Best Homeo Doctor

জরায়ুর স্থান চ্যুতি কি,কারন,লক্ষন,প্রতিকার

জরায়ুর স্থান চ্যুতি (Uterine Prolapse) হল একটি অবস্থা যেখানে জরায়ু (মাতৃগর্ভ) নিজের স্বাভাবিক অবস্থান থেকে নিচে নেমে আসে বা তার স্থান পরিবর্তিত হয়। এটি সাধারণত মহিলাদের মধ্যে ঘটে যারা একাধিক সন্তান জন্ম দিয়েছেন অথবা যাদের মূত্রাশয় বা পেরিনিয়ামের পেশী দুর্বল। জরায়ু স্থানচ্যুত হলে বিভিন্ন শারীরিক অসুবিধা দেখা দিতে পারে এবং চিকিৎসা না হলে সমস্যা গুরুতর হতে পারে।

জরায়ুর স্থান চ্যুতি (Uterine Prolapse) এর কারণ:

  1. প্রসবজনিত কারণ:
    • একাধিক সন্তান জন্ম দেওয়ার কারণে জরায়ুর পেশী ও লিগামেন্ট দুর্বল হয়ে যায়, যা জরায়ুর স্থানচ্যুতি ঘটাতে পারে।
    • দীর্ঘ সময় ধরে প্রসবের সময় চাপের মধ্যে থাকা, অতিরিক্ত গর্ভধারণ, বা সন্তানের বড় আকারও জরায়ুর স্থানচ্যুতির কারণ হতে পারে।
  2. মূত্রাশয়ের বা পেরিনিয়ামের দুর্বলতা:
    • মূত্রাশয়ের পেশী বা পেরিনিয়ামের দুর্বলতা (যেমন, প্রেগন্যান্সির পর অথবা বেশি বয়সে) জরায়ুকে তার স্থান থেকে সরে যেতে বাধ্য করে।
  3. হরমোনাল পরিবর্তন:
    • মেনোপজ বা হরমোনের পরিবর্তন জরায়ুর লিগামেন্ট ও পেশীকে দুর্বল করতে পারে, যার ফলে জরায়ু তার স্থানে স্থিতিশীল থাকতে পারে না।
  4. অতিরিক্ত শারীরিক চাপ:
    • দীর্ঘ সময় ধরে ভারী কিছু তোলা, চেষ্টায় থাকা বা শারীরিক পরিশ্রমের কারণে জরায়ুর পেশীতে চাপ পড়ে, যা তার স্থানচ্যুতি ঘটাতে পারে।
  5. বয়স:
    • বয়স বাড়লে জরায়ু এবং তার সমর্থক পেশী ও লিগামেন্ট দুর্বল হতে থাকে, যা জরায়ুর স্থানচ্যুতির সম্ভাবনা বাড়িয়ে তোলে।
  6. ওজন বৃদ্ধি:
    • অতিরিক্ত ওজন বা স্থূলতা জরায়ু এবং তার সহায়ক পেশী ও লিগামেন্টে অতিরিক্ত চাপ সৃষ্টি করে, যার ফলে জরায়ুর স্থানচ্যুতি হতে পারে।
  7. কোনও পুরনো বা দীর্ঘস্থায়ী শারীরিক সমস্যা:
    • যেমন, দীর্ঘস্থায়ী কোষ্ঠকাঠিন্য, দীর্ঘসময় ধরে কাশির সমস্যা, বা মূত্রনালি সংক্রমণ যে কারণে অতিরিক্ত চাপ পড়তে থাকে, তাও জরায়ুর স্থানচ্যুতির কারণ হতে পারে।

জরায়ুর স্থান চ্যুতি (Uterine Prolapse) এর লক্ষণ:

  1. যন্ত্রণা বা চাপ অনুভূতি:
    • জরায়ু স্থানচ্যুত হলে মহিলারা পেটের নিচে বা পেরিনিয়ামে চাপ বা যন্ত্রণা অনুভব করতে পারেন। বিশেষ করে দাঁড়িয়ে বা হাঁটাচলা করলে এটি বাড়তে পারে।
  2. যোনি থেকে কিছু বের হয়ে আসা:
    • জরায়ু স্থানচ্যুতি হলে যোনির মধ্যে বা বাইরে কিছু অনুভূত হতে পারে, যেমন জরায়ু বা তার অংশ যোনির দিকে নেমে আসে। এটি “ফ্যালিং” বা “ঝুলে পড়া” অনুভূতি সৃষ্টি করতে পারে।
  3. মূত্রত্যাগের সমস্যা:
    • জরায়ু স্থানচ্যুতি হলে মূত্রাশয়েও চাপ পড়তে পারে, যার ফলে মূত্রত্যাগের সময় সমস্যা হতে পারে, যেমন মূত্ররোধ বা অল্প অল্প মূত্র পড়া।
  4. যৌনসম্পর্কের সময় ব্যথা:
    • জরায়ুর স্থানচ্যুতি হলে যৌন সম্পর্কের সময় ব্যথা বা অস্বস্তি অনুভূত হতে পারে।
  5. বাঁধা বা বন্ধন অনুভূতি:
    • মহিলারা মাঝে মাঝে একটি “বাধা” বা “বন্ধন” অনুভব করতে পারেন, যা জরায়ু স্থানচ্যুতি হতে পারে।
  6. পেট ফুলে যাওয়া বা অস্বস্তি:
    • জরায়ু স্থানচ্যুতি হলে পেটে অস্বস্তি বা ফুলে যাওয়ার অনুভূতি হতে পারে, বিশেষ করে দীর্ঘসময় বসে থাকার পরে।
  7. যোনি থেকে নিষ্কাশন বা স্রাব:
    • কিছু ক্ষেত্রে, জরায়ুর স্থানচ্যুতি হলে যোনি থেকে অতিরিক্ত স্রাব বা অস্বাভাবিক নিষ্কাশন হতে পারে।

জরায়ুর স্থান চ্যুতি (Uterine Prolapse) এর প্রতিকার:

  1. কেগেল এক্সারসাইজ (Pelvic Floor Exercises):
    • কেগেল এক্সারসাইজ জরায়ুর সহায়ক পেশী শক্তিশালী করতে সাহায্য করে। এটি পেরিনিয়ামের পেশীকে শক্তিশালী করে, যা জরায়ু স্থানচ্যুতি কমাতে সহায়ক হতে পারে।
  2. ভরপুর বিশ্রাম শারীরিক চাপ কমানো:
    • অতিরিক্ত শারীরিক পরিশ্রম বা ভারী কিছু তোলার মাধ্যমে চাপ সৃষ্টি হতে পারে, যা জরায়ুর স্থানচ্যুতি বাড়িয়ে দিতে পারে। শারীরিক চাপ কমিয়ে রাখা জরায়ুর সুস্থতায় সহায়ক।
  3. মৌখিক বা হরমোনাল চিকিৎসা:
    • যদি জরায়ুর স্থানচ্যুতি হরমোনের পরিবর্তন বা মেনোপজের কারণে হয়, তবে হরমোনাল থেরাপি (যেমন, ইস্ট্রোজেন চিকিৎসা) নেওয়া যেতে পারে, যা জরায়ু ও পেশী শক্তিশালী করতে সাহায্য করে।
  4. ফিজিওথেরাপি:
    • পেলের ফিজিওথেরাপি পেশী শক্তিশালী করতে সাহায্য করতে পারে। বিশেষ ধরনের এক্সারসাইজ ও স্ট্রেচিং কার্যক্রম মায়ের জন্য উপকারী হতে পারে।
  5. যন্ত্রপাতি বা সাপোর্ট:
    • কিছু ক্ষেত্রে, চিকিৎসকরা বিশেষ ধরনের যন্ত্রপাতি বা পেসারি ব্যবহার করতে পারেন যা জরায়ুকে তার সঠিক অবস্থানে রাখতে সাহায্য করে।
  6. সার্জারি (অস্ত্রোপচার):
    • যদি জরায়ুর স্থানচ্যুতি গুরুতর হয় এবং অন্যান্য চিকিৎসা পদ্ধতিতে সুরাহা না পাওয়া যায়, তবে সার্জারি হতে পারে। এতে জরায়ুকে পুনরায় তার স্থানে স্থাপন করা হয় বা জরায়ু অপসারণ করা হতে পারে (হিস্টেরেকটমি)।
  7. ওজন নিয়ন্ত্রণ:
    • অতিরিক্ত ওজন বা স্থূলতা যদি জরায়ুর স্থানচ্যুতির কারণ হয়, তবে ওজন কমানোর মাধ্যমে চাপ কমানো যেতে পারে, যা সমস্যাটি দূর করতে সাহায্য করবে।
  8. বিশেষ কর্তা বা স্ত্রীরোগ বিশেষজ্ঞের পরামর্শ:
    • যদি সমস্যা গুরুতর হয়, তবে চিকিৎসকের পরামর্শ নেয়া উচিত। তারা যথাযথ চিকিৎসা পরিকল্পনা বা অস্ত্রোপচার প্রয়োজন কিনা তা নির্ধারণ করতে পারবেন।

উপসংহার:

জরায়ুর স্থানচ্যুতি একটি সাধারণ শারীরিক সমস্যা হলেও, এটি যথাযথ চিকিৎসা ও যত্নের মাধ্যমে সমাধান করা সম্ভব। যত তাড়াতাড়ি এই সমস্যা চিহ্নিত করা যায়, তত দ্রুত এবং কার্যকর চিকিৎসা দেওয়া সম্ভব। শারীরিক চাপ কমানো, কেগেল এক্সারসাইজ এবং চিকিৎসকের পরামর্শে উপযুক্ত চিকিৎসা গ্রহণ করলে সমস্যা যথাযথভাবে নিয়ন্ত্রণে আনা যেতে পারে।

 

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *