কর্ণমূল প্রদাহ (Otitis Externa) বা ইয়ার ইনফেকশন হচ্ছে কর্ণ (কানের বাইরের অংশ) বা কানের গহ্বরের প্রদাহ, যা সাধারণত ব্যাকটেরিয়া, ভাইরাস বা ফাঙ্গাসের সংক্রমণের কারণে ঘটে। এটি সাধারণত কানের বাইরের অংশে সংক্রমণ বা প্রদাহ সৃষ্টির ফলে হয়, তবে কিছু ক্ষেত্রে কানের ভিতরে বা কানপথেও প্রদাহ হতে পারে। এটি সাধারণত জলপান বা কোনো প্রকার বাহ্যিক আঘাতের কারণে শুরু হয়। একে সুইমারস ইয়ারও বলা হয়, কারণ এটি প্রায়শই সাঁতার কাটার কারণে হয়ে থাকে।
কারণ:
কর্ণমূল প্রদাহের বিভিন্ন কারণ থাকতে পারে:
- অস্বাস্থ্যকর পানি:
- সাঁতার কাটার সময় কানে পানি ঢুকে গেলে, এটি কানের গহ্বরে আর্দ্রতা সৃষ্টি করে, যা ব্যাকটেরিয়া বা ফাঙ্গাসের বৃদ্ধি ঘটাতে পারে।
- কানে মোম জমা:
- অতিরিক্ত কানের মোম (সিরাম) জমা হয়ে কানের ভিতরে চাপ সৃষ্টি করতে পারে, যা প্রদাহ সৃষ্টি করে।
- কানে আঘাত:
- কানে আঘাত, যেমন: কানে আঙুল বা অন্য কোনো কঠিন বস্তু প্রবেশ করালে বা খুব বেশি চাপ দিলে প্রদাহ হতে পারে।
- অপরিষ্কারতা বা জীবাণুর সংক্রমণ:
- হাত বা যন্ত্রপাতি দ্বারা কানে অস্বাস্থ্যকর স্পর্শ হলে বা অপরিষ্কার পরিবেশে থাকলে কানে জীবাণুর সংক্রমণ হতে পারে।
- আর্দ্রতা বা অতিরিক্ত রোদে থাকা:
- অতিরিক্ত আর্দ্রতা, যেমন: দীর্ঘ সময় ধরে সাঁতার কাটা বা বৃষ্টির মধ্যে থাকতে থাকলে কানে প্রদাহ সৃষ্টি হতে পারে।
- অ্যালার্জি:
- কিছু ক্ষেত্রে, কানের প্রদাহ অ্যালার্জির কারণেও হতে পারে, যেমন পোলেন, ধুলো বা কোনো খাবারের প্রতি অ্যালার্জি।
- ফাঙ্গাল ইনফেকশন:
- কখনও কখনও, কানের গহ্বরে ফাঙ্গাসের সংক্রমণও কর্ণমূল প্রদাহ সৃষ্টি করতে পারে, যা বেশি আর্দ্র পরিবেশে ঘটে।
- মুলায়েম ত্বক:
- কিছু মানুষের ত্বক সংবেদনশীল থাকে, এবং তারা সহজেই প্রদাহ বা ইনফেকশনে আক্রান্ত হয়।
লক্ষণ:
কর্ণমূল প্রদাহের লক্ষণগুলি বিভিন্ন পর্যায়ে হতে পারে, তবে কিছু সাধারণ লক্ষণ হলো:
- কানে ব্যথা:
- কানের বাইরে বা কানের গহ্বরে ব্যথা অনুভূত হয়। এটি বিশেষত যখন কানের ভিতরে চাপ দেওয়া হয়, যেমন কানের পেঁচানো বা স্পর্শ করা।
- কানের মধ্যে জ্বালা বা খচখচে অনুভূতি:
- কানে অস্বস্তি বা খচখচে অনুভূতি হতে পারে, যা বিরক্তিকর।
- কানে তরল নিঃসরণ:
- কানে তরল বা পুঁজের নিঃসরণ হতে পারে, যা প্রায়শই সাদা বা হলুদ রঙের হতে পারে।
- কানে শোনার সমস্যা:
- কানের ভিতরে মোম জমে গেলে বা ইনফেকশন থাকলে শ্রবণশক্তি কিছুটা হ্রাস পেতে পারে।
- গা ঘোরা বা ভারসাম্য হারানো:
- কখনও কখনও কানে প্রদাহের কারণে মাথা ঘোরা বা ভারসাম্য হারানোর অনুভূতি হতে পারে, বিশেষত যদি সংক্রমণ মারাত্মক হয়।
- কানের লালচে বা ফোলা হওয়া:
- কানের বাইরের অংশে লালচে বা ফোলাভাব দেখা দিতে পারে, যা প্রদাহের লক্ষণ হতে পারে।
- শরীরের তাপমাত্রা বেড়ে যাওয়া (জ্বর):
- কিছু ক্ষেত্রে কানের সংক্রমণের কারণে শরীরের তাপমাত্রা (জ্বর) বৃদ্ধি পেতে পারে।
প্রতিকার:
কর্ণমূল প্রদাহের চিকিৎসা অবস্থার ওপর নির্ভর করে ভিন্ন হতে পারে। তবে সাধারণত কিছু প্রতিকার নিচে দেওয়া হলো:
- গরম সেঁক:
- কানে গরম সেঁক দিলে ব্যথা কিছুটা কমানো যেতে পারে এবং প্রদাহ প্রশমিত হতে পারে। গরম পানি দিয়ে টাওয়েল ভিজিয়ে কানে প্রয়োগ করা যেতে পারে।
- এন্টিবায়োটিক বা এন্টিফাঙ্গাল ড্রপ:
- যদি প্রদাহ ব্যাকটেরিয়া বা ফাঙ্গাস দ্বারা হয়, তবে ডাক্তারের পরামর্শে এন্টিবায়োটিক বা এন্টিফাঙ্গাল কানের ড্রপ ব্যবহার করা যেতে পারে।
- কানের মোম পরিষ্কার করা:
- যদি কানে অতিরিক্ত মোম জমে থাকে, তবে কানের ড্রপ দিয়ে মোম পরিষ্কার করা যেতে পারে। তবে এটি শুধুমাত্র চিকিৎসকের পরামর্শে করা উচিত।
- অ্যান্টিহিস্টামিন বা স্টেরয়েড চিকিৎসা:
- যদি প্রদাহ অ্যালার্জির কারণে হয়ে থাকে, তবে অ্যান্টিহিস্টামিন বা স্টেরয়েড চিকিৎসা দেওয়া যেতে পারে।
- কানে পানি ঢোকা থেকে বিরত থাকা:
- সাঁতার কাটার সময় বা বৃষ্টির মধ্যে কানে পানি ঢোকা থেকে বিরত থাকতে হবে। এছাড়া সাঁতার কাটার পর কানে পানি না জমতে বিশেষ সাবধানতা অবলম্বন করা উচিত।
- অপারেশন (যদি প্রয়োজন):
- যদি কানের মধ্যে মোম বা অন্যান্য বস্তু আটকে থাকে এবং ড্রপ দিয়ে পরিষ্কার করা সম্ভব না হয়, তবে ডাক্তারের পরামর্শে কানের পরিষ্কার করার জন্য অপারেশন করা যেতে পারে।
- বিশ্রাম নেওয়া:
- ইনফেকশন বা প্রদাহ হলে শরীরকে বিশ্রাম দিতে হবে, যাতে প্রতিরোধ ক্ষমতা শক্তিশালী হয় এবং দ্রুত সেরে ওঠে।
কখন চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত:
- যদি কানের ব্যথা বা প্রদাহ বেশি তীব্র হয়।
- যদি কানে তরল বা পুঁজ বের হতে থাকে।
- যদি কানের মধ্যে শ্রবণশক্তি কমে যায়।
- যদি জ্বর থাকে এবং কানের প্রদাহ গুরুতর হয়ে থাকে।
- যদি কানে আঘাত লাগে বা গুরুতর সংক্রমণ হয়।
উপসংহার:
কর্ণমূল প্রদাহ সাধারণত সংক্রমণের কারণে হয়ে থাকে এবং সঠিক সময়ে চিকিৎসা গ্রহণ করা হলে এটি দ্রুত ভালো হয়ে যেতে পারে। তবে, একে অবহেলা না করে যথাসম্ভব দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত।