কৃমি (Worms) হলো পরজীবী প্রাণী, যা মানুষের দেহে বাস করে এবং খাবারের পুষ্টি উপাদান গ্রহণ করে, ফলে দেহের ক্ষতি করে। কৃমি বিভিন্ন প্রকারের হতে পারে, যেমন, আয়ল্যন্ড কৃমি (Roundworm), ফিতেকৃমি (Tapeworm), কৃমি ডিম বা হুকওয়ার্ম (Hookworm), ইত্যাদি। এই কৃমির সংক্রমণ সাধারণত খাবার, পানি বা মল-মূত্রের মাধ্যমে হতে পারে।
কারণ:
কৃমির সংক্রমণের বেশ কয়েকটি কারণ রয়েছে, যেমন:
- গোসল বা হাত ধোয়ার অভাব:
- অনেক ক্ষেত্রে জীবাণু সংক্রমণ বা কৃমির ডিম হাতের মাধ্যমে আমাদের শরীরে প্রবেশ করে, যখন আমরা পরিষ্কার না হয়ে খাবার খাই বা পানীয় গ্রহণ করি।
- ম্যালেরিয়া ও অন্য পরজীবী রোগ:
- মাটি, জল, এবং অপরিষ্কার পরিবেশে কৃমির ডিম থাকতে পারে। বিশেষ করে জীবাণু পূর্ণ খাবার, যেমন অপরিষ্কার পানি, ফল বা শাকসবজি, কৃমির সংক্রমণ ঘটাতে পারে।
- আবহাওয়া বা পরিবেশ:
- অধিকাংশ কৃমি গরম এবং আর্দ্র পরিবেশে জন্মাতে পারে। বিশেষত, যেখানে স্যানিটেশন কম, সেখানে কৃমি সংক্রমণের ঝুঁকি বেশি থাকে।
- খাবারের মাধ্যমে সংক্রমণ:
- অপরিষ্কার খাবার বা অপরিষ্কার পানিতে কৃমির ডিম থাকতে পারে। বিশেষত, শাকসবজি বা ফলমূল যদি ভালোভাবে ধুয়ে না খাওয়া হয়, তবে তা কৃমির ডিমের মাধ্যমে শরীরে প্রবেশ করতে পারে।
- নোংরা পোষাক ও অবস্থা:
- কৃমির ডিম বা সংক্রমণ যদি আপনার পোষাক, বিছানা বা শোবার জায়গায় থাকে, তবে সেগুলির মাধ্যমে শরীরে প্রবেশ করতে পারে।
- প্রাণী বা গবাদি পশুর মাধ্যমে:
- গবাদি পশু বা অন্যান্য প্রাণীদের সংস্পর্শেও কৃমির ডিম শরীরে প্রবেশ করতে পারে।
লক্ষণ:
কৃমির সংক্রমণের কিছু সাধারণ লক্ষণ হল:
- পেটের ব্যথা ও অস্বস্তি:
- কৃমির সংক্রমণে পেটের মধ্যে অস্বস্তি এবং ব্যথা হতে পারে, বিশেষত পেট ফুলে যাওয়া বা কোষ্ঠকাঠিন্যের অনুভূতি হতে পারে।
- মলত্যাগের সমস্যা:
- কৃমির উপস্থিতি কোষ্ঠকাঠিন্য বা মলের সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে। অনেক সময় পেটের ভিতরে কৃমির কারণে প্রচণ্ড গ্যাস বা বমি বমি ভাব হতে পারে।
- ওজন কমে যাওয়া:
- কৃমি শরীর থেকে পুষ্টি উপাদান গ্রহণ করে, যার ফলে ওজন কমে যেতে পারে, বিশেষত শিশুদের মধ্যে।
- চুলকানি:
- বিশেষত এনকাউস্টিক কৃমি (Pinworms) শিশুদের অ্যানাল অঞ্চলে চুলকানি সৃষ্টি করতে পারে, যা রাতে তীব্র হতে পারে।
- বিকৃতির লক্ষণ:
- কৃমির কিছু প্রকারের উপস্থিতিতে মল ত্যাগের সময় শুক্রাণু বা গা dark ় মল দেখা যেতে পারে।
- শক্তিশালী ক্ষুধা অনুভূতি:
- অনেক সময় কৃমির সংক্রমণে ক্ষুধার অনুভূতি অত্যধিক বেড়ে যেতে পারে, কারণ কৃমি শরীরের পুষ্টি গ্রহণ করে।
- শরীরের দুর্বলতা:
- কৃমির সংক্রমণ শরীরের শক্তি কমিয়ে দিতে পারে, ফলে ক্লান্তি, দুর্বলতা এবং শরীরের শক্তি কম অনুভূত হতে পারে।
- বিশেষ ক্ষেত্রে ম্যালেরিয়া বা অন্যান্য রোগ:
- কৃমির সংক্রমণের কারণে কখনো কখনো তাপমাত্রা বেড়ে যেতে পারে বা জ্বর অনুভূত হতে পারে, যা সাধারণত সংক্রমণের ফলে হয়।
প্রতিকার:
কৃমি সংক্রমণ প্রতিরোধ এবং চিকিৎসার জন্য বেশ কিছু কার্যকর উপায় রয়েছে:
- অ্যান্টি–ওয়ার্ম মেডিসিন:
- কৃমি রোগের চিকিৎসার জন্য বিভিন্ন অ্যান্টি-ওয়ার্ম (Anthelmintic) ওষুধ পাওয়া যায়, যা কৃমির ডিম বা প্রাপ্ত কৃমি নির্মূল করে। এর মধ্যে কিছু জনপ্রিয় ওষুধ হলো মেবেন্ডাজল, অবেনডাজল, এবং পাইরেন্টেল পামোয়েট। তবে, চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে এগুলি গ্রহণ করা উচিত।
- স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলা:
- পুষ্টিকর খাবার গ্রহণ করা এবং হাত ভালোভাবে ধোয়া কৃমির সংক্রমণ প্রতিরোধে সাহায্য করতে পারে। বিশেষত, খাওয়ার আগে ও শৌচাগার ব্যবহারের পর হাত ধোয়া খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
- পানি ও খাবারের শুদ্ধতা:
- অপরিষ্কার পানি ও খাবার কৃমির সংক্রমণ ঘটাতে পারে। তাই পরিষ্কার পানি পান করা এবং শাকসবজি বা ফল ভালোভাবে ধুয়ে খাওয়া উচিত।
- গরম পানি দিয়ে স্নান করা:
- কৃমি থেকে মুক্তি পেতে গরম পানি দিয়ে শরীর পরিষ্কার করতে হবে, বিশেষত যেখানে কৃমির ডিম থাকতে পারে, সেখানে ফোকাস করে শৌচাগার ও স্নানঘর ভালোভাবে পরিষ্কার করা উচিত।
- ঘর ও পরিবেশ পরিষ্কার রাখা:
- পরিবেশের পরিস্কারতা কৃমির সংক্রমণ রোধে গুরুত্বপূর্ণ। বিছানা, পোশাক, এবং হাত-পা ভালোভাবে পরিষ্কার রাখা উচিত।
- পোষাক ও বিছানা নিয়মিত পরিবর্তন করা:
- নিয়মিত পোষাক ও বিছানা পরিবর্তন করা উচিত, বিশেষ করে যদি কৃমির সমস্যা দেখা দেয়।
- পাল্লা–পাল্লি ত্বকের যত্ন নেওয়া:
- যখন কৃমি সংক্রমণ সৃষ্টি হয়, তখন ত্বককে নিয়মিত পরিষ্কার রাখা খুবই গুরুত্বপূর্ণ, যাতে কৃমির ডিম ত্বকে না থেকে সংক্রমণ বাড়াতে না পারে।
- বিশ্রাম ও পুষ্টিকর খাদ্য গ্রহণ:
- কৃমি থেকে শরীর দ্রুত সেরে উঠতে বিশ্রাম ও পুষ্টিকর খাদ্য গ্রহণ করতে হবে। প্রোটিন, ভিটামিন এবং মিনারেল সমৃদ্ধ খাবার শরীরের প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে সাহায্য করবে।
উপসংহার:
কৃমি একটি সাধারণ কিন্তু বিরক্তিকর স্বাস্থ্য সমস্যা, তবে সঠিক প্রতিকার ও স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণ করলে এটি সহজেই নিয়ন্ত্রণ করা যেতে পারে। প্রাথমিক পর্যায়ে চিকিৎসা গ্রহণ এবং সঠিক স্বাস্থ্যবিধি মেনে চললে কৃমি সংক্রমণ সহজে প্রতিরোধ করা সম্ভব।