Best Homeo Doctor

জরায়ু পলিপস কি,কারন,লক্ষন,প্রতিকার

জরায়ু পলিপস (Uterine Polyps) হল জরায়ুর অভ্যন্তরের দেওয়ালে গঠন হওয়া এক ধরনের অস্বাভাবিক টিস্যু। এই টিস্যুগুলি সাধারণত ছোট আকারে থাকে, কিন্তু কখনও কখনও বড় আকারে বাড়তে পারে। পলিপস সাধারণত বেনাইন (অকর্মী) হয়, কিন্তু এটি কিছু মহিলার ক্ষেত্রে গুরুতর সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে। জরায়ু পলিপস সাধারণত হরমোনের প্রভাবে বৃদ্ধি পায় এবং বিভিন্ন শারীরিক লক্ষণ সৃষ্টি করতে পারে।

জরায়ু পলিপসের কারণ:

জরায়ু পলিপসের সঠিক কারণ এখনও পুরোপুরি জানা যায়নি, তবে কিছু সাধারণ কারণ এবং প্রভাবক যা পলিপসের সৃষ্টি করতে পারে, তা হল:

  1. হরমোনাল পরিবর্তন:
    • জরায়ু পলিপস সাধারণত ইস্ট্রোজেন (estrogen) হরমোনের প্রভাবে বৃদ্ধি পায়। এই হরমোনের উচ্চ পরিমাণ পলিপসের বৃদ্ধিকে প্রভাবিত করতে পারে, বিশেষত প্রজনন বয়সী মহিলাদের মধ্যে।
  2. অতিরিক্ত ওজন:
    • অতিরিক্ত ওজন বা মোটা হওয়া (obesity) জরায়ু পলিপসের ঝুঁকি বাড়াতে পারে। এটি হরমোনাল ব্যালান্সে প্রভাব ফেলতে পারে, যা পলিপস সৃষ্টি করতে পারে।
  3. বয়স:
    • সাধারণত ৪০ থেকে ৫০ বছর বয়সী মহিলাদের মধ্যে জরায়ু পলিপসের ঘটনা বেশি দেখা যায়। এই বয়সের পর হরমোনের পরিবর্তন এবং মাসিক চক্রে অস্বাভাবিকতা দেখা দিতে পারে।
  4. অতিরিক্ত ইস্ট্রোজেন:
    • যেসব মহিলাদের ইস্ট্রোজেনের মাত্রা উচ্চ থাকে, তাদের মধ্যে জরায়ু পলিপসের সৃষ্টি হতে পারে। এটি গর্ভনিরোধক পিল, হরমোন থেরাপি, বা অন্য হরমোনাল চিকিৎসার কারণে হতে পারে।
  5. গর্ভধারণের ইতিহাস:
    • গর্ভধারণের ইতিহাস থাকা মহিলাদের মধ্যে জরায়ু পলিপসের ঝুঁকি কিছুটা বেশি হতে পারে, তবে এটি সর্বদা প্রযোজ্য নয়।
  6. মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে নারীদের মধ্যে এই অবস্থার ঘটনা বেশি লক্ষ্য করা যায়, তবে বিশ্বের অন্যান্য অঞ্চলেও এটি দেখা যায়।

জরায়ু পলিপসের লক্ষণ:

অনেক সময় জরায়ু পলিপস কোনো লক্ষণ সৃষ্টি করে না এবং মহিলা সেগুলি জানেন না। তবে কিছু ক্ষেত্রে, পলিপসের কারণে নিম্নলিখিত লক্ষণ দেখা যেতে পারে:

  1. অস্বাভাবিক রক্তপাত:
    • পলিপসের কারণে অতিরিক্ত বা অস্বাভাবিক রক্তপাত হতে পারে, যেমন মাসিকের মাঝে রক্তপাত (মিড সাইকেল ব্লিডিং) অথবা মাসিকের পরেও রক্তপাত হওয়া।
  2. ঋতুস্রাবের সমস্যা:
    • পলিপসের কারণে মাসিক রক্তপাত অতিরিক্ত হতে পারে, যা সাধারণত ভারী রক্তপাত বা দীর্ঘস্থায়ী হতে পারে।
  3. যৌন সম্পর্কের সময় রক্তপাত:
    • যৌন সম্পর্কের সময় বা পরে রক্তপাত হতে পারে, যা পলিপসের উপস্থিতির কারণে হয়ে থাকে।
  4. পেটের নিচে ব্যথা বা অস্বস্তি:
    • কিছু মহিলার মধ্যে জরায়ু পলিপসের কারণে পেটের নিচে ব্যথা বা চাপ অনুভূত হতে পারে, তবে এটি খুব সাধারণ লক্ষণ নয়।
  5. গর্ভধারণের সমস্যা:
    • জরায়ু পলিপসের কারণে কিছু মহিলার গর্ভধারণের সমস্যা হতে পারে, যেমন গর্ভধারণে ব্যর্থতা বা মিসক্যারেজ (গর্ভপাত)। তবে, এটি বেশিরভাগ মহিলার জন্য প্রযোজ্য নয়।

জরায়ু পলিপসের প্রতিকার:

জরায়ু পলিপসের চিকিৎসা বিভিন্ন পদ্ধতিতে হতে পারে, যা নির্ভর করে পলিপসের আকার, সংখ্যা এবং লক্ষণের উপর। কিছু সাধারণ প্রতিকার হল:

  1. মেডিক্যাল চিকিৎসা (হরমোনাল থেরাপি):
    • হরমোনাল চিকিৎসা: ইস্ট্রোজেন এবং প্রজেস্টেরন হরমোনের মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করতে গর্ভনিরোধক পিল বা অন্য হরমোনাল থেরাপি দেওয়া যেতে পারে। এটি পলিপসের বৃদ্ধি কমাতে সহায়ক হতে পারে।
    • প্রজেস্টিন থেরাপি: কিছু ক্ষেত্রে, প্রজেস্টিন হরমোন ব্যবহার করা হয় পলিপসের বৃদ্ধিকে থামাতে।
  2. অস্ত্রোপচার:
    • পলিপেকটমি (Polypectomy): পলিপস অপসারণের জন্য সাধারণত ছোট অস্ত্রোপচার করা হয়, যাতে পলিপটি সরিয়ে ফেলা যায়। এটি সাধারণত একটি সহজ এবং নিরাপদ প্রক্রিয়া।
    • হিস্টেরস্কোপি (Hysteroscopy): এই পদ্ধতিতে, একটি ছোট ক্যামেরা এবং সরঞ্জাম জরায়ুর ভিতরে ঢোকানো হয় এবং পলিপসটি অপসারণ করা হয়। এটি সাধারণত একটি কমপ্লেক্স অস্ত্রোপচার এবং রোগীর জন্য নিরাপদ হতে পারে।
  3. গর্ভধারণের সমস্যা:
    • যদি পলিপসের কারণে গর্ভধারণের সমস্যা হয়, তবে অস্ত্রোপচার বা মেডিক্যাল চিকিৎসার মাধ্যমে পলিপস অপসারণ করা যেতে পারে। এরপর গর্ভধারণের সুযোগ বৃদ্ধি পেতে পারে।
  4. পর্যবেক্ষণ:
    • কিছু ক্ষেত্রে, যদি পলিপস খুব ছোট বা কোনো লক্ষণ সৃষ্টি না করে, তাহলে চিকিৎসক পর্যবেক্ষণ করে চলতে পরামর্শ দিতে পারেন এবং সাধারণত কোনো চিকিৎসার প্রয়োজন হয় না।
  5. হিস্টেরেকটমি (Hysterectomy):
    • খুব গুরুতর ক্ষেত্রে, বা যদি মহিলার বয়স ৪৫ এর উপরে হয় এবং পলিপস মারাত্মক সমস্যা সৃষ্টি করে, তবে জরায়ু অপসারণ (হিস্টেরেকটমি) করা হতে পারে। এটি শেষ পর্যায়ের চিকিৎসা পদ্ধতি হিসেবে ব্যবহার করা হয়।

মনে রাখবেন:

যদি আপনি জরায়ু পলিপসের কোনো লক্ষণ অনুভব করেন, যেমন অতিরিক্ত রক্তপাত, যৌন সম্পর্কের সময় রক্তপাত, বা পেটের নিচে ব্যথা, তবে দ্রুত চিকিৎসকের সঙ্গে পরামর্শ করা উচিত। পলিপস সাধারণত বেনাইন হলেও, কিছু ক্ষেত্রে এগুলি গুরুতর সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে এবং সময়মতো চিকিৎসা করা জরুরি।

 

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *