Best Homeo Doctor

খাদ্যে বিষক্রিয়া কি,কারন,লক্ষন,প্রতিকার

খাদ্যে বিষক্রিয়া (Food Poisoning) হলো এক ধরনের রোগ যা সাধারণত খাদ্যে উপস্থিত ব্যাকটেরিয়া, ভাইরাস, পরজীবী বা তাদের বিষাক্ত পদার্থের কারণে হয়। খাদ্যে বিষক্রিয়া হলে, শরীর বিভিন্ন উপসর্গ দেখাতে শুরু করে, যেমন পেটব্যথা, বমি, ডায়রিয়া ইত্যাদি। এটি সাধারণত খাদ্য খাওয়ার মাধ্যমে হয়, বিশেষ করে যদি খাবারে কোনো জীবাণু বা বিষাক্ত পদার্থ থাকে।

কারণ:

খাদ্যে বিষক্রিয়া বিভিন্ন কারণে হতে পারে, যার মধ্যে উল্লেখযোগ্য কিছু কারণ হলো:

  1. ব্যাকটেরিয়া:
    • স্যালমোনেলা: সাধারণত মাংস, ডিম এবং দুগ্ধজাত পণ্যে থাকে।
    • . কোলি (Escherichia coli): কিছু ধরনের ই. কোলি ব্যাকটেরিয়া মাংস (বিশেষ করে অপরিপক্ক মাংস) এবং অপরিষ্কার পানি বা খাদ্যে থাকতে পারে।
    • স্ট্যাফাইলোকক্কাস: এই ব্যাকটেরিয়া বিভিন্ন ধরনের খাবারের ওপর বৃদ্ধি পায়, বিশেষ করে মাংস, ডিম, দই এবং পেস্ট্রি জাতীয় খাবারে।
    • লিস্টেরিয়া: এই ব্যাকটেরিয়া গরম না করা খাবার, বিশেষ করে ডেলি মিটস, স্যালাড বা অপরিষ্কার খাদ্যে থাকে।
  2. ভাইরাস:
    • নোরোভাইরাস: এটি সাধারণত শীতের সময় ঘটে এবং অবৈধ বা অপরিষ্কার পানি বা খাবার খাওয়ার মাধ্যমে ছড়ায়।
    • হেপাটাইটিস ভাইরাস: প্রধানত খাদ্য বা পানির মাধ্যমে সংক্রমিত হয়।
  3. পেরাসাইট (Parasites):
    • টক্সোপ্লাজমা: এটি প্রধানত মাংস থেকে শরীরে প্রবাহিত হতে পারে, বিশেষ করে যদি মাংস যথাযথভাবে রান্না না করা হয়।
    • গিয়ারডিয়া: এই পরজীবী সাধারণত অপরিষ্কার পানি থেকে ছড়ায়।
  4. রাসায়নিক বা বিষাক্ত পদার্থ:
    • অস্বাস্থ্যকর বা বিষাক্ত খাদ্য: কিছু ধরনের খাবার (যেমন, বিষাক্ত মাশরুম বা পোকামাকড়) শরীরে বিষক্রিয়া সৃষ্টি করতে পারে।
    • খাদ্যে রাসায়নিক পদার্থ: যেমন পেস্টিসাইড বা কীটনাশক।
  5. খাদ্য নিরাপত্তা অপর্যাপ্ততা:
    • খাবার সংরক্ষণে ভুল: খাদ্য গরম, ঠান্ডা বা পরিবেশন করার সময় সঠিক তাপমাত্রায় না রাখা, যে কারণে ব্যাকটেরিয়া বৃদ্ধি পায়।
    • খাবারের অপচয়: খাবারের মেয়াদ উত্তীর্ণ হওয়ার পর খাওয়া, যা ক্ষতিকারক হতে পারে।

লক্ষণ:

খাদ্যে বিষক্রিয়ার লক্ষণগুলি সাধারণত খাবার খাওয়ার পর ৪-৬ ঘণ্টার মধ্যে শুরু হয়, তবে কখনও কখনও তা ২৪ ঘণ্টার মধ্যেও হতে পারে। সাধারণ কিছু লক্ষণ হলো:

  1. পেটের সমস্যা:
    • তীব্র পেটব্যথা, গ্যাস, পেট ফোলাভাব।
    • বমি, ডায়রিয়া বা দুইটি একসঙ্গে।
    • পেটে গড়গড় বা স্প্যাশম (কষা বা সঙ্কুচিত অনুভূতি)।
  2. শরীরের অন্যান্য লক্ষণ:
    • শরীরে তীব্র ক্লান্তি বা দুর্বলতা অনুভূতি।
    • মাথা ঘোরা বা মাথাব্যথা।
    • তাপমাত্রা বৃদ্ধি (জ্বর)।
  3. ডিহাইড্রেশন:
    • অতিরিক্ত ডায়রিয়া বা বমির কারণে শরীর থেকে অতিরিক্ত পানি বের হয়ে যায়, যার ফলে ডিহাইড্রেশন (শরীরের পানি স্বল্পতা) হতে পারে। এর লক্ষণ গুলি হলো:
      • তৃষ্ণা অনুভূত হওয়া।
      • মুখ শুকিয়ে যাওয়া।
      • কম প্রস্রাব হওয়া।
      • ত্বক শুষ্ক বা উজ্জ্বল না থাকা।
  4. বিশেষ লক্ষণ:
    • গা dark ় বা হলুদ ত্বক, যা লিভার সমস্যার লক্ষণ হতে পারে।
    • রক্তযুক্ত বা শ্লেষ্মাযুক্ত ডায়রিয়া, যা গ্যাস্ট্রোইনটেস্টাইনাল (GI) সমস্যা নির্দেশ করতে পারে।

প্রতিকার:

খাদ্যে বিষক্রিয়া হলে কিছু প্রতিকার অবলম্বন করা যেতে পারে, কিন্তু এটি গুরুতর হলে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া প্রয়োজন। কিছু সাধারণ প্রতিকার হলো:

  1. অতিরিক্ত পানি পান করা:
    • ডিহাইড্রেশন এড়ানোর জন্য প্রচুর পরিমাণে পানি, ইলেকট্রোলাইট সলিউশন বা সল্ট-সুগার সলিউশন পান করা উচিত।
  2. বিশ্রাম নেওয়া:
    • শরীর দুর্বল হলে পর্যাপ্ত বিশ্রাম নেয়া উচিত। শরীর পুনরায় শক্তি ফিরে পেতে সাহায্য করে।
  3. খাদ্য পরিহার:
    • খাদ্য বিষক্রিয়া হওয়া পর সহজ, হালকা খাবার খাওয়া উচিত। যেমন, দই, স্যুপ বা সেদ্ধ ভাত।
    • তীব্র ডায়রিয়া বা বমি হলে খাবার না খাওয়াই ভালো, যতক্ষণ না শরীরের অবস্থা কিছুটা স্থিতিশীল হয়।
  4. অ্যান্টিবায়োটিক বা অন্যান্য চিকিৎসা:
    • যদি ব্যাকটেরিয়ার কারণে খাদ্য বিষক্রিয়া হয়, তবে চিকিৎসক অ্যান্টিবায়োটিক বা অন্যান্য চিকিৎসা পদ্ধতি প্রয়োগ করতে পারেন।
    • যদি ভাইরাস বা পরজীবীর কারণে হয়, তবে ভিন্ন চিকিৎসা ব্যবস্থা থাকতে পারে।
  5. গ্যাস্ট্রিক রিলিভার (Antacid):
    • পেটের অস্বস্তি বা অ্যাসিডিটির জন্য গ্যাস্ট্রিক রিলিভার বা অ্যান্টিসিড ব্যবহার করা যেতে পারে (চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী)।
  6. ভালো হাইজিন মেনে চলা:
    • খাবার প্রস্তুত বা পরিবেশনের সময় ভালো হাইজিন রক্ষা করা উচিত (হাত ধোয়া, পরিষ্কার কুকিং সরঞ্জাম ব্যবহার ইত্যাদি)।
    • খাবার রান্নার আগে ও পরে ভালোভাবে ধুয়ে নিন।
  7. বিশেষ খাবার বা পানীয় এড়িয়ে চলা:
    • যদি আপনি জানেন যে কোনো খাবার বা পানীয় বিষক্রিয়ার কারণ হতে পারে, তাহলে তা পরিহার করুন। বিশেষ করে বেসমেন্ট বা বাসা থেকে বাইরের খাবার বা অস্বাস্থ্যকর খাবার খাবার পরিহার করুন।
  8. অ্যান্টিডোট বা বিশেষ চিকিৎসা:
    • কিছু খাদ্য বিষক্রিয়া (যেমন বিষাক্ত মাশরুম) এর জন্য বিশেষ এন্টিডোট থাকতে পারে। এটি শুধুমাত্র চিকিৎসকের পরামর্শে ব্যবহার করা উচিত।

প্রতিরোধ:

খাদ্যে বিষক্রিয়া এড়ানোর জন্য কিছু সতর্কতা অবলম্বন করা উচিত:

  • খাবারের সঠিক সংরক্ষণ: ঠাণ্ডা এবং গরম খাবার সঠিক তাপমাত্রায় সংরক্ষণ করা।
  • খাবারের প্যাকেজিং চেক করা: কোনো খাবারের মেয়াদ উত্তীর্ণ বা খোলার পর সঠিকভাবে ব্যবহার করা হয়নি কি না যাচাই করা।
  • খাবারের পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতা বজায় রাখা: রান্নাঘর ও হাত পরিষ্কার রাখা।
  • ভালোভাবে রান্না করা: মাংস, মৎস্য বা ডিম ঠিকভাবে রান্না করে খাওয়া।

 

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *