Best Homeo Doctor

ইউরিক অ্যাসিড কি,কারন,লক্ষন,প্রতিকার

ইউরিক অ্যাসিড (Uric Acid) কী?

ইউরিক অ্যাসিড হলো একটি বায়োপ্রোডাক্ট যা আমাদের শরীরের পিউরিন (purine) নামক যৌগের বিপাক প্রক্রিয়ায় তৈরি হয়। পিউরিন প্রধানত খাদ্যদ্রব্য যেমন মাংস, মাছ, ও কিছু শস্যে পাওয়া যায়। ইউরিক অ্যাসিড রক্তে পরিবাহিত হয়ে এবং পরবর্তীতে কিডনির মাধ্যমে মুত্রের মাধ্যমে শরীর থেকে বের হয়ে যায়। কিন্তু যখন ইউরিক অ্যাসিডের পরিমাণ শরীরে বৃদ্ধি পায় এবং এটি কিডনির মাধ্যমে বের হয়ে না যায়, তখন এটি বিভিন্ন সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে।

কারণ:

ইউরিক অ্যাসিডের মাত্রা বৃদ্ধি পাওয়ার কিছু প্রধান কারণ:

  1. অতিরিক্ত পিউরিনের গ্রহণ: বিশেষভাবে মাংস, মাছ, এবং বিয়ার ও অন্যান্য অ্যালকোহলযুক্ত পানীয় বেশি খেলে শরীরে পিউরিনের পরিমাণ বৃদ্ধি পায়, যা ইউরিক অ্যাসিড তৈরি করে।
  2. কিডনি সমস্যা: কিডনি যদি যথাযথভাবে ইউরিক অ্যাসিড ফিল্টার বা নিষ্কাশন না করতে পারে, তবে শরীরে এর মাত্রা বৃদ্ধি পায়।
  3. বিশেষ কিছু রোগ:
    • ডায়াবেটিস: উচ্চ রক্তের শর্করার কারণে ইউরিক অ্যাসিডের পরিমাণ বৃদ্ধি পায়।
    • হাইপারটেনশন (উচ্চ রক্তচাপ): উচ্চ রক্তচাপের কারণে শরীরে ইউরিক অ্যাসিড জমা হতে পারে।
    • ওবেসিটি: স্থূলতার কারণে ইউরিক অ্যাসিডের পরিমাণ বেড়ে যেতে পারে।
  4. অতিরিক্ত অ্যালকোহল পান: বিশেষত বিয়ার ও হার্ড লিকারের কারণে ইউরিক অ্যাসিডের মাত্রা বাড়তে পারে।
  5. ওষুধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া: কিছু ওষুধ যেমন ডায়ুরেটিকস (যেগুলি মূত্রবর্ধক), স্যালিসিলেটস, বা কিছু ইমিউনোসপ্রেসিভ ড্রাগের কারণে ইউরিক অ্যাসিড বাড়তে পারে।
  6. জেনেটিক ফ্যাক্টর: কিছু লোকের মধ্যে জেনেটিক কারণে ইউরিক অ্যাসিড বেশি হতে পারে, যা তাদের পরিবারের অন্যদের মধ্যেও থাকতে পারে।

লক্ষণ:

ইউরিক অ্যাসিডের পরিমাণ বেশি হলে, এটি গাউট বা কিডনির পাথর সৃষ্টি করতে পারে, যার কারণে কিছু লক্ষণ দেখা দিতে পারে:

  1. গাউট: গাউট একটি ব্যথাযুক্ত অবস্থা, যেখানে শরীরের জয়েন্টে ইউরিক অ্যাসিডের স্ফীত স্ফীত স্ফেরাইট (ক্রিস্টাল) জমে যায়। এর কারণে বিশেষ করে পায়ের আঙুলের জয়েন্টে তীব্র ব্যথা হতে পারে।
    • তীব্র জয়েন্ট ব্যথা: গাউটের কারণে আকস্মিক এবং তীব্র ব্যথা হতে পারে, বিশেষত পায়ের আঙুলে।
    • জয়েন্টে লালচে ভাব: আক্রান্ত জয়েন্টে লালচে বা ফোলা ভাব দেখা যায়।
    • জয়েন্টে তাপ: আক্রান্ত স্থানে তাপমাত্রা বৃদ্ধি হতে পারে।
  2. কিডনির পাথর: ইউরিক অ্যাসিডের অতিরিক্ত মাত্রা কিডনিতে পাথর তৈরি করতে পারে, যার কারণে:
    • কিডনির ব্যথা: পাথরের কারণে পিঠে তীব্র ব্যথা হতে পারে।
    • মুত্র ত্যাগের সময় ব্যথা: মুত্র করার সময় ব্যথা বা জ্বালাপোড়া অনুভূত হতে পারে।
    • মুত্রে রক্ত দেখা: কিডনি পাথরের কারণে মুত্রের মধ্যে রক্ত দেখা যেতে পারে।
  3. থাকতে পারে কোনো উপসর্গ না: কিছু ক্ষেত্রে ইউরিক অ্যাসিডের পরিমাণ বাড়লেও কোনো লক্ষণ প্রকাশ পায় না। তবে এই অবস্থায় শরীরের ভেতরে ক্ষতি হতে পারে, যা পরবর্তীতে গাউট বা কিডনি পাথরের কারণ হয়ে দাঁড়ায়।

প্রতিকার:

ইউরিক অ্যাসিড নিয়ন্ত্রণের জন্য বিভিন্ন ব্যবস্থা নেওয়া যেতে পারে:

  1. খাদ্যাভ্যাস পরিবর্তন:
    • পিউরিন কমাতে হবে: পিউরিন সমৃদ্ধ খাবার যেমন মাংস, মাছ, মিষ্টি পানীয়, অ্যালকোহল ইত্যাদি পরিহার করা উচিত।
    • ফল এবং সবজি বেশি খাওয়া: ফল এবং সবজি খেলে শরীরে ইউরিক অ্যাসিডের পরিমাণ কমতে সহায়তা করতে পারে।
    • পর্যাপ্ত পানি পান করা: দিনে পর্যাপ্ত পানি পান করলে ইউরিক অ্যাসিডের পরিমাণ কমে যেতে পারে, কারণ এটি শরীর থেকে ইউরিক অ্যাসিড বের করে দেয়।
  2. ওষুধ:
    • অ্যান্টিইনফ্লেমেটরি ওষুধ (যেমন আইবুপ্রোফেন) গাউটের ব্যথা কমাতে ব্যবহার করা হতে পারে।
    • ইউরিক অ্যাসিড কমানোর ওষুধ: যেমন অ্যালোপিউরিনল বা ফেবুকোস্ট্যাট, যা ইউরিক অ্যাসিডের পরিমাণ কমাতে সাহায্য করে।
    • ডায়ুরেটিকস: মূত্রবর্ধক ওষুধের মাধ্যমে শরীর থেকে অতিরিক্ত ইউরিক অ্যাসিড বের করা হতে পারে।
  3. ওজন কমানো: স্থূলতা ইউরিক অ্যাসিডের মাত্রা বৃদ্ধি করতে পারে, তাই ওজন কমানোর জন্য নিয়মিত ব্যায়াম ও সঠিক খাদ্যাভ্যাস অনুসরণ করা জরুরি।
  4. অ্যালকোহল পরিহার: অ্যালকোহল বিশেষত বিয়ার ইউরিক অ্যাসিডের মাত্রা বৃদ্ধি করতে পারে, তাই এটি সীমিত পরিমাণে খাওয়া উচিত বা একেবারে পরিহার করা উচিত।
  5. কিডনি পরীক্ষা: ইউরিক অ্যাসিডের মাত্রা বেশি হলে, কিডনির সমস্যাগুলি যেমন কিডনি পাথর তৈরি হওয়া বা কিডনি ক্ষতির ঝুঁকি বৃদ্ধি পেতে পারে, তাই নিয়মিত কিডনি পরীক্ষা করা উচিত।

ইউরিক অ্যাসিডের মাত্রা বেশি থাকলে এটি গুরুতর সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে, তাই চিকিৎসকের পরামর্শ নেয়া এবং প্রয়োজনীয় চিকিৎসা করা অত্যন্ত জরুরি।

 

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *