ঘাড়ে বাত (Neck arthritis or Cervical spondylosis) হলো ঘাড়ের হাড়, জয়েন্ট বা ডিস্কের ক্ষয় বা প্রদাহজনিত সমস্যা, যা ঘাড়ে ব্যথা এবং অস্বস্তি সৃষ্টি করে। এটি সাধারণত বয়সের সাথে সম্পর্কিত সমস্যা হলেও, এটি বিভিন্ন কারণে হতে পারে এবং প্রায়শই মেরুদণ্ডের অংশে সমস্যা সৃষ্টি করে।
কারণ:
ঘাড়ে বাতের কারণগুলো বিভিন্ন হতে পারে:
- অস্টিওআর্থ্রাইটিস (Osteoarthritis): বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে ঘাড়ের জয়েন্টগুলোতে ক্ষয় হতে পারে, যার কারণে ঘাড়ে বাতের সমস্যা হয়। এটি সবচেয়ে সাধারণ কারণ।
- ডিস্ক ক্ষয় বা হার্নিয়া (Disc degeneration or Herniated Disc): মেরুদণ্ডের ডিস্কগুলো যদি ক্ষতিগ্রস্ত হয় বা জায়গা ছেড়ে বেরিয়ে আসে, তবে এটি স্নায়ুতে চাপ সৃষ্টি করে এবং ঘাড়ে বাতের অনুভূতি তৈরি করতে পারে।
- ঘাড়ের জয়েন্টে প্রদাহ: প্রদাহজনিত রোগ (যেমন, রিউমাটয়েড আথ্রাইটিস) ঘাড়ের জয়েন্টে ব্যথা এবং বাত সৃষ্টি করতে পারে।
- ঘাড়ে অতিরিক্ত চাপ: অতিরিক্ত শারীরিক পরিশ্রম, ভুল ভঙ্গিতে কাজ বা ঘুমানো, বা দীর্ঘসময় কম্পিউটার বা স্মার্টফোন ব্যবহার করার ফলে ঘাড়ের জয়েন্টে অতিরিক্ত চাপ পড়তে পারে, যা বাতের সৃষ্টি করতে পারে।
- ঘাড়ে আঘাত: কোনো দুর্ঘটনায় বা আঘাতের কারণে ঘাড়ের জয়েন্টে সমস্যা হতে পারে, যা বাত সৃষ্টি করতে পারে।
- অতিরিক্ত শরীরের ওজন: অতিরিক্ত ওজনের কারণে ঘাড়ের উপর চাপ বেড়ে গিয়ে বাতের সমস্যা হতে পারে।
লক্ষণ:
ঘাড়ে বাতের কিছু সাধারণ লক্ষণ হলো:
- ঘাড়ে ব্যথা: ঘাড়ের পেছন, পাশে বা সামনের দিকে ব্যথা অনুভূত হতে পারে। ব্যথাটি তীব্র হতে পারে এবং চলাফেরায় অসুবিধা সৃষ্টি করতে পারে।
- ঘাড় ঘোরানো বা নড়াচড়া করতে সমস্যা: ঘাড় আড়ষ্ট হয়ে যেতে পারে এবং ঘাড় ঘোরাতে বা মুলা দিতে সমস্যা হতে পারে। কখনো কখনো ঘাড়ের গাঁটে একটি চাপ বা খটখট শব্দ শুনতে পাওয়া যায়।
- কাঁধ বা বাহুতে ব্যথা: ঘাড়ে বাত থাকলে কখনো কখনো কাঁধ বা বাহুতে ব্যথা ছড়িয়ে পড়তে পারে। স্নায়ুতে চাপ পড়লে হাতেও শিরশির বা অবশ হতে পারে।
- মাথা ঘোরা বা মাথাব্যথা: ঘাড়ের বাতের কারণে মাথা ঘোরা বা মাথাব্যথা হতে পারে, বিশেষ করে যখন স্নায়ুতে চাপ পড়ছে।
- মাংসপেশীতে টান বা অস্বস্তি: ঘাড়ের পেশী আড়ষ্ট বা টান অনুভূত হতে পারে, বিশেষ করে ঘাড় ঘোরানোর সময়।
প্রতিকার:
ঘাড়ে বাতের জন্য কিছু সাধারণ প্রতিকার হলো:
- বিশ্রাম ও সঠিক ভঙ্গিতে বসা: ঘাড়ের উপরের চাপ কমাতে এবং ব্যথা কমানোর জন্য বিশ্রাম নেওয়া জরুরি। সঠিক ভঙ্গিতে বসা বা দাঁড়ানো উচিত, যাতে ঘাড়ে অতিরিক্ত চাপ না পড়ে।
- পেইন কিলার ওষুধ: প্যারাসিটামল বা আইবুপ্রোফেনের মতো পেইন কিলার ওষুধ ব্যথা কমাতে সহায়তা করতে পারে। তবে, দীর্ঘ সময় ওষুধ নেওয়ার আগে চিকিৎসকের পরামর্শ নেয়া উচিত।
- গরম ও ঠান্ডা সেঁক: গরম বা ঠান্ডা সেঁক ব্যথা কমাতে সাহায্য করতে পারে। ঠান্ডা সেঁক প্রদাহ কমাতে সাহায্য করে এবং গরম সেঁক পেশী শিথিল করতে সহায়তা করে।
- ফিজিওথেরাপি ও ব্যায়াম: ফিজিওথেরাপি বা বিশেষ স্ট্রেচিং ব্যায়াম ঘাড়ের পেশী শিথিল করতে এবং শক্তিশালী করতে সাহায্য করতে পারে। পেশী বা জয়েন্টের নমনীয়তা বৃদ্ধির জন্য চিকিৎসকের নির্দেশনায় স্ট্রেচিং করা উচিত।
- স্টেরয়েড ইনজেকশন: যদি ব্যথা খুব তীব্র হয়, তবে চিকিৎসক স্টেরয়েড ইনজেকশন ব্যবহার করতে পারেন, যা প্রদাহ কমায় এবং ব্যথা উপশমে সহায়ক হতে পারে।
- ওজন নিয়ন্ত্রণ: অতিরিক্ত ওজন কমানো উচিত, কারণ অতিরিক্ত ওজন ঘাড়ের উপর চাপ সৃষ্টি করে, যা বাতের সমস্যা আরও বাড়াতে পারে।
- ঘাড়ের সাপোর্ট ব্যবহার: ঘাড়ের সাপোর্ট বা সঠিক পিলো ব্যবহার করে ঘাড়ের অবস্থান ঠিক রাখা উচিত, যাতে পেশীকে অতিরিক্ত চাপ না পড়ুক।
- যোগব্যায়াম বা মেডিটেশন: মানসিক চাপ কমাতে যোগব্যায়াম বা মেডিটেশন করা যেতে পারে, কারণ মানসিক চাপও শরীরের পেশীতে টান সৃষ্টি করতে পারে।
যখন চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে:
যদি ঘাড়ে বাতের সমস্যা দীর্ঘস্থায়ী বা তীব্র হয়, বা যদি অন্যান্য লক্ষণ (যেমন, স্নায়ু সমস্যা, হাত-পায়ে শিরশির বা অবশ হওয়া, মাথাব্যথা) দেখা দেয়, তবে দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নেয়া উচিত। চিকিৎসক সঠিক পরীক্ষা করে নির্দিষ্ট চিকিৎসা ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পারবেন।