Best Homeo Doctor

জরায়ু ক্যান্সার কি,কারন,লক্ষন,প্রতিকার

জরায়ু ক্যান্সার (Cervical Cancer) হলো একটি ধরনের ক্যান্সার যা জরায়ু (Cervix) বা গর্ভাশয়ের নিচের অংশে ঘটে, যেখানে জরায়ু ও যোনির সংযোগ ঘটে। এটি সাধারণত হিউম্যান প্যাপিলোমা ভাইরাস (HPV) দ্বারা সংক্রমিত হয়, যা একটি সাধারণ ভাইরাস যা যৌনসংগমের মাধ্যমে ছড়ায়। জরায়ু ক্যান্সার সাধারণত ধীরগতিতে বৃদ্ধি পায় এবং প্রাথমিক পর্যায়ে কোনো লক্ষণ না থাকার কারণে এটি খুঁজে বের করা কঠিন হতে পারে। 

কারণ:

জরায়ু ক্যান্সারের প্রধান কারণ হিসেবে এইচপিভি (HPV) ভাইরাসকে ধরা হয়, তবে কিছু অতিরিক্ত ঝুঁকি ফ্যাক্টরও রয়েছে, যা ক্যান্সারের সম্ভাবনা বাড়াতে পারে:

  1. এইচপিভি (HPV) ভাইরাস: এটি জরায়ু ক্যান্সারের মূল কারণ। বিশেষত, এইচপিভি ১৬ এবং এইচপিভি ১৮ ধরণের ভাইরাস জরায়ু ক্যান্সারের ঝুঁকি বাড়ায়।
  2. যৌন জীবন: বহুজনের সাথে যৌন সম্পর্ক রাখা বা যৌনবাহিত রোগ (STD) এর আক্রান্ত হওয়া, যা HPV সংক্রমণকে বাড়িয়ে দেয়।
  3. অলঙ্কৃত অ্যালকোহল এবং তামাক ব্যবহার: ধূমপান এবং অ্যালকোহল সেবন জরায়ু ক্যান্সারের ঝুঁকি বাড়াতে পারে।
  4. প্রাথমিক যৌন সম্পর্কের শুরু: যদি যৌন সম্পর্ক খুবই তরুণ বয়সে শুরু হয়, তবে HPV ভাইরাসের সংক্রমণ ঘটানোর ঝুঁকি বেড়ে যায়।
  5. কম প্রতিরোধ ক্ষমতা: যেমন এইচআইভি আক্রান্ত হলে বা ইমিউন সিস্টেম দুর্বল হলে, এটি HPV ভাইরাসকে শরীরে বাসা বাঁধতে সাহায্য করতে পারে, যার ফলে ক্যান্সার হতে পারে।
  6. পরিবারিক ইতিহাস: যদি পরিবারের সদস্যদের মধ্যে কেউ জরায়ু ক্যান্সারে আক্রান্ত থাকে, তবে তাদের মধ্যে এই রোগ হওয়ার ঝুঁকি বেশি থাকে।
  7. অপর্যাপ্ত স্ক্রীনিং: জরায়ু ক্যান্সারের জন্য নিয়মিত প্যাপ স্মিয়ার পরীক্ষা (Pap smear) না করানোও ঝুঁকি বাড়ায়, কারণ এটি ক্যান্সার প্রাথমিক অবস্থায় শনাক্ত করতে সাহায্য করে।

লক্ষণ:

জরায়ু ক্যান্সারের প্রাথমিক পর্যায়ে অনেক ক্ষেত্রে কোনো লক্ষণ প্রকাশ পায় না। তবে, যখন রোগটি অগ্রগতি হয়, তখন কিছু সাধারণ লক্ষণ দেখা দিতে পারে:

  1. অস্বাভাবিক রক্তপাত: বিশেষত যৌন সম্পর্কের পর রক্তপাত, বা মাসিকের সময়ের বাইরে রক্তপাত।
  2. পেটের নিচে ব্যথা: বিশেষ করে পেটের নীচের অংশে, যেখানে জরায়ু অবস্থিত।
  3. ব্যথাযুক্ত যৌন সম্পর্ক: যৌন সম্পর্কের সময় ব্যথা অনুভূত হতে পারে।
  4. যোনি থেকে অস্বাভাবিক স্রাব: যোনি থেকে সাদা, জলীয় বা রক্তমিশ্রিত স্রাব আসা।
  5. বডি পেইন বা ক্লান্তি: শরীরে অস্বাভাবিক ক্লান্তি, তীব্র শারীরিক দুর্বলতা বা অস্বাভাবিক পেইন অনুভূতি।
  6. পশ্চিম রক্ত বা প্রস্রাবে রক্ত আসা: জরায়ু ক্যান্সার যদি অগ্রগতি করে তবে প্রস্রাব বা মলদ্বারের সময় রক্তপাত হতে পারে।

প্রতিকার:

জরায়ু ক্যান্সারের চিকিৎসা বিভিন্ন স্তরের হতে পারে, এবং এটি নির্ভর করে ক্যান্সারের ধরণ, স্তর এবং রোগীর শারীরিক অবস্থা অনুসারে:

  1. অস্ত্রোপচার (সার্জারি): যদি ক্যান্সার পর্যায়ক্রমে বৃদ্ধি পায় তবে জরায়ু বা এর আশপাশের অংশ অপসারণ করা যেতে পারে।
    • হিস্টেরেকটমি: জরায়ু, ডিম্বাশয় এবং টিউব অপসারণ করা যেতে পারে।
  2. কেমোথেরাপি: কেমোথেরাপি ক্যান্সারের কোষগুলো ধ্বংস করার জন্য ব্যবহৃত হয়, বিশেষত ক্যান্সার যদি অন্যান্য অংশে ছড়িয়ে পড়ে।
  3. রেডিয়েশন থেরাপি: রেডিয়েশন থেরাপি ক্যান্সারের কোষ ধ্বংস করার জন্য ব্যবহার করা হয়। এটি কেমোথেরাপি বা অস্ত্রোপচারের পরে ব্যবহার করা যেতে পারে।
  4. টার্গেটেড থেরাপি: এটি ক্যান্সারের কোষের নির্দিষ্ট উপাদান লক্ষ্য করে কাজ করে, যাতে সুস্থ কোষগুলো ক্ষতিগ্রস্ত না হয়।
  5. ইমিউনোথেরাপি: এটি শরীরের প্রতিরোধ ক্ষমতা শক্তিশালী করে, যাতে শরীর ক্যান্সারের কোষগুলোকে নষ্ট করতে পারে।
  6. পালিয়েটিভ কেয়ার: কিছু ক্ষেত্রে যখন ক্যান্সার অগ্রগতি পর্যায়ে পৌঁছে যায়, তখন ক্যান্সার রোগীর জীবনযাত্রা উন্নত করার জন্য পেইন ম্যানেজমেন্ট এবং শারীরিক বা মানসিক সমর্থন দেওয়া হয়।

প্রতিরোধ:

জরায়ু ক্যান্সার প্রতিরোধের জন্য কিছু কার্যকরী উপায় রয়েছে:

  1. এইচপিভি (HPV) ভ্যাক্সিন: HPV ভাইরাস থেকে সুরক্ষার জন্য ভ্যাক্সিন গ্রহণ করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এটি বিশেষ করে ৯-১৪ বছর বয়সী মেয়েদের এবং পুরুষদের জন্য করা যেতে পারে।
  2. প্যাপ স্মিয়ার পরীক্ষা: প্যাপ স্মিয়ার পরীক্ষা নিয়মিত করার মাধ্যমে জরায়ু ক্যান্সারের প্রাথমিক লক্ষণগুলো শনাক্ত করা যেতে পারে। সাধারণত ২১ বছর বয়স থেকে প্রতি ৩ বছর অন্তর একবার এই পরীক্ষা করা উচিত।
  3. স্বাস্থ্যকর জীবনযাপন: স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস বজায় রাখা, নিয়মিত ব্যায়াম করা এবং ধূমপান ও অ্যালকোহল থেকে দূরে থাকা জরায়ু ক্যান্সারের ঝুঁকি কমাতে সাহায্য করে।
  4. যৌন নিরাপত্তা: নিরাপদ যৌন সম্পর্ক রাখা এবং একাধিক যৌন সঙ্গী থেকে দূরে থাকা এইচপিভি সংক্রমণ কমাতে সাহায্য করতে পারে।
  5. বয়স অনুসারে পরীক্ষা: বয়স বাড়ার সাথে সাথে নিয়মিত প্যাপ স্মিয়ার পরীক্ষা এবং চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া জরুরি।

উপসংহার:

জরায়ু ক্যান্সার যদি প্রাথমিক অবস্থায় শনাক্ত হয়, তবে এটি খুব সহজে চিকিৎসিত হতে পারে। তবে, যদি এটি দীর্ঘসময় ধরে অবহেলিত থাকে, তবে এটি জীবনঘাতী হয়ে উঠতে পারে। তাই নিয়মিত স্ক্রীনিং, HPV ভ্যাক্সিনেশন এবং স্বাস্থ্যকর জীবনযাপন জরায়ু ক্যান্সার প্রতিরোধের গুরুত্বপূর্ণ উপায়।

 

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *