Best Homeo Doctor

জন্ডিস কি,কারন,লক্ষন,প্রতিকার

জন্ডিস (Jaundice) হল এমন একটি অবস্থা যেখানে শরীরে বিলিরুবিন নামক একটি রক্ত সৃষ্ট উপাদান জমা হয়ে ত্বক, চোখের সাদা অংশ এবং মিউকাস মেমব্রেনগুলোতে হলুদ রঙ ধারণ করে। এটি সাধারণত লিভারের সমস্যা, রক্তের সমস্যা বা অন্য কোনো অঙ্গের সমস্যা হতে পারে।

কারণ:

জন্ডিসের প্রধান কারণগুলো হলো:

  1. লিভার বা যকৃতের সমস্যা:
    • হেপাটাইটিস (Hepatitis): ভাইরাল বা অ্যালকোহলিক হেপাটাইটিস লিভারের প্রদাহ সৃষ্টি করে, যা বিলিরুবিনের পরিমাণ বাড়িয়ে দেয়।
    • লিভার সিরোসিস (Liver Cirrhosis): দীর্ঘস্থায়ী লিভারের ক্ষতি ও প্রদাহের ফলে সিরোসিস হতে পারে, যা বিলিরুবিনকে শরীর থেকে সরিয়ে দিতে বাধা সৃষ্টি করে।
    • লিভার ক্যান্সার (Liver Cancer): লিভারের টিউমার বা ক্যান্সারও জন্ডিসের কারণ হতে পারে।
  2. বিলিরুবিনের বেশি উৎপাদন:
    • হিমোলাইসিস (Hemolysis): রক্তের লাল কণিকার ভাঙনের কারণে অতিরিক্ত বিলিরুবিন উৎপন্ন হতে পারে। যেমন, ম্যালেরিয়া বা সিকেল সেল অ্যানিমিয়া (Sickle Cell Anemia) এর কারণে।
  3. পিত্তথলির সমস্যা (Gallbladder issues):
    • পাথর (Gallstones): পিত্তথলিতে পাথর জমে গেলে তা পিত্তের প্রবাহকে বাধাগ্রস্ত করে এবং বিলিরুবিনের জমা সৃষ্টি হতে পারে, ফলে জন্ডিস হয়।
    • পিত্তনালী বন্ধ (Bile Duct Obstruction): পিত্তনালীতে ব্লকেজ থাকলে পিত্ত শরীরে সঠিকভাবে প্রবাহিত হতে পারে না এবং বিলিরুবিন জমা হয়ে জন্ডিস সৃষ্টি করে।
  4. নতুন জন্ম নেওয়া শিশু:
    • নবজাতক শিশুর মধ্যে জন্ডিস খুবই সাধারণ, বিশেষত প্রথম কয়েকদিনে। এটি সাধারণত হালকা এবং শরীরের পরিপক্বতা না থাকার কারণে হয়, তবে যদি অবস্থা গুরুতর হয়, তাহলে চিকিৎসা প্রয়োজন।
  5. ড্রাগস বা ওষুধ:
    • কিছু নির্দিষ্ট ধরনের ওষুধ, যেমন টিবি বা অ্যালকোহল, লিভারের ক্ষতি করতে পারে এবং জন্ডিস সৃষ্টি করতে পারে।

লক্ষণ:

জন্ডিসের সাধারণ লক্ষণগুলো হল:

  1. ত্বকের হলুদ রঙ (Yellowing of the Skin):
    • ত্বক এবং চোখের সাদা অংশে হলুদ দাগ পড়া। এটি সবচেয়ে সাধারণ লক্ষণ।
  2. চোখের সাদা অংশে হলুদ (Yellowing of the Eyes):
    • চোখের সাদা অংশে হলুদ ভাব দেখা দেয়, যা চোখের বিলিরুবিনের পরিমাণ বৃদ্ধি পাওয়ার কারণে হয়।
  3. পেটের উপরের ডানদিকে ব্যথা:
    • যকৃতের সমস্যার কারণে পেটের ডান পাশে অস্বস্তি বা ব্যথা অনুভূত হতে পারে।
  4. অ্যাপেটাইট লস (Loss of Appetite):
    • খাবারের প্রতি আগ্রহ কমে যাওয়া এবং খাওয়ার সময় অস্বস্তি বা পূর্ণতা অনুভূত হতে পারে।
  5. মূত্রের রঙ গা dark হওয়া (Dark Urine):
    • জন্ডিসের কারণে মূত্র গা dark ় বা কালো হয়ে যেতে পারে, যা বিলিরুবিনের উপস্থিতি নির্দেশ করে।
  6. পায়খানার রঙ সাদা বা হালকা (Pale Stools):
    • পায়খানার রঙ সাদা বা হালকা হতে পারে, যা পিত্তের অভাব বা পিত্তনালীতে বাধা সৃষ্টি হওয়ার কারণে হয়।
  7. শরীরের ক্লান্তি বা দুর্বলতা:
    • সাধারণভাবে শরীর দুর্বল বা ক্লান্ত অনুভূত হতে পারে।
  8. গ্যাস্ট্রোইনটেস্টাইনাল সমস্যা (GI issues):
    • বমি, বমিভাব, এবং পেট ফুলে যাওয়ার মতো সমস্যা দেখা দিতে পারে।
  9. জ্বর:
    • কিছু ক্ষেত্রে জন্ডিসের সঙ্গে হালকা জ্বরও থাকতে পারে।

প্রতিকার:

জন্ডিসের চিকিৎসা তার কারণের ওপর নির্ভর করে। তবে কিছু সাধারণ প্রতিকার এবং যত্ন নেওয়ার পদ্ধতি রয়েছে:

  1. ভাইরাল হেপাটাইটিসের জন্য চিকিৎসা:
    • হেপাটাইটিস এ, বি বা সি এর জন্য বিশেষ অ্যান্টিভাইরাল চিকিৎসা দেওয়া যেতে পারে, তবে কিছু ভাইরাস সাধারণত নিজে থেকেই সুস্থ হয়ে যায়।
  2. অ্যালকোহল ধূমপান পরিহার:
    • লিভারের ক্ষতি হতে পারে অ্যালকোহল সেবন এবং ধূমপানের কারণে, তাই এসব পরিহার করা উচিত।
  3. ওষুধের ব্যবহার:
    • যদি পিত্তথলির পাথর বা পিত্তনালীর ব্লকেজ থাকে, তবে চিকিৎসক পাথর অপসারণ বা পিত্তথলি সংক্রান্ত চিকিৎসা পরামর্শ দিতে পারেন।
  4. ডিটক্সিফিকেশন:
    • লিভার ডিটক্সিফিকেশনের জন্য স্বাস্থ্যকর খাবার গ্রহণ, পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি পান, এবং লিভারের জন্য উপকারী খাবার যেমন শাকসবজি, ফলমূল, টক দই, সিমলার প্রোটিন খাওয়া উপকারী।
  5. ভিটামিন এবং পুষ্টি:
    • লিভারের সুস্থতার জন্য কিছু ভিটামিন যেমন ভিটামিন সি, ই, এবং বি কমপ্লেক্স খাবার গ্রহণ করা গুরুত্বপূর্ণ। এগুলি লিভারকে সুরক্ষা দেয় এবং সুস্থ রাখতে সাহায্য করে।
  6. লিভার ট্রান্সপ্লান্ট:
    • গুরুতর লিভার সমস্যায় যেমন সিরোসিস বা লিভার ক্যান্সারের ক্ষেত্রে, লিভার প্রতিস্থাপন প্রয়োজন হতে পারে।
  7. স্বাস্থ্যকর জীবনযাপন:
    • স্বাস্থ্যকর জীবনযাপন, সুষম খাদ্যাভ্যাস, নিয়মিত ব্যায়াম এবং পর্যাপ্ত বিশ্রাম লিভারের সুস্থতায় সহায়ক।

প্রতিরোধ:

  1. হেপাটাইটিস বি এবং সিএর জন্য ভ্যাকসিনেশন:
    • হেপাটাইটিস বি-এর জন্য টিকা নেওয়া উচিত। হেপাটাইটিস সি-এর জন্য টিকা না থাকলেও, এটি দূরে রাখার জন্য সাবধানতা অবলম্বন করা প্রয়োজন।
  2. পানির উৎস নিরাপদ রাখা:
    • নিরাপদ পানি এবং পুষ্টিকর খাবার গ্রহণ করা উচিত, কারণ এটি লিভারের সুরক্ষা এবং জন্ডিসের প্রতিরোধে সাহায্য করে।
  3. অ্যালকোহল সেবন সীমিত করা:
    • অতিরিক্ত অ্যালকোহল সেবন লিভারের সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে, যা জন্ডিসের কারণ হতে পারে।
  4. নিরাপদ যৌন জীবন:
    • হেপাটাইটিস বি এবং সি ভাইরাস সংক্রমণ রক্তের মাধ্যমে হতে পারে, তাই নিরাপদ যৌন আচরণ অনুসরণ করা গুরুত্বপূর্ণ।
  5. ব্যক্তিগত স্যানিটেশন:
    • হাত পরিষ্কার রাখা এবং সঠিক স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলা, বিশেষত খাবার ও পানীয় গ্রহণের আগে হাত ধোয়া জরুরি।

কখন চিকিৎসকের পরামর্শ নেবেন?

  1. যদি ত্বক বা চোখের সাদা অংশে হলুদ ভাব দেখা যায়।
  2. যদি পেটের ডান পাশে অস্বস্তি বা ব্যথা থাকে।
  3. যদি মূত্র গা dark ় বা সাদা পায়খানা দেখা যায়।
  4. যদি শরীরে দ্রুত ক্লান্তি বা দুর্বলতা অনুভূত হয়।

জন্ডিস গুরুতর সমস্যা হতে পারে, তাই দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নেয়া উচিত।

 

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *