Best Homeo Doctor

আতুর শিশুদের শ্বাসকষ্ট কি,কারন,লক্ষন,প্রতিকার

আতুর শিশু শ্বাসকষ্ট (Infant Respiratory Distress) হলো এমন একটি পরিস্থিতি যেখানে শিশুর শ্বাস-প্রশ্বাস স্বাভাবিকভাবে চলতে পারে না এবং তারা শ্বাস নিতে কঠিন অনুভব করে। এটি একটি গুরুতর সমস্যা হতে পারে, বিশেষ করে যদি শ্বাসকষ্ট আরও বৃদ্ধি পায় এবং চিকিৎসা না করা হয়। আতুর শিশুর শ্বাসকষ্টের বেশ কিছু কারণ, লক্ষণ ও প্রতিকার রয়েছে।

আতুর শিশু শ্বাসকষ্টের কারণ:

  1. প্রারম্ভিক জন্ম (Prematurity):
    • গর্ভাবস্থার শেষ দিকে (৩৭-৪০ সপ্তাহ) শিশুর ফুসফুস পুরোপুরি পরিপক্ব হয়। যদি শিশু প্রাথমিক জন্ম নেয়, তার ফুসফুস পুরোপুরি বিকশিত নাও হতে পারে, যার ফলে শ্বাসকষ্ট দেখা দিতে পারে।
  2. ফুসফুসের অপ্রকৃত সঞ্চালন (Respiratory Distress Syndrome – RDS):
    • ফুসফুসে সर्फ্যাক্ট্যান্টের অভাব থাকলে এটি শিশুদের শ্বাসকষ্টের কারণ হতে পারে। সर्फ্যাক্ট্যান্ট হলো এক ধরনের পদার্থ যা ফুসফুসের ক্ষুদ্র বায়ু কণাকে সঞ্চালিত রাখতে সাহায্য করে। এটি অভাব থাকলে শিশুর শ্বাসকষ্ট হতে পারে।
  3. শ্বাসনালী অবরোধ (Airway Obstruction):
    • শিশুর শ্বাসনালীতে কোন কিছু বাধা সৃষ্টি করলে (যেমন শ্লেষ্মা বা অন্যান্য উপাদান) শ্বাসকষ্ট হতে পারে।
  4. অ্যালার্জি বা ইনফেকশন:
    • ভাইরাসজনিত বা ব্যাকটেরিয়াজনিত শ্বাসযন্ত্রের সংক্রমণ (যেমন নিউমোনিয়া, ব্রঙ্কিওলাইটিস) শিশুদের শ্বাসকষ্ট সৃষ্টি করতে পারে।
  5. হৃদরোগ বা অন্যান্য শারীরিক সমস্যা:
    • কিছু শিশুদের জন্মগত হৃদরোগ বা অন্যান্য শারীরিক সমস্যা থাকতে পারে, যা শ্বাসকষ্টের কারণ হতে পারে।
  6. অতিরিক্ত শ্বাসনালী উত্তেজনা (Hyperventilation):
    • কিছু পরিস্থিতিতে শিশুর দেহ অতিরিক্ত শ্বাসপ্রশ্বাসের চেষ্টা করতে পারে, বিশেষ করে জ্বর বা অন্য কোনো রোগের কারণে, যার ফলে শ্বাসকষ্ট তৈরি হয়।
  7. লবণের ঘাটতি:
    • কিছু শিশুদের দেহে লবণের ঘাটতি (যেমন সোডিয়াম বা পটাশিয়াম) থাকলে তাদের শ্বাসকষ্ট হতে পারে।
  8. পেটে অতিরিক্ত গ্যাস বা খাদ্য শোষণ সমস্যা:
    • পেটে অতিরিক্ত গ্যাস বা খাবার খাওয়ার সময় গ্যাস সৃষ্টি হলে তা শ্বাস-প্রশ্বাসে সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে।

আতুর শিশু শ্বাসকষ্টের লক্ষণ:

  1. শ্বাসের গতি দ্রুত বা কঠিন:
    • শিশু অনেক দ্রুত শ্বাস নিতে পারে বা শ্বাসের জন্য বড় বড় চেষ্টা করতে পারে। শ্বাসে কষ্ট বা কঠিন শ্বাস নিতে দেখা যায়।
  2. শ্বাসের আওয়াজ (Wheezing):
    • শিশুর শ্বাসে বা নিশ্বাসে আওয়াজ হতে পারে, যা সাধারণত ফুসফুসে সংকোচন বা ব্লক হওয়ার কারণে হয়।
  3. শরীরের কিছু অংশে চাপ অনুভব (Nasal Flaring, Grunting):
    • শিশুদের নাকে চাপ অনুভব হতে পারে (নাসাল ফ্লেয়ারিং) বা শ্বাস নিতে গিয়ে গড়গড় করার আওয়াজ হতে পারে (গ্রান্টিং)।
  4. পেট ফোলা বা ব্যথা:
    • পেটে অতিরিক্ত গ্যাস বা সমস্যা থাকলে শিশুর পেট ফুলে যেতে পারে এবং এটি শ্বাসকষ্টের উপসর্গ হতে পারে।
  5. বেশি ঘাম বা ঠাণ্ডা হাতপা:
    • শিশু শ্বাসকষ্টে আক্রান্ত হলে তার শরীর ঘাম হতে পারে বা তার হাত-পা ঠাণ্ডা হয়ে যেতে পারে।
  6. অস্বস্তি বা কান্না:
    • শিশুর মধ্যে অস্বস্তি বা কান্নার লক্ষণ দেখা দিতে পারে, কারণ তারা শ্বাস নিতে কষ্ট অনুভব করে।
  7. বয়স অনুযায়ী বৃদ্ধি পেতে সমস্যা:
    • শিশুর শ্বাসকষ্ট যদি দীর্ঘ সময় ধরে থাকে, তবে তার স্বাভাবিক বৃদ্ধি এবং উন্নতি বাধাগ্রস্ত হতে পারে।

আতুর শিশু শ্বাসকষ্টের প্রতিকার:

  1. চিকিৎসকের সাথে পরামর্শ:
    • শ্বাসকষ্টের উপসর্গ শুরু হলে, দ্রুত শিশুকে পেডিয়াট্রিশিয়ানের কাছে নিয়ে যেতে হবে। চিকিৎসক শিশু’র শ্বাসকষ্টের কারণ চিহ্নিত করে প্রয়োজনীয় চিকিৎসা শুরু করবেন।
  2. অক্সিজেন প্রদান:
    • কিছু শিশুর ক্ষেত্রে শ্বাসকষ্টের কারণে অক্সিজেনের প্রয়োজন হতে পারে। হাসপাতালে শিশুদের অক্সিজেন থেরাপি প্রদান করা হতে পারে।
  3. ভাইরাস বা ব্যাকটেরিয়া সংক্রমণের চিকিৎসা:
    • যদি শ্বাসকষ্টের কারণ ইনফেকশন (যেমন নিউমোনিয়া) হয়ে থাকে, তবে শিশুকে অ্যান্টিবায়োটিক বা অ্যান্টিভাইরাল চিকিৎসা দিতে হতে পারে।
  4. শ্বাস প্রশ্বাসের ব্যায়াম:
    • কিছু শিশুর জন্য শ্বাস প্রশ্বাসের ব্যায়াম করা যেতে পারে, যাতে শ্বাসনালী খুলে যায় এবং তারা সহজে শ্বাস নিতে পারে।
  5. সঠিক অবস্থানে রাখা (Positioning):
    • শিশুকে সঠিক অবস্থানে রাখা (যেমন প্রপ-আপ অবস্থানে) তার শ্বাসকষ্ট কমাতে সাহায্য করতে পারে। কিছু শিশুদের উপকারে আসে যখন তারা সমতল জায়গায় না থাকিয়ে সামান্য উঁচুতে শোয়।
  6. শ্বাসনালী খোলা রাখা (Suctioning):
    • যদি শিশুর শ্বাসনালীতে শ্লেষ্মা বা অন্যান্য অবরোধ থাকে, তবে তাকে সুষম শ্বাস নেয়ার জন্য শ্বাসনালী পরিষ্কার করার পরামর্শ দেয়া হয়। চিকিৎসক এ ধরনের সেবা দিতে পারেন।
  7. পুষ্টির মান উন্নত করা:
    • শ্বাসকষ্টের কারণে শিশুর শরীরের শক্তি কমে যেতে পারে, তাই শিশুকে ভালো পুষ্টি এবং পর্যাপ্ত তরল খাবার দেওয়া উচিত।
  8. এলার্জি বা অস্থিরতা কমানো:
    • যদি শ্বাসকষ্টের কারণ এলার্জি বা পরিবেশগত অস্থিরতা (যেমন ধূমপান বা বায়ু দূষণ) হয়ে থাকে, তবে শিশুদের এই ধরনের পরিবেশ থেকে দূরে রাখা উচিত।
  9. কৃত্রিম শ্বাসপ্রশ্বাস সহায়তা:
    • যদি শ্বাসকষ্ট গুরুতর হয়, তবে কিছু ক্ষেত্রে ডাক্তার শিশুকে মেকানিকাল ভেন্টিলেশন বা কৃত্রিম শ্বাস-প্রশ্বাস সহায়তা দিতে পারেন।
  10. শিশুর জন্য প্রশান্তি নিরাপত্তা:
    • শিশুর মধ্যে উদ্বেগ বা আতঙ্ক কমাতে, তাকে শান্ত পরিবেশে রাখা উচিত। অভিভাবকরা শিশুকে কোলে নিতে বা তাকে নিরাপদে রাখতে সাহায্য করতে পারেন।

শেষ কথা:

আতুর শিশুদের শ্বাসকষ্ট একটি গুরুতর পরিস্থিতি হতে পারে, তবে চিকিৎসকের পরামর্শে দ্রুত পদক্ষেপ গ্রহণ করলে শিশুর স্বাস্থ্যের উন্নতি সম্ভব। শ্বাসকষ্টের ক্ষেত্রে সঠিক সময়ে চিকিৎসা, পুষ্টি, বিশ্রাম এবং অন্যান্য সাহায্য শিশুদের সুস্থ রাখার জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ।

Top of Form

Bottom of Form

 

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *