Best Homeo Doctor

গর্ভাবস্থায় কুখাদ্যে রুচি কি,কারন,লক্ষন,প্রতিকার

গর্ভাবস্থায় কুখাদ্যে রুচি (Cravings for Unusual Foods):

গর্ভাবস্থায় মহিলাদের মধ্যে কুখাদ্যের প্রতি আকর্ষণ বা অস্বাভাবিক খাদ্যের প্রতি রুচি হওয়া একটি সাধারণ ব্যাপার। এটি গর্ভাবস্থার শারীরিক এবং মানসিক পরিবর্তনের কারণে ঘটে। বেশিরভাগ গর্ভবতী মহিলাই গর্ভাবস্থার প্রথম বা দ্বিতীয় ত্রৈমাসিকে এই ধরনের রুচির অভিজ্ঞতা পান।

গর্ভাবস্থায় কুখাদ্যে রুচির কারণ:

  1. হরমোনাল পরিবর্তন: গর্ভাবস্থায় হরমোনের ব্যাপক পরিবর্তন হয়, বিশেষ করে প্রোজেস্টেরন এবং এস্ট্রোজেন হরমোনের মাত্রায়। এই পরিবর্তন শরীরের বিভিন্ন সাড়া এবং খাদ্যের প্রতি আকর্ষণ সৃষ্টি করতে পারে, যার ফলে গর্ভবতী মহিলাদের অস্বাভাবিক খাদ্যের প্রতি আগ্রহ তৈরি হয়।
  2. শরীরের পুষ্টির অভাব: গর্ভাবস্থায় শরীরের কিছু পুষ্টির ঘাটতি (যেমন আয়রন, ক্যালসিয়াম, প্রোটিন) থাকলে, গর্ভবতী মহিলার কুখাদ্য খাওয়ার আকাঙ্ক্ষা তৈরি হতে পারে। এর মাধ্যমে শরীর সেই পুষ্টি বা খনিজ উপাদানটি খুঁজে পেতে চায়।
  3. মানসিক পরিবর্তন এবং স্ট্রেস: গর্ভাবস্থায় মানসিক চাপ, উদ্বেগ, এবং আবেগিক পরিবর্তন অনেক সময় খাদ্যের প্রতি অনাকাঙ্ক্ষিত আকর্ষণ সৃষ্টি করতে পারে। কিছু মহিলার ক্ষেত্রে, গর্ভাবস্থার শুরুর দিকে অস্বাভাবিক খাবারের প্রতি আকর্ষণ থাকতে পারে, যা তাদের মনের অবস্থা বা শারীরিক অবস্থার সাথে সম্পর্কিত।
  4. গর্ভাবস্থার শারীরিক পরিবর্তন: গর্ভাবস্থায় শরীরে বিভিন্ন ধরনের শারীরিক পরিবর্তন যেমন রক্তের গতি, গ্যাসের স্তর, এবং গ্যাস্ট্রোইনটেস্টিনাল সিস্টেমে পরিবর্তন ঘটে, যা খাদ্যাভ্যাসে পরিবর্তন আনতে পারে।
  5. পরিবেশ এবং সামাজিক প্রভাব: গর্ভাবস্থায় অনেক সময় সামাজিক ও পরিবেশগত কারণে এমন খাবারের প্রতি আকর্ষণ দেখা যায়, যা সাধারণত প্রিয় নয় বা অস্বাভাবিক মনে হতে পারে।

গর্ভাবস্থায় কুখাদ্যে রুচির লক্ষণ:

  1. অস্বাভাবিক খাদ্যখাওয়ার আগ্রহ: গর্ভবতী মহিলারা সাধারণত যে সব খাবার পছন্দ করেন না, সেগুলোর প্রতি আকর্ষণ অনুভব করেন। উদাহরণস্বরূপ, মাটি, চক, বরফ, কাঁচা খাদ্য, বা কোনো অস্বাভাবিক গন্ধযুক্ত খাবার খাওয়ার ইচ্ছা দেখা যেতে পারে।
  2. অস্বাভাবিক খাদ্যসম্ভার খাওয়ার প্রবণতা: কিছু গর্ভবতী মহিলা শুধুমাত্র বিশেষ খাবারের প্রতি আকৃষ্ট হতে পারেন, যেমন মিষ্টি, ঝাল, বা অ্যাসিডিক খাবার, যা তাঁদের সাধারণ খাদ্যাভ্যাসের বাইরে।
  3. অতিরিক্ত খাওয়ার প্রবণতা: কিছু মহিলার মধ্যে গর্ভাবস্থায় অস্বাভাবিকভাবে অনেক বেশি খাবার খাওয়ার প্রবণতা দেখা দিতে পারে, যেমন অস্বাভাবিক পরিমাণে টক বা মিষ্টি খাওয়ার আগ্রহ।
  4. শরীরের প্রয়োজনীয় পুষ্টির চাহিদা: গর্ভাবস্থায় শরীর বিভিন্ন পুষ্টির চাহিদা অনুভব করতে পারে এবং সে কারণে কুখাদ্যের প্রতি আকর্ষণ তৈরি হতে পারে।

গর্ভাবস্থায় কুখাদ্যে রুচির প্রতিকার:

  1. সুষম খাদ্য গ্রহণ: গর্ভাবস্থায় সুষম খাদ্য খাওয়া অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। যদি শরীরে কোনো পুষ্টির অভাব থাকে, তবে তা সঠিকভাবে পূরণ করা প্রয়োজন। প্রোটিন, আয়রন, ক্যালসিয়াম, ভিটামিন, এবং মিনারেলসের যথাযথ গ্রহণ নিশ্চিত করতে হবে। এটি কুখাদ্যে রুচির কারণ কমাতে সাহায্য করবে।
  2. স্বাস্থ্যকর বিকল্প:
    কুখাদ্যে রুচির সময় স্বাস্থ্যকর বিকল্প বেছে নেওয়া উচিত। যেমন, বরফ খাওয়ার ইচ্ছা হলে শীতল পানি বা আইসক্রিম খাওয়ার চেষ্টা করা যেতে পারে। যদি মাটির প্রতি আকর্ষণ থাকে, তবে এই ধরনের অভ্যাসকে প্রতিরোধ করতে পরামর্শ নেওয়া উচিত।
  3. খাদ্যের প্রতি সংবেদনশীলতা বুঝে খাবার নির্বাচন: গর্ভাবস্থায় কিছু মহিলার গন্ধের প্রতি অতিরিক্ত সংবেদনশীলতা থাকে, ফলে কুখাদ্য খাওয়ার ইচ্ছা হতে পারে। এমন সময়ে, মৃদু গন্ধযুক্ত বা সহজপাচ্য খাবার গ্রহণ করা উচিত।
  4. খাদ্যের পরিমাণ নিয়ন্ত্রণ:
    খাদ্যের প্রতি অতিরিক্ত আকর্ষণ বা কুখাদ্য খাওয়ার প্রবণতা বেড়ে গেলে, তার পরিমাণ নিয়ন্ত্রণ করা গুরুত্বপূর্ণ। একবারে অনেক খাবার খাওয়ার পরিবর্তে, ছোট ছোট পরিমাণে খাবার খাওয়ার চেষ্টা করা উচিত।
  5. পানীয় গ্রহণ:
    গর্ভাবস্থায় শরীরের পানির ভারসাম্য বজায় রাখা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কিছু গর্ভবতী মহিলার মধ্যে পানি বা অন্যান্য তরল খাবারের প্রতি আকর্ষণ বাড়ে। পানীয় বা ফলের রস পান করা কুখাদ্যের প্রতি আকর্ষণ কমাতে সাহায্য করতে পারে।
  6. বিশ্রাম এবং মানসিক চাপ কমানো:
    গর্ভাবস্থায় মানসিক চাপ বা উদ্বেগ কুখাদ্যে রুচির কারণে হতে পারে। পর্যাপ্ত বিশ্রাম এবং মানসিক চাপ কমানোর জন্য যোগব্যায়াম বা মেডিটেশন করা যেতে পারে।
  7. প্রয়োজনীয় চিকিৎসক পরামর্শ নেওয়া:
    গর্ভাবস্থায় কুখাদ্য খাওয়ার প্রবণতা যদি অত্যন্ত বাড়ে, বা অস্বাভাবিক খাদ্য যেমন মাটি বা বরফ খাওয়ার ইচ্ছা দেখা দেয়, তবে তা একটি শারীরিক সমস্যা বা পুষ্টির ঘাটতি হতে পারে। এ ক্ষেত্রে, চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

উপসংহার:

গর্ভাবস্থায় কুখাদ্যে রুচি একটি সাধারণ, কিন্তু অস্বাভাবিক ঘটনা হতে পারে। যদিও এটি সাধারণত গর্ভাবস্থার শারীরিক ও হরমোনাল পরিবর্তনের সাথে সম্পর্কিত, তবে এটি সঠিকভাবে পরিচালনা করা প্রয়োজন। গর্ভবতী মহিলার জন্য সুষম খাদ্য এবং জীবনযাপনের অভ্যাস গুরুত্বপূর্ণ, যাতে শরীরের প্রয়োজনীয় পুষ্টি মেলে এবং কুখাদ্যের প্রতি আকর্ষণ কমে।

 

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *