Best Homeo Doctor

গর্ভাবস্থায় নিদ্রা কি,কারন,লক্ষন,প্রতিকার

গর্ভাবস্থায় নিদ্রা (Sleep during pregnancy) একটি সাধারণ সমস্যা, যা বেশিরভাগ গর্ভবতী মহিলাদের মধ্যে দেখা যায়। গর্ভাবস্থায় হরমোনাল পরিবর্তন, শারীরিক ও মানসিক চাপের কারণে অনেক মহিলাই নিদ্রাহীনতায় ভোগেন অথবা অতিরিক্ত নিদ্রা অনুভব করেন। এটি সাধারণত গর্ভাবস্থার প্রথম এবং তৃতীয় ত্রৈমাসিক সময়ে বেশি দেখা যায়।

গর্ভাবস্থায় নিদ্রার কারণ:

  1. হরমোনাল পরিবর্তন:
    • গর্ভাবস্থায় শরীরের হরমোনের পরিমাণে বড় ধরনের পরিবর্তন ঘটে। বিশেষত, প্রোজেস্টেরন (Progesterone) নামক হরমোনের পরিমাণ বৃদ্ধি পায়, যা শরীরকে শান্ত এবং ক্লান্ত করে, ফলে ঘুমের জন্য অনুকূল পরিবেশ সৃষ্টি হয়। তবে এটি অতিরিক্ত নিদ্রার কারণও হতে পারে।
  2. শারীরিক পরিবর্তন:
    • গর্ভের আকার বৃদ্ধি পাওয়ার কারণে মহিলার শরীরের ভর ও ভারসাম্য পরিবর্তিত হয়। এতে পিঠের ব্যথা, পেটে চাপ, ঘুমের অবস্থান ঠিক রাখতে সমস্যা সৃষ্টি হয়, যা নিদ্রাহীনতা সৃষ্টি করতে পারে।
  3. মানসিক চাপ:
    • গর্ভাবস্থায় মানসিক উদ্বেগ, অস্থিরতা বা শঙ্কা অনুভূতি হতে পারে, বিশেষত শিশুর জন্মের পরের প্রস্তুতি নিয়ে। এটি নিদ্রাহীনতা বা অশান্ত ঘুমের কারণ হতে পারে।
  4. শারীরিক অস্বস্তি:
    • গর্ভাবস্থায় মুত্রের অতিরিক্ত চাপ, অ্যাসিড রিফ্লাক্স, হাঁটু বা পিঠের ব্যথা এবং অস্বস্তি ঘুমের মধ্যে বিঘ্ন ঘটায়।
  5. দীর্ঘ দিন বেলা থেকে শুয়ে থাকার অভ্যাস:
    • গর্ভাবস্থায় অনেক মহিলাই অতিরিক্ত বিশ্রাম নেন, যা তাদের দিনের মধ্যে বিশ্রাম নিয়ে রাতের ঘুমের চাহিদা আরও বাড়িয়ে দেয়।
  6. প্রথম এবং তৃতীয় ত্রৈমাসিক:
    • গর্ভাবস্থার প্রথম তিন মাসে ক্লান্তি এবং অতিরিক্ত ঘুম বেশি দেখা যায়। আবার তৃতীয় ত্রৈমাসিকেও পেট বড় হওয়ায় আরামদায়ক ঘুম পাওয়া কঠিন হতে পারে, ফলে নিদ্রাহীনতা বেড়ে যায়।

গর্ভাবস্থায় নিদ্রার লক্ষণ:

  1. অতিরিক্ত নিদ্রা বা ক্লান্তি:
    • বেশিরভাগ গর্ভবতী মহিলাই অতিরিক্ত ঘুম বা ক্লান্তির অনুভূতি অনুভব করেন, বিশেষত গর্ভাবস্থার প্রথম তিন মাসে। দিনের বেলা ঘুমানো বা অবসন্ন লাগা একটি সাধারণ লক্ষণ।
  2. ঘুমের মধ্যে বিঘ্ন:
    • রাতে ঘুমের মধ্যে অনেক ধরনের সমস্যা দেখা দিতে পারে যেমন পেটে অস্বস্তি, পিঠে ব্যথা, ঘুমের অবস্থান ঠিক রাখতে না পারা, বা বারবার মুত্রত্যাগের প্রয়োজন অনুভব হওয়া।
  3. ভীতিজনক স্বপ্ন বা চিন্তা:
    • গর্ভাবস্থায় মহিলারা ভীতিজনক বা অস্বস্তিকর স্বপ্ন দেখতে পারেন বা শিশুর ভবিষ্যত নিয়ে উদ্বেগ অনুভব করতে পারেন, যা রাতে ঘুমে বিঘ্ন ঘটাতে পারে।
  4. ঘুমের সময় শ্বাসপ্রশ্বাসে সমস্যা:
    • গর্ভাবস্থার তৃতীয় ত্রৈমাসিকে মহিলারা শ্বাস নিতে কষ্ট অনুভব করতে পারেন, বিশেষত যখন তারা পিঠে শোয়া অবস্থায় ঘুমান। এতে ঘুমের ব্যাঘাত ঘটতে পারে।

গর্ভাবস্থায় নিদ্রার প্রতিকার:

  1. স্বাস্থ্যকর জীবনযাপন:
    • সুষম খাদ্য খাওয়া, নিয়মিত হালকা ব্যায়াম এবং পর্যাপ্ত পানি পান করা ঘুমের মান উন্নত করতে সাহায্য করতে পারে। তবে ভারী খাবার এবং ক্যাফেইন জাতীয় পানীয় সারাদিনে পরিহার করা উচিত।
  2. ঘুমানোর জন্য আরামদায়ক পরিবেশ তৈরি:
    • গর্ভাবস্থায় ঘুমানোর জন্য আরামদায়ক পরিবেশ সৃষ্টি করা গুরুত্বপূর্ণ। একটি আরামদায়ক গদি, শীতল পরিবেশ, পর্যাপ্ত অন্ধকার এবং শোরগোলহীন পরিবেশ ঘুমের জন্য সহায়ক হতে পারে।
  3. পেটের চাপ কমানো:
    • পেটের চাপ কমানোর জন্য উপযুক্ত ঘুমের পজিশন নিতে হবে। গর্ভাবস্থায় শোয়ার সময় সাইডে শোয়া (বিশেষ করে বাম পাশে) এবং পেটের নিচে বালিশ রাখতে সাহায্য করতে পারে।
  4. প্রতিদিন নিয়মিত বিশ্রাম:
    • দিনের মধ্যে অতিরিক্ত বিশ্রাম নেওয়া উচিত, কিন্তু দিনের শেষে বেশি ঘুমানো এড়িয়ে চলা উচিত, কারণ এটি রাতে ঘুমে বিঘ্ন ঘটাতে পারে।
  5. মনের শান্তি বজায় রাখা:
    • গর্ভাবস্থায় মানসিক চাপ কমাতে শখের কাজ, ধ্যান বা যোগব্যায়াম করা উপকারী হতে পারে। সুরেলা বা শান্তিপূর্ণ মিউজিক শোনা, বই পড়া, বা হাঁটাহাঁটি করার মতো মনোরম কাজ ঘুমকে সহায়ক করতে পারে।
  6. ইউরিক অ্যাসিড নিয়ন্ত্রণ:
    • গর্ভাবস্থায় নিয়মিত পায়খানা হওয়া, পানি ও জুস খাওয়ার মাধ্যমে ইউরিক অ্যাসিডের পরিমাণ নিয়ন্ত্রণ করা, শরীরের হাইড্রেশন বজায় রাখা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
  7. ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়া:
    • যদি নিদ্রাহীনতা অব্যাহত থাকে এবং জীবনের মান ক্ষতিগ্রস্ত হয়, তবে চিকিৎসকের পরামর্শ নেয়া উচিত। তারা যদি প্রয়োজন মনে করেন, তবে সঠিক চিকিৎসা বা পরামর্শ দিতে পারেন।

উপসংহার:

গর্ভাবস্থায় নিদ্রার সমস্যা অনেকটাই স্বাভাবিক হলেও এটি মহিলার শারীরিক এবং মানসিক অবস্থার উপর নির্ভর করে পরিবর্তিত হতে পারে। সঠিক জীবনযাপন, মানসিক শান্তি, সঠিক ঘুমের পরিবেশ তৈরি এবং স্বাস্থ্যকর অভ্যাস গর্ভাবস্থায় নিদ্রা সমস্যা মোকাবেলায় সাহায্য করতে পারে। তবে, যদি সমস্যা গুরুতর হয় বা দীর্ঘস্থায়ী হয়ে থাকে, তবে চিকিৎসকের পরামর্শ গ্রহণ করা উচিত।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *