Best Homeo Doctor

আমাশয় কি,কারন,লক্ষন,প্রতিকার

আমাশয় (Diarrhea) একটি সাধারণ শারীরিক সমস্যা, যার মধ্যে সাধারণত বারবার পাতলা বা তরল মলত্যাগ হওয়া ঘটে। এটি শরীরের পুষ্টির অভাব, জলাশয়, এবং শরীরের অন্যান্য সমস্যা তৈরি করতে পারে। সাধারণত আমাশয় খুব বেশি সময় ধরে থাকে না, তবে যদি এটি দীর্ঘস্থায়ী হয় বা গুরুতর লক্ষণ দেখা দেয়, তবে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত।

কারণ:

আমাশয়ের অনেক কারণ থাকতে পারে, তার মধ্যে কিছু প্রধান কারণ হলো:

  1. ভাইরাস সংক্রমণ:
    • নরোভাইরাস বা রোটাভাইরাস (বিশেষত শিশুদের মধ্যে) প্রায়ই আমাশয়ের কারণ হয়ে থাকে।
    • গ্যাস্ট্রোএন্টেরাইটিস: ভাইরাস দ্বারা সৃষ্ট অন্ত্রের প্রদাহের কারণে ডায়রিয়া হতে পারে।
  2. ব্যাকটেরিয়াল সংক্রমণ:
    • . কোলি (E. coli), শিগেলা (Shigella), স্যালমোনেলা (Salmonella), ক্যাম্পাইলোব্যাকটার (Campylobacter) ইত্যাদি ব্যাকটেরিয়া দ্বারা সৃষ্ট সংক্রমণও আমাশয়ের কারণ হতে পারে।
  3. ফুড পয়জনিং:
    • খাবারে বিষাক্ত ব্যাকটেরিয়া, ভাইরাস বা টক্সিনের কারণে আমাশয় হতে পারে, যেমন স্ট্যাফাইলোকোক্কাস (Staphylococcus) বা ক্লস্ট্রিডিয়াম (Clostridium)।
  4. অন্ত্রের রোগ:
    • ক্রোন‘s ডিজিজ বা ইরিটেবল বাওয়েল সিনড্রোম (IBS) এর মতো দীর্ঘমেয়াদী অন্ত্রের সমস্যাও আমাশয়ের কারণ হতে পারে।
  5. অ্যালার্জি বা খাদ্য অসহনশীলতা:
    • ল্যাকটোজ ইন্টলারেন্স বা কিছু বিশেষ খাবারের প্রতি অ্যালার্জি (যেমন, গম বা দুধ) আমাশয়ের সৃষ্টি করতে পারে।
  6. অ্যান্টিবায়োটিকের প্রভাব:
    • অ্যান্টিবায়োটিক গ্রহণের পর অন্ত্রের স্বাভাবিক ব্যাকটেরিয়া সমতা ক্ষতিগ্রস্ত হলে, এটি ডায়রিয়া সৃষ্টি করতে পারে (এটি “অ্যান্টিবায়োটিক-সংশ্লিষ্ট ডায়রিয়া” বলে পরিচিত)।
  7. মানসিক চাপ বা উদ্বেগ:
    • কিছু মানুষের মধ্যে মানসিক চাপ বা উদ্বেগের কারণে হজমপ্রক্রিয়া বিপর্যস্ত হয়ে ডায়রিয়া হতে পারে।
  8. হরমোনাল পরিবর্তন:
    • মাসিক চক্রের সময় বা হরমোনের পরিবর্তনের কারণে কিছু মহিলাদের মধ্যে আমাশয় হতে পারে।

লক্ষণ:

আমাশয়ের প্রধান লক্ষণগুলো হলো:

  1. পাতলা বা তরল মল:
    • মলের ধারাবাহিকতা কমে যায় এবং এটি পাতলা বা তরল হয়ে যায়।
  2. বারবার মলত্যাগ:
    • দিনে তিনবার বা তার বেশি সময় মলত্যাগ হওয়া।
  3. পেটের যন্ত্রণা বা অস্বস্তি:
    • পেটে ফোলাভাব, গ্যাস, বা ব্যথা অনুভূত হতে পারে।
  4. বমি বা বমি বমি ভাব:
    • কিছু ক্ষেত্রে, আমাশয়ের সাথে বমি বা বমি বমি ভাব দেখা দিতে পারে।
  5. জ্বর:
    • সংক্রমণজনিত কারণে জ্বর হতে পারে।
  6. শক্ত হয়ে যাওয়া বা পানির অভাব:
    • যদি ডায়রিয়া দীর্ঘস্থায়ী হয়, তাহলে শরীরে পানির অভাব বা ডিহাইড্রেশন হতে পারে, যার ফলে শক্ত হয়ে যাওয়া, শুকনো ত্বক এবং মাথা ঘোরা ইত্যাদি লক্ষণ দেখা দিতে পারে।
  7. রক্তমিশ্রিত মল:
    • কিছু ক্ষেত্রে, ব্যাকটেরিয়াল সংক্রমণের কারণে মলে রক্তও থাকতে পারে।

প্রতিকার:

আমাশয়ের চিকিৎসা সাধারণত তার কারণের উপর নির্ভর করে। তবে কিছু সাধারণ প্রতিকার হলো:

  1. পানি এবং তরল খাবার:
    • ডিহাইড্রেশন এড়াতে পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি, লবণপানি, অথবা ইলেকট্রোলাইট সমৃদ্ধ পানীয় (যেমন ORS) গ্রহণ করা উচিত। যদি পেটের ব্যথা থাকে, তবে স্যুপ বা হালকা তরল খাবার খাওয়া যেতে পারে।
  2. ব্লান্ড ডায়েট (Bland Diet):
    • আমাশয়ের সময় খাবারের জন্য সহজ, হালকা খাবার (যেমন, রুটি, ভাত, সেদ্ধ আলু, ইত্যাদি) খাওয়া যেতে পারে, যা পেটে সহজে হজম হয়।
  3. অ্যান্টিডায়রিয়া ওষুধ:
    • যেমন লোপেরামাইড (Imodium) বা ডায়োসামিন (Diocet) যেগুলো ডায়রিয়া কমাতে সহায়ক হতে পারে, তবে এই ওষুধগুলো ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী ব্যবহার করা উচিত। বিশেষত, যদি ডায়রিয়া ব্যাকটেরিয়াল সংক্রমণজনিত হয় তবে এগুলো ব্যবহার না করাই ভালো।
  4. স্ট্রেস কমানো:
    • মানসিক চাপ বা উদ্বেগের কারণে আমাশয় হলে, মানসিক শান্তি বজায় রাখা, ধ্যান বা যোগব্যায়াম করা সহ অন্যান্য শিথিলতামূলক কৌশল অবলম্বন করা যেতে পারে।
  5. অ্যান্টিবায়োটিক (যদি প্রয়োজন হয়):
    • যদি ডায়রিয়া ব্যাকটেরিয়াল সংক্রমণের কারণে হয়, তবে চিকিৎসক অ্যান্টিবায়োটিক প্র prescribe করতে পারেন।
  6. বিশেষ সতর্কতা:
    • আমাশয় যদি তিন দিনের বেশি সময় ধরে চলে, অথবা রক্তমিশ্রিত মল, তীব্র পেটব্যথা, দীর্ঘস্থায়ী জ্বর, অথবা ডিহাইড্রেশন দেখা দেয়, তবে দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত।

প্রতিরোধ:

  1. হাত ধোয়া:
    • খাবার খাওয়ার আগে এবং বাথরুম ব্যবহার করার পর হাত ভালোভাবে ধুয়ে ফেলুন।
  2. খাবারের সতর্কতা:
    • ভাজা বা সেদ্ধ করা খাবার খাওয়া, এবং অপরিষ্কার বা অতিরিক্ত পচা খাবার খাওয়া এড়িয়ে চলুন।
  3. টিকা:
    • কিছু ধরনের ভাইরাসজনিত ডায়রিয়া (যেমন রোটাভাইরাস) থেকে বাচ্চাদের টিকা দেওয়া যেতে পারে।

আমাশয় একটি সাধারণ সমস্যা হলেও, এটি যদি গুরুতর আকার ধারণ করে বা দীর্ঘস্থায়ী হয়ে যায়, তবে তা শরীরের অন্যান্য জটিলতার সৃষ্টি করতে পারে। সুতরাং, সঠিক সময়ে চিকিৎসককে পরামর্শ নেওয়া গুরুত্বপূর্ণ।

 

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *