Best Homeo Doctor

এপিমেনরিয়া কি,কারন,লক্ষন,প্রতিকার

এপিমেনরিয়া (Amenorrhea) হল একটি শারীরিক অবস্থা, যেখানে এক বা একাধিক মাসের জন্য মহিলার মাসিক ঋতুস্রাব বন্ধ হয়ে যায়। এটি সাধারণত বয়স বা স্বাভাবিক শারীরিক পরিবর্তনের অংশ হিসাবে ঘটে না, বরং এটি কোনও শারীরিক বা হরমোনাল সমস্যা বা অস্বাভাবিকতার লক্ষণ হতে পারে।

এপিমেনরিয়া মূলত দুটি ধাপে বিভক্ত:

  1. প্রাইমারি এপিমেনরিয়া (Primary Amenorrhea):
    • যখন কোনো মহিলা ১৬ বছরের পরেও ঋতুস্রাব শুরু না করে।
  2. সেকেন্ডারি এপিমেনরিয়া (Secondary Amenorrhea):
    • যখন পূর্বে নিয়মিত ঋতুস্রাব হওয়ার পর, কোন কারণে ৩ মাস বা তার বেশি সময়ের জন্য ঋতুস্রাব বন্ধ হয়ে যায়।

এপিমেনরিয়ার কারণ:

এপিমেনরিয়া অনেক কারণে হতে পারে, যা শারীরিক, হরমোনাল, মানসিক বা জীবনযাত্রার সাথে সম্পর্কিত হতে পারে। এর কিছু প্রধান কারণ হল:

  1. হরমোনাল সমস্যা:
    • পিটুইটারি গ্রন্থি বা থাইরয়েড গ্রন্থির সমস্যা (যেমন: হাইপোথাইরয়েডিজম বা হাইপারথাইরয়েডিজম)।
    • পলিসিস্টিক ওভারি সিনড্রোম (PCOS): এটি একটি সাধারণ হরমোনাল সমস্যা যা মহিলাদের মধ্যে এপিমেনরিয়া সৃষ্টি করতে পারে।
    • ল্যুটিয়াল ফেজ ডিফেক্ট: এটি একটি অবস্থায় দেখা যায় যখন শরীরে পর্যাপ্ত প্রোজেস্টেরন তৈরি হয় না, যার কারণে ঋতুস্রাব স্বাভাবিকভাবে হতে পারে না।
  2. গর্ভাবস্থা:
    • গর্ভাবস্থা হল সবচেয়ে সাধারণ কারণ। গর্ভবতী হওয়ার কারণে নিয়মিত মাসিক বন্ধ হয়ে যায়।
  3. অতিরিক্ত শারীরিক বা মানসিক চাপ:
    • অতিরিক্ত মানসিক চাপ, শারীরিক দুর্বলতা বা ভারী শারীরিক অনুশীলন (যেমন: মুটনস এবং খুব কঠোর শরীরচর্চা) মেনস্ট্রুয়াল সাইকেলকে প্রভাবিত করতে পারে।
  4. গর্ভধারণের পরবর্তী শারীরিক অবস্থা (Postpartum Period):
    • সন্তান প্রসবের পর ঋতুস্রাব এক বা একাধিক মাস বন্ধ থাকতে পারে, যা সাধারণত শরীরের হরমোনাল পরিবর্তনের কারণে হয়।
  5. অতিরিক্ত বা কম ওজন:
    • অত্যধিক বেশি বা কম ওজন থাকলে (অর্থাৎ, অ্যানোরেক্সিয়া বা বুলিমিয়া) ঋতুস্রাব বন্ধ হয়ে যেতে পারে, কারণ শরীর সঠিক পুষ্টি বা শারীরিক শক্তি না পেলে মাসিক নিয়মিত হয় না।
  6. স্ট্রেস এবং মানসিক চাপ:
    • দীর্ঘমেয়াদী মানসিক চাপ বা উদ্বেগ স্তরের কারণে হরমোনের ভারসাম্য নষ্ট হয়ে এপিমেনরিয়া হতে পারে।
  7. ওভারিয়ান বা জরায়ুর শারীরিক সমস্যা:
    • গর্ভাশয়ের বা ডিম্বাশয়ের বিভিন্ন রোগ যেমন টিউমার বা অন্যান্য শারীরিক সমস্যা।
  8. গর্ভাশয়ের অস্ত্রোপচার বা মেডিক্যাল সমস্যাঃ
    • যেকোনো ধরনের অস্ত্রোপচার বা গুরুতর অসুস্থতা, যেমন কিডনি বা লিভার রোগ,ওভারিয়ান সিস্ট ইত্যাদি, যা মাসিকের নিয়মিততা প্রভাবিত করতে পারে।

এপিমেনরিয়ার লক্ষণ:

  1. মাসিকের অনুপস্থিতি:
    • ঋতুস্রাব একাধিক মাস বা বছরের জন্য বন্ধ হয়ে যেতে পারে।
  2. হরমোনাল সমস্যা:
    • হরমোনাল সমস্যা থাকলে ত্বকে অতিরিক্ত তেল বা অ্যাকনি দেখা দিতে পারে, বা মহিলাদের মধ্যে অবাঞ্ছিত পশম বৃদ্ধি পেতে পারে।
  3. শরীরের অতিরিক্ত চাপ অনুভব করা:
    • খুব দুর্বলতা, ক্লান্তি, বা মনোবলের অভাব থাকতে পারে।
  4. বিরক্তি, উদ্বেগ বা অবসাদ:
    • মানসিক চাপ বা অবসাদ সৃষ্টি হতে পারে, বিশেষত অতিরিক্ত শারীরিক চাপ বা জীবনের অন্য দিকের সমস্যার কারণে।
  5. ওজনের পরিবর্তন:
    • অতিরিক্ত ওজন হ্রাস বা বৃদ্ধি হতে পারে, যা মেনস্ট্রুয়াল সাইকেলকে প্রভাবিত করে।

এপিমেনরিয়ার প্রতিকার:

এপিমেনরিয়ার প্রতিকার তার কারণ অনুসারে ভিন্ন হতে পারে। তবে কিছু সাধারণ প্রতিকার হলো:

  1. হরমোনাল চিকিৎসা:
    • অনেক ক্ষেত্রে পিল বা হরমোন থেরাপি দেয়া হয়, যা মাসিক সাইকেল পুনরুদ্ধার করতে সহায়তা করে।
  2. পলিসিস্টিক ওভারি সিনড্রোমের (PCOS) চিকিৎসা:
    • PCOS এর জন্য চিকিৎসা যেমন ওজন কমানো, পিল বা অন্যান্য হরমোনাল চিকিৎসা প্রয়োগ করা হতে পারে।
  3. মেডিকেল পরীক্ষা:
    • যেহেতু বিভিন্ন শারীরিক অবস্থা যেমন গর্ভাবস্থা, থাইরয়েডের সমস্যা বা অন্যান্য শারীরিক সমস্যা মাসিক বন্ধের কারণ হতে পারে, সেক্ষেত্রে মেডিকেল পরীক্ষা গুরুত্বপূর্ণ। চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী পরীক্ষার মাধ্যমে সঠিক কারণ চিহ্নিত করা উচিত।
  4. স্ট্রেস ম্যানেজমেন্ট:
    • মানসিক চাপ বা উদ্বেগ নিয়ন্ত্রণে রাখতে স্ট্রেস ম্যানেজমেন্ট পদ্ধতি, যেমন যোগব্যায়াম, মেডিটেশন, বা গভীর শ্বাস গ্রহণ, অত্যন্ত সহায়ক হতে পারে।
  5. ওজন নিয়ন্ত্রণ:
    • স্বাস্থ্যকর ওজন বজায় রাখার মাধ্যমে মাসিক সাইকেল স্বাভাবিক রাখা যায়। অতিরিক্ত শরীরের চর্বি বা অত্যধিক কম ওজন থেকেও ঋতুস্রাব বন্ধ হতে পারে, তাই সঠিক পুষ্টি ও স্বাস্থ্যকর জীবনযাত্রা গ্রহণ করা উচিত।
  6. সঠিক পুষ্টি এবং ডায়েট:
    • সুষম পুষ্টির মাধ্যমে শরীরের সকল প্রয়োজনীয় উপাদান পূর্ণ করা যেতে পারে, যা মাসিক সাইকেল স্বাভাবিক রাখতে সাহায্য করে।
  7. গর্ভধারণ বা গর্ভনিরোধের ব্যবস্থা:
    • গর্ভাবস্থা বা গর্ভনিরোধের পদ্ধতি ব্যবহারের ফলে সঠিকভাবে মাসিক সাইকেল কন্ট্রোল করা সম্ভব।

উপসংহার:

এপিমেনরিয়া একটি শারীরিক অবস্থা যা অনেক কারণের কারণে হতে পারে। এটি কখনও কখনও গুরুতর শারীরিক বা হরমোনাল সমস্যার লক্ষণ হতে পারে, তাই যদি কোনো মহিলা দীর্ঘ সময় ধরে মাসিক না পায়, তবে তাকে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত। সঠিক চিকিৎসা, শারীরিক পরীক্ষা এবং পুষ্টি গ্রহণের মাধ্যমে এপিমেনরিয়া নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব।

 

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *