Best Homeo Doctor

জন্মগত রক্তচাপ কি কারন,লক্ষন,প্রতিকার

রক্তচাপ জন্মগত (Genetic Hypertension) বা বংশগত উচ্চ রক্তচাপ (Hereditary Hypertension) হলো এমন একটি অবস্থা যেখানে উচ্চ রক্তচাপ (Hypertension) ব্যক্তি বা তার পরিবারের মধ্যে বংশগতভাবে চলে আসে। এর মানে হলো, যদি পরিবারের কোনো সদস্যের উচ্চ রক্তচাপ থাকে, তবে তার সন্তানদেরও এই অবস্থার সম্ভাবনা বেশি থাকে। এই ধরনের উচ্চ রক্তচাপ সাধারণত জীবনযাত্রার অভ্যাস বা পরিবেশগত কারণ থেকে আলাদা হয়ে, জেনেটিক উপাদানের কারণে তৈরি হয়।

রক্তচাপ জন্মগত হওয়ার কারণ:

বংশগত রক্তচাপের জন্য বেশ কিছু কারণ দায়ী হতে পারে:

  1. জেনেটিক বা বংশগত কারণ (Genetic or Hereditary Factors):
    • রক্তচাপ একটি জেনেটিক বৈশিষ্ট্য হতে পারে, যার মানে হলো আপনার পরিবারের অন্যান্য সদস্যদের উচ্চ রক্তচাপ থাকলে আপনারও এটি হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। এটি পরিবারের একটি প্রজন্ম থেকে অন্য প্রজন্মে প্রবাহিত হতে পারে।
  2. কিছু নির্দিষ্ট জেনেটিক অ্যালিল (Genetic Alleles):
    • কিছু নির্দিষ্ট জেনেটিক অ্যালিল বা বৈশিষ্ট্য, যেমন সোডিয়াম সংবেদনশীলতা, হরমোনের সমস্যা বা রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণের প্রক্রিয়ায় বংশগত ত্রুটি, উচ্চ রক্তচাপের ঝুঁকি বাড়াতে পারে।
  3. হরমোনাল সমস্যা (Hormonal Issues):
    • কিছু বংশগত রোগ, যেমন কুশিং সিনড্রোম বা ফিওক্রোমোসাইটোমা, যেগুলি হরমোনের কারণে রক্তচাপ বাড়িয়ে দেয়, এগুলিও বংশগত হতে পারে।
  4. বয়স (Age):
    • বয়স বাড়ার সঙ্গে রক্তচাপ বাড়ার প্রবণতা থাকে, এবং যদি পরিবারের সদস্যদের বয়সের সঙ্গে রক্তচাপ বৃদ্ধি ঘটে, তবে সেটা জেনেটিক কারণে হতে পারে।
  5. লাইফস্টাইল পরিবেশগত প্রভাব (Lifestyle and Environmental Factors):
    • যেহেতু বংশগত রক্তচাপের সাথে পরিবারে অভ্যাস ও পরিবেশও জড়িত থাকে, তাই খারাপ খাদ্যাভ্যাস, কায়িক পরিশ্রমের অভাব, অতিরিক্ত মানসিক চাপ, এবং অ্যালকোহল ও ধূমপানও রক্তচাপ বাড়াতে পারে।

রক্তচাপ জন্মগত হওয়া লক্ষণ:

বংশগত রক্তচাপ সাধারণত ধীরে ধীরে উন্নতি করে এবং প্রথমে কোনো লক্ষণ দেখা না গেলেও, এর গুরুতর প্রভাব পরে দেখা দিতে পারে। কিছু সাধারণ লক্ষণ নিম্নরূপ:

  1. শরীরের কিছু অংশে ফুলে যাওয়া (Swelling in Body Parts):
    • উচ্চ রক্তচাপের কারণে শরীরের বিভিন্ন অংশ যেমন পা, পায়ের টাখনু, বা হাতের আঙুলে ফুলে যাওয়া হতে পারে।
  2. বুকের ব্যথা (Chest Pain):
    • উচ্চ রক্তচাপের কারণে বুকের ব্যথা বা অস্বস্তি হতে পারে, বিশেষত যখন এটি দীর্ঘদিন ধরে unmanaged থাকে।
  3. শ্বাসকষ্ট (Shortness of Breath):
    • রক্তচাপের কারণে হৃদপিণ্ডের কার্যকারিতা কমে গেলে শ্বাস নিতে সমস্যা হতে পারে।
  4. মাথাব্যথা (Headaches):
    • বিশেষত যখন রক্তচাপ খুবই উচ্চ হয়ে যায়, তখন মাথাব্যথা হতে পারে।
  5. চোখের সমস্যা (Vision Problems):
    • উচ্চ রক্তচাপ চোখের রেটিনাতে প্রভাব ফেলতে পারে, যার ফলে দৃষ্টিশক্তি হ্রাস পেতে পারে। কখনও কখনও এই অবস্থাটি দীর্ঘদিন ধরে চলতে থাকলে চোখে রক্তপাত হতে পারে।
  6. অতিরিক্ত ক্লান্তি (Excessive Fatigue):
    • শরীরে অক্সিজেনের সরবরাহ কমে যাওয়ার কারণে ক্লান্তি অনুভূত হতে পারে।
  7. অস্বাভাবিক হৃদস্পন্দন (Irregular Heartbeats):
    • হৃদপিণ্ডের কার্যক্রমে অস্বাভাবিকতা ঘটতে পারে, যার ফলে হৃদস্পন্দন দ্রুত বা ধীর হতে পারে।
  8. মাথা ঘোরা বা অজ্ঞান হওয়া (Dizziness or Fainting):
    • উচ্চ রক্তচাপের কারণে মাথা ঘোরা বা অজ্ঞান হওয়া হতে পারে, বিশেষত যদি রক্তচাপ হঠাৎ করে বাড়ে।

রক্তচাপ জন্মগত হলে প্রতিকার:

বংশগত উচ্চ রক্তচাপের জন্য কিছু নির্দিষ্ট প্রতিকার এবং চিকিৎসা পদ্ধতি রয়েছে:

  1. ঔষধ (Medications):
    • উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখতে বিভিন্ন ধরনের ঔষধ ব্যবহৃত হতে পারে:
      • ডায়ুরেটিকস (Diuretics): শরীরের অতিরিক্ত তরল এবং সোডিয়াম বের করার জন্য ব্যবহৃত হয়।
      • বেটাব্লকারস (Beta-blockers): হৃদপিণ্ডের হার কমাতে এবং রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখতে সাহায্য করে।
      • এসি ইনহিবিটরস (ACE Inhibitors): রক্তচাপ কমাতে এবং হৃদপিণ্ডের কার্যক্ষমতা বজায় রাখতে ব্যবহৃত হয়।
      • ক্যালসিয়াম চ্যানেল ব্লকারস (Calcium Channel Blockers): রক্তনালীর সংকোচন কমাতে এবং রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখতে সাহায্য করে।
  2. লাইফস্টাইল পরিবর্তন (Lifestyle Changes):
    • স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস (Healthy Diet): কম লবণ, কম চর্বি, এবং স্বাস্থ্যকর পুষ্টির খাদ্য গ্রহণ করা উচিত।
    • নিয়মিত ব্যায়াম (Regular Exercise): হৃদপিণ্ড সুস্থ রাখতে এবং রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখতে নিয়মিত শারীরিক পরিশ্রম করা উচিত।
    • ওজন নিয়ন্ত্রণ (Weight Management): অতিরিক্ত ওজন কমানো রক্তচাপ কমাতে সাহায্য করে।
    • মানসিক চাপ কমানো (Stress Reduction): স্ট্রেস কমানো এবং শান্ত থাকার জন্য যোগব্যায়াম বা মেডিটেশন করা উচিত।
  3. ধূমপান ত্যাগ (Quit Smoking):
    • ধূমপান উচ্চ রক্তচাপ বাড়ানোর একটি বড় কারণ, তাই এটি ত্যাগ করা উচিত।
  4. অ্যালকোহল নিয়ন্ত্রণ (Limit Alcohol):
    • অতিরিক্ত অ্যালকোহল রক্তচাপ বাড়াতে পারে, তাই সঠিক মাত্রায় খাওয়া উচিত।
  5. যথাসময়ে চিকিৎসকের পরামর্শ (Regular Check-ups):
    • উচ্চ রক্তচাপের ঝুঁকিতে থাকা ব্যক্তিদের নিয়মিত রক্তচাপ পরীক্ষা করা এবং চিকিৎসকের পরামর্শ নেয়া উচিত।
  6. পেসমেকার বা অন্যান্য চিকিৎসা (Pacemaker or Surgical Treatment):
    • কিছু ক্ষেত্রে, উচ্চ রক্তচাপের ফলে হৃদপিণ্ডে সমস্যা সৃষ্টি হলে, পেসমেকার বা অন্যান্য চিকিৎসা প্রয়োগ করা হতে পারে।

কখন চিকিৎসকের পরামর্শ নেবেন:

  • যদি আপনার পরিবারের কারো উচ্চ রক্তচাপ থাকে এবং আপনি মনে করেন আপনার রক্তচাপও বাড়ছে।
  • যদি মাথাব্যথা, শ্বাসকষ্ট, বুকের ব্যথা বা অস্বস্তি অনুভূত হয়।
  • যদি চোখের দৃষ্টিশক্তি কমে যায় বা দেখা যায় না।
  • যদি অস্বাভাবিক হৃদস্পন্দন বা মাথা ঘোরা অনুভূত হয়।

বংশগত রক্তচাপ যদি দীর্ঘমেয়াদীভাবে unmanaged থাকে তবে এটি হৃদরোগ, স্ট্রোক, কিডনি সমস্যা ইত্যাদি গুরুতর জটিলতার কারণ হতে পারে। তাই নিয়মিত চিকিৎসা, লাইফস্টাইল পরিবর্তন এবং স্বাস্থ্যকর অভ্যাস রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখতে গুরুত্বপূর্ণ।

 

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *