গেটেবাত (Gout) হলো একটি ধরনের বাত বা জয়েন্টের প্রদাহজনিত রোগ, যা সাধারণত হাড়ের সংযোগস্থলে ব্যথা সৃষ্টি করে। এটি শরীরে অতিরিক্ত ইউরিক অ্যাসিডের জমে যাওয়ার কারণে ঘটে, যা গেঁটের জয়েন্টে স্ফীতির সৃষ্টি করে। গেটেবাত সাধারণত হঠাৎ করে তীব্র ব্যথা সৃষ্টি করে এবং বেশিরভাগ সময় আক্রমণ হাটুর বা পায়ের আঙ্গুলের জয়েন্টে হয়।
কারণ:
গেটেবাতের প্রধান কারণ হলো অতিরিক্ত ইউরিক অ্যাসিড। যখন শরীরে ইউরিক অ্যাসিডের পরিমাণ বাড়ে, তখন তা গেঁটে বা জয়েন্টে স্ফীতির কারণ হয়ে দাঁড়ায়। ইউরিক অ্যাসিডের অতিরিক্ত স্তর সৃষ্টি হওয়ার কিছু কারণ হলো:
- অতিরিক্ত প্রোটিন ও পিউরিনযুক্ত খাবার খাওয়া: মাংস, মাছ, শেলফিশ, আলকোহল এবং অন্যান্য কিছু খাদ্যপদার্থে উচ্চ পিউরিন থাকে, যা শরীরে ইউরিক অ্যাসিডের স্তর বাড়াতে পারে।
- কম শারীরিক কার্যকলাপ বা ওজন বাড়ানো: অতিরিক্ত ওজন, শরীরচর্চা না করা বা শারীরিক কার্যকলাপ কম হলে ইউরিক অ্যাসিডের পরিমাণ বেড়ে যেতে পারে।
- ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ, কিডনির অসুখ: এই সব শারীরিক অবস্থায় ইউরিক অ্যাসিডের পরিমাণ বাড়তে পারে।
- পরিবারে গেটেবাতের ইতিহাস: এটি একটি জেনেটিক রোগ, যা পরিবারে চলে আসে।
- প্রতিদিনের জীবনে অ্যালকোহল বা প্রক্রিয়াজাত খাবারের অত্যধিক ব্যবহার: অ্যালকোহল এবং চিনিযুক্ত খাবারের প্রভাব গেটেবাতের ঝুঁকি বাড়ায়।
লক্ষণ:
গেটেবাতের কিছু সাধারণ লক্ষণ হলো:
- গেঁটের জয়েন্টে তীব্র ব্যথা: সাধারণত গেটেবাত হঠাৎ করে শুরু হয় এবং হাটু, পা, আঙ্গুল বা গোড়ালির জয়েন্টে তীব্র ব্যথা সৃষ্টি করে।
- ফুলে যাওয়া ও লাল হওয়া: আক্রমণ হওয়া জয়েন্ট ফুলে যায় এবং রঙে লালচে বা গা dark ় হয়ে যায়।
- গাঁটের আশেপাশে তাপ অনুভব: আক্রান্ত জয়েন্টে তাপ অনুভূত হয়, এবং সেখানে গাঁট বা পিণ্ডের মতো কিছু সৃষ্টি হতে পারে।
- চলাফেরায় সমস্যা: ব্যথার কারণে চলাফেরা কঠিন হয়ে যায়, এবং অনেক সময় খুঁড়িয়ে হাঁটা হয়।
- নির্দিষ্ট সময়ের পর আক্রমণ: গেটেবাত সাধারণত রাতের সময় বা বিশ্রাম নেওয়ার পর তীব্র আক্রমণ ঘটতে পারে।
প্রতিকার:
গেটেবাতের প্রতিকার ও চিকিৎসার কিছু সাধারণ পদ্ধতি:
- ওষুধ:
- পেইন কিলার ও অ্যান্টি–ইনফ্ল্যামেটরি: গেটেবাতের ব্যথা এবং প্রদাহ কমাতে প্যারাসিটামল বা আইবুপ্রোফেনের মতো ওষুধ ব্যবহার করা যেতে পারে।
- কলচিসিন: গেটেবাতের আক্রমণ থেকে দ্রুত আরাম পাওয়ার জন্য কলচিসিন ব্যবহার করা হতে পারে।
- স্টেরয়েড ইনজেকশন: যদি ব্যথা অত্যন্ত তীব্র হয়, তবে ডাক্তারের পরামর্শে স্টেরয়েড ইনজেকশন দেওয়া যেতে পারে।
- ইউরিক অ্যাসিড কমানোর ওষুধ: ইউরিক অ্যাসিডের মাত্রা কমানোর জন্য ওষুধ যেমন অলপ্যুরিনল বা ফেবক্সিস্ট্যাট ব্যবহার করা যেতে পারে।
- ডায়েট পরিবর্তন:
- পিউরিন কম খাওয়া: মাংস, শেলফিশ, অ্যালকোহল এবং হাই-ফ্রুকটোজ কর্ন সিরাপ থেকে বিরত থাকা উচিত।
- পানি বেশি খাওয়া: শরীর থেকে ইউরিক অ্যাসিড বের করার জন্য পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি পান করা প্রয়োজন।
- ফল ও শাকসবজি: ফলমূল এবং শাকসবজি খাওয়ার মাধ্যমে পুষ্টির পরিমাণ বৃদ্ধি করতে হবে, যা গেটেবাতের ঝুঁকি কমায়।
- ওজন নিয়ন্ত্রণ: অতিরিক্ত ওজন কমানো গেটেবাতের প্রকোপ কমাতে সাহায্য করে, কারণ এটি হাড়ের এবং জয়েন্টের ওপর চাপ কমায়।
- ব্যায়াম ও শারীরিক কার্যকলাপ: নিয়মিত ব্যায়াম এবং হাঁটা শরীরের স্বাস্থ্য উন্নত করে এবং ইউরিক অ্যাসিডের মাত্রা কমায়।
- বিশ্রাম এবং শীতল সেঁক: আক্রান্ত জয়েন্টে শীতল সেঁক দেওয়া ব্যথা এবং প্রদাহ কমাতে সহায়ক।
- অ্যালকোহল ও চিনিযুক্ত পানীয় এড়িয়ে চলা: অ্যালকোহল এবং চিনিযুক্ত পানীয় গেটেবাতের ঝুঁকি বাড়ায়, তাই এগুলো এড়িয়ে চলা উচিত।
এটা যখন গুরুতর হয়:
যদি গেটেবাতের ব্যথা ও প্রদাহ নিয়মিত বা দীর্ঘস্থায়ী হয়ে যায়, তাহলে চিকিৎসকের সঙ্গে পরামর্শ করে নিয়মিত চিকিৎসা করা উচিত। গেটেবাতের ক্ষেত্রে সঠিক চিকিৎসা ও জীবনযাত্রার পরিবর্তন ব্যথা কমানোর পাশাপাশি দীর্ঘমেয়াদী সমস্যা থেকে মুক্তি দিতে পারে।