Best Homeo Doctor

কলেরা কি,কারন,লক্ষন,প্রতিকার

কলেরা (Cholera) হলো একটি মারাত্মক সংক্রামক রোগ, যা Vibrio cholerae নামে একটি ব্যাকটেরিয়ার কারণে হয়। এটি মূলত পানির মাধ্যমে ছড়ায় এবং সাধারণত অসুস্থ পানি বা অশুচি খাদ্য খাওয়ার মাধ্যমে সংক্রমণ ঘটে। কলেরা দ্রুত ডিহাইড্রেশন সৃষ্টি করতে পারে, যা শরীরের জন্য অত্যন্ত বিপজ্জনক হতে পারে।

কারণ:

কলেরার প্রধান কারণ হলো Vibrio cholerae নামক ব্যাকটেরিয়া, যা মানুষের অন্ত্রে প্রবেশ করে এবং এর দ্বারা তৈরি টক্সিন শরীরের পানি ও ইলেকট্রোলাইটের ভারসাম্য নষ্ট করে। কলেরা সাধারণত এইভাবে ছড়ায়:

  1. অশুচি পানি:
    দূষিত বা অপরিষ্কার পানি পান করার মাধ্যমে কলেরা ছড়ায়। যেখানে স্যানিটেশন ব্যবস্থা দুর্বল, সেখানে পানির মাধ্যমে কলেরার বিস্তার ঘটে।
  2. অশুচি খাদ্য:
    কলেরা আক্রান্ত ব্যক্তির দ্বারা প্রস্তুত করা বা সংক্রামিত খাদ্য খাওয়ার মাধ্যমে এর সংক্রমণ হতে পারে। মাছ, শাকসবজি বা ফলমূল যাতে কলেরা ব্যাকটেরিয়া রয়েছে, তা খাওয়ার মাধ্যমে এ রোগ হতে পারে।
  3. সংক্রামিত মানুষের সংস্পর্শ:
    কলেরা আক্রান্ত ব্যক্তির মল বা শরীরের অন্যান্য অংশের সংস্পর্শেও ভাইরাস ছড়াতে পারে, বিশেষ করে স্যানিটেশন ব্যবস্থা অপর্যাপ্ত হলে।

লক্ষণ:

কলেরার লক্ষণগুলি সাধারণত ১২ ঘণ্টা থেকে ৫ দিনের মধ্যে দেখা দিতে পারে। এই লক্ষণগুলি হতে পারে:

  1. তীব্র ডায়েরিয়া:
    কলেরার প্রধান লক্ষণ হলো তীব্র ডায়েরিয়া, যা পানি বা পায়ের মতো দেখতে হয় এবং এটি খুব দ্রুত শরীর থেকে পানি বের করে দেয়।
  2. পেটের ব্যথা বা ফোলাভাব:
    পেটের মধ্যে অস্বস্তি বা ব্যথা থাকতে পারে, বিশেষ করে খাবার খাওয়ার পর।
  3. ভীষণ দুর্বলতা অবসন্নতা:
    রোগীর শরীরের পানি দ্রুত বেরিয়ে যাওয়ার কারণে দুর্বলতা ও শারীরিক শক্তি কমে যেতে পারে।
  4. ঘন ঘন বা অবিরাম বমি:
    কখনও কখনও কলেরা রোগীর বমি হতে পারে, যা শরীর থেকে পানির পরিমাণ কমিয়ে দেয়।
  5. ডিহাইড্রেশন (পানির অভাব):
    কলেরা রোগীর শরীরে পানির ঘাটতি দেখা দেয়, যার ফলে ত্বক শুষ্ক হয়ে যায়, চোখ ডুবিয়ে যায় এবং প্রস্রাবের পরিমাণ কমে যায়।
  6. তাপমাত্রা (জ্বর) না থাকা:
    সাধারণত কলেরার ক্ষেত্রে জ্বর থাকে না, কিন্তু কখনও কখনও হালকা জ্বর দেখা দিতে পারে।
  7. শ্বাসকষ্ট হৃদস্পন্দন দ্রুত হওয়া:
    গুরুতর ক্ষেত্রে, ডিহাইড্রেশন ও স্রাবের কারণে শ্বাসকষ্ট এবং হৃদস্পন্দন দ্রুত হতে পারে।

প্রতিকার:

কলেরার প্রতিকার বা চিকিৎসা মূলত ডিহাইড্রেশন প্রতিরোধ এবং পুনরুদ্ধারের উপর নির্ভর করে। এর পাশাপাশি চিকিৎসার জন্য কিছু পদক্ষেপ নেওয়া যেতে পারে:

  1. পানি সল্ট সমাধান (ORS) পান করা:
    ডিহাইড্রেশন কমাতে অরাল রিহাইড্রেশন সলিউশন (ORS) একটি গুরুত্বপূর্ণ চিকিৎসা। এটি শরীরের পানির এবং ইলেকট্রোলাইটের ঘাটতি পূরণ করে। যদি পাওয়া যায়, গ্লুকোজ, লবণ ও পানি দিয়ে তৈরি সলিউশনও এই উদ্দেশ্যে ব্যবহৃত হতে পারে।
  2. অ্যান্টিবায়োটিক চিকিৎসা:
    কলেরা আক্রান্ত রোগীকে অ্যান্টিবায়োটিক দেয়া হতে পারে, যেমন টেট্রাসাইক্লিন, ডক্সিসাইক্লিন বা অক্সিটেট্রাসাইক্লিন, যা ব্যাকটেরিয়াকে হত্যা করতে সাহায্য করে।
  3. ভ্যাকসিন:
    কলেরা প্রতিরোধের জন্য একটি কার্যকর কলেরা ভ্যাকসিন পাওয়া যায়, যা দেশের উচ্চঝুঁকির এলাকায় প্রয়োগ করা হয়।
  4. সঠিক স্যানিটেশন ব্যবস্থা:
    সঠিকভাবে খাবার প্রস্তুত করা এবং পানির উৎস পরিষ্কার রাখা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। যেখানে স্যানিটেশন ব্যবস্থা দুর্বল, সেখানে কলেরা ছড়ানোর আশঙ্কা বেশি থাকে। তাই সঠিকভাবে হাত ধোয়া, পানি পরিশোধন এবং খাদ্য পরিশোধন করা জরুরি।
  5. গুরুতর অবস্থায় হাসপাতাল ভর্তি:
    যদি ডিহাইড্রেশন অত্যধিক হয়, তবে রোগীকে হাসপাতালে ভর্তি করে ইভেন IV ফ্লুইড থেরাপি (অর্থাৎ, শরীরে তরল ও সল্ট সরবরাহ করা) প্রয়োগ করা হয়।
  6. সামাজিক সচেতনতা:
    কলেরা প্রতিরোধে জনগণের সচেতনতা গুরুত্বপূর্ণ। উপযুক্ত স্যানিটেশন, নিরাপদ পানি ও খাবার ব্যবস্থাপনা নিশ্চিত করা দরকার।

প্রতিরোধ:

কলেরার সংক্রমণ প্রতিরোধের জন্য কিছু পদক্ষেপ নেওয়া উচিত:

  1. পানি নিরাপদ করা:
    খাওয়ার জন্য পানি সবসময় পরিশোধিত করা উচিত। নিরাপদ পানীয় জল খাওয়া এবং উন্মুক্ত পানি থেকে বিরত থাকা।
  2. স্যানিটেশন ব্যবস্থা উন্নত করা:
    মলমূত্র পরিশোধন, হাত ধোয়ার পরিস্কার ব্যবস্থা এবং শৌচাগার ব্যবস্থার উন্নতি করা জরুরি।
  3. খাদ্য পরিশোধন:
    খাবার সঠিকভাবে রান্না ও পরিশোধন করতে হবে। কাঁচা ফলমূল বা শাকসবজি ভালভাবে ধুয়ে খাওয়া উচিত।
  4. ভ্যাকসিন নেওয়া:
    যদি আপনি এমন কোনো এলাকায় থাকেন, যেখানে কলেরার আক্রমণ বেশি হয়, সেখানে কলেরা ভ্যাকসিন নেওয়া যেতে পারে।
  5. সামাজিক সচেতনতা:
    জনগণকে কলেরা সম্পর্কে সচেতন করা এবং রোগের প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করতে উদ্বুদ্ধ করা।

যখন চিকিৎসকের পরামর্শ প্রয়োজন:

কলেরা খুব দ্রুত শারীরিক অবস্থা খারাপ করতে পারে, তাই তীব্র ডিহাইড্রেশন বা অন্যান্য গুরুতর লক্ষণ দেখা দিলে দ্রুত চিকিৎসকের কাছে যেতে হবে।

 

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *