Best Homeo Doctor

আমবাত কি,কারন,লক্ষন,প্রতিকার

আমবাত (Mumps) হলো একটি ভাইরাসজনিত রোগ, যা সাধারণত প্যারামিক্সোভাইরাস (Paramyxovirus) দ্বারা সৃষ্ট। এটি প্রধানত বাচ্চাদের মধ্যে দেখা যায়, তবে প্রাপ্তবয়স্কদেরও এই রোগ হতে পারে। আমবাত মূলত গলার নিপীড়নকারী গ্ল্যান্ড (পারোটিড গ্ল্যান্ড) এর প্রদাহ সৃষ্টি করে, যার ফলে গলার আশপাশে ফুলে ওঠা দেখা যায়।

কারণ:

আমবাতের প্রধান কারণ হলো মাম্পস ভাইরাস (Mumps virus)। এটি এক ব্যক্তির শরীর থেকে অন্য ব্যক্তির শরীরে ছড়ায় মূলত:

  1. রক্ত, সর্দি বা কাশির মাধ্যমে: রোগী যখন কাশি বা হাঁচি দেয়, তখন ভাইরাস বাতাসে ছড়ায় এবং অন্যদের মধ্যে সংক্রমণ ঘটায়।
  2. মুখের মাধ্যমে: মুখের লালা (saliva) মাধ্যমে সংক্রমণ হতে পারে, যেমন একে অপরের কাপ বা বাটিতে খাবার খাওয়া, চুম্বন করা ইত্যাদি।
  3. পর্যাপ্ত স্যানিটেশন না থাকা: অপরিষ্কার হাত বা খাবারের মাধ্যমে ভাইরাস ছড়াতে পারে।

লক্ষণ:

আমবাতের লক্ষণ সাধারণত ১২-২৫ দিনের মধ্যে দেখা দেয়। প্রধান লক্ষণগুলো হলো:

  1. গলার ফোলা: বিশেষত গলার নিচের অংশে (যেখানে পারোটিড গ্ল্যান্ড থাকে) ফুলে যাওয়া এবং ব্যথা।
  2. গলা ব্যথা: গলার ভিতরে বা বাহিরে ব্যথা অনুভূতি।
  3. জ্বর: মাঝারি থেকে উচ্চ মাত্রার জ্বর (১০০-১০৩°F) হতে পারে।
  4. মাথাব্যথা: সাধারণত মাথাব্যথা এবং অবসাদ অনুভূতি।
  5. রুচিহীনতা: খাওয়ার আগ্রহ কমে যেতে পারে।
  6. থকথকে বা শুকনো মুখ: মুখের মধ্যে বা লালার সৃষ্টি কম হতে পারে।
  7. দিল্লির পাশের গ্ল্যান্ডের ফোলাভাব: কখনও কখনও অন্যান্য গ্ল্যান্ড যেমন টেস্টিস, ওভারি, মস্তিষ্ক (এনসেফালাইটিস) বা রেটিনা (অধিকাংশ ক্ষেত্রে) প্রদাহিত হতে পারে।
  8. শরীরের দুর্বলতা: ক্লান্তি বা দুর্বলতা অনুভূত হতে পারে।

প্রতিকার:

আমবাতের কোনো নির্দিষ্ট চিকিৎসা নেই, তবে কিছু পদক্ষেপ নেওয়া যেতে পারে যা রোগীর আরাম প্রদান করতে সহায়ক:

  1. বিশ্রাম: পর্যাপ্ত বিশ্রাম নেওয়া উচিত যাতে শরীর ভাইরাসের বিরুদ্ধে লড়াই করতে সক্ষম হয়।
  2. পানি এবং তরল খাবার: পর্যাপ্ত পরিমাণ পানি এবং তরল খাবার গ্রহণ করা উচিত যাতে শরীর হাইড্রেটেড থাকে এবং রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি পায়।
  3. জ্বর কমানোর জন্য ওষুধ: প্যারাসিটামল বা আইবুপ্রোফেনের মতো জ্বর কমানোর ওষুধ ব্যবহার করা যেতে পারে, তবে ডাক্তারের পরামর্শ নিয়ে।
  4. গলার ব্যথা কমানোর জন্য গরম বা ঠান্ডা সেঁক: গলার ফোলাভাব বা ব্যথা কমানোর জন্য গরম বা ঠান্ডা সেঁক দেওয়া যেতে পারে।
  5. ভাইরাসের বিরুদ্ধে কোনো অ্যান্টিবায়োটিক নেই: যেহেতু এটি ভাইরাসজনিত, তাই অ্যান্টিবায়োটিক সাধারণত কার্যকরী নয়।

প্রতিরোধ:

  1. টিকা (MMR): মাম্পস, মিজলস (measles) এবং রুবেলা (rubella) এই তিনটি রোগের বিরুদ্ধে MMR ভ্যাকসিন পাওয়া যায়। এটি বাচ্চাদের প্রথম টিকা হিসেবে দেওয়া হয় এবং এটি রোগটি প্রতিরোধে কার্যকরী।
  2. স্যানিটেশন: সঠিকভাবে হাত ধোয়া এবং সর্দি বা কাশি দেওয়ার সময় মুখ ঢেকে রাখা উচিত।
  3. রোগী থেকে দূরে থাকা: আমবাতের লক্ষণ থাকলে আক্রান্ত ব্যক্তির কাছ থেকে দূরে থাকা উচিত।
  4. গণহারে ভ্যাকসিনেশন: বাচ্চাদের যথাসময়ে ভ্যাকসিন নেওয়ার মাধ্যমে এই রোগটি সহজে প্রতিরোধ করা যায়।

গুরুতর ক্ষেত্রে:

যদিও বেশিরভাগ ক্ষেত্রে আমবাত হালকা রোগ হিসেবে শেষ হয়, তবে কিছু গুরুতর জটিলতা দেখা দিতে পারে, যেমন:

  1. মস্তিষ্কের প্রদাহ (এনসেফালাইটিস): যা মস্তিষ্কের প্রদাহ সৃষ্টি করে।
  2. টেস্টিকুলার প্রদাহ (অরকাইটিস): পুরুষদের মধ্যে টেস্টিকুলের প্রদাহ হতে পারে, যা বন্ধ্যাত্বের কারণ হতে পারে।
  3. ওভারির প্রদাহ: মহিলাদের মধ্যে অর্বরি প্রদাহ সৃষ্টি হতে পারে।
  4. শরীরের অন্যান্য অংশে সংক্রমণ: নীরবভাবে চোখ, শ্রবণ বা মস্তিষ্কের ক্ষতি হতে পারে।

এগুলো ছাড়া, সুস্থ মানুষের জন্য আমবাত সাধারণত গুরুতর সমস্যা সৃষ্টি করে না। তবে যাদের আগে থেকেই রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কম, তাদের ক্ষেত্রে এটি ঝুঁকিপূর্ণ হতে পারে, তাই চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া গুরুত্বপূর্ণ।

 

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *