Best Homeo Doctor

কোমর বেদনা কি,কারন,লক্ষন,প্রতিকার

কোমর বেদনা (Lower back pain) হলো কোমরের নিচের অংশে ব্যথা, যা খুব সাধারণ এবং বহু মানুষের মধ্যে ঘটে থাকে। এটি সাধারণত মাংসপেশী, হাড়, শিরা বা স্নায়ুর সমস্যা থেকে উদ্ভূত হয়। কোমর বেদনা একাধিক কারণে হতে পারে এবং এটি কিছু দিন থেকে স্থায়ীও হতে পারে।

কারণ:

কোমর বেদনার বিভিন্ন কারণ হতে পারে। কিছু সাধারণ কারণ হলো:

  1. মাংসপেশী বা লিগামেন্টের ক্ষত বা টান: হঠাৎ ভারী কিছু তোলা, ভুল ভঙ্গিতে বসে থাকা বা অতিরিক্ত পরিশ্রমের কারণে কোমরের মাংসপেশী বা লিগামেন্টে টান পড়লে কোমরে ব্যথা হতে পারে।
  2. ডিস্ক বা হাড়ের সমস্যাঃ মেরুদণ্ডের ডিস্কে ফাটল বা শিরা চিপে গেলে ব্যথা হতে পারে। যেমন: ডিস্ক হার্নিয়া বা অস্টিওআর্থ্রাইটিস (অথবা হাড়ের ক্ষয়)।
  3. বয়সজনিত পরিবর্তন: বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে মেরুদণ্ডের ডিস্ক বা হাড় দুর্বল হয়ে যেতে পারে, যার ফলে কোমর ব্যথা বৃদ্ধি পায়।
  4. অতিরিক্ত ওজন: অতিরিক্ত শরীরের ওজন কোমরের ওপর চাপ সৃষ্টি করে, যা কোমর ব্যথার কারণ হতে পারে।
  5. অসুস্থ শারীরিক ভঙ্গি: দীর্ঘ সময় সোজা না বসা, ভুলভাবে হাঁটা বা দাঁড়ানো, কিংবা সঠিক ভঙ্গিতে না ঘুমানো কোমরের ব্যথার কারণ হতে পারে।
  6. স্ট্রেস বা মানসিক চাপ: মানসিক চাপও শারীরিকভাবে কোমর ব্যথা সৃষ্টি করতে পারে। অনেক সময় উদ্বেগ বা মানসিক চাপের কারণে শরীরের পেশীতে টান বা ব্যথা অনুভূত হয়।
  7. গর্ভাবস্থা: গর্ভাবস্থায় শিশুর বৃদ্ধি এবং শরীরে শারীরিক পরিবর্তন আসার কারণে কোমর ব্যথা হতে পারে।
  8. পেশীর দুর্বলতা: কোমরের পেশী যদি দুর্বল হয়, তবে শরীরের ভারসাম্য বজায় রাখতে সমস্যা হয়, যার ফলে কোমর ব্যথা হতে পারে।

লক্ষণ:

কোমর বেদনার কিছু সাধারণ লক্ষণ:

  1. কোমরের নিচে তীব্র বা মাঝারি ব্যথা: কোমরের নিচের অংশে ব্যথা অনুভূত হয়, যা কখনো হালকা বা মাঝারি, আবার কখনো তীব্র হতে পারে।
  2. অস্থিরতা বা অস্বস্তি: কোমরের ব্যথার কারণে চলাফেরা বা সোজা হয়ে দাঁড়ানো কঠিন হয়ে পড়তে পারে। অনেক সময় হোঁচট খাওয়া বা বসা বা ওঠা গেলেও অসুবিধা হতে পারে।
  3. শরীরের এক পাশ বা পুরো পেছনে ব্যথা: কোমরের ব্যথা কখনো শুধু এক পাশের হতে পারে (যেমন ডান বা বাঁ পাশে) বা পুরো কোমরের দিকে ছড়িয়ে যেতে পারে।
  4. রেডিয়েটিং পেইন: কখনো কোমরের ব্যথা পায়ের দিকে ছড়িয়ে যেতে পারে, বিশেষ করে যদি স্নায়ুতে চাপ পড়েছে, তখন পায়ের নীচের অংশে বা থাইয়ে ব্যথা অনুভূত হতে পারে (যা সাইটিকা বা Sciatica হিসেবে পরিচিত)।
  5. অবশ্যই কোনও আঘাত বা দুর্ঘটনার পর যদি ব্যথা বেশি হয়, তখন চিকিৎসকের পরামর্শ গ্রহণ করা উচিত।

প্রতিকার:

কোমর বেদনা থেকে মুক্তি পেতে কিছু সাধারণ প্রতিকার ও চিকিৎসার পদ্ধতি:

  1. বিশ্রাম শিথিলতা: কোমর ব্যথা হলেও একদম শয্যাশায়ী না হয়ে, একটু বিশ্রাম নিয়ে শিথিলতা বজায় রাখা উচিত। তবে, অনেক সময় সম্পূর্ণ বিশ্রাম দীর্ঘ সময় নেওয়া উচিত নয়, কারণ এটি পেশী দুর্বল করে দিতে পারে।
  2. গরম ঠান্ডা সেঁক: গরম বা ঠান্ডা সেঁক ব্যথা কমাতে সাহায্য করতে পারে। প্রথমে ঠান্ডা সেঁক, এবং পরে গরম সেঁক দেওয়া যেতে পারে।
  3. পেইন কিলার ওষুধ: প্যারাসিটামল বা আইবুপ্রোফেনের মতো পেইন কিলার ওষুধ ব্যথা কমাতে সাহায্য করে। তবে, দীর্ঘসময় ব্যবহার করলে সেগুলি ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী নেওয়া উচিত।
  4. ফিজিওথেরাপি বা স্ট্রেচিং ব্যায়াম: বিশেষ ব্যায়াম ও স্ট্রেচিং ব্যথা কমাতে সহায়ক হতে পারে। ফিজিওথেরাপিস্টের নির্দেশনায় ব্যায়াম করলে এটি কোমরকে শক্তিশালী করে এবং ব্যথা কমাতে সাহায্য করে।
  5. শরীরের অবস্থান ঠিক রাখা: সোজা হয়ে বসা, সঠিক ভঙ্গিতে দাঁড়ানো, ঘুমানোর সময় সঠিক পাদুকা বা সাপোর্ট ব্যবহার করা প্রয়োজন। এর ফলে কোমরের ওপর চাপ কমে এবং ব্যথা কমে।
  6. ওজন নিয়ন্ত্রণ: অতিরিক্ত ওজন কোমরের উপর অতিরিক্ত চাপ সৃষ্টি করে। তাই স্বাস্থ্যকর ডায়েট এবং নিয়মিত শরীরচর্চার মাধ্যমে ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখা জরুরি।
  7. স্ট্রেস কমানো: মানসিক চাপ কমানোর জন্য মনোরঞ্জন, যোগব্যায়াম বা মেডিটেশন করা যেতে পারে।
  8. ডাক্তারের পরামর্শ: যদি কোমর ব্যথা দীর্ঘস্থায়ী বা তীব্র হয়, তবে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত। চিকিৎসক আপনার অবস্থার ভিত্তিতে উন্নত চিকিৎসা বা পরামর্শ দিতে পারবেন, যেমন স্টেরয়েড ইনজেকশন বা সার্জারি (যদি প্রয়োজন হয়)।

কোমর বেদনা যদি দীর্ঘস্থায়ী বা তীব্র হয়, তবে চিকিৎসকের পরামর্শ নিন এবং উপযুক্ত চিকিৎসা গ্রহণ করুন।

 

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *