Best Homeo Doctor

কম্পন কি,কারন,লক্ষন,প্রতিকার

কম্পন (Tremor) হল শরীরের কোনো এক অংশের অস্থির বা অনিয়ন্ত্রিত দুলুনি বা কম্পন, যা সাধারণত মস্তিষ্ক বা স্নায়ুতন্ত্রের সমস্যা থেকে হতে পারে। এটি সাধারণত হাত, পা, বা মাথায় দেখা দেয়, তবে শরীরের অন্য কোনো অংশেও হতে পারে। কম্পন সাধারণত একটি অস্বস্তিকর অবস্থার সৃষ্টি করে এবং এটি কোনো শারীরিক বা মানসিক রোগের লক্ষণ হতে পারে।

কারণ:

কম্পনের পেছনে বিভিন্ন শারীরিক বা মানসিক কারণে হতে পারে, কিছু সাধারণ কারণ হলো:

  1. পারকিনসন’s ডিজিজ (Parkinson’s Disease): পারকিনসন ডিজিজ হল একটি স্নায়ুজনিত রোগ যা কম্পনের অন্যতম প্রধান কারণ। এটি সাধারণত হাতের কম্পন, পা কম্পন বা মুখের কম্পন সৃষ্টি করে।
  2. অ্যালকোহল বা মাদকদ্রব্যের প্রভাব: অতিরিক্ত অ্যালকোহল বা মাদকদ্রব্য সেবনের কারণে শরীরের কম্পন হতে পারে। এর মধ্যে অতিরিক্ত ক্যাফেইন বা মাদকদ্রব্যও অন্তর্ভুক্ত।
  3. অতিরিক্ত মানসিক চাপ বা উদ্বেগ: শারীরিক বা মানসিক চাপ, উদ্বেগ বা স্ট্রেস কম্পনের কারণ হতে পারে, বিশেষ করে যখন কেউ উত্তেজিত বা চিন্তিত থাকে।
  4. থাইরয়েড সমস্যা: থাইরয়েড গ্রন্থির সমস্যা (যেমন হাইপোথাইরয়েডিজম বা হাইপারথাইরয়েডিজম) কম্পনের সৃষ্টি করতে পারে।
  5. রক্তে শর্করা কম বা হাইপোগ্লাইসেমিয়া: রক্তে শর্করা (গ্লুকোজ) কম থাকলে, শরীরে কম্পন হতে পারে।
  6. নিউরোলজিক্যাল সমস্যা: স্নায়ুতন্ত্রের নানা সমস্যা যেমন সেরিবেল্লার ডিজিজ (cerebellar disease), মাল্টিপল স্ক্লেরোসিস (MS) ইত্যাদি কম্পন সৃষ্টি করতে পারে।
  7. গ্যাস্ট্রিক বা পেটের সমস্যা: কিছু পেটের সমস্যা বা শারীরিক অবস্থা যেমন পুষ্টির অভাব বা হজমের সমস্যা কম্পনের কারণ হতে পারে।
  8. এন্টিডিপ্রেস্যান্ট বা অন্যান্য ওষুধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া: কিছু ওষুধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হিসেবে শরীরে কম্পন হতে পারে।
  9. বয়সজনিত পরিবর্তন: বয়স বৃদ্ধির সাথে সাথে মস্তিষ্ক এবং স্নায়ুতন্ত্রের কার্যকারিতা কিছুটা কমে আসতে পারে, যার ফলে হালকা কম্পন দেখা দিতে পারে।
  10. কিছু ভাইরাস বা সংক্রমণ: কিছু ভাইরাসজনিত সংক্রমণ যেমন মেনিনজাইটিস বা ইনফ্লুয়েঞ্জা কম্পনের কারণ হতে পারে।
  11. ডায়াবেটিস বা অন্যান্য শারীরিক রোগ: দীর্ঘস্থায়ী রোগ যেমন ডায়াবেটিসের কারণে শরীরে কম্পন হতে পারে।

লক্ষণ:

কম্পনের লক্ষণ সাধারণত শরীরের একটি বা একাধিক অংশে হতে পারে এবং এটি কিছু সময় স্থায়ী বা অস্থায়ী হতে পারে। সাধারণ লক্ষণগুলো হলো:

  1. হাতের বা পায়ের কম্পন: এটি সাধারণত সবচেয়ে বেশি দেখা যায়। হাতের তর্জনী বা কব্জি বিশেষভাবে কম্পিত হতে পারে, এবং কখনও কখনও পায়ের পাতা বা গোড়ালিতেও দেখা দিতে পারে।
  2. মাথার কম্পন: মাথার এক ধরনের কম্পন বা দুলুনি যা রোগী অনুভব করে। এটি পারকিনসন রোগের একটি সাধারণ লক্ষণ।
  3. দেহের অংশের অনিয়ন্ত্রিত কম্পন: শরীরের অন্য অংশে (যেমন পেট, ঠোঁট বা গলা) অস্থির কম্পন অনুভূত হতে পারে।
  4. কম্পনের তীব্রতা বৃদ্ধি: এক জায়গায় স্থির থাকার সময় কম্পন বাড়তে পারে, যেমন হাত একটি বস্তুতে রাখলে কম্পন তীব্র হতে পারে।
  5. কম্পনের সঙ্গে শারীরিক দুর্বলতা: মাঝে মাঝে কম্পন শরীরের দুর্বলতা, ক্লান্তি বা অস্বস্তির অনুভূতি সৃষ্টি করতে পারে।
  6. কম্পন চলাকালীন সমস্যা করতে না পারা: সাধারণ কাজ যেমন কিছু ধরার, লেখার, বা খাওয়ার সময় কম্পন সমস্যার সৃষ্টি করতে পারে।
  7. হৃদস্পন্দন দ্রুত হওয়া: কিছু ক্ষেত্রে, শরীরে কম্পনের ফলে হৃদস্পন্দন দ্রুত হতে পারে এবং শ্বাসকষ্টও অনুভূত হতে পারে।

প্রতিকার:

কম্পন নির্ভর করে তার কারণের ওপর। কিছু সাধারণ প্রতিকার হলো:

  1. ডাক্তারি পরীক্ষা চিকিৎসা:
    • পারকিনসন ডিজিজ বা অন্যান্য নিউরোলজিক্যাল সমস্যা থাকলে, চিকিৎসক বিশেষ চিকিৎসা প্রদান করতে পারেন যেমন ডোপামিন agonists বা লেভোডোপা। এছাড়া ফিজিওথেরাপি বা শল্যচিকিৎসাও কার্যকর হতে পারে।
    • থাইরয়েডের সমস্যা থাকলে, থাইরয়েড হরমোনের ভারসাম্য ফেরাতে চিকিৎসা প্রয়োজন।
  2. মানসিক চাপ বা উদ্বেগ কমানো:
    • মানসিক চাপ বা উদ্বেগ কমানোর জন্য যোগব্যায়াম, মেডিটেশন বা গভীর শ্বাসপ্রশ্বাসের কৌশল ব্যবহার করা যেতে পারে। এছাড়া, উদ্বেগের জন্য ডাক্তারি সহায়তাও প্রয়োজন হতে পারে।
  3. রক্তের শর্করা নিয়ন্ত্রণ:
    • ডায়াবেটিস বা হাইপোগ্লাইসেমিয়ার কারণে যদি কম্পন হয়, তবে শর্করা নিয়ন্ত্রণে রাখতে উপযুক্ত ডায়েট ও ইনসুলিন বা ওষুধ গ্রহণ জরুরি।
  4. ঔষধ ব্যবহার:
    • কিছু ক্ষেত্রে, বিশেষ ঔষধ যেমন অ্যান্টিট্রেমর ড্রাগস বা অ্যান্টিঅ্যাংজাইটি ড্রাগস ব্যবহার করা হতে পারে। তবে এগুলোর ব্যবহার চিকিৎসকের পরামর্শে হওয়া উচিত।
  5. বিভিন্ন রোগের চিকিত্সা:
    • যদি কম্পন অন্য কোনো রোগ যেমন মেনিনজাইটিস, সেরিবেল্লার রোগ, বা নিউরোপ্যাথির কারণে হয়, তবে সেগুলির যথাযথ চিকিৎসা করা প্রয়োজন।
  6. অ্যালকোহল ক্যাফেইন কমানো:
    • অতিরিক্ত অ্যালকোহল বা ক্যাফেইন সেবন কম্পনের কারণ হতে পারে, তাই এসব নিয়ন্ত্রণ করা উচিত।
  7. ফিজিওথেরাপি শারীরিক ব্যায়াম:
    • ফিজিওথেরাপি, যেমন বিভিন্ন শারীরিক ব্যায়াম বা কৌশল যা মস্তিষ্ক এবং স্নায়ুতন্ত্রের কার্যক্রমে সাহায্য করে, কম্পন কমাতে সাহায্য করতে পারে।
  8. পর্যাপ্ত বিশ্রাম এবং স্বাস্থ্যকর জীবনযাপন:
    • সঠিক পরিমাণে ঘুম এবং বিশ্রাম নেওয়া, সুস্থ জীবনযাপনের অংশ হিসেবে কম্পনের উন্নতিতে সহায়ক হতে পারে।

চিকিৎসকের পরামর্শ:

যদি কম্পন বেশি তীব্র হয় বা দীর্ঘস্থায়ী হয়, এবং এটি শারীরিক কাজকর্মে বিঘ্ন সৃষ্টি করে, তবে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত। কারণ, কম্পন বিভিন্ন গুরুতর রোগের লক্ষণ হতে পারে, তাই যথাযথ চিকিত্সা প্রয়োজন।

 

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *