Best Homeo Doctor

অন্ত্র থেকে রক্ত স্রাব কি,কারন,লক্ষন,প্রতিকার

অন্ত্র থেকে রক্ত স্রাব (Rectal bleeding) বা অন্ত্রের রক্তপাত হলো অন্ত্রের বিভিন্ন অংশ থেকে রক্তের স্রাব বা নিঃসরণ হওয়া। এটি একটি গুরুতর অবস্থা হতে পারে এবং এর পেছনে বিভিন্ন কারণ থাকতে পারে। অন্ত্রের রক্তপাতের ফলে শরীর দুর্বল হতে পারে এবং এটি চিকিৎসার জন্য জরুরি হতে পারে।

কারণ:

অন্ত্র থেকে রক্ত স্রাব হওয়ার পেছনে বিভিন্ন কারণ থাকতে পারে:

  1. হেমোরয়েডস (Hemorrhoids): এটি অন্ত্রের চারপাশে শিরা ফুলে যাওয়ার ফলে ঘটে, যা রক্তপাত সৃষ্টি করতে পারে। এটি সবচেয়ে সাধারণ কারণ এবং সাধারণত মলত্যাগের সময় রক্তপাত ঘটে।
  2. অ্যানাল ফিশার (Anal Fissures): মলত্যাগের সময় বা কোষ্ঠকাঠিন্য থাকার কারণে গাঢ় বা শক্ত মল পাশের অন্ত্রের শিরাগুলিকে ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারে, যা রক্তপাত সৃষ্টি করে।
  3. ক্রনিক কোলাইটিস (Chronic Colitis): অন্ত্রের প্রদাহজনিত রোগ, যেমন ক্রনিক ইনফ্লেমেটরি বাওল ডিজিজ (IBD), যা কোলাইটিস বা ক্রোন’স ডিজিজের অংশ, অন্ত্রের দেয়ালে প্রদাহ এবং ক্ষত সৃষ্টি করে এবং এতে রক্তপাত হতে পারে।
  4. পেপটিক আলসার (Peptic Ulcer): পেট বা অন্ত্রের দেয়ালে ক্ষত হওয়া, যা পেপটিক আলসার নামে পরিচিত, এই অবস্থায় রক্তপাত হতে পারে।
  5. ডাইভারটিকুলাইটিস (Diverticulitis): অন্ত্রে ছোট ছোট পাউচ বা ডাইভারটিকুলা যখন প্রদাহিত হয়ে যায়, তখন সেখানে রক্তপাত হতে পারে।
  6. কলোরেকটাল ক্যান্সার (Colorectal Cancer): অন্ত্রের বা কোলন অঞ্চলের ক্যান্সারও রক্ত স্রাবের কারণ হতে পারে। এটি গুরুতর একটি কারণ এবং এর সঙ্গে অন্যান্য লক্ষণ যেমন ওজন হ্রাস, অব্যাখ্যায হজমের সমস্যা, এবং দীর্ঘস্থায়ী পেটে ব্যথা থাকতে পারে।
  7. এনাটোমিকাল সমস্যা (Anatomical Issues): কোনো আঘাত বা দুর্ঘটনা, বা অন্ত্রের কোনও ত্রুটির কারণে রক্তপাত হতে পারে।
  8. পলিপস (Polyps): অন্ত্রে ছোট নরম টিস্যুর পলিপস থাকতে পারে, যা রক্তপাতের কারণ হয়ে দাঁড়ায়।
  9. ইনফেকশন (Infections): কিছু ইনফেকশন যেমন ব্যাকটেরিয়াল বা ভাইরাল ইন্টেস্টাইনাল ইনফেকশনও রক্তপাত সৃষ্টি করতে পারে।

লক্ষণ:

অন্ত্র থেকে রক্ত স্রাবের প্রধান লক্ষণগুলো হলো:

  1. মলত্যাগের সময় রক্তপাত: মলত্যাগের সময় বা পরবর্তী সময়ে রক্তপাত হতে পারে। এটি সাধারণত হালকা বা গা red রঙের হয়, তবে কিছু ক্ষেত্রে গা dark রঙের রক্তও হতে পারে।
  2. পেটের ব্যথা: অন্ত্রের প্রদাহ, ইনফেকশন, বা কোলাইটিসের কারণে পেটে ব্যথা বা অস্বস্তি হতে পারে।
  3. কোলন বা অন্ত্রে অস্বস্তি বা চাপ: কিছু ক্ষেত্রে, অন্ত্রের স্নায়ুর কারণে অনুভূতি থাকতে পারে, যেমন অতিরিক্ত চাপ বা অস্বস্তি।
  4. শক্ত বা কঠিন মল: কোষ্ঠকাঠিন্যের কারণে শক্ত মল তৈরির ফলে অ্যানাল ফিশার বা হেমোরয়েডস হতে পারে, যা রক্তপাত সৃষ্টি করে।
  5. ওজন হ্রাস বা ক্লান্তি: কিছু গুরুতর অবস্থায় (যেমন ক্যান্সার), ওজন হ্রাস, অব্যাখ্যায হজমের সমস্যা এবং অবসাদ হতে পারে।
  6. অতিরিক্ত মলত্যাগের প্রবণতা: অন্ত্রের প্রদাহজনিত রোগ (যেমন কোলাইটিস) মলত্যাগের বারবার প্রবণতা সৃষ্টি করতে পারে।
  7. তীব্র বা মৃদু রক্তপাত: হেমোরয়েডস বা অ্যানাল ফিশারের ক্ষেত্রে, রক্তপাত সাধারণত মৃদু এবং সাময়িক হয়। তবে কোলোরেকটাল ক্যান্সারের মতো গুরুতর অবস্থায় রক্তপাত তীব্র বা দীর্ঘস্থায়ী হতে পারে।

প্রতিকার:

অন্ত্র থেকে রক্ত স্রাবের প্রতিকার নির্ভর করে এর কারণের উপর। তবে কিছু সাধারণ প্রতিকার রয়েছে:

  1. মলত্যাগের সময় সতর্কতা: কোষ্ঠকাঠিন্য বা শক্ত মল থেকে বাঁচতে যথাযথ পরিমাণে পানি পান, সুষম খাদ্য খাওয়া এবং সঠিক ফাইবার গ্রহণ করা উচিত। একাধিক সময় মলত্যাগের অভ্যাস গড়ে তোলা ভালো।
  2. হেমোরয়েডসের জন্য চিকিৎসা: হেমোরয়েডস হলে সাধারণত ফাইবার সমৃদ্ধ খাবার এবং পর্যাপ্ত পানি পান করা সহ কিছু ওষুধ ব্যবহার করা যেতে পারে। বিশেষ ক্রীম বা সাপোর্ট ব্যান্ডেজও ব্যবহার করা যেতে পারে। খুব গুরুতর ক্ষেত্রে সার্জারি প্রয়োজন হতে পারে।
  3. অ্যানাল ফিশারের জন্য চিকিৎসা: অ্যানাল ফিশারের জন্য বেশি করে তরল খাবার খাওয়া এবং প্রস্রাবের সময় খুব বেশি চাপ না দেওয়া উচিত। এতে মল হালকা ও নরম থাকবে। চিকিৎসকের পরামর্শে কিছু মলম বা মেডিকেশন ব্যবহার করা যেতে পারে।
  4. ক্রনিক কোলাইটিস বা ক্রোন ডিজিজ: প্রদাহজনিত অসুখের জন্য ইনফ্লেমেটরি বাওল ডিজিজের (IBD) চিকিৎসায় সাধারণত স্টেরয়েড বা অন্যান্য ইমিউনোসপ্রেসিভ ওষুধের ব্যবহার হয়।
  5. কলোরেকটাল ক্যান্সার: ক্যান্সারের ক্ষেত্রে সাধারণত অস্ত্রোপচার, কেমোথেরাপি, বা রেডিওথেরাপি হতে পারে, তবে এটি নির্ভর করবে রোগের অবস্থার উপর।
  6. এন্টিবায়োটিক বা ইনফেকশন নিয়ন্ত্রণ: যদি রক্তপাতের কারণ ইনফেকশন হয়ে থাকে, তবে অ্যান্টিবায়োটিক চিকিৎসা দেওয়া হতে পারে।
  7. পলিপস বা ডাইভারটিকুলাইটিস: পলিপস বা ডাইভারটিকুলাইটিসের চিকিৎসা অনুযায়ী, ডায়েট পরিবর্তন, অ্যান্টিবায়োটিক বা অন্যান্য চিকিৎসার মাধ্যমে রক্তপাত নিয়ন্ত্রণ করা হতে পারে।

যখন চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে:

অন্ত্র থেকে রক্ত স্রাব দেখা দিলে দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত, বিশেষ করে যদি:

  • রক্তপাত দীর্ঘস্থায়ী বা ভারী হয়।
  • পেটে তীব্র ব্যথা, ওজন হ্রাস, ক্লান্তি বা অব্যাখ্যায অন্যান্য লক্ষণ থাকে।
  • মলত্যাগের সময় বা পরে রক্তপাত দেখা দেয়।
  • যদি কোনো তীব্র বা গুরুতর শারীরিক সমস্যা (যেমন কোলোন ক্যান্সার বা প্রদাহজনিত রোগ) সন্দেহ করা হয়।

চিকিৎসক সঠিক পরামর্শ দেবেন এবং প্রয়োজনীয় পরীক্ষার মাধ্যমে সঠিক কারণ চিহ্নিত করবেন।

 

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *