাঘাতের সম্মুখীন হতে পারে।
  7. শ্বাসপ্রশ্বাসের সমস্যা: রোগী শ্বাস নিতে অসুবিধা অনুভব করতে পারে, বিশেষত গলা বা শ্বাসনালির পেশি পক্ষাঘাতের কারণে।
  8. হ্যালুসিনেশন: কিছু ক্ষেত্রে, রোগী পাগল হয়ে যেতে পারে বা হ্যালুসিনেশন (মনের ভ্রান্তি) অনুভব করতে পারে।
  9. মুখে ফেনা বা অবিরত থুতু পড়া: আক্রান্ত ব্যক্তির মুখ থেকে ফেনা বা অবিরত থুতু পড়া দেখা দিতে পারে।
  10. জ্ঞান হারানো: অনেক সময় রোগী পুরোপুরি অজ্ঞান হয়ে যেতে পারে বা শেষমেশ মৃত্যুর দিকে চলে যেতে পারে।

জলাতংকের প্রতিকার:

জলাতংক একটি মারাত্মক রোগ, কিন্তু তা যদি দ্রুত চিকিৎসা করা হয়, তবে সারানো সম্ভব। সঠিক চিকিৎসা গ্রহণের মাধ্যমে এটি প্রতিরোধ করা যায়, তবে একবার রোগের লক্ষণ দেখা দিলে এটি প্রায়ই মৃত্যুর কারণ হয়।

  1. প্রাথমিক চিকিৎসা (First aid):
    • কামড়ের জায়গা ধুয়ে ফেলা: যদি কাউকে জলাতংক আক্রান্ত প্রাণী কামড়ে দেয়, তবে প্রথমে কামড়ের জায়গা ভালোভাবে সাবান ও জল দিয়ে ধুয়ে ফেলতে হবে। এতে ভাইরাস শরীরে প্রবেশ করার সম্ভাবনা কমে যায়।
    • এন্টিসেপ্টিক ব্যবহার: কামড়ের পর ক্ষতস্থান স্যানিটাইজ করতে হবে। সম্ভব হলে ওই জায়গায় অ্যান্টিসেপ্টিক লোশন বা মলম ব্যবহার করুন।
  2. পোষা প্রাণীকে রেবিস ভ্যাকসিন দেয়া: যেসব অঞ্চলে জলাতংক বেশি ছড়ায়, সেখানে পোষা কুকুর এবং বিড়ালদের রেবিস ভ্যাকসিন দেয়া উচিত। এটি প্রাণীকে জলাতংক থেকে রক্ষা করে এবং মানুষকেও নিরাপদ রাখে।
  3. পোষা প্রাণীকে নিয়ন্ত্রণ করা: পোষা কুকুর বা বিড়ালকে বাইরে ঘোরা বা নির্দিষ্ট জায়গায় রাখা উচিত যাতে তারা জলাতংক আক্রান্ত প্রাণীর সংস্পর্শে না আসে।
  4. রেবিস ভ্যাকসিন (Rabies vaccine):
    • প্রতিকার ভ্যাকসিন: একবার যদি জলাতংক আক্রান্ত কোনো প্রাণী কামড় দেয়, তাহলে রোগীকে দ্রুত রেবিস ভ্যাকসিন এবং বিশেষ ইমিউনোগ্লোবুলিন (Rabies Immune Globulin – RIG) প্রদান করা উচিত।
    • ভ্যাকসিন কোর্স: সাধারণত, আক্রান্ত ব্যক্তিকে প্রথম দিন, তৃতীয় দিন, পঞ্চম দিন, অষ্টম দিন, দশম দিন এবং পনেরো দিন পর্যন্ত ভ্যাকসিনের সিরিজ দেওয়া হয়।
  5. রেবিস ইমিউনোগ্লোবুলিন (Rabies Immunoglobulin): যদি কামড়ের পর অনেক সময় চলে যায়, তবে রেবিস ইমিউনোগ্লোবুলিন দেওয়ার প্রয়োজন হতে পারে, যা ভাইরাসটি প্রতিরোধ করতে সহায়তা করে।

সারাংশ:

জলাতংক (Rabies) একটি অত্যন্ত মারাত্মক ভাইরাল রোগ যা প্রাণীর কামড় বা খোঁচার মাধ্যমে ছড়ায়। এটি মস্তিষ্ক ও স্নায়ুতন্ত্রকে আক্রমণ করে এবং দ্রুত মৃত্যুর কারণ হতে পারে। তবে, যদি আক্রান্ত ব্যক্তির প্রাথমিক চিকিৎসা করা হয় এবং জলাতংক ভ্যাকসিন দেওয়া হয়, তাহলে এটি পুরোপুরি প্রতিরোধ করা সম্ভব। যত দ্রুত সম্ভব চিকিৎসা শুরু করা না হলে, রোগটি অত্যন্ত বিপজ্জনক হয়ে উঠতে পারে।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *