Best Homeo Doctor

অবিরাম জ্বর কি,কারন,লক্ষন,প্রতিকার

অবিরাম জ্বর (Persistent Fever) এমন একটি ধরনের জ্বর, যা বেশ কয়েকদিন (যা সাধারণত ৭ দিন বা তার বেশি) চলতে থাকে এবং নির্দিষ্ট কোনো নির্দিষ্ট কারণ ছাড়া তাপমাত্রা কমে না। এটি একটি জটিল এবং গুরুতর পরিস্থিতি, যা শরীরে বিভিন্ন ধরনের সংক্রমণ বা অন্যান্য স্বাস্থ্য সমস্যা ইঙ্গিত করতে পারে।

অবিরাম জ্বরের কারণ:

অবিরাম জ্বর অনেক ধরনের রোগ বা অবস্থা থেকে হতে পারে। এর মধ্যে কিছু সাধারণ কারণ হল:

  1. ব্যাকটেরিয়াল সংক্রমণ:
    • টিউবারকিউলোসিস (TB): টিবি একটি দীর্ঘস্থায়ী ব্যাকটেরিয়াল সংক্রমণ যা দীর্ঘকাল ধরে জ্বর সৃষ্টি করতে পারে।
    • টাইফয়েড (Typhoid fever): টাইফয়েড একটি ব্যাকটেরিয়াল সংক্রমণ, যা দীর্ঘমেয়াদি জ্বরের কারণ হতে পারে।
    • ইউরিনারি ট্র্যাক্ট ইনফেকশন (UTI): বিশেষ করে কিডনির ইনফেকশন হলে দীর্ঘমেয়াদি জ্বর হতে পারে।
  2. ভাইরাল সংক্রমণ:
    • ডেঙ্গু বা চিকুনগুনিয়া: এই ভাইরাসগুলোও বেশ কয়েকদিন ধরে জ্বর সৃষ্টি করতে পারে, বিশেষ করে যদি শুরুর দিকে নির্দিষ্ট চিকিৎসা না করা হয়।
    • হেপাটাইটিস (Hepatitis): লিভারের প্রদাহজনিত ভাইরাল সংক্রমণ, যেমন হেপাটাইটিস বি বা সি, অনেক দিন ধরে জ্বর রাখতে পারে।
    • হিউম্যান ইমিউনোডেফিসিয়েন্সি ভাইরাস (HIV): HIV সংক্রমণও অনেক সময় অবিরাম জ্বর সৃষ্টি করতে পারে।
  3. অটোইমিউন রোগ (Autoimmune Diseases):
    • লুপাস (Lupus), রিউম্যাটয়েড আর্থ্রাইটিস (Rheumatoid Arthritis), এবং গাউট (Gout) এর মতো অটোইমিউন রোগগুলোও দীর্ঘস্থায়ী জ্বরের কারণ হতে পারে।
  4. ফাঙ্গাল ইনফেকশন (Fungal Infections):
    • কিছু ফাঙ্গাল ইনফেকশন যেমন ক্যান্ডিডিয়াসিস বা হিস্টোপ্লাজমোসিস-ও অবিরাম জ্বর সৃষ্টি করতে পারে।
  5. ক্যানসার (Cancer):
    • লিম্ফোমা বা লিউকেমিয়া ধরনের ক্যানসারও অনেক সময় অবিরাম জ্বর সৃষ্টি করতে পারে।
  6. ড্রাগ বা ঔষধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া (Drug Reactions):
    • কিছু ঔষধ বা অ্যান্টিবায়োটিক ব্যবহারে দীর্ঘকালীন জ্বর হতে পারে।
  7. পরিবর্তিত শরীরের তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণ (Hyperthyroidism):
    • থাইরয়েড হরমোনের অতিরিক্ত উৎপাদন (হাইপারথাইরয়ডিজম) এর ফলে অবিরাম জ্বর হতে পারে।

অবিরাম জ্বরের লক্ষণ:

অবিরাম জ্বরের সাধারণ লক্ষণগুলো হতে পারে:

  1. দীর্ঘস্থায়ী জ্বর:
    • তাপমাত্রা ১০০ ডিগ্রি ফারেনহাইট বা তার বেশি থাকে এবং এটি কয়েকদিন ধরে চলতে থাকে।
  2. শরীরের দুর্বলতা এবং ক্লান্তি:
    • অবিরাম জ্বর শরীরে দুর্বলতা সৃষ্টি করে এবং রোগী খুব ক্লান্ত অনুভব করে।
  3. মাথাব্যথা:
    • অনেক সময় মাথাব্যথা, মাথা ঘোরানো বা অবস্থা খারাপ হওয়ার অনুভূতি দেখা যায়।
  4. শরীরে ব্যথা:
    • পেশী বা গাঁটে ব্যথা এবং শরীরের অন্যান্য অংশে অস্বস্তি অনুভূত হতে পারে।
  5. বমি বা বমি ভাব:
    • কখনও কখনও অবিরাম জ্বরের সঙ্গে বমি বা বমির ভাবও থাকতে পারে।
  6. ্যাশ:
    • শরীরের বিভিন্ন অংশে র‍্যাশ বা চর্মরোগ হতে পারে।
  7. শ্বাসকষ্ট বা কাশি:
    • যদি অবিরাম জ্বরের সঙ্গে শ্বাসকষ্ট বা কাশি থাকে, তা হলে এটি ফুসফুসের ইনফেকশনের ইঙ্গিত হতে পারে।
  8. অস্বাভাবিক ঘাম:
    • রোগী অস্বাভাবিকভাবে ঘামতে পারে, বিশেষ করে রাতে।

অবিরাম জ্বরের প্রতিকার:

অবিরাম জ্বরের চিকিত্সা সঠিকভাবে করার জন্য প্রথমে তার কারণ চিহ্নিত করা জরুরি। কিছু সাধারণ প্রতিকার হলো:

  1. অ্যান্টিবায়োটিক বা অ্যান্টিভাইরাল চিকিৎসা:
    • যদি ব্যাকটেরিয়া বা ভাইরাসের কারণে অবিরাম জ্বর হয়ে থাকে, তাহলে সেই ব্যাকটেরিয়া বা ভাইরাসের বিরুদ্ধে চিকিৎসা (অ্যান্টিবায়োটিক বা অ্যান্টিভাইরাল) শুরু করা উচিত।
  2. প্যারাসিটামল বা আইবুপ্রোফেন:
    • তাপমাত্রা কমাতে প্যারাসিটামল বা আইবুপ্রোফেন ব্যবহার করা যেতে পারে। তবে, এগুলি শুধুমাত্র জ্বরের উপসর্গ কমায়, আসল কারণ নিরাময় করবে না।
  3. বিশ্রাম এবং পর্যাপ্ত জলপান:
    • শরীরের পুনরুদ্ধার ও শক্তি ফিরিয়ে আনতে বিশ্রাম নেওয়া এবং পর্যাপ্ত পানি পান করা উচিত।
  4. ফল সুষম খাবার:
    • ফল, সবজি, এবং সুষম খাবার গ্রহণ করলে শরীরের প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ে।
  5. বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ:
    • যদি জ্বর ৩ দিন বা তার বেশি থাকে, তা হলে দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত। চিকিৎসক প্রয়োজনীয় পরীক্ষা নিরীক্ষা (যেমন রক্ত পরীক্ষা, এক্স-রে ইত্যাদি) করতে পারেন এবং নির্দিষ্ট চিকিৎসা ব্যবস্থা নিতে পারেন।
  6. যথাযথ চিকিৎসা এবং ট্রিটমেন্ট:
    • অবিরাম জ্বরের জন্য যদি কোনো গুরুতর রোগ (যেমন ক্যানসার, অটোইমিউন ডিজিজ বা টিউবারকিউলোসিস) দায়ী থাকে, তাহলে তার জন্য বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের তত্ত্বাবধানে চিকিৎসা নিতে হবে।

কখন চিকিৎসকের কাছে যেতে হবে:

  • যদি জ্বর ৩-৫ দিনের বেশি সময় ধরে থাকে।
  • যদি তীব্র মাথাব্যথা, শ্বাসকষ্ট, বা কাশি থাকে।
  • যদি ্যাশ বা অস্বাভাবিক আচরণ দেখা যায়।
  • যদি হৃদরোগের উপসর্গ (যেমন বুকব্যথা, অস্বাভাবিক হৃদস্পন্দন) দেখা দেয়।
  • যদি জ্বরের সঙ্গে বমি বা ডায়রিয়া হয়।

অবিরাম জ্বর দীর্ঘস্থায়ী হতে পারে এবং এটি শরীরের নানা ধরনের গুরুতর সমস্যা বা সংক্রমণের ইঙ্গিত দিতে পারে। তাই দ্রুত চিকিৎসা নেওয়া খুবই গুরুত্বপূর্ণ।

 

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *