Best Homeo Doctor

গলায় টিউমার কি,কারন,লক্ষন,প্রতিকার

গলায় টিউমার হলো গলার ভিতরে বা তার আশপাশে থাকা অস্বাভাবিক কোষের বৃদ্ধি। এটি বিনাইন (benign) বা ম্যালিগন্যান্ট (malignant) হতে পারে, অর্থাৎ এটি ক্যান্সার বা অন্য কোনো গুরুতর রোগের কারণ হতে পারে। গলায় টিউমার সাধারণত গলার টিস্যু, অঙ্গ (যেমন গলার করতাল, থাইরয়েড গ্রন্থি, বা ল্যারিন্স) বা লিম্ফ নোডের মধ্যে তৈরি হতে পারে।

গলায় টিউমারের কারণ:

গলায় টিউমারের কিছু সাধারণ কারণের মধ্যে রয়েছে:

  1. থাইরয়েড টিউমার (Thyroid Tumor):
    • থাইরয়েড গ্রন্থিতে টিউমার তৈরি হতে পারে, যা সাধারণত বিনাইন হয়। তবে কিছু ক্ষেত্রে এটি থাইরয়েড ক্যান্সার (thyroid cancer) হয়ে উঠতে পারে।
  2. ল্যারিনজিয়াল টিউমার (Laryngeal Tumor):
    • গলার করতাল (larynx) বা গলার ভিতরের অংশে টিউমার তৈরি হতে পারে, যা ক্যান্সারের কারণ হয়ে উঠতে পারে, বিশেষ করে যদি এটি ধূমপান বা অতিরিক্ত মদ্যপান জনিত হয়।
  3. লিম্ফ নোড (Lymph Node):
    • গলার মধ্যে বা আশপাশের লিম্ফ নোডে টিউমার সৃষ্টি হতে পারে, যা সাধারণত সংক্রমণ বা ক্যান্সারের কারণ হতে পারে।
  4. সিবেসিয়াস সিস্ট (Sebaceous Cyst):
    • এটি ত্বকের তেলের গ্রন্থি থেকে সৃষ্টি হয় এবং গলার ত্বকের নিচে ছোট সিস্ট হতে পারে, যা সাধারণত ব্যথাহীন এবং বিনাইন হয়।
  5. ফ্যাট সিস্ট (Lipoma):
    • গলার ত্বকের নিচে ফ্যাট সিস্টও তৈরি হতে পারে, যা একটি বিনাইন টিউমার হিসেবে দেখা যায়।
  6. ফাইব্রোমা (Fibroma):
    • গলায় ফাইব্রোমা নামক একটি বিনাইন টিউমার তৈরি হতে পারে, যা সাধারণত গলার ভিতরে বা ত্বকে দেখা যায়।
  7. গলা ক্যান্সার (Throat Cancer):
    • গলায় ক্যান্সার বা ম্যালিগন্যান্ট টিউমার হতে পারে, যেমন ল্যারিনজিয়াল ক্যান্সার, যা গলার করতালের মধ্যে হয়ে থাকে। এটি ধূমপান, মদ্যপান, এবং ভাইরাল ইনফেকশন দ্বারা হতে পারে।
  8. হিউম্যান প্যাপিলোমা ভাইরাস (HPV):
    • HPV ভাইরাস গলায় বা মুখের গহ্বরে টিউমারের সৃষ্টি করতে পারে, যা কিছু ক্ষেত্রে ক্যান্সারে পরিণত হতে পারে।

গলায় টিউমারের লক্ষণ:

গলায় টিউমারের লক্ষণ বিভিন্ন হতে পারে এবং এগুলি টিউমারের অবস্থান এবং ধরনের উপর নির্ভর করে। কিছু সাধারণ লক্ষণ হল:

  1. গলার মধ্যে গুটি বা ফুলে ওঠা (Lump or Swelling in Throat):
    • গলার ভিতরে বা আশপাশে গুটি বা ফুলে ওঠা দেখা যেতে পারে। এটি সাধারণত টিউমার বা লিম্ফ নোডের কারণে হয়।
  2. গলার ব্যথা বা অস্বস্তি (Pain or Discomfort in Throat):
    • টিউমারের কারণে গলায় ব্যথা বা অস্বস্তি অনুভূত হতে পারে, বিশেষ করে যখন এটি গলার টিস্যু বা নার্ভের ওপর চাপ সৃষ্টি করে।
  3. স্বরণ বা গলা আটকে যাওয়ার অনুভূতি (Feeling of Something Stuck in Throat):
    • টিউমার গলার মধ্য দিয়ে খাদ্য বা তরল চলাচলকে বাধাগ্রস্ত করতে পারে, ফলে গলার মধ্যে কিছু আটকে যাওয়ার অনুভূতি হতে পারে।
  4. স্বভাব পরিবর্তন (Changes in Voice):
    • যদি টিউমারটি গলার করতালে (larynx) বা ভোকাল কর্ডে থাকে, তবে এটি স্বরের পরিবর্তন, কণ্ঠস্বরের পরিবর্তন, বা গলা ভেঙে যাওয়ার মতো সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে।
  5. শ্বাস নিতে সমস্যা (Difficulty Breathing):
    • যদি টিউমারটি গলার ভিতরে বা শ্বাসনালীতে হয়, তবে এটি শ্বাস নিতে অসুবিধা সৃষ্টি করতে পারে।
  6. খাওয়ার সময় সমস্যা (Difficulty Swallowing or Pain while Eating):
    • গলার টিউমারের কারণে খাবার গেলার সময় ব্যথা বা অসুবিধা অনুভূত হতে পারে, বিশেষত যদি এটি গলা বা শ্বাসনালীর মধ্যে হয়ে থাকে।
  7. বমি বোধ বা মাথা ঘোরা (Nausea or Dizziness):
    • বড় টিউমার বা ক্যান্সারের কারণে বমি বা মাথা ঘোরা হতে পারে, যা সাধারণত সংক্রমণ বা স্নায়ুর চাপের কারণে হয়।
  8. ওজন কমে যাওয়া (Unexplained Weight Loss):
    • টিউমারের কারণে শরীরে অজানা ওজন হ্রাস হতে পারে, বিশেষত ক্যান্সারের ক্ষেত্রে।
  9. রক্তপাত (Bleeding):
    • গলার টিউমার হতে পারে, বিশেষত ক্যান্সারের ক্ষেত্রে, রক্তপাতের কারণ হতে পারে, যেমন কাশি বা বমির মধ্যে রক্ত দেখা যেতে পারে।

গলায় টিউমারের প্রতিকার:

গলায় টিউমারের চিকিৎসা তার ধরন এবং আকারের ওপর নির্ভর করে। কিছু সাধারণ চিকিৎসা পদ্ধতি:

  1. ওষুধ (Medications):
    • যদি টিউমারটি সংক্রমণের কারণে হয়, তবে অ্যান্টিবায়োটিক বা অ্যান্টি-ইনফ্ল্যামেটরি ওষুধ দেওয়া হতে পারে। তবে যদি এটি ফাইব্রোমা বা সিস্ট হয়, তবে কোনো চিকিৎসা প্রয়োজন নাও হতে পারে।
  2. সার্জারি (Surgery):
    • বড় বা সমস্যাজনক টিউমারগুলি অপসারণের জন্য সার্জারি করা হতে পারে। এটি বিশেষত ম্যালিগন্যান্ট টিউমারের ক্ষেত্রে কার্যকর হতে পারে।
  3. কেমোথেরাপি (Chemotherapy):
    • যদি টিউমারটি ক্যান্সার হয়, তবে কেমোথেরাপি চিকিৎসা দেয়া যেতে পারে, যা ক্যান্সার কোষ ধ্বংস করে।
  4. রেডিওথেরাপি (Radiation Therapy):
    • ক্যান্সার টিউমারকে ধ্বংস করার জন্য রেডিওথেরাপি ব্যবহার করা যেতে পারে। এটি বিশেষভাবে ল্যারিনজিয়াল ক্যান্সার বা গলা ক্যান্সারে ব্যবহৃত হয়।
  5. স্টেরয়েড ইনজেকশন (Steroid Injections):
    • কিছু টিউমারের ক্ষেত্রে স্টেরয়েড ইনজেকশন দেয়া যেতে পারে, যা সিস্টের আকার কমাতে এবং প্রদাহ কমাতে সাহায্য করতে পারে।
  6. ভোকাল থেরাপি (Vocal Therapy):
    • গলার স্বর বা কণ্ঠস্বরের সমস্যা থাকলে, বিশেষ করে টিউমার যদি ভোকাল কর্ডে হয়, তবে ভোকাল থেরাপি করা হতে পারে, যা স্বর পুনরুদ্ধারে সাহায্য করে।
  7. গরম সেঁক (Warm Compress):
    • ফ্যাট সিস্ট বা সিবেসিয়াস সিস্টের কারণে টিউমার হলে গরম সেঁক ব্যবহার করা যেতে পারে, যা ব্যথা কমাতে সাহায্য করে।

গলায় টিউমারের প্রতিরোধ:

গলায় টিউমারের কিছু প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা:

  1. ধূমপান এবং অ্যালকোহল পরিহার (Avoid Smoking and Excessive Alcohol):
    • ধূমপান এবং অতিরিক্ত মদ্যপান গলার ক্যান্সারের ঝুঁকি বাড়ায়, তাই এগুলি পরিহার করা উচিত।
  2. স্বাস্থ্যকর জীবনযাপন (Healthy Lifestyle):
    • সুষম খাদ্য গ্রহণ, নিয়মিত শারীরিক ব্যায়াম এবং পর্যাপ্ত বিশ্রাম রাখা শরীরের সুস্থতা বজায় রাখে।
  3. পৃথক স্ক্রীনিং (Routine Screening):
    • গলার ক্যান্সার বা অন্যান্য সমস্যা শনাক্ত করার জন্য নিয়মিত চেক-আপ এবং স্ক্রীনিং করানো উচিত।
  4. ভাইরাল ইনফেকশন এড়িয়ে চলা (Avoid Viral Infections):
    • গলা বা মুখে ভাইরাল ইনফেকশন (যেমন HPV) এড়িয়ে চলা গুরুত্বপূর্ণ, কারণ এটি ক্যান্সারের ঝুঁকি বাড়ায়।

শেষ কথা:

গলায় টিউমার সাধারণত বিনাইন হয়ে থাকে, তবে কিছু ক্ষেত্রে এটি ম্যালিগন্যান্ট হতে পারে এবং গুরুতর সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে। যদি গলায় গুটি, ব্যথা বা অস্বস্তি অনুভূত হয়, তবে দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত। সঠিক সময়ে চিকিৎসা নিলে গলায় টিউমারের প্রভাব কমানো সম্ভব এবং সমস্যার সমাধান করা যেতে পারে।

 

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *