Best Homeo Doctor

ঘাড় আড়ষ্ট কি,কারন,লক্ষন,প্রতিকার

ঘাড় আড়ষ্ট (Neck stiffness) হলো ঘাড়ে কোনো ধরনের অস্বস্তি বা সংকোচন, যার কারণে ঘাড় ঘোরানো বা নড়াচড়া করা কঠিন হয়ে পড়ে। এটি একটি সাধারণ শারীরিক সমস্যা, যা কিছু সময় ছোটখাটো কারণে এবং কখনো দীর্ঘস্থায়ী শারীরিক সমস্যার কারণে হতে পারে।

কারণ:

ঘাড় আড়ষ্ট হওয়ার অনেক কারণ থাকতে পারে। কিছু সাধারণ কারণ হলো:

  1. ভুল ভঙ্গিতে শুয়ে থাকা বা বসে থাকা: ঘাড়ের পেশী যদি ভুলভাবে অবস্থান করে (যেমন, দীর্ঘ সময় এক ভঙ্গিতে বসে থাকা বা ঘুমানো), তবে এটি আড়ষ্টতা সৃষ্টি করতে পারে।
  2. ঘাড়ের পেশীতে টান বা স্প্যাম: ভারী কিছু তোলার সময় বা অতিরিক্ত শারীরিক পরিশ্রমের কারণে ঘাড়ের পেশীতে টান পড়ে বা স্প্যাম হতে পারে, যার ফলে আড়ষ্টতা অনুভূত হয়।
  3. স্ট্রেস বা মানসিক চাপ: মানসিক চাপ বা উদ্বেগের কারণে শরীরের পেশীগুলিতে টান পড়তে পারে, বিশেষ করে ঘাড়ে। এটি ঘাড়ে আড়ষ্টতা সৃষ্টি করতে পারে।
  4. মাসল বা লিগামেন্টে সমস্যা: ঘাড়ের পেশী বা লিগামেন্টে ইনজুরি, প্রদাহ বা ক্ষত হওয়ার কারণে ঘাড়ে আড়ষ্টতা অনুভূত হতে পারে।
  5. ঘাড়ের ডিস্কে সমস্যা: মেরুদণ্ডের ডিস্কে ক্ষতি (যেমন ডিস্ক হার্নিয়া) হলে ঘাড়ের পেশী বা স্নায়ুতে চাপ পড়তে পারে, যা আড়ষ্টতা সৃষ্টি করতে পারে।
  6. অথিওআর্থ্রাইটিস: বয়সের সঙ্গে সঙ্গে ঘাড়ের জয়েন্টে পরিবর্তন আসতে পারে, যেমন অস্টিওআর্থ্রাইটিস, যা ঘাড়ে আড়ষ্টতা সৃষ্টি করতে পারে।
  7. শারীরিক অবস্থা: গর্ভাবস্থা বা অন্যান্য শারীরিক পরিবর্তনও ঘাড়ে চাপ সৃষ্টি করে আড়ষ্টতা সৃষ্টি করতে পারে।
  8. ঘাড়ে প্রদাহ: ভাইরাস বা ব্যাকটেরিয়া দ্বারা ঘাড়ে প্রদাহ (যেমন মেনিনজাইটিস বা শারীরিক ইনফেকশন) হতে পারে, যা আড়ষ্টতা সৃষ্টি করতে পারে।

লক্ষণ:

ঘাড় আড়ষ্টতার কিছু সাধারণ লক্ষণ হলো:

  1. ঘাড়ের নড়াচড়ায় অসুবিধা: ঘাড় ঘোরাতে বা মোড় দিতে অসুবিধা হতে পারে এবং ঘাড় খুব কঠিন বা টান অনুভূত হয়।
  2. পেশীতে টান বা ব্যথা: ঘাড়ে টান বা ব্যথা অনুভূত হতে পারে, যা শারীরিক কার্যকলাপের সময় আরও বাড়তে পারে।
  3. কম্পন বা অবশ হওয়া: কখনো কখনো ঘাড়ের আড়ষ্টতার কারণে হাত বা পায়ের দিকে কম্পন বা অবশ হয়ে যেতে পারে।
  4. কাঁধ বা পিঠে ব্যথা: ঘাড়ের আড়ষ্টতার কারণে কাঁধ বা পিঠেও ব্যথা বা অস্বস্তি অনুভূত হতে পারে।
  5. মাথাব্যথা বা মাথা ঘোরা: ঘাড়ে আড়ষ্টতা থাকলে কখনো মাথাব্যথা বা মাথা ঘোরা অনুভূত হতে পারে।
  6. স্নায়ু সমস্যা: কিছু ক্ষেত্রে, ঘাড়ের আড়ষ্টতার কারণে স্নায়ুতে চাপ পড়লে, হাত বা পায়ে শিরশির বা অবশ অনুভূতি হতে পারে।

প্রতিকার:

ঘাড় আড়ষ্টতা কমানোর জন্য কিছু সাধারণ প্রতিকার:

  1. বিশ্রাম: ঘাড়ের পেশীকে বিশ্রাম দেওয়া উচিত। তবে দীর্ঘসময় শয্যাশায়ী না হয়ে মাঝে মাঝে কিছু চলাফেরা করা উচিত, যাতে পেশী আরো শক্তিশালী হয়।
  2. গরম ঠান্ডা সেঁক: ঘাড়ে গরম বা ঠান্ডা সেঁক দেওয়া যেতে পারে। ঠান্ডা সেঁক প্রদাহ কমাতে সাহায্য করে এবং গরম সেঁক পেশী শিথিল করতে সাহায্য করে।
  3. পেইন কিলার ওষুধ: প্যারাসিটামল বা আইবুপ্রোফেনের মতো পেইন কিলার ওষুধ ব্যথা কমাতে সহায়ক হতে পারে। তবে, এগুলি দীর্ঘ সময় ব্যবহার করার আগে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত।
  4. ফিজিওথেরাপি: ফিজিওথেরাপি বিশেষভাবে ঘাড়ের আড়ষ্টতা কমাতে সহায়ক হতে পারে। পেশীকে শক্তিশালী ও নমনীয় করতে উপযুক্ত ব্যায়াম করা যেতে পারে।
  5. স্ট্রেচিং ব্যায়াম: ঘাড়ের স্ট্রেচিং ব্যায়াম খুব কার্যকর হতে পারে। এটি পেশীকে শিথিল এবং নমনীয় করে, যা আড়ষ্টতা কমাতে সাহায্য করে। তবে, ব্যায়াম করার আগে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত।
  6. পোস্টুরাল ঠিক রাখা: সোজা হয়ে বসা বা দাঁড়ানো, এবং ঘুমানোর সময় সঠিক পিলো ব্যবহার করা জরুরি। এটি ঘাড়ের ওপর চাপ কমাতে সাহায্য করে।
  7. যোগব্যায়াম বা মেডিটেশন: যোগব্যায়াম ও শিথিলতা কৌশল মানসিক চাপ কমাতে সাহায্য করে, যা শরীরের পেশী শিথিল করতে সহায়ক।
  8. পানি পুষ্টিকর খাদ্য গ্রহণ: শরীরে পানি ও পুষ্টির ঘাটতি থাকলে পেশী শিথিলতা হতে পারে। তাই পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি পান এবং স্বাস্থ্যকর খাদ্য গ্রহণ করা উচিত।

যখন চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে:

যদি ঘাড়ের আড়ষ্টতা দীর্ঘস্থায়ী বা তীব্র হয়, অথবা যদি এতে কোনো স্নায়ুর সমস্যা (যেমন, হাত বা পায়ে শিরশির বা অবশ হওয়া), মাথাব্যথা বা দুর্বলতা থাকে, তবে দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত।

 

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *