Best Homeo Doctor

একলামশিয়া কি,কারন,লক্ষন,প্রতিকার

একলামশিয়া (Eclampsia) একটি গুরুতর গর্ভকালীন রোগ যা প্রেগন্যান্সির সময় প্রাক-একলামশিয়া (Pre-eclampsia) এর পর্যায়ে না গিয়ে সরাসরি সিজারের মাধ্যমে বা প্রসবের সময় ঘটে। এটি মায়ের জন্য অত্যন্ত বিপজ্জনক হতে পারে এবং শিশুরও বড় ধরনের ঝুঁকি থাকে। একলামশিয়া সাধারণত গর্ভাবস্থায় উচ্চ রক্তচাপ এবং প্রোটিনিউরিয়া (যৌনাঙ্গের মাধ্যমে প্রোটিনের অস্বাভাবিক স্রাব) হওয়ার কারণে সৃষ্টি হয়, তবে একলামশিয়া তৈরির ক্ষেত্রে আরো কিছু উপাদান দায়ী থাকে।

একলামশিয়ার কারণ:

  1. উচ্চ রক্তচাপ (Hypertension):
    • গর্ভাবস্থায় রক্তচাপের উচ্চতা বেড়ে গেলে, একলামশিয়া হতে পারে। প্রেগন্যান্সির পূর্ববর্তী সময়ে রক্তচাপের সমস্যা থাকলে বা প্রাক-একলামশিয়া থাকার আশঙ্কা থাকে, সেখানে একলামশিয়ার ঝুঁকি বেশি থাকে।
  2. প্রোটিনিউরিয়া:
    • মূত্রে অস্বাভাবিকভাবে প্রোটিনের উপস্থিতি একলামশিয়ার অন্যতম একটি কারণ হতে পারে। এটি সাধারণত উচ্চ রক্তচাপ এবং রক্তনালীতে চাপ বেড়ে যাওয়ার কারণে হতে পারে।
  3. প্রেগন্যান্সি সম্পর্কিত অস্বাভাবিকতা:
    • গর্ভাবস্থায় যখন শিরা এবং রক্তনালীতে অস্বাভাবিক পরিবর্তন ঘটে, তখন মায়ের দেহে রক্ত সঞ্চালন কম হতে পারে, যা একলামশিয়া সৃষ্টি করতে পারে।
  4. জীববৈজ্ঞানিক সমস্যা:
    • কিছু মহিলার মধ্যে জেনেটিক বা জীববৈজ্ঞানিক কারণে একলামশিয়া হওয়ার ঝুঁকি বেশি থাকে।
  5. বয়স অন্যান্য ঝুঁকি:
    • অল্প বয়সী মহিলাদের (১৮ বছরের নিচে) বা বয়স ৩৫ বছরের বেশি যারা গর্ভধারণ করছেন, তাদের একলামশিয়া হওয়ার ঝুঁকি থাকে। এছাড়া মায়ের অতিরিক্ত ওজন, ডায়াবেটিস বা কিডনি সমস্যা থাকলে ঝুঁকি আরও বেড়ে যায়।

একলামশিয়ার লক্ষণ:

  1. উচ্চ রক্তচাপ:
    • রক্তচাপ ১৪০/৯০ মিমি এইচজি এর বেশি হলে একলামশিয়ার সংকেত হতে পারে।
  2. এডিমা (Edema):
    • হাত, পা এবং মুখে অস্বাভাবিক স্ফীতি বা ফোলা ভাব হতে পারে।
  3. প্রোটিনিউরিয়া:
    • মূত্রে প্রোটিনের উপস্থিতি, যা সাধারণত প্রেগন্যান্সির শেষ দিকে দেখা যায়।
  4. মাথাব্যথা:
    • তীব্র মাথাব্যথা হতে পারে, বিশেষত মাথার পেছনে।
  5. দৃষ্টি সমস্যা:
    • দৃষ্টির ঝাপসা হওয়া বা অন্ধকার দেখা বা চোখে ঝাপসা ভাব আসা।
  6. পেটের ওপর ব্যথা:
    • বিশেষত ডান দিকের পেটের উপরের অংশে তীব্র ব্যথা অনুভূত হতে পারে, যা লিভারের সমস্যা নির্দেশ করতে পারে।
  7. উলটানো বা ত্বকে অস্বাভাবিক ছাপ:
    • মায়েরা অনেক সময় অসুস্থ হয়ে পড়ে, সর্দি বা শ্বাসকষ্ট অনুভব করতে পারে, এছাড়া ত্বকে ফোলাভাব বা রক্তবর্ণ ছাপ দেখা যেতে পারে।
  8. সিজারের মতো খিঁচুনির ঘটনা:
    • একলামশিয়া প্রায়শই খিঁচুনির (Seizure) মাধ্যমে প্রকাশিত হয়, এটি একটি অতি গুরুতর উপসর্গ যা মৃত্যুর কারণ হতে পারে।

একলামশিয়ার প্রতিকার:

  1. রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ:
    • রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখতে প্রয়োজনীয় চিকিৎসা নেয়া উচিত। উচ্চ রক্তচাপের জন্য অ্যান্টিহাইপারটেনসিভ ওষুধ (যেমন, মেথাইলডোপা, লেবেটালল, হাইড্রালাজিন) ব্যবহার করা যেতে পারে।
  2. মূত্র পরীক্ষার মাধ্যমে পর্যবেক্ষণ:
    • মূত্র পরীক্ষার মাধ্যমে প্রোটিন নিরীক্ষণ করতে হবে, এবং এটি যদি বেশি থাকে তবে চিকিত্সক প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন।
  3. শরীরের অতিরিক্ত তরল সরবরাহ (ফোলাভাব কমানো):
    • শরীরের অতিরিক্ত তরল সরবরাহ কমানোর জন্য নিয়মিত পানি এবং স্যালাইন সমাধান নিয়ন্ত্রণ করা উচিত।
  4. ভাল পুষ্টি এবং বিশ্রাম:
    • গর্ভবতী মহিলাকে সঠিক পুষ্টি গ্রহণ এবং পর্যাপ্ত বিশ্রাম নিশ্চিত করতে হবে, যাতে শারীরিক চাপ কম থাকে এবং মায়ের শরীর সুস্থ থাকে।
  5. এন্টিসিজার ওষুধ:
    • একলামশিয়ার গুরুতর অবস্থায় সিজারের হাত থেকে রক্ষা করতে ম্যাগনেসিয়াম সালফেট দেয়া হয়। এটি সিজার প্রতিরোধে সহায়ক হতে পারে।
  6. ডেলিভারি (প্রসব):
    • একলামশিয়া যদি খুব গুরুতর হয়ে যায় এবং চিকিৎসার মাধ্যমে নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব না হয়, তবে দ্রুত প্রসবের ব্যবস্থা করতে হয়। চিকিৎসক সন্তানের স্বাস্থ্য সুরক্ষিত রাখার জন্য সময়মতো প্রসবের সিদ্ধান্ত নেন।
  7. এন্টিহাইপারটেনসিভ ড্রাগস:
    • কখনও কখনও একলামশিয়া ও প্রাক-একলামশিয়ার চিকিৎসায় ড্রাগ ব্যবহৃত হয়, যেমন লেবেটালল, নিফেদিপাইন, মেথাইলডোপা প্রভৃতি।
  8. নিরাপদ ডেলিভারি:
    • একলামশিয়া থেকে রক্ষা পেতে মায়ের স্বাস্থ্য পুনরুদ্ধার এবং সন্তানের সুরক্ষার জন্য হাসপাতালের অবস্থা বা চিকিত্সকের সহযোগিতা নিয়ে প্রসবের পদ্ধতি নির্ধারণ করা উচিত।

উপসংহার:

একলামশিয়া একটি মারাত্মক গর্ভকালীন অবস্থা যা মা ও শিশুর জন্য বিপজ্জনক হতে পারে। একলামশিয়ার আগের অবস্থাটি হলো প্রাক-একলামশিয়া, যা সময়মতো সঠিক চিকিৎসার মাধ্যমে নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব। গর্ভাবস্থায় উচ্চ রক্তচাপ, প্রোটিনিউরিয়া এবং অন্যান্য উপসর্গ দেখা দিলে দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত। সঠিক চিকিৎসা এবং যত্নে একলামশিয়া নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব এবং মা ও শিশুর স্বাস্থ্য সুরক্ষিত রাখা যেতে পারে।

 

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *