Best Homeo Doctor

গনোরিয়া কি,কারন,লক্ষন,প্রতিকার

গনোরিয়া (Gonorrhea) একটি যৌনবাহিত সংক্রমণ (STI), যা নেসেরিয়া গনোরোয়ি (Neisseria gonorrhoeae) ব্যাকটেরিয়ার কারণে হয়। এটি মূলত যৌনমিলনের মাধ্যমে ছড়ায়, তবে এটি গর্ভাবস্থায় মা থেকে শিশুরও সংক্রমণ হতে পারে। গনোরিয়া পুরুষ এবং মহিলাদের উভয়েরই যৌনাঙ্গে, মূত্রনালী, গলা, চোখ, এবং অন্যান্য অংশে সংক্রমণ সৃষ্টি করতে পারে।

কারণ:

গনোরিয়ার প্রধান কারণ হলো নেসেরিয়া গনোরোয়ি (Neisseria gonorrhoeae) নামক ব্যাকটেরিয়া, যা সাধারণত যৌনমিলন (ভ্যাজাইনাল, অ্যানাল, বা অরাল) বা সংক্রমিত ব্যক্তির সংস্পর্শে আসার মাধ্যমে ছড়ায়। কিছু সাধারণ কারণ হলো:

  1. যৌন সম্পর্ক: অরক্ষিত যৌন সম্পর্ক (কন্ডম ব্যতিরেকে) গনোরিয়া সংক্রমণের প্রধান কারণ। এটি এক ব্যক্তির কাছ থেকে অন্য ব্যক্তির কাছে দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে।
  2. মাতৃসন্তান সংক্রমণ: গর্ভাবস্থায়, সংক্রামিত মা তার শিশুকে গনোরিয়া দিয়ে দিতে পারে, যা শিশুর চোখে সংক্রমণ সৃষ্টি করতে পারে।
  3. বহু সঙ্গী বা অস্থায়ী সঙ্গী: একাধিক যৌন সঙ্গীর সাথে সম্পর্ক বা ঝুঁকিপূর্ণ যৌন আচরণ গনোরিয়া সংক্রমণের ঝুঁকি বাড়ায়।

লক্ষণ:

গনোরিয়ার লক্ষণ পুরুষ ও মহিলাদের মধ্যে ভিন্ন হতে পারে, এবং অনেক ক্ষেত্রেই সংক্রমণ নীরব থাকতে পারে, অর্থাৎ, কোনো লক্ষণ দেখা না দিতে পারে। তবে কিছু সাধারণ লক্ষণ রয়েছে:

পুরুষদের লক্ষণ:

  1. পূরণ স্রাব: পেনিসের মূত্রনালী থেকে হলুদ, সবুজ, বা সাদা তরল বের হওয়া।
  2. পেশাবে জ্বালা বা যন্ত্রণা: মূত্রত্যাগের সময় তীব্র জ্বালা বা ব্যথা অনুভব হতে পারে।
  3. লিঙ্গের শীর্ষে লালচেভাব বা ফোলা: পেনিসের শীর্ষে লাল হয়ে যাওয়া বা ফোলা দেখা দিতে পারে।
  4. যন্ত্রণা বা ফোলা গ্রন্থি: স্ক্রোটামের মধ্যে পেঁচানো বা যন্ত্রণা হতে পারে।

মহিলাদের লক্ষণ:

  1. অস্বাভাবিক স্রাব: সাদা বা হলুদ/সবুজ রঙের স্রাব হতে পারে, যা গন্ধযুক্ত হতে পারে।
  2. যন্ত্রণা বা জ্বালা: মুত্রত্যাগের সময় বা যৌন সম্পর্কের সময় তীব্র যন্ত্রণা বা জ্বালা অনুভূত হতে পারে।
  3. পেটের নিচে ব্যথা: তলপেটে বা পায়ুপথে ব্যথা অনুভব হতে পারে, বিশেষত যদি সংক্রমণ বৃদ্ধি পায়।
  4. মাসিকের সমস্যা: গনোরিয়া কখনো কখনো মাসিক সময়ের মধ্যে সমস্যা তৈরি করতে পারে (অস্বাভাবিক রক্তপাত বা মাসিকের অনিয়মিততা)।

গনোরিয়া আক্রান্ত হলে, কিছু সাধারণ লক্ষণ কম দেখা যেতে পারে বা পুরোপুরি অনুপস্থিত থাকতে পারে, তবে এটি ঠিক ততটুকু মারাত্মক।

প্রতিকার:

গনোরিয়া নিরাময়যোগ্য হলেও, চিকিৎসা না করা হলে এটি গুরুতর স্বাস্থ্য সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে। চিকিৎসার মাধ্যমে এটি পুরোপুরি সারানো সম্ভব।

  1. অ্যান্টিবায়োটিক চিকিৎসা:
    • গনোরিয়ার জন্য সাধারণত অ্যাজিথ্রোমাইসিন বা সেফট্রিয়াক্সন নামক অ্যান্টিবায়োটিক ব্যবহার করা হয়। চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী সঠিক ডোজ নিতে হবে।
    • কোনো ধরনের গনোরিয়া সংক্রমণ থাকলে চিকিৎসক আপনার জন্য উপযুক্ত অ্যান্টিবায়োটিক পদ্ধতি নির্ধারণ করবেন।
  2. যৌন সঙ্গীকে চিকিৎসা করা:
    • গনোরিয়া অত্যন্ত সংক্রামক, তাই আপনি যদি গনোরিয়ায় আক্রান্ত হন, তবে আপনার সমস্ত যৌন সঙ্গীকেও চিকিৎসা করা জরুরি।
    • সঙ্গীকে একসাথে চিকিৎসা না করা হলে আবারও সংক্রমণ ঘটতে পারে।
  3. প্রতিরোধ:
    • কন্ডম ব্যবহার: গনোরিয়া সহ অন্যান্য যৌনবাহিত রোগের প্রতিরোধে কন্ডম ব্যবহার অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এটি গনোরিয়ার ছড়ানোর ঝুঁকি কমায়।
    • স্বাস্থ্যকর যৌন অভ্যাস: নিরাপদ যৌন সম্পর্ক ও সঙ্গী পরিবর্তন করার ক্ষেত্রে সতর্কতা অবলম্বন করা।
    • স্বাস্থ্য পরীক্ষা: নিয়মিত যৌনস্বাস্থ্য পরীক্ষা এবং পরীক্ষার মাধ্যমে সমস্যা চিহ্নিত করে তা দ্রুত চিকিৎসা করা।
  4. গর্ভাবস্থায় সাবধানতা:
    • যদি গর্ভবতী মহিলা গনোরিয়ায় আক্রান্ত হন, তবে দ্রুত চিকিৎসা নিতে হবে। কারণ গর্ভাবস্থায় এই রোগ মা এবং শিশুর জন্য গুরুতর ঝুঁকি তৈরি করতে পারে (যেমন নবজাতকের চোখে সংক্রমণ)।

যত্ন সতর্কতা:

গনোরিয়া বা অন্যান্য যৌনবাহিত রোগের লক্ষণ দেখলে দেরি না করে একজন চিকিৎসকের পরামর্শ নেয়া উচিত। তাড়াতাড়ি চিকিৎসা করা হলে রোগটি দ্রুত নিরাময় হয় এবং এটি থেকে যেকোনো জটিলতা রোধ করা যায়। সতর্কতা অবলম্বন করে, যৌনস্বাস্থ্য নিয়ে সচেতনতা সৃষ্টি করলে গনোরিয়া এবং অন্যান্য যৌনবাহিত রোগের ঝুঁকি কমানো সম্ভব।

 

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *