অ্যালার্জি খাবার (Food Allergy) হলো এমন একটি শারীরিক প্রতিক্রিয়া, যা কিছু নির্দিষ্ট খাবারের কারণে শরীরে অস্বাভাবিক প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করে। সাধারণত আমাদের শরীর কিছু খাবারকে অপরিচিত বা ক্ষতিকর হিসেবে শনাক্ত করে এবং প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা হিসেবে অ্যালার্জি প্রতিক্রিয়া শুরু হয়। এই ধরনের প্রতিক্রিয়া সাধারণত শরীরের প্রতিরোধক প্রক্রিয়ায় ঘটে থাকে এবং এটি খাবারের সঙ্গে সরাসরি সম্পর্কিত।
কারণ:
অ্যালার্জি খাবারের কারণে যে প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়, তা মূলত আমাদের শরীরের ইমিউন সিস্টেমের অস্বাভাবিক প্রতিক্রিয়া। যখন শরীর নির্দিষ্ট কোনো খাবারকে “অপ্রীতিকর” হিসেবে চিনে নেয়, তখন শরীর তাকে প্রতিরোধ করতে বিভিন্ন রাসায়নিক উপাদান তৈরি করে, যার মধ্যে হিস্টামিন অন্যতম।
অ্যালার্জি খাবারের কারণগুলো হলো:
- বিশেষ খাবারের প্রোটিন: কিছু খাবারের মধ্যে প্রোটিন থাকে যা কিছু মানুষের শরীরকে অস্বাভাবিকভাবে প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করতে বাধ্য করে। যেমন: দুধ, মাংস, সয়া, গম, মাছ, শিম, বাদাম, ডিম ইত্যাদি।
- জন্মগত প্রবণতা: অনেক সময় পরিবারে অ্যালার্জি সমস্যা থাকলে, তার সন্তানদেরও খাবারের অ্যালার্জি হওয়ার সম্ভাবনা থাকে।
- অতিরিক্ত খাদ্য সংবেদনশীলতা: কিছু খাবার কিছু মানুষের জন্য খুব বেশি সংবেদনশীল হতে পারে এবং অ্যালার্জির কারণ হয়ে দাঁড়াতে পারে।
লক্ষণ:
অ্যালার্জি খাবারের প্রতিক্রিয়া বিভিন্ন রকম হতে পারে। কিছু লক্ষণ সাধারণ এবং কিছু গুরুতর হতে পারে। সাধারণ লক্ষণগুলি হলো:
- ত্বকের সমস্যা:
- চুলকানি বা র্যাশ (চুলকানি বা লাল হয়ে যাওয়া ত্বক)।
- অরগান ফোলা বা গাঢ় রঙের দাগ (এমইম বা এডিমা)।
- হঠাৎ সারা শরীর বা মুখে ফোলা (বিশেষ করে চোখ বা ঠোঁটের আশপাশ)।
- শ্বাসপ্রশ্বাস সমস্যা:
- শ্বাস প্রশ্বাসে কষ্ট হওয়া বা হাঁপানি।
- গলার শ্বাসকষ্ট বা গলার জ্বালা।
- পেটের সমস্যা:
- পেট ফেঁপে ওঠা।
- বমি বা ডায়রিয়া।
- পেটব্যথা বা অস্বস্তি।
- গুরুতর প্রতিক্রিয়া:
- অ্যানাফাইল্যাক্সিস: এটি একটি গুরুতর প্রতিক্রিয়া, যা তীব্র শ্বাসকষ্ট, হার্ট রেট বাড়া, অজ্ঞান হয়ে যাওয়া এবং জীবন বিপজ্জনক পরিস্থিতির সৃষ্টি করতে পারে।
- কিছু ক্ষেত্রে অ্যালার্জি খাদ্য গ্রহণের পর শরীরে শক হতে পারে, যা দ্রুত চিকিৎসার প্রয়োজন।
প্রতিকার:
অ্যালার্জি খাবারের প্রতিক্রিয়া এড়াতে এবং এর চিকিৎসা করতে কিছু ব্যবস্থা নেওয়া যেতে পারে:
- খাবার থেকে বিরত থাকা: সবচেয়ে কার্যকরী প্রতিকার হলো সেই খাবারটি সম্পূর্ণরূপে এড়িয়ে চলা যা অ্যালার্জি সৃষ্টি করে। যেমন: যদি ডিম বা দুধের অ্যালার্জি থাকে, তবে সেগুলি খাওয়া থেকে বিরত থাকুন।
- অ্যান্টিহিস্টামিন: অ্যালার্জির উপসর্গ কমানোর জন্য অ্যান্টিহিস্টামিন ব্যবহার করা যেতে পারে। এগুলি অ্যালার্জি প্রতিক্রিয়ায় শরীরের তৈরি হওয়া হেস্টামিনের প্রভাব কমায় এবং উপসর্গ প্রশমিত করে।
- অ্যানাফাইল্যাক্সিসের জন্য এপিনেফ্রিন: যদি কোনো গুরুতর অ্যালার্জি প্রতিক্রিয়া ঘটে, যেমন অ্যানাফাইল্যাক্সিস, তবে চিকিৎসক সাধারণত এপিনেফ্রিন (অ্যাড্রেনালিন) ইনজেকশন প্রেসক্রাইব করেন, যা জীবন রক্ষা করতে সহায়তা করে।
- ডায়েটের পরিকল্পনা: অ্যালার্জি থাকলে খাদ্যতালিকা পরিকল্পনা করা জরুরি। বিশেষত, একজন পুষ্টিবিদ বা ডায়েটিশিয়ান থেকে পরামর্শ নেওয়া যেতে পারে। যারা ডিম বা দুধের অ্যালার্জি রয়েছে, তাদের জন্য বিকল্প পণ্য (যেমন: দুধের বিকল্প বাদাম বা সয়া দুধ) ব্যবহারের পরামর্শ দেওয়া হয়।
- চিকিৎসকের পরামর্শ: নিয়মিত চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া এবং উপসর্গের ভিত্তিতে প্রয়োজনীয় চিকিৎসা বা ঔষধ গ্রহণ করা।
সতর্কতা:
- প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা: অ্যালার্জি খাবারের প্রতিক্রিয়া এড়ানোর জন্য একটি কার্যকরী ব্যবস্থা হলো প্যাকেটজাত খাবারের লেবেল পড়া, যাতে জানানো থাকে কোন উপাদানগুলো রয়েছে।
- শিক্ষা: অ্যালার্জি সনাক্ত করা এবং এর সম্পর্কে সচেতন হওয়া খুব গুরুত্বপূর্ণ। আপনি বা আপনার শিশুর ক্ষেত্রে অ্যালার্জি শনাক্ত হলে, এটি সম্পর্কে পরিবার ও বন্ধুবান্ধবদের জানান।
এটা মনে রাখা গুরুত্বপূর্ণ যে, অ্যালার্জি কোনো খাওয়ার খাবার নিয়ে সঠিক পরামর্শ এবং চিকিৎসা নিতে, ডাক্তার বা বিশেষজ্ঞের সঙ্গে যোগাযোগ করা উচিত।