Best Homeo Doctor

ইনফ্লুয়েঞ্জা কি,কারন,লক্ষন,প্রতিকার

ইনফ্লুয়েঞ্জা (Influenza) একটি ভাইরাল সংক্রমণ যা শ্বাসযন্ত্রের (ফুসফুস, নাক, গলা) উপর আক্রমণ করে। এটি সাধারণত সর্দি-কাশি, জ্বর, শরীরব্যথা এবং অন্যান্য শ্বাসকষ্টের সমস্যা সৃষ্টি করে। ইনফ্লুয়েঞ্জা সাধারণত সিজনাল, বিশেষত শীতকালে বেশি ছড়ায়, তবে ভাইরাসের প্রকারভেদে এটি বছরের যে কোনো সময় হতে পারে।

ইনফ্লুয়েঞ্জার কারণ:

ইনফ্লুয়েঞ্জা ভাইরাস সাধারণত (A), বি (B), সি (C) তিনটি প্রকারে বিভক্ত। এ ভাইরাসটি সবচেয়ে বেশি ছড়ায় এবং প্রতিটি প্রকারের বিভিন্ন সাবটাইপ থাকতে পারে।

  1. ভাইরাসের সংক্রমণ: ইনফ্লুয়েঞ্জা ভাইরাসের প্রধান সংক্রমণ হলো বাতাসের মাধ্যমে। আক্রান্ত ব্যক্তি কাশি বা হাঁচি দিলে ভাইরাসটি বাতাসে ছড়িয়ে পড়ে এবং অন্য ব্যক্তির শ্বাসপ্রশ্বাসের মাধ্যমে শরীরে প্রবেশ করে।
  2. অপরিষ্কার পরিবেশ: যেখানে স্যানিটেশন কম, সেখানে ইনফ্লুয়েঞ্জার সংক্রমণের ঝুঁকি বেশি। ভাইরাসটি টাচ বা নোঙরা হাতের মাধ্যমে ব্যক্তিগত স্পর্শে ছড়াতে পারে।
  3. কম শক্তিশালী রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা: শিশু, বৃদ্ধ, গর্ভবতী মহিলা বা যাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা দুর্বল, তারা সহজেই ইনফ্লুয়েঞ্জায় আক্রান্ত হয়।
  4. ভাইরাসের মিউটেশন: ভাইরাস নিয়মিতভাবে মিউটেট করে, যার ফলে প্রতি বছর নতুন স্ট্রেইন বা ধরন তৈরি হয়। এই কারণে টিকা (ভ্যাকসিন) বারবার আপডেট করা হয়।

ইনফ্লুয়েঞ্জার লক্ষণ:

ইনফ্লুয়েঞ্জার লক্ষণ সাধারণত হঠাৎ শুরু হয় এবং দ্রুতই বাড়ে। এর কিছু সাধারণ লক্ষণ হলো:

  1. জ্বর: ইনফ্লুয়েঞ্জার প্রাথমিক লক্ষণ হলো হালকা থেকে তীব্র জ্বর (১০১°F বা তার বেশি)।
  2. শরীরব্যথা: শরীরে ব্যথা বা অস্বস্তি (বিশেষ করে পিঠ, পা, মাথা ও হাড়ে)।
  3. কাশি গলা ব্যথা: শুকনো বা সর্দিযুক্ত কাশি এবং গলায় ব্যথা।
  4. শ্বাসকষ্ট: শ্বাস নিতে কষ্ট বা গাঢ় শ্বাস।
  5. ঠাণ্ডা লাগা অস্বস্তি: ঠাণ্ডা বা শীতল অনুভূতি এবং অবিরাম চিমটি (ঝাঁঝ) অনুভূতি।
  6. শরীরের ক্লান্তি: শক্তি বা শক্তির অভাব, অবিরাম ক্লান্তি।
  7. হালকা মাথা ব্যথা: মৃদু থেকে তীব্র মাথাব্যথা।
  8. নির্বীজিত ক্ষুধা: অল্প খাওয়া বা ক্ষুধা কমে যাওয়া।
  9. রক্ত সর্দি (কিছু ক্ষেত্রে): অল্প সর্দি অথবা কাশির সঙ্গে রক্ত।

ইনফ্লুয়েঞ্জার প্রতিকার:

ইনফ্লুয়েঞ্জার জন্য দ্রুত চিকিৎসা এবং প্রতিকার নেওয়া জরুরি। তবে, কিছু সাধারণ প্রতিকার ও চিকিৎসা পদ্ধতি হলো:

  1. বিশ্রাম এবং প্রচুর পানি পান: বিশ্রাম নেয়া এবং শরীরের অভ্যন্তরীণ সিস্টেম পুনরুদ্ধার করতে প্রচুর পানি পান করা।
  2. অ্যান্টিভাইরাল ঔষধ: ইনফ্লুয়েঞ্জার জন্য অ্যান্টিভাইরাল মেডিসিন (যেমন Tamiflu) দেয়া হয়, তবে এটি সাধারণত তখনই দেওয়া হয় যখন ইনফ্লুয়েঞ্জার লক্ষণ প্রথম ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে দেখা দেয়।
  3. জ্বর নিবারক ঔষধ: জ্বর এবং শরীরব্যথা উপশমে প্যারাসিটামল বা আইবুপ্রোফেনের মতো ওষুধ ব্যবহার করা যেতে পারে।
  4. হালকা খাবার: সহজ, পুষ্টিকর এবং সহজপাচ্য খাবার খাওয়া, যেমন স্যুপ, ফল, সবজি।
  5. ভাইরাস প্রতিরোধী টিকা (ভ্যাকসিন): ইনফ্লুয়েঞ্জা প্রতিরোধে ফ্লু ভ্যাকসিন এক গুরুত্বপূর্ণ উপায়। প্রতিটি শীতকালীন সিজনে এটি নেওয়া উচিত, বিশেষ করে শিশু, বৃদ্ধ ও গর্ভবতী মহিলাদের জন্য।
  6. স্যানিটেশন এবং স্বাস্থ্যবিধি: হাত ভালোভাবে ধোয়া, মাস্ক পরা, এবং আক্রান্ত ব্যক্তির কাছ থেকে দূরে থাকা ইনফ্লুয়েঞ্জা প্রতিরোধে সহায়তা করে।
  7. নিঃশ্বাসের শুশ্রূষা: গরম পানির ভাপ বা বাষ্প শ্বাস নিতে সমস্যা কমায়।
  8. অ্যান্টিবায়োটিকের ব্যবহার: ইনফ্লুয়েঞ্জা সাধারণত ভাইরাল সংক্রমণ হওয়ায় অ্যান্টিবায়োটিক সেবন কাজে আসে না, তবে যদি ব্যাকটেরিয়াল সংক্রমণ (যেমন নিউমোনিয়া) হয়, তবে অ্যান্টিবায়োটিক দেওয়া হতে পারে।

প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা:

  1. ইনফ্লুয়েঞ্জা টিকা প্রতি বছর নেওয়া উচিত, বিশেষ করে শীতকালে।
  2. সোশ্যাল দূরত্ব বজায় রাখা: ইনফ্লুয়েঞ্জার রোগী থেকে দূরে থাকা এবং আক্রান্ত ব্যক্তি যেন অন্যদের কাছ থেকে আলাদা থাকে, এটি জরুরি।
  3. নিয়মিত হাত ধোয়া: ইনফ্লুয়েঞ্জা সংক্রমণ প্রতিরোধে হাত ধোয়া খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
  4. স্বাস্থ্যকর জীবনযাপন: ভালো খাদ্যাভ্যাস, পর্যাপ্ত ঘুম এবং নিয়মিত শারীরিক ব্যায়াম রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করতে সাহায্য করে।

ইনফ্লুয়েঞ্জা সাধারণত হালকা এবং মধ্যম ধরণের রোগ হলেও কিছু ক্ষেত্রে (বিশেষ করে দুর্বল রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা সম্পন্ন ব্যক্তির ক্ষেত্রে) এটি মারাত্মক হতে পারে। তাই যথাসময়ে চিকিৎসা ও প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা নেওয়া গুরুত্বপূর্ণ।

Top of Form

Bottom of Form

 

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *