জরায়ুর ভিতর টিউমার (Uterine tumor) হল জরায়ুর ভিতরে বা তার আশপাশে গঠন হওয়া অস্বাভাবিক কোষের দল, যা সাধারণত সিস্ট বা টিউমারের আকারে গঠন পেতে পারে। এটি একটি সাধারণ সমস্যা, এবং সাধারণত benign (অসতেজ) হয়, তবে কিছু ক্ষেত্রে এটি malignant (ক্যান্সার) হতে পারে। জরায়ুর টিউমারগুলির মধ্যে সবচেয়ে সাধারণ হল ফাইব্রয়ডস (fibroids) এবং এন্ডোমেট্রিয়াল টিউমার (endometrial tumor)। এই টিউমারগুলি বেশিরভাগ সময় উপসর্গহীন থাকে, তবে কিছু ক্ষেত্রে তা পিরিয়ডের সমস্যার সৃষ্টি বা অন্যান্য শারীরিক সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে।
কারণ:
- ফাইব্রয়ডস (Fibroids):
- ফাইব্রয়ডস হল সবচেয়ে সাধারণ ধরনের টিউমার, যা জরায়ুর মাংসপেশিতে সৃষ্টি হয়। এটি সাধারণত হরমোনের কারণে বাড়তে থাকে, বিশেষ করে এস্ট্রোজেন হরমোনের প্রভাবে।
- বয়স, জেনেটিক ইতিহাস এবং অতিরিক্ত মেদ বা স্থূলতা এই সমস্যার ঝুঁকি বাড়ায়।
- এন্ডোমেট্রিয়াল ক্যান্সার:
- এন্ডোমেট্রিয়াল ক্যান্সার হলো জরায়ুর অভ্যন্তরীণ স্তরের টিউমার। এটি হরমোনাল অস্বস্তি, বিশেষ করে এস্ট্রোজেনের উচ্চ মাত্রা বা বয়স সম্পর্কিত পরিবর্তনের কারণে হতে পারে।
- জেনেটিক বা পারিবারিক ইতিহাস:
- যাদের পরিবারে জরায়ু ক্যান্সারের ইতিহাস রয়েছে, তাদের মধ্যে এই ধরনের টিউমার হওয়ার ঝুঁকি বেশি থাকে।
- হরমোনের তারতম্য:
- জরায়ু টিউমারের অনেক ক্ষেত্রে হরমোনাল ভারসাম্যের পরিবর্তন গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। এস্ট্রোজেন ও প্রজেস্টেরন হরমোনের অস্বাভাবিকতার কারণে টিউমার বৃদ্ধি পেতে পারে।
- অনিয়মিত মাসিক চক্র:
- অনিয়মিত পিরিয়ড বা মাসিক চক্রের কারণে জরায়ুর ভিতরে টিউমারের সৃষ্টি হতে পারে।
- অতিরিক্ত মেদ:
- স্থূলতা বা অতিরিক্ত মেদের কারণে হরমোনের ভারসাম্য নষ্ট হতে পারে, যা জরায়ুর টিউমারের সৃষ্টি করতে পারে।
লক্ষণ:
- পিরিয়ডের অস্বাভাবিকতা:
- অত্যধিক রক্তপাত: মাসিকের সময় অতিরিক্ত রক্তপাত হওয়া, দীর্ঘ সময় ধরে পিরিয়ড চলা।
- অসংগঠিত মাসিক: পিরিয়ডের মাঝে অপ্রত্যাশিত রক্তপাত দেখা যেতে পারে।
- পেটের তলদেশে ব্যথা বা চাপ:
- জরায়ুর ভিতর টিউমার বড় হলে পেটের নীচে তীব্র ব্যথা বা চাপ অনুভূত হতে পারে। এই ব্যথা কখনও কখনও পেটের পেছন দিকে বা কোমরের দিকে ছড়িয়ে যেতে পারে।
- মূত্রথলির সমস্যা:
- টিউমারের কারণে মূত্রাশয়ের উপর চাপ পড়তে পারে, যার ফলে ঘন ঘন প্রস্রাব করার প্রয়োজন বা প্রস্রাবে সমস্যা হতে পারে।
- যৌন সম্পর্কের সময় ব্যথা:
- যৌন মিলনের সময় তীব্র ব্যথা অনুভূত হতে পারে।
- পেট ফুলে যাওয়া:
- টিউমার বাড়তে থাকলে পেট ফুলে যাওয়ার অনুভূতি হতে পারে, যা অস্বস্তি সৃষ্টি করতে পারে।
- ক্লান্তি বা দুর্বলতা:
- অতিরিক্ত রক্তপাত বা অন্যান্য সমস্যার কারণে ক্লান্তি বা দুর্বলতার অনুভূতি হতে পারে।
প্রতিকার:
- মেডিক্যাল চিকিৎসা:
- অ্যান্টি–ইনফ্ল্যামেটরি ওষুধ: ব্যথা বা প্রদাহ কমানোর জন্য কিছু অ্যান্টি-ইনফ্ল্যামেটরি ওষুধ ব্যবহার করা যেতে পারে।
- হরমোনাল থেরাপি: হরমোনের তারতম্য ঠিক করতে চিকিৎসক হরমোন থেরাপি দিতে পারেন। এটি টিউমারের বৃদ্ধি রোধ করতে সাহায্য করতে পারে।
- শল্যচিকিৎসা:
- ফাইব্রয়ড বা টিউমার অপসারণ: যদি টিউমারটি বড় হয় বা তীব্র উপসর্গ সৃষ্টি করে, তবে শল্যচিকিৎসার মাধ্যমে টিউমার অপসারণ করা হতে পারে।
- হিস্টেরেকটমি: যদি টিউমার ক্যান্সার বা অন্য কোনো জটিলতার কারণে হয়ে থাকে, তবে জরায়ু অপসারণ (হিস্টেরেকটমি) প্রয়োজন হতে পারে।
- নিউট্রিশন এবং লাইফস্টাইল:
- স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস এবং নিয়মিত ব্যায়াম জরায়ু টিউমারের বৃদ্ধির ঝুঁকি কমাতে সাহায্য করতে পারে। সুষম খাদ্য, পর্যাপ্ত পানি পান এবং স্থূলতা থেকে বাঁচা টিউমারের বৃদ্ধি রোধ করতে পারে।
- নিয়মিত গাইনোকলজিক্যাল চেকআপ:
- নিয়মিত চেকআপ এবং আল্ট্রাসোনোগ্রাফি বা অন্যান্য পরীক্ষার মাধ্যমে টিউমার শনাক্ত করা যেতে পারে এবং প্রাথমিক পর্যায়ে চিকিৎসা নেওয়া সহজ হয়।
সতর্কতা:
- জরায়ুর টিউমার সাধারণত ভয়ঙ্কর না হলেও, এটি কখনও কখনও ক্যান্সারে রূপান্তরিত হতে পারে, বিশেষ করে এন্ডোমেট্রিয়াল ক্যান্সার। সুতরাং, যদি পিরিয়ডের সমস্যা, পেটের ব্যথা বা অন্য কোনো অস্বাভাবিক লক্ষণ দেখা যায়, তবে দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া জরুরি।
উপসংহার: জরায়ুর ভিতর টিউমার বেশিরভাগ সময় নিরীহ থাকে, তবে এটি যদি তীব্র সমস্যা সৃষ্টি করে বা ক্যান্সারে রূপান্তরিত হয়, তবে চিকিৎসা প্রয়োজন। সময়মতো চিকিৎসা নেওয়া এবং নিয়মিত মেডিক্যাল চেকআপ করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।