আঙ্গুলের ফাঁকে ঘা সাধারণত ত্বকের সংক্রমণ বা আঘাতের কারণে হয়, যা ব্যাকটেরিয়া, ফাঙ্গাস বা ভাইরাসের সংক্রমণের ফলে হতে পারে। এটি আঙ্গুলের ফাঁকে, বিশেষ করে যেখানে ত্বক ফাটে বা ঘর্ষণের ফলে ঘা তৈরি হয়, সেখানে দেখা যায়।
এ ধরনের ঘা খুবই যন্ত্রণাদায়ক হতে পারে এবং মাঝে মাঝে এটি আরামদায়ক হতে পারে না।
কারণ:
আঙ্গুলের ফাঁকে ঘা হওয়ার কিছু প্রধান কারণ:
- ব্যাকটেরিয়াল সংক্রমণ:
- স্ট্যাফাইলোকক্কাস অরিয়াস (Staphylococcus aureus) বা স্ট্রেপ্টোকক্কাস (Streptococcus) নামক ব্যাকটেরিয়া আঙ্গুলের ফাঁকে সংক্রমণ সৃষ্টি করতে পারে। যদি আঙ্গুলে কোনো ক্ষত থাকে এবং সে জায়গায় ব্যাকটেরিয়া প্রবেশ করে, তাহলে তা ঘা বা পুঁজ জমার কারণ হতে পারে।
- ফাঙ্গাল সংক্রমণ (আঁচড় বা ফাঙ্গাস):
- কিছু সময় আঙ্গুলের ফাঁকে ময়লা বা আর্দ্রতা জমে যাওয়ার কারণে ফাঙ্গাস (ছত্রাক) সংক্রমণ হতে পারে, যেমন টিনিয়া (ringworm) বা ক্যান্ডিডা (Candida), যা চুলকানি এবং ঘা তৈরি করতে পারে।
- স্কিন ফাটার কারণে (Chapped skin):
- শীতকালে ত্বক শুষ্ক হয়ে গেলে বা বারবার হাত ধোয়ার কারণে ত্বক ফেটে যায়, যা ঘা হওয়ার কারণ হতে পারে। এই ধরনের ত্বক ফাটা সাধারণত ব্যথা ও সংক্রমণের কারণ হয়ে দাঁড়ায়।
- অপর্যাপ্ত হাইজিন বা হাতের যত্নের অভাব:
- হাতের যথাযথ পরিচর্যা না করা এবং সঠিক হাইজিন বজায় না রাখার কারণে ত্বকে ইনফেকশন হতে পারে। বিশেষত আঙ্গুলের ফাঁক বা আঙ্গুলের নখের চারপাশে।
- অতিরিক্ত ঘর্ষণ বা চাপ:
- বিভিন্ন কারণে (যেমন, কঠিন কাজ করা, খেলাধুলা, বা অতিরিক্ত পেশী চাপে আঙ্গুলের ফাঁকে ঘর্ষণ) ত্বক ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে ঘা তৈরি হতে পারে।
- ডায়াবেটিস বা ইমিউন সিস্টেমের দুর্বলতা:
- ডায়াবেটিস বা অন্যান্য রোগের কারণে শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা দুর্বল হলে, সহজেই ত্বকের সংক্রমণ হতে পারে।
লক্ষণ:
আঙ্গুলের ফাঁকে ঘার কিছু সাধারণ লক্ষণ:
- ফোলা বা লাল হওয়া:
- ঘা বা সংক্রমিত স্থানে ফোলাভাব এবং লালচে ভাব দেখা যেতে পারে। এটি ব্যথার সাথে সম্পর্কিত হতে পারে।
- পুঁজ বা তরল বের হওয়া:
- ব্যাকটেরিয়াল সংক্রমণের কারণে, আঙ্গুলের ফাঁক থেকে পুঁজ বা তরল বের হতে পারে।
- চুলকানি বা জ্বালা–পোড়া:
- আঙ্গুলের ফাঁক ঘা হতে চুলকানি এবং জ্বালা-পোড়া অনুভূত হতে পারে, যা আরও জটিল হয়ে ওঠে।
- ব্যথা বা অস্বস্তি:
- আঙ্গুলের ফাঁক বা ঘা সাধারণত তীব্র ব্যথা বা অস্বস্তির সৃষ্টি করে, বিশেষ করে যখন আপনি কিছু ধরার চেষ্টা করেন।
- শরীরের তাপমাত্রা বৃদ্ধি:
- সংক্রমণ হলে কখনও কখনও শরীরে জ্বর আসতে পারে, এবং আক্রান্ত স্থানে আরও বেশি ব্যথা অনুভূত হতে পারে।
প্রতিকার:
আঙ্গুলের ফাঁকে ঘা হলে কিছু সহজ চিকিৎসা এবং প্রতিকার গ্রহণ করা যেতে পারে:
- ব্যথা বা সংক্রমণ কমাতে অ্যান্টিবায়োটিক বা অ্যান্টিফাঙ্গাল ক্রিম:
- যদি এটি ব্যাকটেরিয়াল সংক্রমণ হয়, তাহলে অ্যান্টিবায়োটিক ক্রিম যেমন নিওস্পোরিন (Neosporin) বা পলিডেইন (Polysporin) ব্যবহার করা যেতে পারে।
- যদি এটি ফাঙ্গাল সংক্রমণ হয়, তাহলে অ্যান্টিফাঙ্গাল ক্রিম যেমন ক্লোত্রিমাজোল (Clotrimazole) ব্যবহার করা যেতে পারে।
- গরম জল দিয়ে ধোয়া এবং পরিষ্কার রাখা:
- প্রতিদিন আক্রান্ত স্থানটি গরম পানি দিয়ে ভালোভাবে ধুয়ে পরিষ্কার করতে হবে, যাতে ময়লা ও ব্যাকটেরিয়া বের হয়ে যায়।
- হাতের যথাযথ যত্ন:
- আঙ্গুলের ফাঁক থেকে ঘা কমানোর জন্য হাত নিয়মিত পরিষ্কার রাখা এবং ময়লা ও আর্দ্রতা জমতে না দেওয়ার চেষ্টা করা উচিত। এছাড়া, হাতে যদি ঘর্ষণ বা ফাটল থাকে, তাহলে ময়শ্চারাইজার ব্যবহার করা উচিত।
- অ্যান্টি ইনফ্লেমেটরি ঔষধ:
- যদি ঘা ব্যথাদায়ক হয়, তবে প্যারাসিটামল বা আইবুপ্রোফেন মতো পেইনকিলার গ্রহণ করা যেতে পারে। তবে, এটি শুধু চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী ব্যবহার করুন।
- ক্যালামাইন লোশন:
- কিছু সময় ক্যালামাইন লোশন বা ক্রিম ব্যবহারের মাধ্যমে ত্বকের জ্বালাপোড়া বা চুলকানি কমানো যায়।
- সামান্য ঘা বা ফাটলে:
- যদি ঘা ছোট এবং কোনও গুরুতর সংক্রমণ না হয়, তবে খুব বেশি কিছু করার প্রয়োজন নেই। তবে সতর্ক থাকুন যেন সংক্রমণ না ছড়িয়ে পড়ে।
- স্বাস্থ্যকর খাবার:
- পর্যাপ্ত পুষ্টির মাধ্যমে শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা শক্তিশালী রাখতে হবে, বিশেষ করে ভিটামিন সি এবং ই যোগে।
প্রতিরোধ:
- নিয়মিত হাত ধোয়া:
- হাতের ভালো পরিচর্যা করা এবং প্রতিদিন সাবান দিয়ে হাত ধোয়া উচিত। আঙ্গুলের ফাঁক পরিষ্কার রাখা উচিত।
- ময়শ্চারাইজার ব্যবহার:
- শীতকালে বা ত্বক শুষ্ক হলে ময়শ্চারাইজার বা তেল ব্যবহার করা উচিত, যাতে ত্বক ফাটে না এবং সংক্রমণ না ঘটে।
- বিষয়বস্তু পরিষ্কার রাখা:
- আঙ্গুলের ফাঁকে ঘর্ষণ বা ক্ষত সৃষ্টি না হওয়ার জন্য কাজের সময় গ্লাভস পরা বা সঠিক হাতের পরিচর্যা নেওয়া প্রয়োজন।
- স্বাস্থ্যকর জীবনযাপন:
- স্বাস্থ্যকর জীবনযাপন, যেমন সুষম খাবার, পর্যাপ্ত পানি পান এবং হাইজিন বজায় রাখা প্রতিরোধ করতে সাহায্য করে।
আঙ্গুলের ফাঁকে ঘা সাধারণত গুরুতর সমস্যা না হলেও যদি এটি সংক্রমিত হয়ে বড় হয়ে যায় বা আরও জটিল হয়ে ওঠে, তবে দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত।