কনুই ব্যথা (Elbow Pain) হলো কনুইয়ের অঞ্চলে কোনো ধরনের ব্যথা অনুভূত হওয়া। এটি বেশ সাধারণ একটি সমস্যা এবং বিভিন্ন কারণে হতে পারে। কনুই একটি গুরুত্বপূর্ণ জয়েন্ট, যেটি আমাদের হাতের চলাফেরায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। কনুই ব্যথা বেশিরভাগ সময় কাজকর্ম বা আঘাতের কারণে হয়, কিন্তু কিছু রোগ বা প্রদাহজনিত কারণেও এটি হতে পারে।
কারণ:
কনুই ব্যথার পেছনে কয়েকটি সাধারণ কারণ রয়েছে:
- টেনিস এলবো (Tennis Elbow): এটি কনুইয়ের বাহিরের পেশীতে টান বা ক্ষতির কারণে হয়। সাধারণত, এটি অতিরিক্ত হাত বা কনুইয়ের ব্যবহার, বিশেষত হালকা ওজনের কিছু পুনরাবৃত্তি কাজের ফলে হয় (যেমন, টেনিস খেলোয়াড়দের মধ্যে দেখা যায়)।
- গলফ এলবো (Golfer’s Elbow): এটি কনুইয়ের ভেতরের পেশীতে ক্ষতি বা প্রদাহ হওয়ার কারণে ঘটে। এই অবস্থায় কনুইয়ের ভেতরের দিকে ব্যথা অনুভূত হয় এবং বিশেষ করে গলফ খেলোয়াড়দের মধ্যে দেখা যায়।
- কনুইয়ের ইনজুরি (Elbow Injury): সরাসরি আঘাত বা দুর্ঘটনার কারণে কনুইয়ের হাড়, পেশী বা লিগামেন্টে ক্ষতি হতে পারে, যা ব্যথার কারণ হয়ে দাঁড়ায়।
- বুরসাইটিস (Bursitis): এটি হলো কনুইয়ের মধ্যে ছোট ঝিল্লি বা বুরসা (একটি তরল ভর্তি থলি) প্রদাহিত হওয়া, যা কনুইয়ের চারপাশে ব্যথা সৃষ্টি করতে পারে।
- ওস্টিওআর্থ্রাইটিস (Osteoarthritis): এটি হলো জয়েন্টের স্থায়ী ক্ষয় এবং প্রদাহজনিত একটি রোগ, যা কনুইয়ের হাড়ে ব্যথার সৃষ্টি করতে পারে।
- রিউমাটয়েড আরথ্রাইটিস (Rheumatoid Arthritis): এটি একটি প্রদাহজনিত রোগ যা কনুইসহ বিভিন্ন জয়েন্টে ব্যথা এবং প্রদাহ সৃষ্টি করতে পারে।
- হাড় ভাঙা বা ফ্র্যাকচার (Fracture): কোনো দুর্ঘটনা বা আঘাতের ফলে কনুইয়ের হাড় ভেঙে গেলে তীব্র ব্যথা অনুভূত হতে পারে।
- নির্দিষ্ট পেশী বা স্নায়ু সমস্যা: কনুইয়ের পেশী বা স্নায়ুতে কোনও টান বা সমস্যা যেমন স্নায়ুর চাপ, কনুইয়ের ব্যথা সৃষ্টি করতে পারে।
লক্ষণ:
কনুই ব্যথার কিছু সাধারণ লক্ষণ হলো:
- ব্যথা: কনুইয়ের মধ্যে বিভিন্ন স্থানে ব্যথা অনুভূত হতে পারে, এটি হালকা থেকে তীব্র হতে পারে। ব্যথা চলাফেরায় বা কনুই ব্যবহার করলে বাড়তে পারে।
- ফুলে যাওয়া: কনুইয়ের চারপাশে ফুলে যাওয়া বা ইডিমা (Edema) দেখা যেতে পারে। বিশেষ করে ইনজুরি বা প্রদাহের কারণে এটি হতে পারে।
- শক্তি কমে যাওয়া: কনুইয়ের চলাচলে সমস্যা হতে পারে, যেমন হাত বাঁকানো বা কিছু তোলা বা ধরার ক্ষেত্রে অসুবিধা হতে পারে।
- গরম এবং লাল হয়ে যাওয়া: প্রদাহের কারণে কনুইয়ের অঞ্চলে গরম অনুভূতি এবং লালচে হয়ে যাওয়ার সমস্যা দেখা দিতে পারে।
- শিরশির বা অবশ অনুভূতি: যদি স্নায়ুতে চাপ পড়ে, তবে কনুই এবং হাতের কিছু অংশে শিরশির বা অবশ অনুভূতি হতে পারে।
- ক্র্যাকিং বা কাঁপন: কনুইয়ের চলাচলের সময় কখনও কখনও একটি ক্র্যাকিং বা কাঁপনের শব্দ হতে পারে, যা স্নায়ু বা হাড়ের ক্ষতির কারণে হতে পারে।
প্রতিকার:
কনুই ব্যথা দূর করার জন্য কিছু সাধারণ প্রতিকার রয়েছে:
- বিশ্রাম: কনুইয়ের ব্যথা কমানোর জন্য প্রথমে বিশ্রাম নেওয়া উচিত। অতিরিক্ত চাপ বা কাজ করা থেকে বিরত থাকা উচিত যাতে ব্যথা বৃদ্ধি না পায়।
- ঠান্ডা বা গরম সেঁক: ব্যথা এবং ফুলে যাওয়া কমাতে ঠান্ডা সেঁক (যেমন বরফের সেঁক) ব্যবহার করা যেতে পারে। ফুলে যাওয়া কমে গেলে গরম সেঁক দেওয়া যেতে পারে।
- পেইন কিলার ওষুধ: প্যারাসিটামল বা আইবুপ্রোফেনের মতো পেইন কিলার ওষুধ ব্যথা কমাতে সাহায্য করতে পারে। তবে, নিয়মিত ওষুধ নেওয়ার আগে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত।
- ফিজিওথেরাপি (Physiotherapy): কনুই ব্যথার জন্য ফিজিওথেরাপি অত্যন্ত সহায়ক। বিশেষভাবে টেনিস এলবো বা গলফ এলবোর ক্ষেত্রে ফিজিওথেরাপি পেশী শক্তিশালী করতে এবং নমনীয়তা বৃদ্ধি করতে সাহায্য করতে পারে।
- স্টেরয়েড ইনজেকশন: কিছু ক্ষেত্রে, প্রদাহ কমানোর জন্য স্টেরয়েড ইনজেকশন ব্যবহার করা যেতে পারে।
- সাপোর্ট বা ব্রেস (Elbow Support or Brace): কনুইয়ের সাপোর্ট বা ব্রেস ব্যবহার করলে কনুইয়ের ওপর চাপ কমানো যায় এবং ব্যথা কমানো সম্ভব।
- কায়িক পরিশ্রম বা ব্যায়াম: কিছু ব্যায়াম বা স্ট্রেচিং কনুইয়ের পেশী এবং জয়েন্টের শক্তি বাড়াতে সাহায্য করতে পারে, তবে সেগুলি কেবলমাত্র চিকিৎসকের পরামর্শে করা উচিত।
- সার্জারি: যদি কনুইয়ের ব্যথা ইনজুরি বা অন্যান্য গুরুতর সমস্যা থেকে হয় এবং অন্যান্য চিকিৎসায় সুবিধা না হয়, তবে সার্জারি প্রয়োজন হতে পারে।
যখন চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত:
কনুই ব্যথা যদি দীর্ঘস্থায়ী হয়, তীব্র হয়, বা চলাফেরা করতে অসুবিধা হয়, তবে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত। এছাড়া, যদি কনুইয়ের আঘাত গুরুতর হয় (যেমন হাড় ভাঙা বা সংক্রমণ) বা অন্য কোনো লক্ষণ যেমন জ্বর, প্রচণ্ড ফুলে যাওয়া বা অবশত্ব অনুভূতি দেখা দেয়, তাহলে দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।