ক্যান্সার হলো এক ধরনের রোগ যেখানে শরীরের কোষগুলো অস্বাভাবিকভাবে বেড়ে গিয়ে নিয়ন্ত্রিতভাবে বেড়ে যেতে থাকে এবং পাশের সুস্থ কোষগুলোকে আক্রমণ করে। ক্যান্সার একাধিক ধরণের হতে পারে এবং শরীরের বিভিন্ন অংশে দেখা দিতে পারে, যেমন স্তন, ফুসফুস, পাকস্থলী, স্কিন ইত্যাদি। এটি যদি সঠিক সময়ে শনাক্ত না করা হয়, তবে ক্যান্সার শরীরের অন্যান্য অংশে ছড়িয়ে পড়তে পারে, যা মেটাস্টেসিস নামে পরিচিত।
কারণ:
ক্যান্সারের সঠিক কারণ জানা যায়নি, তবে কিছু সাধারণ ঝুঁকি ফ্যাক্টর আছে, যা ক্যান্সারের সম্ভাবনা বাড়াতে পারে:
- ধূমপান: তামাক ব্যবহারের কারণে ফুসফুস এবং মুখগহ্বরসহ অন্যান্য অঙ্গের ক্যান্সার হতে পারে।
- অস্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস: অতিরিক্ত মাংস, ফ্যাট ও প্রক্রিয়াজাত খাবার খাওয়ার কারণে ক্যান্সারের ঝুঁকি বাড়তে পারে।
- অতিরিক্ত অ্যালকোহল সেবন: অ্যালকোহল ক্যান্সারের ঝুঁকি বাড়ায়, বিশেষ করে লিভার, স্তন ও গলার ক্যান্সারে।
- বিশেষ ধরনের ভাইরাস বা ব্যাকটেরিয়া: যেমন হেলিকোব্যাকটার পাইলোরি (পাকস্থলীর ক্যান্সার) এবং এইচপিভি (স্ট্রোক ক্যান্সার)।
- জেনেটিক কারণ: যদি পরিবারে কেউ ক্যান্সারে আক্রান্ত থাকে, তবে তা অন্যান্য সদস্যের মধ্যে ঝুঁকি সৃষ্টি করতে পারে।
- বয়স: বয়স বাড়ার সাথে সাথে ক্যান্সার হওয়ার ঝুঁকি বৃদ্ধি পায়।
- কম প্রতিরোধ ক্ষমতা: এমন কিছু রোগ যেমন এইচআইভি বা অন্যান্য ইমিউনো সিস্টেম দুর্বল করা রোগ, ক্যান্সারের ঝুঁকি বাড়ায়।
লক্ষণ:
ক্যান্সারের লক্ষণ নির্ভর করে ক্যান্সারের ধরনের উপর, তবে কিছু সাধারণ লক্ষণ হলো:
- অস্বাভাবিক ওজন কমে যাওয়া (বিশেষত কোনো বিশেষ কারণে নয়)
- অস্বাভাবিক রক্তপাত বা স্রাব (মল বা প্রস্রাবে রক্ত, স্তন থেকে স্রাব)
- স্থায়ী বা বাড়তি গুটি বা স্ফীতি (স্তন, গলা বা বগলে গুটি)
- অস্বাভাবিক ব্যথা (যা দীর্ঘস্থায়ী হতে পারে)
- খাবার খাওয়ার আগ্রহ হারানো বা বমি বমি ভাব
- দীর্ঘস্থায়ী হাঁচি বা কাশি (বিশেষ করে যদি এটি ফুসফুসের ক্যান্সার হয়)
- ত্বকের পরিবর্তন (স্কিন ক্যান্সার, নতুন দাগ বা মোলের পরিবর্তন)
প্রতিকার:
ক্যান্সারের চিকিৎসা নির্ভর করে ক্যান্সারের ধরন, পর্যায় এবং রোগীর শারীরিক অবস্থা অনুসারে। সাধারণ চিকিৎসার পদ্ধতি গুলো হলো:
- সার্জারি (অস্ত্রোপচার): ক্যান্সার আক্রান্ত অংশ অপসারণ করা হয়।
- কেমোথেরাপি: কেমোথেরাপি একটি চিকিৎসা পদ্ধতি যা ক্যান্সারের কোষ ধ্বংস করতে ব্যবহৃত হয়।
- রেডিয়েশন থেরাপি: রেডিয়েশন ব্যবহার করে ক্যান্সারের কোষ ধ্বংস করা হয়, সাধারণত কেমোথেরাপির পাশাপাশি ব্যবহার করা হয়।
- টার্গেটেড থেরাপি: টার্গেটেড থেরাপি ক্যান্সারের কোষের নির্দিষ্ট উপাদান লক্ষ্য করে ক্যান্সারের বৃদ্ধি থামাতে সহায়তা করে।
- ইমিউনোথেরাপি: এই থেরাপিতে শরীরের প্রতিরোধ ক্ষমতা শক্তিশালী করা হয়, যাতে শরীর ক্যান্সারের কোষগুলোকে নষ্ট করতে পারে।
- স্টেম সেল থেরাপি: ক্যান্সারের চিকিৎসার পর পুনরুদ্ধারে সহায়তা করতে স্টেম সেল ব্যবহার করা যেতে পারে।
প্রতিরোধ:
ক্যান্সারের ঝুঁকি কমাতে কিছু কার্যকরী পদক্ষেপ গ্রহণ করা যেতে পারে:
- স্বাস্থ্যকর জীবনযাপন: সুষম খাদ্য গ্রহণ ও নিয়মিত ব্যায়াম করে শরীরকে সুস্থ রাখা।
- ধূমপান ও অ্যালকোহল পরিহার: তামাক এবং অ্যালকোহল থেকে দূরে থাকুন।
- সূর্যের ক্ষতিকর রশ্মি থেকে সুরক্ষা: সানস্ক্রীন ব্যবহার করুন এবং সুর্যরোদের চূড়ান্ত সময় (১১ থেকে ৩টা) এ বাইরে না যাওয়ার চেষ্টা করুন।
- নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষা: নিয়মিত চিকিৎসকের পরামর্শ নেয়া এবং স্ক্রীনিং পরীক্ষা করা (যেমন স্তন ক্যান্সারের জন্য ম্যামোগ্রাফি বা কলোন ক্যান্সারের জন্য কোলোনোস্কোপি)।
- বিপজ্জনক সংক্রমণ এড়িয়ে চলা: যেমন এইচপিভি ভ্যাক্সিন গ্রহণ এবং হেলিকোব্যাকটার পাইলোরি সংক্রমণ চিকিত্সা করা।
উপসংহার: ক্যান্সার একটি জীবন-ধ্বংসকারী রোগ হলেও প্রাথমিক পর্যায়ে শনাক্তকরণ এবং সঠিক চিকিৎসা গ্রহণ করলে অনেক ক্ষেত্রে এটি থেকে সুস্থ হয়ে উঠা সম্ভব। তাই শরীরের পরিবর্তনগুলি সতর্কতার সাথে লক্ষ্য করা উচিত এবং ক্যান্সারের লক্ষণগুলো দেখা দিলে দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত।