কৃমি হল এক ধরনের পরজীবী যা মানুষের অন্ত্র বা শরীরে বসবাস করে এবং তার পুষ্টি গ্রহণ করে। সাধারণত কৃমি মানুষের শরীরে প্রবেশ করে দূষিত খাবার বা পানি, অস্বাস্থ্যকর জীবনযাপন বা অস্বাস্থ্যকর পরিবেশের মাধ্যমে। এটি বিভিন্ন ধরনের হতে পারে, যেমন: পাইপওয়ার্ম (Roundworm), ফ্লাটওয়ার্ম (Tapeworm), হুকওয়ার্ম ইত্যাদি।
কারণ:
- দূষিত খাবার ও পানি: কৃমি অনেক সময় খাওয়া বা পানির মাধ্যমে শরীরে প্রবেশ করে, বিশেষত যদি খাবার বা পানি ময়লা বা অস্বাস্থ্যকর হয়।
- অস্বাস্থ্যকর জীবনযাপন: অপরিষ্কার পরিবেশ, অপরিষ্কার হাত দিয়ে খাবার খাওয়া বা অস্বাস্থ্যকর জীবিকার কারণে কৃমি হতে পারে।
- অপরিষ্কার সবজি বা ফল: খালি হাতে খাওয়ার আগে সবজি বা ফল যথাযথভাবে পরিষ্কার না করলে কৃমি সংক্রমণ হতে পারে।
- অপরিষ্কার টয়লেট ব্যবহার: টয়লেট বা পানির উৎস অপরিষ্কার থাকলে, কৃমির সংক্রমণ হতে পারে।
- পশু–পাখি বা মাটির মাধ্যমে: কিছু ধরনের কৃমি মাটি বা পশুর মাধ্যমে মানুষের শরীরে প্রবেশ করতে পারে।
লক্ষণ:
কৃমি সংক্রমণের লক্ষণ সাধারণত গ্যাস্ট্রোইনটেস্টাইনাল ট্র্যাক (পেট এবং অন্ত্র) এর সঙ্গে সম্পর্কিত, তবে এটি কখনও কখনও পেটের বাইরের শারীরিক লক্ষণও সৃষ্টি করতে পারে। কিছু সাধারণ লক্ষণ:
- পেট ব্যথা বা অস্বস্তি: পেটে মৃদু ব্যথা, ফুলে যাওয়া বা অস্বস্তি অনুভব হতে পারে।
- অম্বল বা বমি: কৃমির কারণে অনেক সময় অম্বল বা বমি হতে পারে।
- অ্যাপেটাইটের অভাব: খিদে কমে যেতে পারে বা খাবারে আগ্রহ হারানো।
- থকথকে পা বা অস্বস্তি: কৃমির কারণে পায়ের পেশীতে অস্বস্তি বা শক্তি অনুভূত হতে পারে।
- ডায়েরিয়া বা কোষ্ঠকাঠিন্য: কিছু কৃমি পেটের সমস্যা সৃষ্টি করে, যেমন ডায়েরিয়া বা কোষ্ঠকাঠিন্য।
- শরীরে রক্তশূন্যতা: কিছু কৃমি রক্ত শোষণ করে, যা রক্তশূন্যতা সৃষ্টি করতে পারে।
- অনিদ্রা বা শারীরিক দুর্বলতা: কৃমির কারণে শিশু বা প্রাপ্তবয়স্কদের মধ্যে অনিদ্রা এবং দুর্বলতা দেখা দিতে পারে।
- অন্যান্য লক্ষণ: যেমন চুলকানি, বিশেষত রাতের সময় পোঁদে চুলকানি, যা হুকওয়ার্ম কৃমির কারণে হতে পারে।
প্রতিকার:
- এন্টি–হেলমিনথিক (Anthelmintic) ওষুধ: কৃমি দূর করার জন্য বিভিন্ন ধরনের ওষুধ পাওয়া যায়। যেমন:
- আবেন্ট (Albendazole)
- মেবেনডাজোল (Mebendazole)
- পাইপেরাজিন (Piperazine)
- পিরান্তেল (Pyrantel)
এসব ওষুধ চিকিৎসকের পরামর্শে ব্যবহৃত হতে পারে।
- হাতের সাফ–সুতরো পরিচর্যা: খাবার খাওয়ার আগে এবং টয়লেট ব্যবহার করার পরে ভালোভাবে হাত ধোয়া অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
- খাদ্য ও পানির সাফ–সুতরো রাখা: সবজি ও ফল ভালোভাবে ধুয়ে খাওয়া এবং নিরাপদ পানি পান করা।
- টয়লেটের পরিচ্ছন্নতা: টয়লেট ও পানি ব্যবস্থার সঠিক পরিচ্ছন্নতা রক্ষা করা।
- পোষ্যদের সঠিক পরিচর্যা: পোষ্য প্রাণীর সঠিক যত্ন এবং নিয়মিত কৃমি পরীক্ষণ (যদি থাকে) করতে হবে।
- বয়স ও স্বাস্থ্য অনুযায়ী ডায়েট: কৃমি মুক্ত থাকার জন্য স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস মেনে চলা এবং পরিপূর্ণ পুষ্টির সাথে খাবার গ্রহণ করা উচিত।
- বেশি পানি পান করা: শরীর থেকে টক্সিন বের করার জন্য পর্যাপ্ত পানি পান করা।
কৃমি সাধারণত সহজেই চিকিৎসা করা যায়, তবে দীর্ঘ সময় ধরে চিকিৎসা না নিলে শরীরে বড় সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে, তাই চিকিৎসকের পরামর্শ নেয়া উচিত।